জাতিভেদ প্রথায় জব্দ হিন্দু সমাজ

History of India
hindu society subdued by caste system
গীতার বর্ণভেদ পরবর্তীকালে পরিণত হয়েছে জাতিভেদে। আর এই তৈরি করা জাতিভেদ প্রথা জগদ্দল পাথরের মতো উদার হিন্দু সমাজের গলায় চেপে বসে আছে আত্মঘাতী ফাঁস হিসেবে।"ভাতের হাঁড়ি"-কে অস্পৃশ্যতার দোহাই দিয়ে ব্রাত্যজনগোষ্ঠীর ছোঁয়াচ থেকে বরাবর বাঁচিয়ে এসেছেন তথাকথিত সমাজপতিরা। আর তাতেই চার বর্ণ থেকে চার জাতি ভেঙে ছত্রিশ জাতি এবং আরও পরে ব্রিটিশরা এদেশে ব্রাত্য জনগোষ্ঠীদের নিয়ে তৈরি করেছে "তপশীলি জাতি" ও " তপশীলি উপজাতি।" এভাবেই হিন্দু সমাজ প্রায় হাজার তিনেক বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীতে বিভক্ত হয়ে ঐক্যবদ্ধ শক্তির মানসিকতা হারিয়েছে। এ বিষয়ে এই লেখকের একটি "আঁখো দেখা হাল" উল্লেখ করা যেতে পারে। গ্রামের চাষি পরিবারের বাড়িতে এসেছেন ব্রাহ্মণ কুলগুরু। প্রায় প্রতি বছরই আসেন।
দান-দক্ষিণা-প্রণামী নিয়ে যান আবার পরিবারের অবশিষ্টজনদের কানে মন্ত্র দিয়ে দীক্ষাও দিয়ে যান। সেবারেও তেমনি বছরের রুটিন মাফিক সফরে শিষ‍্যবাড়ি এসেছেন। গুরুদেবের সঙ্গে গুরুপত্নীও আছেন। নিয়ম হচ্ছে, গুরু দিনে করবেন অন্নসেবা আর রাতে "ফলার" আহার, মানে লুচি মিষ্টি। আমি তখন হাইস্কুলের অষ্টম মানের ছাত্র। স্পষ্ট মনে আছে, চাষি বাড়ির গৃহবধূ গুরুদেবের রান্নার জন্য শুদ্ধ কাপড়ে কুয়ো থেকে বালতি করে জল এনে দিলেন। চাল-ডাল-আলু "সিধে" হিসেবে নামিয়ে দিলেন। কাঠের উনুন ধরিয়ে দিলেন। তখন গ‍্যাস আসেনি। গুরুদেব ও গুরুপত্নী মিলে ভাত ফুটিয়ে নিলেন। কারণ, তাঁরা কিন্তু শিষ‍্যবাড়ির ছোঁয়া খাবেন না। কারণ, তাঁর শিষ‍্যরা অব্রাহ্মণ চাষি। এভাবেই সমাজে মানুষে মানুষে বিভেদ বেড়েছে।

শ্রীরামচন্দ্রের মতো গুহক চণ্ডালের বন্ধুত্ব করার কথা শুধু রয়ে গেছে রামায়ণের পাতায়। অথচ বাংলার ঘরে ঘরে একসময় প্রায় প্রতি সন্ধ্যায় রামায়ণ পাঠ হয়েছে। পাড়া-পড়শী সে পাঠ শুনতে ভিড় করেছেন। আমাদের বাড়িতেও একসময় প্রতি সন্ধ্যায় রামায়ণ পাঠের আসর বসতো। এখন ভাবি, এর শিক্ষাটা ব্রাহ্মণ‍্যধর্মের কাঁটাতার পেরিয়ে বাইরে বেরিয়ে আসতে পেরেছে কি? বরং গ্রামের দিকে জাতপাতের কঠোরতা কিন্তু রয়েই গেছে আজও।

