কর্তাভজা সম্প্রদায়, সতী মা ও ঘোষপাড়ার সতী মার মেলা
পশ্চিমবঙ্গের নদীয়া জেলার কল্যাণী যাবার পথেই রেলওয়ে স্টেশন ঘোষপাড়া। এখানেই অনুষ্ঠিত হয় কর্তাভজা সম্প্রদায়ের মানবী দেবী সতী মায়ের মেলা। এ মেলা মানুষের মেলা। মনের কৌতূহল যদি থাকে, তবে যেতেই হবে ঘোষপাড়ার সতী মার মেলায়।
বাউল গানে বহুবার শুনেছেন,
"ঘরের কাছেই আরশিনগর
সেখানে এক পড়শী বসত করে। ..."
কি এই আরশিনগর? পড়শীই বা কে?
শাক্ত সাধকরা যাকে বলেন, আজ্ঞাচক্র অর্থাৎ দুই ভ্রূর মধ্যবর্তী যে স্থান, সেখানে মনের অবস্থান। আউল-বাউল-কর্তাভজা সম্প্রদায়ের মতো উপধর্মের সাধকরা এই ভ্রূ-সন্ধির স্থানটিকেই বলেন "আরশিনগর।" যেহেতু এখানে মনের অবস্থান, তাই এখানেই বাস করে মনের মানুষ, যার নাম "পড়শী।" আর এই দেহের আজ্ঞাচক্রের আরশিনগরে যেতে গেলে পড়শী ধরতে হবে অর্থাৎ মানুষের সঙ্গ করতে হবে।
কথা হচ্ছিল কর্তাভজা নিয়ে। কর্তাভজা মতের প্রবর্তক হলেন নদীয়ার ঘোষপাড়ার আউলচাঁদ। ভক্তরা তাঁকে গোরাচাঁদ অর্থাৎ শ্রীচৈতন্যের অবতার হিসেবে মানেন। তাঁদের বিশ্বাস, শ্রীক্ষেত্র পুরীতে গোপীনাথের মন্দিরে গোরাচাঁদ হারিয়ে গিয়েছিলেন। তারপর ঘোষপাড়ায় আউলচাঁদের রূপে তাঁর উদয় হয়। এই অবতারে তিনি গৃহীদের জন্য তৈরি করেন কর্তাভজা ধর্মপথ। শোনা যায়, ১৬৯৪ খ্রিস্টাব্দে নদীয়া জেলার শান্তিপুরের কাছে ঊলা গ্রামের মহাদেব নামে এক গ্রামবাসী পানের বরোজে এক শিশুপুত্রকে কুড়িয়ে পান। দিনটা ছিল পূর্ণিমা। তা থেকে শিশুটির নাম রাখা হয় "পূর্ণচন্দ্র।" প্রথমে বিভিন্ন ধর্মশাস্ত্র পড়ে পণ্ডিত হোন তিনি এবং পরে বৈষ্ণব হোন। তখন তাঁর নাম হয় "আউলচাঁদ।" এরপর বেরিয়ে পড়েন ঘর ছেড়ে।
ঘুরতে ঘুরতে আসেন নদীয়ার ঘোষপাড়ায়। সেখানকার বাসিন্দা রামশরণ পালের দ্বিতীয়া স্ত্রী সরস্বতী তখন মরণাপন্ন। পুকুর থেকে মাটি এনে সরস্বতীর সারা গায়ে লেপে দেন আউলচাঁদ। কিছুক্ষণ পরেই সুস্থ হয়ে ওঠেন সরস্বতী। পরবর্তীকালে তিনিই "সতী মা" নামে পরিচিত হোন। এই আউলচাঁদের ২২ জন শিষ্য।
"সহজতত্ত্ব প্রকাশ" গ্রন্থ অনুসারে এঁরা হলেন, ---
"শুন সবে ভক্তিভাবে নামমালা কথা।
বাইশ ফকিরের নাম ছন্দেতে গাঁথা। ।
জগদীশপুর নিবাসী বেচু ঘোষ নাম।
শিশুরাম কানাই নিতাই নিধিরাম। ।
ছোট ভীম রায় বড় রমানাথ দাস।
দেদো কৃষ্ণ গোদাকৃষ্ণ মনোহর দাস। ।
খেলারাম ভোলা নাড়া কিনু ব্রহ্মহরি।
আন্দিরাম নিত্যানন্দ বিশু পাঁচকড়ি। ।
হটু ঘোষ গোবিন্দ নয়ান লক্ষ্মীকান্ত।
ইহারাই ভক্তিপ্রেমে অতিশয় শান্ত। ।
পূর্বের অনুষঙ্গী এই বাইশজন।
