বাংলার উপধর্ম ও ব্রাত্যজনের সাহেবধনী সম্প্রদায়
বিভিন্ন উপাসকের বৈচিত্র্যময় উপাসনার দেশ এই ভারতবর্ষ। আর বাংলা হচ্ছে এই ভারতবর্ষের এক ক্ষুদ্র সংস্করণ। ধর্মের পাশাপাশি বেশকিছু উপধর্মের বিকাশ ঘটেছে এখানে। বহু ধর্মের বিবর্তন ঘটেছে। তারপর তৈরি হয়েছে নতুন নতুন ধর্মীয় সম্প্রদায়।
এ বিষয়ে ঐতিহাসিক ড: রমেশচন্দ্র মজুমদার বলছেন, ---
"বাংলায় পাল রাজত্ব পর্যন্ত (৭৫০-১০৯৫ খ্রি: ) বৌদ্ধদের বেশ ক্ষমতা ও প্রতিপত্তি ছিল। কিন্তু সেনরাজত্বে, বিশেষত: , বল্লালসেনের সময় (১১৫৮-১১৭৯ খ্রি: ) পুনরায় ব্রাহ্মণ্যধর্মের প্রাধান্য
প্রতিষ্ঠিত হওয়ায় বৌদ্ধদের দাপট কমে যায়। এ সময় অনেকে বৌদ্ধসমাজের নিম্নস্তরে পতিত হয়। ফলে তারা মানসিক দিক দিয়ে মুসলমানদের ওপর নির্ভরশীল হয়ে ওঠে।"
--বাংলাদেশের ইতিহাস, মধ্যযুগ, ২য় খণ্ড: ড: রমেশচন্দ্র মজুমদার, পৃষ্ঠা-২৩২.
"পরবর্তীকালে এই পতিত বৌদ্ধরাই "পাষণ্ডী" নামে পরিচিতি পায়।"
---শ্রীচৈতন্য ভাগবতের ভূমিকা: রাধাগোবিন্দ নাথ, পৃষ্ঠা-৫৪.
বিভিন্ন চৈতন্য চরিত গ্রন্থে চাপাল-গোপালসহ বেশকিছু পাষণ্ডীর উল্লেখ আছে। শ্রীচৈতন্য যতদিন বাংলায় ছিলেন, ততদিন তাঁর সঙ্গে এইসব পাষণ্ডীদের প্রত্যক্ষ সংঘাত হয়েছে। খ্রিস্টিয় দ্বাদশ শতাব্দী থেকেই বৈষ্ণবধর্মের একটা আবহাওয়া গৌড়-বাংলার মাটিতে ধীরে ধীরে অঙ্কুরিত হচ্ছিল। এই বৈষ্ণবধর্ম মূলত ছিল রাধাকৃষ্ণ কেন্দ্রিক। এর মধ্যে ছিল তন্ত্রধর্মের প্রাধান্য। আর তন্ত্রধর্মের উচ্ছিষ্ট থেকেই জন্ম নেয় আউল-বাউল-সাঁই-দরবেশ-কর্তাভজা-সাহেবধনীসহ বেশকিছু উপধর্মের।
ড: রমেশচন্দ্র মজুমদার তাঁর "বাংলাদেশের ইতিহাস", মধ্যযুগ, পৃষ্ঠা-২৬৭-এ বলছেন, "বৈষ্ণব সহজিয়ারা এই তান্ত্রিক দর্শনের ভিত্তিতেই পরকীয়া প্রেমের প্রতিষ্ঠা করে।" তবে শ্রীচৈতন্যের জন্মের বহু আগে থেকেই বাংলায় পরকীয়া বৈষ্ণবধর্ম চালু ছিল। এই সহজিয়ারা অনেকগুলি শাখায় বিভক্ত ছিল, যেমন---আউল, বাউল, সাঁই, দরবেশ, নেড়ানেড়ি, কর্তাভজা, সখীভজা, কিশোরীভজা, রামবল্লভী, সাহেবধনী, গৌড়বাদী, পাগলনাথী, গোবরাই প্রভৃতি। এইসব বিভিন্ন শাখার মধ্যে মত ও পথের পার্থক্য থাকলেও স্ত্রী-পুরুষের অবাধ শরীরী মিলন এবং পরকীয়া প্রেমের ক্ষেত্রে ছিল একমত।
