উত্তর ভারত থেকে নেপালে সেনরাজ লক্ষ্মণসেনের উত্তরাধিকারীরা
১২০২ খ্রিস্টাব্দে ইকতিয়ার উদ্দিনের নদীয়া অভিযানের পরেও পূর্ববঙ্গে সেন রাজত্ব সগৌরবে টিকেছিল বহু বছর। এই পূর্ববঙ্গ থেকে সেনরাজ লক্ষ্মীণসেনের উত্তরসূরীরা বিভিন্ন সময়ে সুদূর উত্তর ভারত থেকে নেপাল পর্যন্ত রাজ্য শাসন করেছিলেন। ঐতিহাসিক ড: রমেশচন্দ্র মজুমদার তাঁর "বাঙ্গলা দেশের ইতিহাস, প্রাচীন যুগ" গ্রন্থে লিখছেন, ---
"পঞ্জাবের অন্তর্গত সূকেত, কেউস্থল, কিশ্তওয়ার এবং মাণ্ডি প্রভৃতি ক্ষুদ্র পার্বত্য রাজাদের মধ্যে একটি প্রাচীন প্রবাদ প্রচলিত আছে যে, তাঁহাদের পূর্বপুরুষগণ গৌড়ের রাজা ছিলেন। এই সকল রাজাদের সেন উপাধি হইতে কেহ কেহ অনুমান করেন যে, ইঁহারা বাঙ্গলার সেন রাজাদের বংশধর।"
হিমাচলসহ উত্তর ভারতের বিভিন্ন স্থানে এই বিশ্বাস রয়েছে এবং ওই এলাকার বিভিন্ন রাজবংশের মধ্যে তার সমর্থন রয়েছে। যেমন, হিমাচলি রাজারা নিজেদের চন্দ্র বংশীয় রাজপুত বলে পরিচয় দেন। চন্দ্র বংশীয় ক্ষত্রিয় বীরসেন তাঁদের পূর্বপুরুষ বলে এদিকে গৌড়-বঙ্গের সেন রাজাদের ইতিহাসে উল্লেখ আছে।
অবশ্য গৌড়-বঙ্গের সঙ্গে উত্তর ভারতের প্রাচীনকাল থেকেই যোগাযোগের উল্লেখ পাওয়া যায়। যেমন, কাশ্মীররাজ জয়াপীড়ের এক রাণী গৌড়ের রাজকন্যা ছিলেন। এছাড়া কাশ্মীরাজ ললিতাদিত্য মুক্তাপীড় বাংলায় এসে এখানকার রাজাকে হত্যা করেছেন এবং যার প্রতিশোধ নিতে অল্প কিছু রাজভক্ত সৈন্য কাশ্মীরে গিয়ে রাজার মন্দির ভেঙেছে। শেষে বীরের মতো প্রাণ দিয়েছে, যাদের প্রশংসায় পঞ্চমুখ হয়েছেন "রাজতরঙ্গিণী"-র লেখক কলহন্। সুতরাং, ঐতিহাসিক ড: রমেশচন্দ্র মজুমদার এই লেখার শুরুতে উত্তর ভারতের রাজাদের মধ্যে যে প্রচলিত প্রবাদের কথা উল্লেখ করেছেন, তার ইতিহাসে সমর্থন রয়েছে। শুধু তাই নয়, এল. এইচ. গ্রিফিনের লেখা "রাজস্ অব্ পাঞ্জাব (লণ্ডন, ১৮৭৩)" গ্রন্থেও এই রাজবংশগুলি যে বাংলা থেকে এসেছিলেন তার উল্লেখ করা হয়েছে।
এছাড়া, নেপালের তরাই অঞ্চলের রাজারাও বাংলা থেকে এসেছিলেন বলে সেখানে লোকবিশ্বাস প্রচলিত রয়েছে। দক্ষিণ-পূর্ব নেপালের তরাই অঞ্চলে খ্রিস্টিয় ত্রয়োদশ থেকে অষ্টাদশ শতাব্দী পর্যন্ত যে সেনবংশীয় রাজারা শাসক ছিলেন, তাঁরা বাংলা থেকে এসেছিলেন এবং তাঁরা বাংলার সেনদের একটি শাখা বলে নেপালি ইতিহাসবিদরা বিশ্বাস করেন। দক্ষিণ-পূর্ব নেপালের যে স্থানে সেনরা প্রথম বসবাস শুরু করেন, তার নাম "রূপনগর।" এটি বর্তমানে নেপালের সাগরমাথা অঞ্চলের সপ্তারি জেলার একটি ছোট্ট গ্রাম।
