গল্পে গল্পে ইতিহাস পাহাড়পুর

Bangladesh
history of paharpur

ড. মো. আনোয়ারুল ইসলাম

সোমপুর মহাবিহার! প্রাচীনকালের বিশ্ববিদ্যালয়। প্রায় দেড় হাজার বছরের পুরনো। অনেক দূর থেকেই চোখে পড়ে সোমপুরে মহাবিহারের। বাংলার এই প্রাচীন বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে দাঁড়িয়ে যখন এই ইতিহাস স্মরণ করছি তখন কেবলই দিনের শুরু হয়েছে। পাখিদের কিচির মিচির শব্দে পাহাড়পুর যাদুঘরের অতিথি প্রাঙ্গন মুখরিত। আম, কাঠালের গাছ গাছালির পাহাড়পুরের ভোর দেখছি দু চোখ ভরে। আতাউর, স্বপ্না, মেরীসহ আমরা সকালেই উঠে এদিকটায় এসেছি। মহাস্থানগড় থেকে আমরা দুপুরে রওনা দিয়ে সন্ধ্যায় জয়পুরহাট ছেড়ে যখন পাহাড়পুরের গ্রামীণ রাস্তায় চলে আসি তখন শুধুই ভেসে আসছিল ঝিঁঝি পোকার ডাক। রাস্তার দুই ধারে কলাবাগান। গাড়ি থেকে দুরে তাকালেই কলাগাছ গুলোকে মনে হচ্ছে সারি সারি মানুষ দাড়িয়ে আছে। বিষয়টি আরো ফুটে উঠছে ভরা জোছনার আলোর জন্য। কলা বাগানের মাথায় উজ্জ্বল পূর্ণ চাঁদ নিয়ে জোছনায় ভাসছিল জয়পুরহাট থেকে পাহাড়পুর।
আমাদের প্রাত: ভ্রমনের এক ফাকে রাতা এসে হাজির। আমাদের মতো সেও দুর থেকে সকালের পাহাড়পুরের বৌদ্ধ বিহার দেখছিল। কিন্তু এসেই সে প্রশ্ন শুরু করে দিল। ওই যে দুরে পাহাড়ের মতো উচুঁ দেখাচ্ছে এজন্যই কি এর নাম পাহাড়পুর? রাতার কথা শুনে সবাই হেসে ফেলল। বেচারা লজ্জা পেয়ে লাল হয়ে গেল। আমি ওকে বললাম হ্যাঁ রাতা তো ঠিকই বলেছে। আমরা দুরে যে চূড়া দেখতে পাচ্ছি সেটা সমতল ভূমি থেকে প্রায় ১০০ ফুট উচুতে। এতটা উঁচু চূড়া এবং পাহাড়ের মতো দেখতে হবার কারণে স্থানীয়রা একে পাহাড় নামে আখ্যায়িত করে। সেই থেকে লোকমুখে এর নাম হয়েছে পাহাড়পুর। আসলে এর প্রাচীন নাম সোমপুর। যদি আমরা পুরণো মানচিত্র খুঁজি তাহলে দেখতে পাবে পুন্ড্রনগরী এবং কোটিবর্ষের মাঝামাঝি জায়গায় এটার অবস্থান।
তাহলে এটাকে আমরা সোমপুর বলি না কেন? আবারো রাতার প্রশ্ন। দেখ পুরনো নাম অচল হয়ে যায়। সেগুলোকে জানার জন্য নতুন করে পড়তে হয় শিখতে হয়। এই যে ধরো পাহাড়পুর রাজশাহী বিভাগের অধীনে। এক সময় রাজশাহীকে বলা হতো রামপুর বোয়ালিয়া। এখন তুমি যদি কাউকে বলো আমি রামপুর বোয়ালিয়া যাবো তাহলে অবস্থাটা কি হবে। এটাও ঠিক তাই। পাহাড়পুর এখন নওগাঁ জেলার বদলগাছী উপজেলার একটি ইউনিয়ন। এই কারণে এটাকে পাহাড়পুর বিহার বলেই লোকে বেশী চিনছে। প্রাচীনকালে এর নাম ছিল সোমপুর। রাজা ধর্মপালের আরেক নাম ছিল সোম। এ কারণেই সোমপুর এবং তিনি নির্মাণ করেছিলেন বলেই এটার নামকরণ সোমপুর বিহার।
প্রাচীনকালে এখানকার নাম যে সোমপুর ছিল তার প্রমাণ কি? রাতার এমন ঝাঁঝালো প্রশ্ন শুনে আতাউর বলতে থাকে। প্রত্নতাত্ত্বিক খনন করার সময়ে এখানে একটা সিল (seal) পাওয়া যায় তাতে লেখা ছিল ‘সোমপুর ধর্ম্মশালা বিহার’। বাহ্ এটাতো আমার অনেক কাজে লাগবে। রাতা উৎফুল্ল হয়ে ওঠে। আমি রাতাকে বললাম হঠাৎ তুমি আনন্দিত হয়ে উঠছে কেন? আমাদের প্রশ্ন শুনে স্বপ্না বললো ভাই শোনেন রাতা পঞ্চম শ্রেণীতে পড়ে। ওর বইতে পাহাড়পুর নিয়ে বেশ কয়েকটা প্রশ্ন আছে। কিন্তু সেভাবে ব্যাখ্যা নাই। ও বেড়াতে এসে এগুলো জেনে যাচ্ছে এজন্যই আনন্দ পাচ্ছে।
ও আচ্ছা দেখা এবং জানা দুটোই তাহলে চলছে। বেশ বেশ। আমি রাতাকে বললাম পাহাড়পুর নিয়ে তোমাদের বইয়ে কি ধরণের প্রশ্ন আছে। সে বললো আমার পঞ্চম শ্রেণীর বইয়ে একটা প্রশ্ন আছে। প্রশ্নটা হলো- “মনে কর, তুমি একজন প্রত্নতাত্ত্বিক এবং তুমি পাহাড়পুর আবিস্কার করেছ। সেখানে খনন করার পর তুমি যা যা খুঁজে পেতে পার সেগুলোর বর্ণনা দাও।” ও তাহলে তো তোমাকে এই বিহারের পুরা ইতিহাস জানতে হবে।