খ্রিস্টিয় আঠারো শতকের শেষদিকে বাংলায় এই ধরণের বেশকিছু উপধর্ম ব্রাত্যজনগোষ্ঠীর মানুষকে কাছে টেনেছিল। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে "সাহেবধনী" সম্প্রদায়। হিন্দুধর্মের জাতিভেদের কঠোরতা থেকে মুক্ত হয়ে ব্রাত্য হিন্দু ও গরীব মুসলমান সম্প্রদায়ের মানুষ এইসব উপধর্মে সামিল হয়েছিলেন। এজন্য লড়াই হয়েছে অনেক। উচ্চস্তরের হিন্দুধর্মের সমাজবেত্তা ও নিষ্ঠাবান মুসলমানদের সঙ্গে ক্রমাগত লড়াই করে বহু পিছিয়ে পড়া হিন্দু এবং গরীব মুসলমান এইসব উপধর্মে আশ্রয় নিয়েছেন। কট্টরপন্থী হিন্দু ও মুসলমান উভয় সম্প্রদায়ের কাছে এইসব উপধর্মের মানুষজন এককথায় "ধর্মত্যাগী" বলে পরিচিত।
আজকের লেখা "সাহেবধনী" সম্পর্কে। এই সাহেবধনী সম্প্রদায়ের প্রবর্তক হলেন এক মুসলমান নারী উদাসীন। আর এই ধর্মের যিনি প্রধান সংগঠক, সেই চরণ পাল হিন্দু গোয়ালা সম্প্রদায়ের মানুষ। সাহেবধনী সম্প্রদায়ের উপাস্য হলেন "দীনদয়াল।" কখনও কখনও তাঁকে "দীনবন্ধু" বলেন ভক্তরা। নারীভজা সম্প্রদায় এই সাহেবধনী। ব্রজের রাইকিশোরী তাঁদের কাছে "সাহেবধনী।" দু: খীরাম পাল নামে এক ব্যক্তি জনৈকা মুসলমান নারী উদাসীনের কাছে দীক্ষা নিয়ে এই সাহেবধনী সম্প্রদায়ের প্রবর্তন করেন। তাই আল্লাধ্বনী ও রাইধনী মিলে সাহেবধনী। এটি একটি সহজিয়া ভিত্তিক উপধর্ম।
সাহেবধনী সম্প্রদায়ের একটি গুপ্ত সাধনমন্ত্র হলো, ---
"আল্লাতালা ব্রহ্মসাঁই তোমার নেহার ধরে
মাটির বস্তুকে পান করিলাম।
ক্লিং মন্ত্র অনঙ্গ মুঞ্জরী হিঙ্গলবরণ গা হরিতেল বরণে সাধি।
শুক্র খাই।
পলকে পলকে গুরু যেন তোমায় দেখতে পাই।
গোঁসাই আলেকসাঁই তুমি থাকো সাক্ষী।
যে বয়সে খাইলাম চারিবস্তু সেই বয়সে থাকি।
দোহাই দীননাথ।
দোহাই দীননাথ।
দোহাই দীননাথ। ।"
এখানে "চারিবস্তু" মানে---মল, মূত্র, পুরুষের শুক্র ও নারীর রজ। এসব অতি গুহ্য সাধন উপকরণ।
পশ্চিমবঙ্গের নদীয়া জেলার চাপড়া থানার বৃত্তিহুদা গ্রামে রয়েছে সাহেবধনী সম্প্রদায়ের আসন। স্থানটি শহর কৃষ্ণনগর থেকে ১৬ মাইল উত্তর-পূর্বে অবস্থিত। দু: খীরাম পাল ছিলেন জলঙ্গী নদীর পশ্চিমপাড়ের গ্রাম দোগাছিয়ার বাসিন্দা। তাঁর ছেলে চরণ পাল সেখান থেকে চলে আসেন জলঙ্গীর পূর্বে বৃত্তিহুদা গ্রামে এবং এখানেই গড়ে ওঠে সাহেবধনী সম্প্রদায়ের সাধনক্ষেত্র। চরণ পালের তিন প্রধান শিষ্য---রুকুনপুরের প্রহ্লাদ গোঁসাই, বামুনপুকুরের রামচন্দ্র গোঁসাই ও হুদা গ্রামের কুবির গোঁসাই। এই তিনজনের মধ্যে সাহেবধনী সম্প্রদায়ের সাধনতত্ত্ব নিয়ে কুবির গোঁসাই গান লিখেছেন, গান গেয়েছেন।