এই রূপনগর থেকে সেনরা প্রথম রাজপাট শুরু করেন। পরে তাঁরা রাজধানী তৈরি করেন মাকোয়ানপুর অঞ্চলে। এর প্রত্নতাত্ত্বিক প্রমাণ রয়েছে। যেমন, মাকোয়ানপুরের কাছে কনকপত্তি গ্রাম ও চন্দ্রভোগা জঙ্গলের মধ্যে পাওয়া গেছে সেনরাজাদের রাজপ্রাসাদসহ মন্দিরের ধ্বংসাবশেষের নিদর্শণ। এছাড়া চন্দ্রভোগা জঙ্গলের মধ্যে রয়েছে সেনরাজ চন্দ্রসেনের গড় অর্থাৎ দুর্গের ধ্বংসাবশেষ, যা স্থানীয় লোকজনদের ভাষায় "চন্দ্রভোগা গড়হি" নামে পরিচিত। সেনরাজ চন্দ্রসেন এই দুর্গ তৈরি করেন বলে স্থানীয় জনশ্রুতি রয়েছে। তাছাড়া, ১৯৯৭-এ প্রবল বৃষ্টিতে এখানে ৩২ ফুট লম্বা ও ১০ ফুট উঁচু একটি ইঁটের প্রাচীরের চিহ্ন বেরিয়ে পড়ে। এরপর ২০০৫-এ প্রত্নতাত্ত্বিক উৎখননে এখানে মাটির পাত্রের টুকরো, পোড়া মাটির নারায়ণ মূর্তির মাথা ও পোড়া মাটির পশুমূর্তি পাওয়া যায়। মাকোয়ানপুরে একটি সিংহবাহিনী ভগবতী মূর্তি স্থানীয়রা পুজো করেন, যেটি সেন আমলের বলে জানা যায়।
কিন্তু এখন প্রশ্ন, বাংলা থেকে সেনরাজারা কখন উত্তর ভারত ও নেপালে যান? এর উত্তর খুঁজতে আমাদের পিছিয়ে যেতে হবে ১২০২ খ্রিস্টাব্দে, তুর্কি সেনানায়ক ইকতিয়ার উদ্দিনের নদীয়া অভিযানের সময়ে। ইকতিয়ার উদ্দিনের হাতে বন্দি হতে না চেয়ে লক্ষ্মণসেন নৌকোযোগে চলে গেলেন পূর্ববঙ্গে। সেখানে তাঁর বংশধর বিশ্বরূপ সেন, কেশবসেনরা প্রায় পঞ্চাশ বছর রাজত্ব করেন। এর মধ্যে বিশ্বরূপ সেন ছিলেন "গর্গযবন" উপাধিতে ভূষিত, যার মানে যবন বিজয়ী।
লক্ষ্মণসেনের আরেক বংশধর ছিলেন সূরসেন (সূর্যসেন? ), যিনি পূর্ববঙ্গ থেকে চলে যান পশ্চিমে প্রয়াগ অর্থাৎ এলাহাবাদে। সেখানেই মৃত্যু হয় তাঁর। তাঁর পুত্র রূপসেন আরও উত্তর-পশ্চিমে পঞ্জাবের শতদ্রু নদীর তীরে হাজির হোন রোপাড়ে এবং স্থানীয় মুসলমানদের যুদ্ধে হারিয়ে সেখানে গড়ে তোলেন নিজের রাজ্য। রোপাড় নামটির রূপসেনের নামের সঙ্গে জড়িত। লাগাতার যুদ্ধে শেষ পর্যন্ত স্থানীয় মুসলমানদের হাতেই রূপসেন নিহত হোন। রূপসেনের তিন পুত্র---বীরসেন, গিরিসেন ও হামীর সেন। তাঁরা তিনজনে আরও নিরাপদ স্থানে উত্তর-পশ্চিমে হিমালয় অঞ্চলে চলে যান এবং সেখানে নিজেদের সাম্রাজ্য গড়ে তোলেন। সুকেতের রাজা হোন বড়ো বীরসেন, মেজ গিরিসেন হোন কেউস্থলের রাজা এবং কিস্তোয়ারের (জম্মু) রাজা হোন ছোট হামীর সেন।