বৌদ্ধ বিহার কি- সেটা দিয়েই আমরা শুরু করি। প্রাচীন কালে বৌদ্ধ বিহার বলতে সাধারণত বৌদ্ধ ধর্মের সাথে সম্পৃক্ত গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে বুঝাত। পাল রাজা ধর্মপালের বৌদ্ধ ধর্মের প্রতি গভীর অনুরাগ ছিল। তাঁর শিক্ষাগুরু বৌদ্ধ পন্ডিত হরিভদ্রের কারণেই তিনি বৌদ্ধ বিহার নির্মাণ করে প্রাচীন কালে বৌদ্ধ সংস্কৃতি চর্চার পথ প্রশস্ত করেছিলেন। ধর্মপালের রাজত্বকাল সাহিত্য, চযাপদ, শিল্প স্থাপত্য, কৃষি, বাণিজ্য ইত্যাদির উন্নতির মাধ্যমে বাংলার জাতীয় জীবনে নতুন সূযোদয় ঘটিয়েছিলেন। এই কারণে খুবই নামী একজন ইতিহাসবিদ ড. রমেশ চন্দ্র মজুমদার ধর্মপালের রাজত্বকে বাঙালি জীবনের সুপ্রভাত বলে মূল্যায়ন করেছেন। তিনি এক সময় সিদ্ধান্ত নিলেন বাঙালিকে জ্ঞান চর্চায় এগিয়ে নিবেন। শুরু করলেন বিহার নির্মাণের। তাঁর হাত দিয়েই প্রতিষ্ঠিত হলো সোমপুর বিহার ছাড়াও আরো কয়েকটি বিহার যেমন- বিক্রমশীলা বিহার, ওদন্তপুরী বিহার ইত্যাদি।