কুবির গোঁসাইয়ের আসল নাম---কুবের সরকার। জাতিতে যুগী সম্প্রদায়ের মানুষ এই কুবের সরকার। পরে চরণ পালের কাছে দীক্ষা নিয়ে হোন কুবের গোঁসাই এবং তা থেকে সাধারণ মানুষের মুখে কুবির গোঁসাই। নদীয়ার চাপড়া থানার বৃত্তিহুদা গ্রামে রয়েছে চরণ পালের ভিটে। আর রয়েছে কুবির গোঁসাই ও তাঁর স্ত্রী ভগবতী এবং সাধনসঙ্গিনী কৃষ্ণমোহিনী দেবীর সমাধি।
হিন্দু-মুসলমান উভয় সম্প্রদায়ের মানুষকে নিয়েই যে সাহেবধনী পরিবার, তা কুবির গোঁসাইয়ের সমাধি দেখেই বলা যায়। যেমন, তাঁর সমাধি ঘরে রয়েছে তাঁর ব্যবহৃত চৌকি, ফুলের সাজি, বাঁকা লাঠি, ত্রিশূল, কাঠের পিঁড়ি, খড়ম ও সেইসঙ্গে ফকিরি দণ্ড। কুবির গোঁসাইয়ের লেখা ১২০৩ খানা গান লেখা খাতা পাওয়া গেছে। ওই খাতা থেকেই জানা যায়, বাংলা ১১৯৪ সালের ফাল্গুনী পূর্ণিমায় কুবিরের জন্ম এবং মৃত্যু বাংলা ১২৮৬ সালের ১১ ই আষাঢ় মঙ্গলবার রাত চার দণ্ডে শুক্লপক্ষে ষষ্ঠী তিথিতে। সাহেবধনী গৃহীর ধর্ম। যে কেউ নিতে পারেন। জাতিভেদ নেই।
কুবির গোঁসাইয়ের লেখা গানে সে কথাই বলা হয়েছে, ---
"ওরে বৃন্দাবন হতে বড় শ্রীপাট হুদা গ্রাম
যথা দিবানিশি শুনি দীনবন্ধু নাম।
হেরি নীলাচলে যেমন লীলে
এখানে তার অধিক লীলে
হিন্দু যবন সবাই মিলে স্বচক্ষে দেখতে পেলাম।
দ্যাখো গোঁসাই চরণচাঁদ আমার
বসিয়েছে চাঁদের বাজার
ভক্তবৃন্দ আসছে যাচ্ছে অবিশ্রাম।
আমার চরণচাঁদের নামের জোরে
কত দুখী তাপী পাপী তরে
হাঁপ কাশি শূল গুড়ুম ব্যথা
মহাব্যাধি হয় আরাম।"
কুবির আরও লিখেছেন, ---
"একের সৃষ্টি সব পারি না পাকড়াতে।
আল্লা আলজিহ্বায় থাকেন আপন সুখে
কৃষ্ণ থাকেন টাকরাতে।"
"এই ব্রজধামের কর্তা যিনি
সেই ধনী এই সাহেবধনী।
রাইধনী এই সাহেবধনী। ।"
এই কুবিরের প্রধান শিষ্য ছিলেন বর্ধমান জেলার পাঁচলাখি গ্রামের যাদুবিন্দু গোঁসাই। নদীয়া জেলার নবদ্বীপ শহরের হিমায়েৎপুর মোড় থেকে বর্ধমান যাবার রাস্তায় নাদনঘাট পেরিয়ে ধাত্রীগ্রামের আগে নাদাই ব্রীজের লাগোয়া গ্রাম এই পাঁচলাখি। এই গ্রামে রয়েছে যাদুবিন্দুর সমাধি। তিনিও লিখেছেন সাহেবধনী সাধনতত্ত্বের গান। গানেই রয়েছে তাঁর পরিচয়, ---
"যাদু বিন্দু এরাই দুজনা
পাঁচলাখি গাঁয় তার ঠিকানা।"
অর্থাৎ যাদু ও তাঁর সাধনসঙ্গিনী বিন্দু এই দুইয়ে মিলে নাম হয় "যাদুবিন্দু।"
যাদুবিন্দুও গান লিখেছেন, ---
"যে ভাবেতে রাখেন গোঁসাই সেইভাবেতে থাকি
অধিক আর বলব কি?