পরবর্তীকালে সুকেতের এক শাখা মাণ্ডিতে গিয়ে আলাদা একটি রাজ্য তৈরি করে সেখানকার রাজা হোন। ওই বংশের প্রথম রাজা হিসেবে বহুসেনের নাম পাওয়া যায়। সেন আমলের কয়েকটি তাম্রশাসন পর্যবেক্ষণ করে মধুসূদন মুখোপাধ্যায়ের অভিমত, সূর্যসেন ছিলেন সম্ভবত লক্ষ্মণসেনের নাতি। ১২০৬ খ্রিস্টাব্দ নাগাদ লক্ষ্মণসেনের মৃত্যুর পর রাজা হোন তাঁর পুত্র "গর্গযবন" বিশ্বরূপ সেন। ওই সময় অসুস্থতার সুযোগে তাঁর পুত্র সূর্যসেন সিংহাসন দখলের চেষ্টা করে ব্যর্থ হোন এবং নির্বাসিত হয়ে ১২১৫-১২২৫ খ্রিস্টাব্দ নাগাদ প্রয়াগে চলে যান। এভাবেই বাংলার সেনবংশীয়রা ছড়িয়ে পড়েন উত্তর ভারত থেকে নেপালে। নেপালের ইতিহাসবিদদের মতে, সেনরা উত্তরবঙ্গের দিক থেকে নেপালে প্রবেশ করেন।
সেনরাজ রূপসেনের নামের সঙ্গে যেমন জড়িয়ে আছে পঞ্জাবে শতদ্রু নদীর তীরে রোপাড়ের নাম, যা এসেছে রূপসেনের নাম থেকে রূপনগর হিসেবে, তেমনি দক্ষিণ-পূর্ব নেপালের যে স্থানে সেনরা প্রথম বসতি গড়ে তোলেন, তার নামটিও রূপনগর। নেপালের এই রূপনগরে প্রথম আসেন সেনবংশীয় মুকুন্দসেন। এরপর আর কোনো রাজার নাম পাওয়া যায় না।
এরপর খ্রিস্টিয় সপ্তদশ শতাব্দীর শেষে দেখা যায়, সেনরাজ্য দুটো ভাগে ভাগ হয়ে গেছে, এক ভাগের রাজধানী থেকে যায় মাকোয়ানপুরে এবং অন্য ভাগের রাজধানী গড়ে ওঠে বিজয়পুরে। খ্রিস্টিয় সপ্তদশ শতাব্দীর শেষ থেকে এই দুটি ভাগেরই রাজাদের নাম পাওয়া যাচ্ছে। যেমন, মাকোয়ানপুর থেকে পাওয়া যাচ্ছে---মানিকসেন, মহীপতিসেন, বিশ্বান্তরসেন (১৭৫১-১৭৫৬ খ্রি: ), কামদত্তসেন (১৭৫৬-১৭৬৯ খ্রি: ) এবং শেষ রঘুনাথসেন। অন্যদিকে, বিজয়পুর থেকে রাজপাট চালাতেন---হেমকর্ণসেন, জগৎসেন (১৭৩০ খ্রি: ), মুকুন্দসেন (১৭৫৩ খ্রি: ), বিক্রমসেন ও শেষ কর্ণসেন।
শেষ রাজা কর্ণসেনের সময়েই পৃথ্বীনারায়ণ শা আস্তে আস্তে নেপালের ছোট-বড়ো রাজ্যগুলি জয় করে গড়ে তোলেন এক সংগঠিত নেপাল রাজ্য। আর কর্ণসেন তাঁর সঙ্গে এঁটে উঠতে না পেরে মন্ত্রী বুদ্ধিকর্ণ রাইয়ের সঙ্গে ১৭৭৪ খ্রিস্টাব্দের জুলাইয়ে প্রথমে সিকিম এবং সেখান থেকে পরে কলকাতায় চলে আসেন।
গৌড়-বঙ্গ থেকে উত্তর ভারত ও নেপালে চলে যাওয়ার সময় সেনদের সঙ্গী হয়েছিলেন বেশ কিছু রাজপুরোহিত, রাজবৈদ্য ও রাজপণ্ডিত। তাঁরা সঙ্গে নিয়েছিলেন প্রচুর সংস্কৃত ও বাংলায় লেখা পুঁথি। এরপর তাঁরা স্থানীয়দের সঙ্গে বৈবাহিক সম্পর্ক গড়ে তোলেন। এর কয়েক পুরুষ পর তাঁরা বাংলা ভাষাই ভুলে যান। এঁদের বংশধররা "গৌড় ব্রাহ্মণ" নামে পরিচিত। উত্তর ভারতের সেনরাজ পরিবারসহ এইসব গৌড় ব্রাহ্মণদের অনেকের বাড়িতে প্রাচীন পুঁথি আছে বলে জানা যায়, যা গৌড়-বঙ্গ থেকে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। এভাবেই গৌড়-বঙ্গের সেনবংশীয় রাজাদের রাজপাট গড়ে উঠেছিল উত্তর ভারত থেকে নেপালে।
তথ্যসূত্র:
1) Rajahs of Panjab (London, 1873): L.H. Griffin.