বিহারগুলো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছিল বলে একেবারে হেলা ফেলা বিষয়ক শিক্ষা চর্চা হতো না। এখানে বৌদ্ধ, বৈদিক ও ব্রাক্ষ্মণ্য বিষয়ক সাহিত্য, দর্শন, অলঙ্কার শাস্ত্র, ব্যাকরণ শাস্ত্র, জ্যোতিষ শাস্ত্র, যুক্তিবিদ্যার জ্ঞান চর্চা এই বিষয়গুলিকেই প্রাধান্য দেয়া হতো। বিহারগুলি আবাসিক হবার কারণে বৌদ্ধ ভিক্ষুদের ধর্মীয় বিষয়ক আচারাদি সম্পন্ন ও ধ্যান করার স্থান এবং বৌদ্ধ শিক্ষার কেন্দ্র হিসেবে একে চিহ্নিত করা যায়। দশম শতক পযন্ত এগুলো এতোই গুরুত্ব পেয়েছিল যে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে যেমন চীন, তিব্বত, মায়ানমার, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া প্রভৃতি দেশের ছাত্ররা এখানে ধর্মচর্চা ও ধর্মজ্ঞান অর্জন করতে আসতেন।
বিহারের তুলনা করা যেতে পারে যে কোন আধুনিক আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর দেখভাল যেমন উপাচাযরা করে থাকেন। বিহারগুলোর প্রধানদেরও পদমযাদা ছিল আচাযের। খ্রিস্ট্রীয় দশম শতকে পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহারের আচার্য ছিলেন অতীশ দীপঙ্কর শ্রীজ্ঞান। পাহাড়পুরকে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় বৌদ্ধ বিহার বলা যেতে পারে। আয়তনে এর সাথে ভারতের নালন্দা মহাবিহারের তুলনা হতে পারে।
আমরা এখন যেটি দেখতে পাচ্ছি সেটা আসলে সোমপুর মহাবিহারের ধ্বংসপ্রাপ্ত রূপ। এটি নির্মাণ করেছিলেন পালবংশের দ্বিতীয় রাজা ধর্মপাল। এটির নির্মাণ সময় অষ্টম শতকের শেষের দিকে। দীর্ঘদিন লোকচক্ষুর আড়ালেই পড়ে ছিল এই প্রত্নতাত্ত্বিক ইতিহাস। তবে এটি প্রথম নজরে আসে বুকানন হ্যামিলটনের। ব্রিটিশ শাসনামলে বুকানন হ্যামিলটন প্রত্নতত্ত্বের জরিপ কাজ শুরু করেন এবং তিনিই ১৮০৭ -১৮১২ সালের মধ্যবর্তী কোন এক সময় পাহাড়পুর পরিদর্শন করেন। এরপর এখানে আসেন ওয়েস্টম্যাকট।
এদের সূত্র ধরেই ১৮৭৯ সালে স্যার আলেকজান্ডার কানিংহাম এই ঐতিহাসিক স্থানটি পরিদর্শন করেন। প্রত্নতত্ত্ব আবিস্কারের ক্ষেত্রে আলেকজান্ডার কানিংহাম ছিলেন সেরা। যদিও তিনি শখের বশে তিনি ভারতের প্রত্নচর্চায় মনোনিবেশ করেন এবং এতোটাই সাফল্য অর্জন করেছিলেন যে তাঁকে ফাদার অব আর্কলজিক্যাল সার্ভে ইন্ডিয়া বলা হয়। মূলত: পেশায় তিনি ছিলেন সামরিক বাহিনীর কর্মকর্তা। তিনি পাহাড়পুর পরিদর্শনের পর এই জমিটি খনন করার প্রতি আগ্রহ দেখান। কিন্তু জমিটি ব্যক্তিগত মালিকানাধীন থাকায় স্থানীয় বলিহারের জমিদার বাধা প্রদান করেন। অবশেষে আলেকজান্ডার হ্যামিলটনের লেখালেখির কারণে ১৯০৪ সালের প্রত্নতাত্ত্বিক আইনের আওতায় এ স্থান ১৯১৯ সালে সংরক্ষিত পুরাকীর্তি হিসাবে ঘোষিত হয়।
এবারে আতাউর বলতে শুরু করে এরপরই শুরু হয় পাহাড়পুর নিয়ে ঐতিহাসিক জ্ঞানচর্চা ও প্রত্নতাত্ত্বিক খনন চালানো। এক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে রাজশাহীর বরেন্দ্র অনুসন্ধান সমিতি। ১৯২৫- ২৬ সালে ইতিহাসবিদ রাখালদাস বন্দোপাধ্যায় খননকাজ পরিচালনা করেন। ধাপে ধাপে প্রত্নখনন চলতে থাকে। ১৯৩৩-৩৪ সালে আরেকজন প্রত্নতত্ত্ববিদ যোগ দেন, তিনি হলেন কে এন দীক্ষিত।
স্বাধীনতার পরবর্তী সময়ে ১৯৮১-৮৩ সালে বাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ 'নতুন তথ্যের অনুসন্ধান এবং ইতোপূর্বে দীক্ষিতের আবিষ্কৃত কক্ষসমূহের প্রাপ্ত নিদর্শনাবলী সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া'র উদ্দেশ্যে দ্বিতীয় পর্যায়ের খনন কাজ শুরু করে। ১৯৮৭-৮৯ সালে পুনরায় খনন পরিচালিত হয়। বিহার অঙ্গন থেকে অপ্রয়োজনীয় জঞ্জাল ও পূর্ববর্তী খননের স্তূপীকৃত মাটি অপসারণ করে সুশৃঙ্খল পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা নিশ্চিত করা যেন বিহারে বিদ্যমান জলাবদ্ধতা দূরীভূত হয় এবং লবণাক্ততা হ্রাস পায়।