এরপর গোদের ওপর বিষফোঁড়ার মতো আবার জুটেছে কল্পিত কৌলিন‍্য প্রথা। এ প্রসঙ্গে ঐতিহাসিক ড: রমেশচন্দ্র মজুমদার বলছেন, --- "বল্লালসেনের কৌলিন‍্যপ্রথা ব‍্যক্তিগত গুণের উৎকর্ষের উপর প্রতিষ্ঠিত, বংশানুক্রমিক ছিল না। ...বল্লালসেনের পরে দুইটা বিষয়ে নিয়ম প্রণালী বিধিবদ্ধ হইয়া কৌলিন‍্যপ্রথাটিকে জটিল করিয়া তুলিল। লক্ষ্মণসেন নিয়ম করিলেন যে, কুলীন কন্যা যে ঘরে প্রদত্ত হইবে, আবার সেই ঘর হইতে কন্যা গ্রহণ করিতে হইবে। ইহার নাম বংশ পরিবর্ত্তন।" দ্বিতীয়ত: , কুলীনদের মধ্যে কে কিরূপ উচ্চ-নীচ কুলে আদান-প্রদান করিয়াছে, তাহা নির্ণয় করিয়া কুলীনদের পদমর্যাদার সমতা স্থির করা হইবে। ইহার নাম সমীকরণ। রাঢ়ীয় ব্রাহ্মণ সমাজে ইহার প্রচলন হয়, বারেন্দ্র সমাজে এই ব‍্যবস্থা গৃহীত হয় নাই।
প্রথম সমীকরণে সাতজন কুলীন সমান বলিয়া গণ‍্য হইলেন। দ্বিতীয় সমীকরণে চৌদ্দজন সমান বলিয়া গণ‍্য হইলেন। এতদ্ব্যতীত লক্ষ্মণসেনের সময়েই জটিল দার্শনিক তত্ত্বের দ্বারা কৌলিন‍্যের ব‍্যাখ‍্যা হয় এবং সূক্ষ্ম ন‍্যায়ের তর্ক দ্বারা কৌলিন‍্যের উৎকর্ষ স্থির করার ব‍্যবস্থা প্রবর্ত্তিত হয়।" আজকের দিনের ব্রাত্য ডোম জাতির লোকজন একসময় বৌদ্ধ ছিলেন এবং এঁদের অনেকেই বৌদ্ধাচার্য ও পুরোহিত ছিলেন। বৌদ্ধ সিদ্ধাচার্যদের মতো তন্ত্রধর্মের সাধকদের মধ্যে ডোম কন্যাদের বিশেষ কদর ছিল, চর্যাপদে তার প্রমাণ রয়েছে। এর কারণ, শব ও শবদেহের সঙ্গে পেশাগত কারণেই ডোম জাতির মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। আর তন্ত্রধর্মের মধ্যে শব ও শবদেহের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। তা ছাড়া ডোম কন্যারা সে যুগে ঘরের মধ্যে আটকে না থেকে তাঁরা স্বাধীনভাবে চলাফেরা করতেন।
পরবর্তীকালে রাজা-জমিদারদের লাঠিয়াল হিসেবে কাজ করেছেন এই ডোম সম্প্রদায়ের সাহসী যোদ্ধারা। এরপর ক্রমশ তাঁরা বাঁশের ঝুড়ি বোনা ও মাছ ধরার পেশায় চলে গিয়েছেন। ডোমদের মধ্যে রয়েছে ছয়টি ভাগ---বাজুনে, সাজুনে, ধাই, ধসে, আঁকুড়ে ও মগয়া। এর মধ্যে বাজুনে ডোমরা বিয়ে কিংবা পুজো-পার্বণে বাজনা বাজান। একসময় গ্রামের কন্যা বা গৃহবধূদের বাড়িতেই প্রসব হতো। তখন এত "সিজারিয়ান বেবি"-র জন্ম হতো না। স্বাস্থ্যকেন্দ্র ছিল অনেকটাই দূরে। তাই এসময় ডোম সম্প্রদায়ের অভিজ্ঞ বয়স্কা মহিলারা প্রসূতির " ধাই মা " অর্থাৎ "ধাত্রী মা" হিসেবে কাজ করতেন। চলতি কথায় তাঁদের নাম ছিল "দাই মা।"