এরাই করিল আসি হাটের পত্তন। ।"
এঁদের মধ্যে অন্যতম প্রধান হলেন ঘোষপাড়া, মূরতিপুরের সদগোপ বংশোদ্ভূত রামশরণ পাল। উপরের তালিকায় অবশ্য রামশরণ পালের নাম নেই। তবুও তিনি ছিলেন আউলচাঁদের অন্যতম প্রধান শিষ্য। এই রামশরণ পালের দ্বিতীয় পক্ষের স্ত্রীর নাম সরস্বতী। এই সরস্বতীর আদ্যক্ষর "স" এবং শেষ অক্ষর "তী" মিলে হয় "সতী।" ভক্তদের কাছে "সতী মা।" আর রামশরণ ও সতী মার একমাত্র সন্তান হলেন দুলালচাঁদ। দুলালের "লাল" এবং চাঁদের পরিবর্তে তার প্রতিশব্দ "শশী" লাগিয়ে দুলালচাঁদ নাম নিয়েছিলেন "লালশশী।"
ব্রাহ্মণ্যবাদী হিন্দুদের কাছে যা "গুরুপুজো", আউলচাঁদ পন্থীদের কাছে তা হচ্ছে "কর্তাভজা।" কোনোরকম মূর্তিপুজো নয়, শুধুমাত্র গুরুপুজো হচ্ছে কর্তাভজা সম্প্রদায়ের সাধনপথ। কর্তাভজা সাধন নিয়ে গান লিখেছেন দুলালচাঁদ ওরফে লালশশী।
একটি গানে রয়েছে, ---
"তাঁর হুকুম আছে শুক্রবারে সৃষ্টির উৎপত্তি
সেই দিনেতে সবে হাজির হবে
যে দেশেতে আছে যার বসতি।
আছে যে দেশেতে যে মানুষ সবে হাজির হন
পরস্পর সেই অষ্টপ্রহর পরেতে স্ব স্ব স্থানে যান।
এই শুক্রবারে প্রহর রাত্রে লয়ে আশীর্বাদ
যার মনে যা বাঞ্ছা আছে, পূর্ণ হয় সে সাধ।"
লালশশীর লেখা যে গান, সেটাই হলো কর্তাভজা সম্প্রদায়ের ধর্মপুস্তক। এটিকে তাঁরা বলে থাকেন "আইন পুস্তক।" শুক্রবার সন্ধেবেলায় এই আইন পুস্তক থেকেই গান করেন ভক্তরা। এখানে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে, শুক্রবার হলো মুসলমানদের কাছে "জুম্মাবার", আবার খ্রিস্টানদের কাছেও এক শুক্রবার মানে "গুড ফ্রাইডে", যা কিনা যীশুর পুনরুত্থানের দিন। তাই বোঝা যায়, ইসলাম ও খ্রিস্টানকে মেলানোর চেষ্টা রয়েছে কর্তাভজা সম্প্রদায়ের মধ্যে।
কর্তাভজা মতের প্রবক্তা আউলচাঁদের সঙ্গে নিশ্চয়ই কোনো ফকিরি ধর্মের যোগাযোগ ছিল, লালশশীর গানেও তাই শুক্রবারকে গুরুত্ব দিয়ে সেদিনেই ভক্তদের একসঙ্গে মিলিত হবার কথা বলা হয়েছে। আর বাস্তবে বহু মুসলমান সম্প্রদায়ের মানুষ আউলচাঁদের কর্তাভজা সাধন পথের পথিক হয়েছিলেন। ধর্মভেদ, জাতিভেদ প্রথাকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে খ্রিস্টিয় অষ্টাদশ- ঊনবিংশ শতাব্দীর সন্ধিলগ্নে বহু হিন্দু-মুসলমান এই কর্তাভজা দলে সামিল হয়েছিলেন।
খ্রিস্টিয় ঊনবিংশ শতকের লেখাপড়া জানা মানুষ ছিলেন দুলালচাঁদ ওরফে লালশশী। সংস্কৃত, বাংলা, ইংরেজি, পারসি---এই চারটি ভাষায় দখল ছিল তাঁর।