প্রত্নতাত্ত্বিক খনন করে কী পাওয়া গেল? রাতার প্রশ্ন।

ধাপে ধাপে প্রত্নতাত্ত্বিক খননে অনেক কিছু বেরিয়ে আসল। কিন্তু সেগুলো কোন গুপ্তধন নয়। তবে গুপ্তধনের চেয়েও দামী। টুকরো টুকরো আবিস্কার গুলো জানান দিল আমাদের প্রাচীন বাংলার সাংস্কৃতিক ইতিহাসের অনেক অজানা তথ্য। আসলে এটা তো ছিল একটি বিশ্ববিদ্যালয়। আয়তনের দিক দিয়েও কম নয় প্রায় ২৭ একর। বর্গাকৃতির বিহারটির চারদিক থেকেই উচু প্রাচীরে ঘেরা। আর প্রতিটি প্রাচীরের গায়ে ভিক্ষুগণের বসবাসের জন্য ছোট ছোট কক্ষ। এই রকমের ১৭৭টি কক্ষ পাওয়া গেছে। এই থেকেই জানা গেল এটা একটা মহাবিহার। মূল বিদ্যামন্দিরে প্রবেশের জন্য পথ পাওয়া গেল বেশ বড় চওড়া সাইজের। পাওয়া গেল ছোট ছোট অনেক প্রার্থনা মন্দির। প্রত্ন সামগ্রীর মধ্যে পাওয়া গেল হিন্দু দেব দেবীর ৬৩টি প্রস্তর মূর্তি এবং ২৮০০টি পোড়ামাটির ফলকচিত্র বা টেরাকোটা।

