জেলা বীরভূমের নগরী গ্রামের ভয়-ভক্তির ব্রহ্মদৈত‍্য ও বক্রেশ্বরের শিবরাত্রি মেলা

History of India
shivaratri fair of bakreshwar and brahmadaitya in nagari village of birbhum district
ব্রহ্মদৈত‍্যর আগে ব্রহ্মচারীর কথা বলতে হয়। উপনয়নের সময় ব্রাহ্মণপুত্রকে আড়াই পা ফেলে ঘরে ঢুকতে হয়। ছেলের মা তৈরি থাকেন। ছেলে আড়াই পা ফেলতেই মা তাকে কোলে তুলে নেন। কিন্তু কোনো ছেলের আড়াই পায়ের বদলে তিন পা পড়ে গেলে সে ছেলের আর ঘরে ঠাঁই হয় না। তখন সে হয় ব্রহ্মচারী এবং তাকে ঘর ছাড়তে হয়। তার ঠাঁই হয় গাঁয়ের বাইরে কোনো বেলগাছ কিংবা নিমগাছে। এভাবেই গ্রাম-বাংলার বহু বেল আর নিম গাছে ব্রহ্মচারীর অধিষ্ঠান হয়েছে। শেষ পর্যন্ত সমাজের কঠোর অনুশাসনের যাঁতাকলে পড়ে তাঁরা ব্রহ্মচারী থেকে সন্ন্যাসী হয়েছেন। তাঁদের সাধনালব্ধ ফলে উপকৃত হয়েছে বহু আতুর মানুষ। মৃত্যুর পর কৃতজ্ঞ ভক্তের দল তাঁর অবস্থানের গাছটি বাঁধিয়ে দিয়েছেন, আর সাধ‍্যে না কুলালে নিজেরাই গায়ে-গতরে খেটে অন্তত মাটির ঢিপি তৈরি করে দিয়েছেন ঠিক এখনকার শহীদ বেদির মতো। সমাজের অনুশাসনে ব্রহ্মচারীরাও তো "শহীদ" হয়েছেন !

ব্রহ্মচারীর কোনো নির্দিষ্ট মূর্তি নেই। প্রতীক কিছু শিলাখণ্ড, মাটিতে পোঁতা ত্রিশূল, একজোড়া কাঠের খড়ম ও মাটির ঘোড়া। ত্রিশূল হলো পুরুষ দেবতার প্রতীক।

কিন্তু সকলেই তো আর সমাজের এই অনুশাসন মুখ বুজে মেনে নেননি, স্বভাবতই তাঁরা "বিদ্রোহী" হয়েছেন। আর এই বিদ্রোহী ব্রাহ্মণপুত্র ব্রহ্মচারীরাই তখন হয়ে গেছেন "ব্রহ্মদৈত‍্য।"
প্রবাদ আছে, বামুন মরে কোনো কারণে ব্রহ্মদৈত‍্য হয়।
"আসলে এই 'ব্রহ্মদত‍্যি'রা হলো সমাজের সেই মুষ্টিমেয় ক্ষমতাবান, প্রতিপত্তিশালী মানুষ, যারা সমাজের সংখ্যাগুরু নিরীহ, গরীব সাধারণ মানুষের ওপর অকারণে নানা জোরাজুরি, হম্বিতম্বি করে দাবিয়ে রেখে, নাকাল করে নিজেদের স্বার্থ হাসিল করে।"---"রাঢ় বাংলার মাটি মানুষ ও সংস্কৃতি: ভব রায়
কিন্তু ভব রায়ের উল্টোদিকটাও উঠে আসে আমাদের ক্ষেত্রসমীক্ষায়। যেমন, বীরভূমের রাজনগর থানার বাঁন্দি গ্রামে রয়েছে চৈতন্য-পার্ষদ ব্রহ্মচারী কাশীশ্বর গোস্বামীর থান ( স্থান )। প্রতি বছর মাঘী পূর্ণিমার পর দিন নির্দিষ্ট করে গ্রামের দু'জায়গায় দু'বার এই ব্রহ্মচারীর পুজো ও মহোৎসব হয়। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গ্রামের এক নি: সন্তান "রায়" দম্পতির সন্তান লাভ হয় এই ব্রহ্মচারীর কৃপায়। তাই ওই পরিবারের লোকজন কৃতজ্ঞচিত্তে ফি বছর এই ব্রহ্মচারী স্মরণ উৎসবের আয়োজন করেন। এছাড়া গ্রামের কোনো শিশুর অন্নপ্রাশন, নবান্ন থেকে শুরু করে যে কোনো শুভ অনুষ্ঠানে প্রথম ভোগ নিবেদন করা হয় এখানে।