আর মগয়া ডোমরা শ্মশানে শবদেহ দাহ করেন আজও।"যোগী"রাও একসময় বৌদ্ধ ছিলেন বলে জানা যায়। এছাড়া বাংলার সুবর্ণ বণিকদের একটা বড়ো অংশের মানুষ বল্লালসেনের পরেও বহুদিন পর্যন্ত বৌদ্ধ ছিলেন। ব্রাহ্মণ‍্যবাদী হিন্দু সমাজের তথাকথিত নাক উঁচু সমাজপতিরা বৌদ্ধদের "পতিত" হিসেবে গণ‍্য করেছিলেন। সে সময় দেশ ছেড়ে অনেকেই পাড়ি দেন নেপাল তিব্বতে। এরপরের পরিণতি এ দেশে সাম‍্যের বার্তা নিয়ে ইসলামের আগমন এবং তাতে তথাকথিত ব্রাহ্মণ‍্যবাদী সমাজপতিদের আচার ব‍্যবহারে অতিষ্ঠ হয়ে এইসব বৌদ্ধরা দলে দলে ভিড়ে গেলেন ইসলামের পতাকাতলে।
অন্যদিকে, এই ঘটনায় ব্রাহ্মণ‍্যবাদীদের দ্বারা পরিচালিত তথাকথিত হিন্দু সমাজ সমস্ত উদারতা হারিয়ে ধর্মরক্ষার নামে অতিরিক্ত কঠোর হয়ে উঠলো। কথায় কথায় এই হিন্দু সমাজ যবন সংস্পর্শে পাতিত‍্য দোষ খুঁজে বেড়াতে লাগলো। এই পাতিত‍্য দোষের বড়ো উদাহরণ রয়েছে "শ্রীচৈতন্য চরিতামৃত" গ্রন্থের পাতায় রূপ-সনাতন ও সুবুদ্ধি রায়ের বর্ণনায়। রূপ ও সনাতন দুই সহোদর ভাই ছিলেন কানাড়ী ব্রাহ্মণ। তবে তাঁদের পূর্বপুরুষরা বহুদিন থেকে বাংলায় বসবাস করার সুবাদে মিশে গিয়েছিলেন এদেশের বাঙালি ব্রাহ্মণ সমাজে। রূপ ও সনাতন কাজ করতেন গৌড়বঙ্গের নবাব হুসেন শাহের রাজদরবারে।
আর তথাকথিত হিন্দু সমাজপতিদের চোখে তাঁদের "যবন স্পর্শজনিত" পাতিত‍্য দোষ ঘটে। কিন্তু পরে শ্রীচৈতন্যের সংস্পর্শে এসে রূপ-সনাতন হয়ে যান পরম বৈষ্ণব এবং গৌড়ীয় বৈষ্ণবধর্ম প্রচারে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নেন। অথচ এরকম পণ্ডিত ব‍্যক্তিদের পতিত করা হয়েছিল। সুবুদ্ধি রায়ের ঘটনাটিও এ প্রসঙ্গে উল্লেখযোগ্য। এই সুবুদ্ধি রায় আগে ছিলেন গৌড়ের রাজা। পরে নিজের মুসলমান মন্ত্রীর দ্বারা ক্ষমতাচ‍্যুত হোন এবং ওই মন্ত্রী হয়ে যান গৌড়ের রাজা।
এরপর ওই শাসক ছলনা করে একবার সুবুদ্ধি রায়কে হিন্দুদের পক্ষে নিষিদ্ধ গোমাংসের ঘ্রাণ নেওয়া করিয়েছিলেন। যেহেতু শাস্ত্র বচন অনুসারে, "ঘ্রাণেন অর্ধ ভোজনম্", অর্থাৎ খাদ্যের ঘ্রাণ নেওয়া মানে ওই খাদ্য অর্ধেক খাওয়ার সামিল। আর এজন্য সুবুদ্ধি রায়কে সমাজপতিদের তরফে গরম ঘি খেয়ে মরার বিধান দেয়।