প্রত্নবিদদের আবিস্কার থেকে বেরিয়ে আসলো আমাদের পুরনো দিনের ইতিহাস। বলেই আতাউর একটু থামলো। বই, লেখা পত্র ছাড়া কিভাবে ইতিহাস জানা গেল। এখানে তো কিছুই লেখা নেই শুধু ভাঙ্গা মন্দির বা ঘরবাড়ী আর ওই ফলকচিত্র রাতা জোর গলায় বলতে থাকে।
আতাউর অভিজ্ঞ প্রত্নতত্ত্ববিদ। বিষয়টি সহজ করে রাতাকে বোঝালো। বই পত্র বা লেখা লেখি ছাড়াও ইতিহাস জানা যায়। যেমন ধরো ঘরবাড়ি, বাসনপত্র, পোশাক, অস্ত্র শস্ত্র, গয়না বা অলংকার এগুলো পুরনো দিনের কথা মনে করে দেয়। এগুলো যত পুরনো হতে থাকে তত হারিয়ে যেতে থাকে। এক সময় মাটির নীচে চাপা পড়ে থাকে। এগুলোকেই ইতিহাসের উপাদান বলে। সেগুলো আবার এক সময় প্রত্নতত্ত্ববিদরা সম্মুখে তুলে আনেন। রাতা আরেকটি কথা জানো তো সেটা হলো প্রত্ন মানেই কিন্তু পুরনো। তাহলে চলো আমরা পাহাড়পুরের ভগ্নাবশেষ দেখে কী জানতে পারি সেটা আগে বলে নেই।
সৌন্দযের বিচারে এই স্থাপত্য অনেক সেরা মানের। চারকোনা বিশালাকৃতি ইমারতগুলোর উত্তর ও দক্ষিণের বাহু এবং পূর্ব ও পশ্চিমের বাহু প্রায় সমান। যার আকার প্রায় ২৭৪ মিটার। এর চারদিক চওড়া সীমানা দেয়াল। এগুলো এতোই পুরু যে এখনো প্রায় অক্ষত। মন্দিরের অঙ্গনটির চারিদিকে চারটি সিঁড়ি দিয়া বারান্দা এবং মূল ভূমিতে নামা যেত। প্রাচীরের উত্তর দিকে ছিলে বিহারের প্রধান প্রবেশ পথ। যেখানে একটি সিংহ দরজা ছিল। সবকিছু ছাপিয়ে কেন্দ্র থেকে মন্দিরের সৌধ উঠে গেছে উর্ধ্বমুখী হয়ে। দেড় হাজার বছর পূর্বে এতো সুন্দর জ্যামিতিক মাপের সৃষ্টি, সত্যি এক অপার বিস্ময়ের সৃষ্টি করে।
দেখো আবার বিস্তৃত মাঠের ঠিক মাঝখানে বড় সাইজের মন্দির। আধুনিক কালের কমপ্লেক্সের মতো এর চারিদিকে ছোট ছোট স্তুপ, মন্দির, পানীয় জলের ব্যবস্থার জন্য কূপ, বাথরুম, রান্নাঘর সবকিছুই নির্মিত হয়েছিল।
এর বিশালত্ব ও সৌন্দয লোকের মনে এখন পযন্ত বিস্ময়ের সৃষ্টি করেছে। প্রাচীন যুগের শিলালিপিতে এর সৌন্দয বর্ণনায় এক কথায় বলা হয়েছে “জগতাং নেত্রৈক বিশ্রাম-ভূ”।

এটার অর্থ কি? স্বপ্নার জানার আগ্রহ দেখে আতাউরের ভালো লাগলো।

এর অর্থ হলো “জগতে নয়নের একমাত্র বিরামস্থল অর্থাৎ দর্শনীয় বস্তু।”