মাত্র সাত বছর বয়সে ১৭৮৩ খ্রিস্টাব্দে পিতা রামশরণ পালকে হারান দুলালচাঁদ। এরপর মা সরস্বতী "সতী মা " নাম নিয়ে কর্তাভজাদের নেতৃত্ব দেন। তারপর দুলালের বয়স যখন ১৬ বছর, তখন তাঁর হাতেই আসে কর্তাভজাদের নেতৃত্ব। তাঁর লেখা গান "ভাবের গীত" কর্তাভজাদের কাছে আইন পুস্তকে পরিণত হয়। এই গানগুলি মুখে মুখে বলে যেতেন দুলাল, আর লিখতেন বেলুড়ের এক তান্ত্রিক সন্ন্যাসী, নাম---রামচরণ চট্টোপাধ্যায়। ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য ও শূদ্র---এই চার জাতের চার কন্যাকে বিয়ে করেছিলেন দুলালচাঁদ। উদ্দেশ্য, কর্তাভজা সম্প্রদায়কে সব জাতের মিলনক্ষেত্রে পরিণত করা। এই চার স্ত্রীর গর্ভে পাঁচটি পুত্র সন্তানের জন্ম হয়েছিল।
কিন্তু ১৮৩৩ খ্রিস্টাব্দে অকালেই মৃত্যু হয় দুলালচাঁদের। তবে ততদিনে দুলালচাঁদের সাংগঠনিক দক্ষতায় পিতা রামশরণ পালের মৃত্যুর পর মা সতী মায়ের বিভিন্ন অলৌকিক কাহিনী প্রচারিত হয়ে কর্তাভজা সম্প্রদায়কে প্রতিষ্ঠিত করে দিয়েছিল। ১৮১৮ খ্রিস্টাব্দে কর্তাভজা সম্প্রদায়ের শিষ্যভক্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছিল ২০ হাজার। আগে ঘোষপাড়ার এলাকা ছিল দক্ষিণে কল্যাণী উপনগরী, উত্তরে চরবীর পাড়া, পূর্বে কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়, পশ্চিমে চরসবাটি পর্যন্ত। একসময় আম-লিচুর বাগান ঘেরা প্রায় ৬০০ বিঘে জমিতে সতী মার মেলা বসতো। বর্তমানে তা কমে দাঁড়িয়েছে ৩০ একর। এর মধ্যে জবর দখলের অভিযোগে মামলা-মোকদ্দমা রয়েছে।
ঘোষপাড়ায় আয়োজিত হয় সতী মার দোলমেলা। এই সতী মার মেলায় আছে "হিমসাগর", যেখানকার জলে ভক্ত আর ব্যাধিগ্রস্তরা স্নান করেন এবং তারপর পরম বিশ্বাসে রোগ আরোগ্যের আশায় ডালিমতলার মাটি মাখেন ও ভক্ষণ করেন। খ্রিস্টিয় অষ্টাদশ শতাব্দীতে আলখাল্লাধারী আউলচাঁদ সুফি ধর্মের আদলে যে কর্তাভজা সম্প্রদায় গড়ে তুলেছিলেন, সে দলে বহু মুসলমান যোগ দিয়েছিলেন।
১৮৩৩ খ্রিস্টাব্দে দুলালচাঁদের অকাল মৃত্যুর পর কর্তাভজা সম্প্রদায়ের নেত্রী হয়ে ওঠেন সতী মা। এরপর ১৮৪০ খ্রিস্টাব্দে সতী মার জীবনাবসান হয়। কর্তাভজার নেতৃত্বে আসেন দুলালচাঁদের পুত্র ঈশ্বরচন্দ্র। এরপর ১৮৮২ খ্রিস্টাব্দে ঈশ্বরচন্দ্রের মৃত্যু হলে শুরু হয় গদি নিয়ে শরিকি লড়াই। কর্তাভজা সম্প্রদায়কে টিকিয়ে রাখতে কর্তাদের সব রকম চেষ্টার পরেও শেষ রক্ষা হয়নি। কারণ, দুলালচাঁদের জীবদ্দশাতেই "রামবল্লভী" নামে কর্তাভজা সম্প্রদায়ের একটি উপদলের জন্ম হয়েছিল। এছাড়া বাংলাদেশেও "ভগবানিয়া" নামে কর্তাভজাদের মতো আরেকটি উপশাখার সৃষ্টি হয়েছিল। সে কথা অন্য একটি লেখায়।