বীরভূমের সিউড়ি থানার নগরী গ্রামের ব্রহ্মদৈত‍্য মেলা এলাকায় বিখ্যাত। সূর্যের উত্তরায়ণ গতি শুরু হয় ১ লা মাঘ। আর এই দিনেই গ্রাম-বাংলার ঝোপঝাড়ে অসংখ্য লৌকিক দেবতার পুজো হয়। উইলিয়াম উইলসন হাণ্টারের লেখা "অ্যানালস্ অব্ রুরাল বেঙ্গল" এবং শিকারি লেখক জিম করবেটের লেখায় এই নগরী গ্রামের ব্রহ্মদৈত‍্য পুজোর উল্লেখ আছে। সব চেয়ে আশ্চর্যের বিষয় হলো, ফুল-ফল-মিষ্টি নয়, এখানকার ব্রহ্মদৈত‍্য পুজোর আদি এবং মূল উপকরণ হলো মাটি। এক প্রকাণ্ড বটগাছের তলায় ব্রহ্মদৈত‍্যর অবস্থান। ভক্ত মানুষের দল কাছের একটি পুকুর থেকে হাত দিয়ে মাটি খুঁড়ে তাল পাকিয়ে মাথায় করে বয়ে এনে বটগাছের তলায় নৈবেদ্য হিসেবে নিবেদন করে থাকেন। আর এই নৈবেদ্যর মাটি নিতে নিতেই ভক্ত জনগণের হাতে তৈরি হয়েছে এই বিরাট পুকুরটি।
নগরী গ্রামের একদিনের এই ব্রহ্মদৈত‍্য মেলার মূল বিষয়বস্তুই হলো মাটি। ঘর গেরস্থালির জন্য দরকারি মাটির জিনিস হলো এ মেলায় বিখ্যাত। এলাকার মানুষ একসময় গোরুর গাড়ি করে মাটির কলসি-হাঁড়ি-ধান ভেজানো পাতনা-গোরুর খাবার দেওয়ার জন্য ডাগরা-সাঁঝের প্রদীপ-ধূপ দেওয়ার ধূপুপি প্রভৃতি বয়ে নিয়ে যেতো। এখনো যায়।
প্রবাদ, রাতের বেলায় এখানে কেউ থাকতে পারে না। আর এই ভীতিকে কাজে লাগিয়েই নির্জন জঙ্গলের মাঝে এসব স্থানগুলো একসময় হয়ে উঠেছিল ডাকাতদলের আস্তানা। এই জোড়া ভয়েই সাধারণ মানুষ রাতে এসব স্থানে রাত কাটাতে চাইতো না। সেই ভয়-ভীতির ধারা এখনো চলে আসছে।
নগরীর এই ব্রহ্মদৈত‍্য থানে শিশুদের রিকেট ও সাধারণ মানুষের রাতকানা রোগ আরোগ্য হয় বলে প্রবাদ রয়েছে।
তবে পরবর্তীকালে নগরীর ব্রহ্মদৈত‍্য থানের দখল নিয়েছেন স্থানীয় ব্রাহ্মণরা। তাই ১ লা মাঘ পুজোর দিনে দেখা যায়, পাশেই ব্রাহ্মণরা হোম-যজ্ঞ করছেন, জনগণের কাছ থেকে ফল-মিষ্টিসহ পুজোর ডালি নিচ্ছেন। বর্তমান ঝাড়খণ্ডের রাণীশ্বরে রয়েছেন রাণীশ্বর শিব। এলাকার রাণীর আরাধ্য শিব বলে শিবের নাম "রাণীশ্বর" এবং তা থেকে জায়গার নামও হয়েছে "রাণীশ্বর।" এখানে আশ্চর্যজনকভাবে শিবমন্দির পশ্চিমমুখী। শিবমন্দির সাধারণত পশ্চিমমুখী হয় না, কিন্তু এখানে ব‍্যতিক্রমীভাবে