তুমি খাও, তুমি খিলাও
তুমি দাও, তুমি বিলাও
তোমার ভাবভঙ্গি বোঝা ঠকঠকি।
গুরু দুখ দিতে তুমি, সুখ দিতেও তুমি
কুনাম গুনাম সুনাম বদনাম সবই তোমারই
ও কুল্ আলম্ তোমারই ও কুদরতবিহারী
তুমি কৃষ্ণ, তুমিই কালী, তুমি দিলবারি।
কখনও দুগ্ধ চিনি ক্ষীর ছানা মাখন ননী
কখনও জোটে না ফ্যান আমানি
কখনও আ-লবণে কচুর শাক ভখি।
কহিছে বিন্দু যাদু, তুমি চোর, তুমিই সাধু
তুমি এই মুসলমান, এই হিঁদু
তাই তোমারে কুবিরচাঁদ বলে ডাকি। ।"
চৈত্র মাসের চৈতি একাদশীতে অগ্রদ্বীপের বারুণি মেলায় দীনদয়ালের আসন পাতা হয়। ওখানেই বাকসিদ্ধ হয়েছিলেন চরণ পাল। সেখানে তিনদিন ধরে চলে পুজো, মন্ত্রদীক্ষা ও মহোৎসব। দীনদয়ালের ঘরের দীক্ষিত সিদ্ধজনেরা নিজেরাও তাঁদের বাড়িতে গুরুর আসন পাতেন এবং মন্ত্রদীক্ষাও দেন। এঁদের বলা হয় "আসুনে ফকির।" অগ্রদ্বীপের বারুণি মেলায় এইসব আসুনে ফকিররাও গাছতলায় আসন পাতেন এবং ভক্তদের গুরুদীক্ষা দেন। উচ্চবর্ণের গোঁড়া হিন্দু ও গোঁড়া মুসলমানের সামাজিক অনুশাসনের বাইরে এইসব উপধর্মের মানুষজনরা আজও জাতিভেদের মূর্ত প্রতিবাদের প্রতিমূর্তি। স্রোতের বিপরীতে হেঁটে আজও অত্যন্ত কঠিন লড়াই করে টিকে রয়েছেন তাঁরা।
Anim pariatur cliche reprehenderit, enim eiusmod high life accusamus terry richardson ad squid. 3
wolf moon officia aute, non cupidatat skateboard dolor brunch. Food truck quinoa nesciunt laborum
eiusmod. Brunch 3 wolf moon tempor, sunt aliqua put a bird on it squid single-origin coffee nulla
assumenda shoreditch et. Nihil anim keffiyeh helvetica, craft beer labore wes anderson cred
nesciunt sapiente ea proident. Ad vegan excepteur butcher vice lomo. Leggings occaecat craft beer
farm-to-table, raw denim aesthetic synth nesciunt you probably haven't heard of them accusamus
labore sustainable VHS.
Anim pariatur cliche reprehenderit, enim eiusmod high life accusamus terry richardson ad squid. 3
wolf moon officia aute, non cupidatat skateboard dolor brunch. Food truck quinoa nesciunt laborum
eiusmod. Brunch 3 wolf moon tempor, sunt aliqua put a bird on it squid single-origin coffee nulla
assumenda shoreditch et. Nihil anim keffiyeh helvetica, craft beer labore wes anderson cred
nesciunt sapiente ea proident. Ad vegan excepteur butcher vice lomo. Leggings occaecat craft beer
farm-to-table, raw denim aesthetic synth nesciunt you probably haven't heard of them accusamus
labore sustainable VHS.
Anim pariatur cliche reprehenderit, enim eiusmod high life accusamus terry richardson ad squid. 3
wolf moon officia aute, non cupidatat skateboard dolor brunch. Food truck quinoa nesciunt laborum
eiusmod. Brunch 3 wolf moon tempor, sunt aliqua put a bird on it squid single-origin coffee nulla
assumenda shoreditch et. Nihil anim keffiyeh helvetica, craft beer labore wes anderson cred
nesciunt sapiente ea proident. Ad vegan excepteur butcher vice lomo. Leggings occaecat craft beer
farm-to-table, raw denim aesthetic synth nesciunt you probably haven't heard of them accusamus
labore sustainable VHS.