হিন্দু বিয়েতে পণপ্রথা একটি সামাজিক ব‍্যাধি হিসেবে আজও চিহ্নিত। এ বিষয়ে, বিশেষ করে, বাংলায় সরকারি আইন কার্যত ব‍্যর্থ বলেই দেখা যায়। এ নিয়ে শ্বশুরবাড়িতে বধূ নির্যাতনের বহু ঘটনা সামনে এলেও শেষ প্রতিকার হয়না। কোথাও আবার বধূকে বেছে নিতে হয়েছে অকালে আত্মহননের পথ। তবুও পণপ্রথার বিলোপ ঘটেনি।

ঘটনার উল্লেখ দেখা যাচ্ছে, ১৮৮০ খ্রিস্টাব্দে জার্মান পণ্ডিত ই. হালচ (E. Hultzsch) সম্পাদিত "সাউথ ইণ্ডিয়ান ইনসক্রিপসনস" ( South Indian Inscriptions), প্রথম খণ্ডের পাতায়। এতে দক্ষিণ ভারতের তামিলনাড়ু রাজ‍্যের উত্তর আর্কট জেলার বিরিঞ্চিপুরম গ্রামের মন্দিরের গায়ে খোদিত তামিল ভাষায় লেখা একটি শিলালিপির বিবরণ রয়েছে।
এই শিলালিপি থেকে জানা যায়, খ্রিস্টিয় পঞ্চদশ শতকের প্রথম ভাগে দক্ষিণ ভারতের পডৈবীডু রাজ‍্যের ( অধুনা উত্তর আর্কট জেলা) বেশ কয়েকটি ব্রাহ্মণ গোষ্ঠী বিয়েতে পণপ্রথা দূর করতে উদ্যোগী হয়েছিলেন এবং এজন্য নিজেরা একটি চুক্তিপত্র স্বাক্ষর করেছিলেন। বিজয়নগররাজ বীরপ্রতাপ দেবরায়ের আমলে ১৩৪৭ অতীতবর্ষে অর্থাৎ ১৪২৬ খ্রিস্টাব্দে এই চুক্তিপত্রটি স্বাক্ষরিত হয়েছিল। চুক্তিপত্রটিতে স্বাক্ষর করেছিলেন কন্নডিগ (কানাড়ী), তমিঢ় (তামিল), তেলুঙ্গ (তেলেগু) ও ইলাড (লাট) শ্রেণির ব্রাহ্মণ প্রতিনিধিরা। এই ব্রাহ্মণরা ছিলেন বিভিন্ন স্থানীয় পঞ্চায়েত সভার জনপ্রতিনিধি এবং সেজন্য তাঁরা "মহাজন" নামে পরিচিত ছিলেন।
এই চুক্তিপত্রে বলা হয়েছে, কোনও ব্রাহ্মণ বরপক্ষের কাছ থেকে অর্থ নিয়ে কন্যার বিয়ে দেবেন না এবং কোনো বরও কন্যার পিতাকে শুক্ল বা পণ দিয়ে কন্যা গ্রহণ করবেন না। আর যিনি এই নিয়ম ভাঙবেন, তাঁকে সমাজ থেকে বহিষ্কার করা হবে। সেই সঙ্গে তাঁকে রাজদণ্ডের ভাগীদার হতে হবে।

এখানে একটি বিষয় বলা দরকার, তা হলো, হিন্দু শাসনকালে পঞ্চায়েতের বিধান সাধারণত শাসকরা মেনে চলতেন। তাই চুক্তিভঙ্গকারীদের এখানে রাজভয় ছিল। খ্রিস্টিয় পঞ্চদশ শতকের প্রথম ভাগে দক্ষিণ ভারতের মানুষরা একটি মহাসভায় মিলিত হয়ে পণপ্রথার বিরুদ্ধে যে সামাজিক ব‍্যবস্থা নিয়েছিলেন, তা সত্যিই সমাজ থেকে পণপ্রথা দূরীকরণে ছিল এক দু: সাহসিক পদক্ষেপ।

1) South Indian Inscriptions, Vol. I, 1880, PP-82-84.: E. Hultzsch.
2) শিলালেখ-তাম্রশাসনাদির প্রসঙ্গ, কলকাতা, ১৯৮২, পৃষ্ঠা-১৬৯-১৭২: দীনেশচন্দ্র সরকার।