শিব পশ্চিমমুখী। এই রাণীশ্বর শিবের পাশেই রয়েছে ব্রহ্মচারী গয়াগিরি গোস্বামীর সমাধি। প্রবাদ, এই ব্রহ্মচারী থানের মাটি খেলে এবং পেটে মাখলে দূরারোগ্য অম্লশূল ব‍্যাধি আরোগ্য হয়। এইসব ব্রহ্মচারী বা ব্রহ্মদৈত্যরা একসময় রক্ত-মাংসের মানুষ ছিলেন। সমাজের ব্রাত‍্য মানুষদের সঙ্গে তাদের ছিল নিবিড় যোগ। মৃত্যুর পর মানুষের চোখে তাঁরা আজ "দেবতা" হয়েছেন।
অন্যদিকে, সন্ন্যাসীর সংজ্ঞা হিসেবে গীতায় বলা হচ্ছে,
"জ্ঞেয় স নিত‍্য সন্ন্যাসী যো ন দেষ্টি ন কাঙ্ক্ষতি।"
অর্থাৎ, রাগদ্বেষাদি ত‍্যাগপূর্বক পরমেশ্বরার্থ কর্মানুষ্ঠাতা।
আবার তন্ত্রের ভাষায় "ব্রহ্ম" মানে হলো পুরুষের বীর্য বা শুক্র। আর এই "ব্রহ্ম"ধারী ব‍্যক্তিই হচ্ছেন ব্রাহ্মণ অর্থাৎ শক্তিশালী। ব্রহ্মচারী বা ব্রহ্মদৈত‍্যদের আজও "কোনো কোনো ভাগ্যবানে দেখিবারে পায়।" তাই রাতে কোথাও দেখা যায় ছায়ামূর্তির যাতায়াত, শোনা যায় চিমটে-খড়মের আওয়াজ। কোথাও ভেসে আসে মিষ্টি ফুলের সুবাস। এঁরা জৈন ও বৌদ্ধ শ্রমণের ছায়ারূপ, যা পাল আমল থেকেই মানুষের মনে গেঁথে আছে। কারণ, পাল আমলেই বৌদ্ধধর্ম রাজধর্ম হিসেবে ব‍্যাপক বিস্তৃতি লাভ করেছিল বাংলায়। পরবর্তীকালে সেন রাজত্বে পুনরায় ব্রাহ্মণ‍্যধর্মের প্রাধান্য প্রতিষ্ঠিত হলে বিভিন্ন জৈন ও বৌদ্ধ সন্ন্যাসী বা শ্রমণরা এভাবেই ছায়া হয়ে রয়ে গেলেন বাংলার বৃহত্তর ব্রাত্য জনগোষ্ঠীর কাছে ব্রহ্মচারী-ব্রহ্মদৈত‍্য হিসেবে। আজও জৈন ও বৌদ্ধধর্মের শ্রমণরা সেই ছায়া হয়ে কোথাও ব্রহ্মচারী, কোথাও বা ব্রহ্মদৈত‍্য নামে লোকদেবতা হিসেবে পুজিত হচ্ছেন।
এবার আসি বক্রেশ্বরের শিবরাত্রির মেলার ইতিবৃত্তে। এটিকে বলা যায়, শিবঠাকুরের বিয়ে ও ইতিহাসের আলোকে বক্রেশ্বর মেলা উত্তর-রাঢ় বীরভূমের বছরের শেষ বড়ো মেলা বক্রেশ্বর মেলা। একটানা আটদিন ধরে চলে আসা এই প্রাচীন মেলার শুরু "ডিহি বক্রেশ্বর" থেকে। ... বীরভূমের জেলা সদর সিউড়ি থেকে ২২ কিলোমিটার দূরে অতীতের "ডিহি-বক্রেশ্বর" এখন গ্রাম বক্রেশ্বর।"ডিহি" একটি সাঁওতালি শব্দ, যার অর্থ "জঙ্গল অধ‍্যুষিত বাসভূমি।" ঘন জঙ্গলের মাঝে ছোট ছোট জনবসতি পরিচিত ছিল "ডিহি" নামে। বীরভূম জুড়ে যে একসময় জঙ্গল ঘেরা জনবসতি ছিল, কাছাকাছি খয়রাডিহি, মানিকডিহি নামগুলোই তার প্রমাণ। বক্রেশ্বর একই সঙ্গে সতীপীঠ ও শৈবক্ষেত্র। আজ থেকে প্রায় সাড়ে তিন হাজার বছর আগে ঋষি অষ্টাবক্র এখানে শিবের তপস্যা করে "গুপ্তকাশী" বক্রেশ্বরকে প্রকটিত করেন এবং তাঁর নাম অনুসারেই এ স্থানের নাম হয় "অষ্টাবক্রেশ্বর" বা সংক্ষেপে "বক্রেশ্বর।"