" শ্রীচৈতন্য চরিতামৃত" গ্রন্থের মধ্য লীলা, ২৫ শ পরিচ্ছেদে রয়েছে সেই বিবরণ, ---

"প্রায়শ্চিত্ত পুঁছিল তিঁহ পণ্ডিতের স্থানে।
তারা কহে, তপ্ত ঘৃত খাঞা ছাড় প্রাণে। ।
প্রভু কহে, ইঁহা হইতে যাহ বৃন্দাবন।
নিরন্তর কৃষ্ণনাম কর সঙ্কীর্তন। ।
এক নামাভাষে তোমার পাপ দোষ যাবে।
আর নাম লইতে কৃষ্ণ চরণ পাইবে। ।"
শ্রীচৈতন্য না থাকলে রূপ-সনাতন ও সুবুদ্ধি রায়ের হিন্দু সমাজে ঠাঁই হতো না। তাই বলা যায়, শ্রীচৈতন্য হচ্ছেন বাংলার প্রকৃত সমাজ সংস্কারক তথা সমাজ বিপ্লবী। আবার পূর্ববঙ্গের পিরালি ব্রাহ্মণদের ক্ষেত্রেও একই কথা বলা চলে। যবন সংস্পর্শে তাঁদেরও পাতিত‍্য দোষ ঘটেছিল। অথচ এই পিরালি ব্রাহ্মণদের মধ‍্য থেকেই উঠে এসেছেন বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।
তথাকথিত হিন্দু সমাজপতিদের বিরুদ্ধে বাংলায় যেমন সরব হয়েছেন শ্রীচৈতন্য, তেমনি মধ‍্য ভারতে সরব হয়েছেন সন্ত কবীর এবং পঞ্জাবে গুরু নানকদেব।
শ্রীচৈতন্য বলেছেন, ---"চণ্ডালোহপি দ্বিজশ্রেষ্ঠো হরিভক্তিপরায়ণ: ", অর্থাৎ চণ্ডাল ব্রাহ্মণের চেয়েও শ্রেষ্ঠ, যদি সে হরিভক্তিপরায়ণ হয়। আরও বললেন, --- "মুচি হয়ে শুচি হয় যদি কৃষ্ণ ভজে।"
শ্রীচৈতন্যের এই সমাজ বিপ্লব যে বাস্তবে সফল হয়েছিল, তা দেখেছেন আরেক চৈতন্য জীবনীকার লোচন দাস।

লোচন দাস। তিনি লিখছেন, ---

"চণ্ডালে ব্রাহ্মণে করে কোলাকুলি
কবে বা ছিল এ রঙ্গ।
তাই জাতিভেদ প্রথায় জব্দ হিন্দু সমাজের জন্য আজ দরকার শ্রীচৈতন্যের আশ্রয়। তবেই আবার ঐক্যবদ্ধ হবে আজকের বহু বিভক্ত হিন্দু সমাজ। মহাভারতের শ্রীকৃষ্ণের এক লক্ষ নারায়ণী সেনা তৈরি হয়েছিল ব্রাত্যজনগোষ্ঠীর লোকজনদের নিয়ে। তাই উদাহরণ রয়েছে মহাভারতের পাতায়। এখন প্রয়োজন প্রয়োগের।

তথ্যসূত্র:

১) ভারতীয় সমাজপদ্ধতির উৎপত্তি ও বিবর্ত্তণের ইতিহাস, পরিচয়, ১৩৪৮: ড: ভূপেন্দ্রনাথ দত্ত,
২) গৌড়ে ব্রাহ্মণ: মহিমচন্দ্র মজুমদার,
৩) কৌলিন‍্য প্রথা, "ভারতবর্ষ": ড: রমেশচন্দ্র মজুমদার।
Anim pariatur cliche reprehenderit, enim eiusmod high life accusamus terry richardson ad squid. 3 wolf moon officia aute, non cupidatat skateboard dolor brunch. Food truck quinoa nesciunt laborum eiusmod. Brunch 3 wolf moon tempor, sunt aliqua put a bird on it squid single-origin coffee nulla assumenda shoreditch et. Nihil anim keffiyeh helvetica, craft beer labore wes anderson cred nesciunt sapiente ea proident. Ad vegan excepteur butcher vice lomo. Leggings occaecat craft beer farm-to-table, raw denim aesthetic synth nesciunt you probably haven't heard of them accusamus labore sustainable VHS.
Anim pariatur cliche reprehenderit, enim eiusmod high life accusamus terry richardson ad squid. 3 wolf moon officia aute, non cupidatat skateboard dolor brunch. Food truck quinoa nesciunt laborum eiusmod. Brunch 3 wolf moon tempor, sunt aliqua put a bird on it squid single-origin coffee nulla assumenda shoreditch et. Nihil anim keffiyeh helvetica, craft beer labore wes anderson cred nesciunt sapiente ea proident. Ad vegan excepteur butcher vice lomo. Leggings occaecat craft beer farm-to-table, raw denim aesthetic synth nesciunt you probably haven't heard of them accusamus labore sustainable VHS.
Anim pariatur cliche reprehenderit, enim eiusmod high life accusamus terry richardson ad squid. 3 wolf moon officia aute, non cupidatat skateboard dolor brunch. Food truck quinoa nesciunt laborum eiusmod. Brunch 3 wolf moon tempor, sunt aliqua put a bird on it squid single-origin coffee nulla assumenda shoreditch et. Nihil anim keffiyeh helvetica, craft beer labore wes anderson cred nesciunt sapiente ea proident. Ad vegan excepteur butcher vice lomo. Leggings occaecat craft beer farm-to-table, raw denim aesthetic synth nesciunt you probably haven't heard of them accusamus labore sustainable VHS.