পাহাড়পুরে যেসব টেরাকোটা ফলক পাওয়া গেছে তা দেয়ালের সঙ্গেই প্রোথিত আছে। এসব ফলক বহন করছে কিছু দুলর্ভ ছবি। যেমন শিব, ব্রক্ষ্মা, বিষ্ণু, গণেশ, সূয, বোধিসত্ত্বা, পদ্মপাণি, মঞ্জশ্রী, তারা প্রভৃতি দেবদেবীর মূর্তি স্থান পেয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন জীব জন্তু, ফুল-ফল, গাছপালা, সন্তানসহ জননী এবং কিছু প্রাণীর ছবি, মহিষ, হাতি, সিংহ, হরিণ, বাঘ, শৃগাল, পাখী, সিংহ, হরিণ, বাঘ, পাখী, মাছ ও কিচু গাছ পদ্মফুল, বটগাছ, তালগাছ ইত্যাদি। এসব চিত্র টেরাকোটায় ফুটিয়ে তোলা হয়েছে অত্যন্ত আন্তরিক ও প্রাণবন্ত করে। এই যে টেরাকোটার ফলক সেগুলোই কিন্তু আমাদের সামাজিক ও সাংস্কৃতির ইতিহাসের দলিল।
এই টেরাকোটার চিত্রগুলি দেখে দেখে ইতিহাসবিদরা আমাদের প্রাচীন যুগের সামাজিক ইতিহাসের বিবরণ লিখেছেন। আসলে মানুষের কাজ কর্মই তো ইতিহাস। চিত্রকরেরা তখনকার দিনের ছবি এই টেরাকোটাতেই মেলে ধরেছেন। আর সমাজবিজ্ঞানীরা সেগুলো বিশ্লেষণ করেছেন। যেমন নারীদের পোষাকের বিবরণ দিতে গিয়ে বলেছেন সেকালের মেয়েরা শাড়ী পড়তেন। পুরুষদের ছবি দেখে বলছেন পুরুষেরা মালকোচা দিয়ে খাটো ধূতি পড়ত এবং অধিকাংশ সময় যা হাঁটুর নীচে নামতো না। কিংবা বিনোদনের চিত্র দেখে সেযুগের বিনোদন কেমন ছিল তার বিবরণ দিয়েছেন। কৃষ্ণ লীলার প্রসঙ্গ এসেছে। নৃত্যরত মেয়েদের ছবি আছে। এই যে টেরাকোটার ফলক সেগুলোই কিন্তু আমাদের সামাজিক ও সাংস্কৃতির ইতিহাসের দলিল। এ কারণেই প্রাচীন বাংলার সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ইতিহাস নির্মাণে পাহাড়পুরের গুরুত্ব অনেক অনেক বেশী।
রাতা যতই পাহাড়পুরের এই ইতিহাস জানছে তখনই অবাক হচ্ছে। এখন সেও দু একটা টেরাকোটার চিত্র দেখে দেখে তার বিবরণ দিতে লাগলো আর সেটা শুনে আশে পাশের লোক তাকে একজন ক্ষুদে গাইড মনে করতে লাগলো। একসময় সেও বিজ্ঞজনদের মতো বলে ফেলল পৃথিবীর যে কয়টি পুরাকীর্তির তালিকা রয়েছে তার মধ্যে পাহাড়পুরের উল্লেখ রয়েছে। এটি আমাদের গর্ব আর অহংকারের জায়গা। ইউনেস্কো কর্তৃক এটি বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ হিসেবে স্বীকৃত। পাহাড়পুর আসতে গেলে অনেক কলা বাগান দেখতে পাওয়া যায়। এই কারণে পাহাড়পুরের পোড়ামাটির ফলকে আঁকা ছবিতে কলাগাছ দেখতে পাওয়া যায়। রাতার এই কথা শুনে সবাই হো হো করে হাসতে লাগল।
একজন তো বলেই ফেলল সত্যি পাহাড়পুরের পোড়ামাটির ফলকে আঁকা ছবিতে কলাগাছ আছে। প্রত্নতত্ত্ববিদ আতাউর এসে বলতে লাগল হ্যাঁ ভাই সত্যি কলাগাছ আছে। চলুন পোড়া মাটির ফলকে দেখিয়ে নিয়ে আসি।

লেখক: বাংলাদেশের পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপ-উপাচার্য।

Anim pariatur cliche reprehenderit, enim eiusmod high life accusamus terry richardson ad squid. 3 wolf moon officia aute, non cupidatat skateboard dolor brunch. Food truck quinoa nesciunt laborum eiusmod. Brunch 3 wolf moon tempor, sunt aliqua put a bird on it squid single-origin coffee nulla assumenda shoreditch et. Nihil anim keffiyeh helvetica, craft beer labore wes anderson cred nesciunt sapiente ea proident. Ad vegan excepteur butcher vice lomo. Leggings occaecat craft beer farm-to-table, raw denim aesthetic synth nesciunt you probably haven't heard of them accusamus labore sustainable VHS.
Anim pariatur cliche reprehenderit, enim eiusmod high life accusamus terry richardson ad squid. 3 wolf moon officia aute, non cupidatat skateboard dolor brunch. Food truck quinoa nesciunt laborum eiusmod. Brunch 3 wolf moon tempor, sunt aliqua put a bird on it squid single-origin coffee nulla assumenda shoreditch et. Nihil anim keffiyeh helvetica, craft beer labore wes anderson cred nesciunt sapiente ea proident. Ad vegan excepteur butcher vice lomo. Leggings occaecat craft beer farm-to-table, raw denim aesthetic synth nesciunt you probably haven't heard of them accusamus labore sustainable VHS.
Anim pariatur cliche reprehenderit, enim eiusmod high life accusamus terry richardson ad squid. 3 wolf moon officia aute, non cupidatat skateboard dolor brunch. Food truck quinoa nesciunt laborum eiusmod. Brunch 3 wolf moon tempor, sunt aliqua put a bird on it squid single-origin coffee nulla assumenda shoreditch et. Nihil anim keffiyeh helvetica, craft beer labore wes anderson cred nesciunt sapiente ea proident. Ad vegan excepteur butcher vice lomo. Leggings occaecat craft beer farm-to-table, raw denim aesthetic synth nesciunt you probably haven't heard of them accusamus labore sustainable VHS.