বক্রেশ্বর শিবমন্দিরের সামনে উপরের অংশে কালো পাথরে খোদিত একটি শিলালিপি ছিল, এখন আর নেই। এই জীর্ণ লিপির কিছুটা অংশ পাঠোদ্ধার করে প্রাচ‍্যবিদ‍্যামহার্ণব নগেন্দ্রনাথ বসু "নরসিংহ" নামটি পেয়েছিলেন। এই নামটির সঙ্গেই জুড়ে যায় বক্রেশ্বর শিবের বর্তমান ইতিহাস। জানা যায়, এই "নরসিংহ" হলেন উড়িষ্যারাজ প্রথম নরসিংহদেব ( ১২৩৮ খ্রি: -১২৬৪ খ্রি: )। উড়িষ্যার গঙ্গাবংশীয় রাজা তৃতীয় অনঙ্গভীমের পুত্র ( ১২১১খ্রি: -১২৩৮ খ্রি: ) এই প্রথম নরসিংহদেব লক্ষ্মণাবতীর শাসক তুগরাল তুগান খানের রাজত্বকালে ( ১২৩৭ খ্রি: -১২৪৫ খ্রি: ) রাজনগরের জায়গিরদার ফকর-উল্-মুলুক করিমউদ্দিন ল‍্যাংঘ্রিকে পরাজিত ও নিহত করে বীরভূমের রাজধানী রাজনগর দখল করে নেন ১২৪৩ খ্রিস্টাব্দে। বক্রেশ্বর ধাম ছিল রাজনগরের অধীন। রাজনগর কালীদহের মাঝে আজও মাথা তুলে দাঁড়িয়ে রয়েছে উড়িষ্যারাজ প্রথম নরসিংহদেবের রাজনগর জয়ের স্মারক বিজয়স্তম্ভ। বক্রেশ্বরের প্রাচীন মন্দিরটি প্রাকৃতিক কারণে ভেঙে গেলে প্রথম নরসিংহদেব তা তৈরি করে দেন। মন্দিরের গায়ে খোদিত লিপি সে কথাই প্রমাণ করে।
পরবর্তীকালে রাজনগরের "বীর রাজা" বসন্ত চৌধুরী বক্রেশ্বর শিবের সেবা-পুজোর জন্য খ্রিস্টিয় পঞ্চদশ শতাব্দীর প্রথমার্ধে বর্ধমান জেলার শিল্পনগরী দুর্গাপুরের কাছে আমড়াই গ্রাম থেকে ব্রাহ্মণ পাণ্ডাদের আনিয়েছিলেন। প্রথম আসেন শ্রীনাথ আচার্য। অনার্য অধ‍্যুষিত ডিহি বক্রেশ্বরে সেই প্রথম গড়ে উঠলো ব্রাহ্মণ বসতি।"আচার্য"-দের আদি পদবি ছিল "চট্টোপাধ্যায়।" বক্রেশ্বর শিবের আচার্যপদে বহাল হয়ে তাঁদের নতুন পদবি হলো "আচার্য" এবং এখনো তাঁরা এই পদবিই ব‍্যবহার করছেন। রাজনগরের "বীর রাজা" বসন্ত চৌধুরী বক্রেশ্বর শিবের সেবা-পুজোর জন্য হাজার বিঘে নিষ্কর "লাখেরাজ" জমিও দান করেছিলেন।"লাখেরাজ" আরবি শব্দ, যা সন্ধি করলে দাঁড়ায় "লা + খিরাজ" =লাখেরাজ। লাখেরাজ মানে চিরকাল ভোগ‍্য সম্পত্তি। এই "লাখেরাজ" এখন লোকমুখে হয়েছে " বাবার লাগরাজ।" "বাবা" বলতে এখানে বক্রেশ্বর শিব। সাহিত্যরত্ন হরেকৃষ্ণ মুখোপাধ্যায় বক্রেশ্বরের এক পাণ্ডার কাছে একটি সনদে দেখেছিলেন, "ডিহি বক্রেশ্বর দেবত্তর মৌজা দরবস্ত ও চক গঙ্গারামের ডিহি ও চক শিবপুর সাবিক বীররাজার দত্ত।"