2) The Sen Dynesty from Begal to Nepal: Basudevlal Das.
3) নেপালকো সংক্ষিপ্ত বৃত্তান্ত: বাবুরাম আচার্য
4) বাঙ্গালার ইতিহাস, প্রথম খণ্ড, মনোমোহন প্রকাশনী, কলকাতা, ১৩৮৯ বঙ্গাব্দ: রাখালদাস বন্দোপাধ্যায়।
5) পশ্চিম হিমালয়ে সেন-রাজবংশ: মধুসূদন মুখোপাধ্যায়, দেশ, ১৪০১.
Anim pariatur cliche reprehenderit, enim eiusmod high life accusamus terry richardson ad squid. 3
wolf moon officia aute, non cupidatat skateboard dolor brunch. Food truck quinoa nesciunt laborum
eiusmod. Brunch 3 wolf moon tempor, sunt aliqua put a bird on it squid single-origin coffee nulla
assumenda shoreditch et. Nihil anim keffiyeh helvetica, craft beer labore wes anderson cred
nesciunt sapiente ea proident. Ad vegan excepteur butcher vice lomo. Leggings occaecat craft beer
farm-to-table, raw denim aesthetic synth nesciunt you probably haven't heard of them accusamus
labore sustainable VHS.
Anim pariatur cliche reprehenderit, enim eiusmod high life accusamus terry richardson ad squid. 3
wolf moon officia aute, non cupidatat skateboard dolor brunch. Food truck quinoa nesciunt laborum
eiusmod. Brunch 3 wolf moon tempor, sunt aliqua put a bird on it squid single-origin coffee nulla
assumenda shoreditch et. Nihil anim keffiyeh helvetica, craft beer labore wes anderson cred
nesciunt sapiente ea proident. Ad vegan excepteur butcher vice lomo. Leggings occaecat craft beer
farm-to-table, raw denim aesthetic synth nesciunt you probably haven't heard of them accusamus
labore sustainable VHS.
Anim pariatur cliche reprehenderit, enim eiusmod high life accusamus terry richardson ad squid. 3
wolf moon officia aute, non cupidatat skateboard dolor brunch. Food truck quinoa nesciunt laborum
eiusmod. Brunch 3 wolf moon tempor, sunt aliqua put a bird on it squid single-origin coffee nulla
assumenda shoreditch et. Nihil anim keffiyeh helvetica, craft beer labore wes anderson cred
nesciunt sapiente ea proident. Ad vegan excepteur butcher vice lomo. Leggings occaecat craft beer
farm-to-table, raw denim aesthetic synth nesciunt you probably haven't heard of them accusamus
labore sustainable VHS.