তথ্যসূত্র:
১) ভারতবর্ষীয় উপাসক সম্প্রদায়: অক্ষয়কুমার দত্ত
২) বাংলার বাউল ও বাউলগান: উপেন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য
৩) কর্তাভজা ধর্মের ইতিবৃত্ত: দেবেন্দ্রনাথ দে
৪) বাংলার মেলা: গীতা পালিত ও সুপ্রিয় কর
৫) ব্যক্তিগত ক্ষেত্রসমীক্ষা।
Anim pariatur cliche reprehenderit, enim eiusmod high life accusamus terry richardson ad squid. 3
wolf moon officia aute, non cupidatat skateboard dolor brunch. Food truck quinoa nesciunt laborum
eiusmod. Brunch 3 wolf moon tempor, sunt aliqua put a bird on it squid single-origin coffee nulla
assumenda shoreditch et. Nihil anim keffiyeh helvetica, craft beer labore wes anderson cred
nesciunt sapiente ea proident. Ad vegan excepteur butcher vice lomo. Leggings occaecat craft beer
farm-to-table, raw denim aesthetic synth nesciunt you probably haven't heard of them accusamus
labore sustainable VHS.
Anim pariatur cliche reprehenderit, enim eiusmod high life accusamus terry richardson ad squid. 3
wolf moon officia aute, non cupidatat skateboard dolor brunch. Food truck quinoa nesciunt laborum
eiusmod. Brunch 3 wolf moon tempor, sunt aliqua put a bird on it squid single-origin coffee nulla
assumenda shoreditch et. Nihil anim keffiyeh helvetica, craft beer labore wes anderson cred
nesciunt sapiente ea proident. Ad vegan excepteur butcher vice lomo. Leggings occaecat craft beer
farm-to-table, raw denim aesthetic synth nesciunt you probably haven't heard of them accusamus
labore sustainable VHS.
Anim pariatur cliche reprehenderit, enim eiusmod high life accusamus terry richardson ad squid. 3
wolf moon officia aute, non cupidatat skateboard dolor brunch. Food truck quinoa nesciunt laborum
eiusmod. Brunch 3 wolf moon tempor, sunt aliqua put a bird on it squid single-origin coffee nulla
assumenda shoreditch et. Nihil anim keffiyeh helvetica, craft beer labore wes anderson cred
nesciunt sapiente ea proident. Ad vegan excepteur butcher vice lomo. Leggings occaecat craft beer
farm-to-table, raw denim aesthetic synth nesciunt you probably haven't heard of them accusamus
labore sustainable VHS.