খ্রিস্টিয় পঞ্চদশ শতাব্দীর প্রথমার্ধে ডিহি বক্রেশ্বরে ব্রাহ্মণ বসতি গড়ে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে বক্রেশ্বর শিবের সেবাপুজো নিয়মিত হয়ে ওঠে। ততদিনে বক্রেশ্বরের আদি সতীপীঠ প্রাকৃতিক কারণে তলিয়ে গেছে ডোম পাড়ার ধরম গোড়ের জলে। জঙ্গল ঘেরা ডিহি বক্রেশ্বরে তখন বাঘ-ভালুকের অবাধ বিচরণ। সেজন্য সেবাইতরা বিকেল বেলাতেই শিবমন্দিরে ১০/১২ জন মিলে লাঠি হাতে পায়েস ভোগ নিবেদন করে সন্ধ্যাপ্রদীপ জ্বেলে বাড়ি ফিরে আসতো আচার্যদের বর্তমান পারিবারিক দুর্গামন্দির এলাকায়। তড়িঘড়ি ভোগ তৈরি করতে হতো বলে শুধুমাত্র পায়েসের ব‍্যবস্থা ছিল। বক্রেশ্বর মেলা তখনও শুরুই হয়নি। পরবর্তীকালে বক্রেশ্বরে বিভিন্ন সাধুসন্তদের আগমন ঘটতে থাকে এবং সেই সঙ্গে তাঁদের শিষ‍্য-ভক্তরাও যেমন আসেন, তেমনি জনসংখ্যাও বাড়তে থাকে বক্রেশ্বরে। বক্রেশ্বর শিবকে ঘিরে শুরু হয় নানান উৎসব অনুষ্ঠান। এই রকম এক অনুষ্ঠান শুরু হলো শিবচতুর্দশী উপলক্ষে "শিবের বিয়ে।" এটিই পরে মেলার রূপ নেয়। হুগলি জেলার চুঁচুড়ার ওলন্দাজ গভর্ণর ম‍্যাথু ভ‍্যান্ ব্রুক ( ১৬৫৮-৬৪ খ্রি: ) ভারতের একটি মানচিত্র তৈরি করেন। এই মানচিত্রে বক্রেশ্বর নামের পাশাপাশি এখান থেকে দক্ষিণ-পূর্ব ও উত্তর-পূর্বদিকে মুর্শিদাবাদের কাশিমবাজার পর্যন্ত দুটি রাস্তার উল্লেখ দেখা যায়। এ থেকে বোঝা যাচ্ছে, বক্রেশ্বরের স্থান-মাহাত্ম্যের কথা বহু দূরের মানুষজনেরাও জেনে গেছে এবং ততদিনে এই দুটি পথ ধরে তীর্থযাত্রীরা আসা-যাওয়া করেছেন।
ব্রিটিশ ভারতে ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দ নাগাদ সিদ্ধ সাধক এবং বক্রেশ্বরের বহুবিধ সংস্কারের পুরোধা পুরুষ খাঁক সম্প্রদায়ের সন্ন্যাসী খাঁকি বাবা বহু উন্নয়নমূলক কাজ করে গেছেন এখানে। তিনিই বর্তমান মহিষমর্দিনী মন্দিরটি নির্মাণ করিয়ে সেখানে সতীর ভ্রূ-সন্ধি চিহ্নিত কালো পাথরটি প্রতিষ্ঠা করেন।

১৮২৩ খ্রিস্টাব্দের ১৩ ডিসেম্বর হুগলির শ্রীরামপুর থেকে প্রকাশিত "সমাচার দর্পণ" পত্রিকায় বক্রেশ্বর তীর্থের কথা লেখা হয়েছিল। এর মধ্যে "শিবের বিয়ে" শিবরাত্রি বা শিবচতুর্দশী মেলার আকার নিয়েছে। বাংলা ১১৯৭ সালের ২২ শে বৈশাখ সিউড়ির চার মাইল দক্ষিণে অবস্থিত গজালপুর নিবাসী শম্ভুনাথ মুখোপাধ্যায়ের লেখা পুঁথি থেকে আমরা বক্রেশ্বর শিবরাত্রির মেলার বিবরণ পাচ্ছি এইভাবে:

"তিথি পাইঞা শিবরাত্রি আসি যাছে কত যাত্রী
কত শত নৃপতিনন্দন।
নৃপগণ বসি ঠাটে দেখে নানা গীত নাটে
গুণীগণে দেয় নানা দান। ।"
মূলত বক্রেশ্বরে আগত বিভিন্ন সাধুসন্তদের শিব সাধনার সঙ্গে সেবাইতদের সুরও মিলে যায় এবং এর ফলেই বক্রেশ্বর শিবরাত্রি মেলার সূত্রপাত ঘটে। হিন্দুদের বিয়ের রীতি রাতের বেলা। সেজন্য এখানে শিবের বিয়ের অনুষ্ঠান হয় রাতেই। বিয়ের আগে গৃহস্থ বাড়িতে যেমন জামা-কাপড় পরিস্কার করা হয়, তেমনি "শিবের বিয়ে"-র আগের দিন অর্থাৎ শিবরাত্রির আগের দিন বক্রেশ্বরসহ চারপাশ এলাকার মেয়ে-বৌরা সোডা দিয়ে ক্ষারে কাপড় কেচে পরিস্কার করতো একসময়। আসলে আজকের বক্রেশ্বর শিবচতুর্দশী বা শিবরাত্রির মেলার পূর্বরূপ হলো "শিবের বিয়ে"-র অনুষ্ঠান।
সতীপীঠ বক্রেশ্বরে এই শিবরাত্রি উপলক্ষে আট দিন ধরে চলে আসছে এই মেলা। এর মূলেও রয়েছে সেই হিন্দু বিয়ের রীতি। হিন্দু বিয়ের রীতি অনুযায়ী আট দিনে হয় "অষ্টমঙ্গলা।" তাই আট দিন ধরে চলে মেলা।
বক্রেশ্বরসহ চারপাশের গ্রামের মানুষের মধ্যে এখনো রেওয়াজ আছে, "শিবের বিয়ে" না হলে তাদের বাড়ির ছেলেমেয়েদের বিয়ে হয় না। তাই বিয়ের দিন স্থির হয় শিবরাত্রির পর। ত্রয়োদশীর সন্ধ্যা থেকেই শুরু হয়ে যায় বক্রেশ্বর শিবের মন্দির সাজানোর কাজ, একেবারে বিয়ে বাড়ির অনুষ্ঠানের মেজাজে। এরপর শিবরাত্রির দিন হয় তিনটি বিশেষ অনুষ্ঠান, ১) মন্দির চূড়ার ধ্বজা পরিবর্তন, ২) বক্রেশ্বর শিবকে পঞ্চাননরূপে শৃঙ্গার, ৩) এবং দুপুরে অন্যান্য দিনের পায়েসের বদলে কাঁচা সন্দেশের ভোগ। এক সময় মানুষ গোরুর গাড়ি চেপে সপরিবারে মেলায় আসতো এবং তাঁবু খাটিয়ে তিন-চারদিন থাকতো। তারপর সারা বছরের ঘর-গেরস্থালির হাতা-খুন্তি-পাথর বাটি কিনে বাড়ি যেতো। হোটেল ছিল না। অনেক তীর্থযাত্রী পাণ্ডাদের বাড়িতেই থাকতেন।
আগে মেলায় পুতুল নাচ, সিনেমা, সার্কাস, নন্দন-কানন কলাভবন, নাগরদোলা, চিড়িয়াখানা, ম‍্যাজিক শো প্রভৃতি হরেক বিনোদন আসতো। মাটিতে পাতা চটে বসে ঊনিশ পয়সা টিকিটে সিনেমা দেখতো গ্রামের মানুষ। ইলেকট্রিক ছিল না। সব চলতো ভটভট্ আওয়াজের জেনারেটরে। তেলেভাজা, জিলিপি, মিষ্টির দোকান বসতো প্রচুর। ছোটদের হারিয়ে যাওয়ার ভয় ছিল। উঠতি বয়সের ছেলে-মেয়েদর কেউ কেউ আবার ইচ্ছে করেই মেলার ভিড়ে হারিয়ে যেতো।
মেলা শেষে গ্রামের মানুষ এক কাঁদি কলা কাঁধে বাড়ি ফিরতো।
বর্তমানে মেলার চরিত্র বদলেছে। জনবসতি বেড়ে যাওয়ায় কমেছে মেলার পরিধি। মেলায় এখন শহরের মানুষ বেশি আসছেন। আর গ্রামের মানুষেরাও ঘন্টা দু'য়েক ঘোরাঘুরি করে বাড়ি ফিরে যান। তবুও এলাকার গ্রামীণ অর্থনীতিকে বছরের শেষ বড়ো মেলা নিয়ন্ত্রণ করে অনেকখানি। শিবরাত্রির পরের দিন বক্রেশ্বরের বিভিন্ন আশ্রমে মহোৎসবের খিচুড়ি বিলি হয় আজও।
Anim pariatur cliche reprehenderit, enim eiusmod high life accusamus terry richardson ad squid. 3 wolf moon officia aute, non cupidatat skateboard dolor brunch. Food truck quinoa nesciunt laborum eiusmod. Brunch 3 wolf moon tempor, sunt aliqua put a bird on it squid single-origin coffee nulla assumenda shoreditch et. Nihil anim keffiyeh helvetica, craft beer labore wes anderson cred nesciunt sapiente ea proident. Ad vegan excepteur butcher vice lomo. Leggings occaecat craft beer farm-to-table, raw denim aesthetic synth nesciunt you probably haven't heard of them accusamus labore sustainable VHS.
Anim pariatur cliche reprehenderit, enim eiusmod high life accusamus terry richardson ad squid. 3 wolf moon officia aute, non cupidatat skateboard dolor brunch. Food truck quinoa nesciunt laborum eiusmod. Brunch 3 wolf moon tempor, sunt aliqua put a bird on it squid single-origin coffee nulla assumenda shoreditch et. Nihil anim keffiyeh helvetica, craft beer labore wes anderson cred nesciunt sapiente ea proident. Ad vegan excepteur butcher vice lomo. Leggings occaecat craft beer farm-to-table, raw denim aesthetic synth nesciunt you probably haven't heard of them accusamus labore sustainable VHS.
Anim pariatur cliche reprehenderit, enim eiusmod high life accusamus terry richardson ad squid. 3 wolf moon officia aute, non cupidatat skateboard dolor brunch. Food truck quinoa nesciunt laborum eiusmod. Brunch 3 wolf moon tempor, sunt aliqua put a bird on it squid single-origin coffee nulla assumenda shoreditch et. Nihil anim keffiyeh helvetica, craft beer labore wes anderson cred nesciunt sapiente ea proident. Ad vegan excepteur butcher vice lomo. Leggings occaecat craft beer farm-to-table, raw denim aesthetic synth nesciunt you probably haven't heard of them accusamus labore sustainable VHS.