কাশীরাম দাসের ভিটে ছুঁয়ে চার পীঠ

ভ্রমণ
journey of singi village
পাপিয়া মিত্র: ঘরে বসে ক্লান্তি মেটানোর চেয়ে বরং একটানা ঘরে বসে ক্লান্ত হয়েই বেরিয়ে পড়া। সামান্য ফোনাফুনি। দশ মাস ঘরবন্দী যাপনের পরে একটা মনস্থির নিমেষেই উড়িয়ে নিয়ে গেল সবুজের দেশে। সঙ্গী স্কুলজীবনের দুই সহপাঠী। কোথায়? দূরে তো নয়ই। বরং ঘরের পিঠে আদরের ফরাস পেতে অপেক্ষা করছিল পূর্ব বর্ধমানের সিঙ্গিগ্রাম। ফুসফুস ভরে অক্সিজেন আর মনের মতো ঘরোয়া রান্নার স্বাদ নিতে হোমস্টে শান্তিনিকেতন যেন আমাদেরই অপেক্ষায় ছিল। একঘেয়ে কাজের ঘেরাটোপ ছেড়ে দিগন্ত বিস্তৃত সবুজ চাষের ক্ষেতে ডুব দিতে কার না ভালো লাগে।
তাই শীতের এক ভোর দেখিয়ে দিল পথ। গড়িয়ে গেল গাড়ির চাকা। বেলা এগারোটা নাগাদ শান্তিনিকেতন লজের গেটে অপেক্ষা করছিলেন লজের মালিক। বাগানছাতার নীচে চলে এল পুদিনার পাতা ভেজানো গন্ধলেবুর সরবত। মুখহাতপা ধুয়ে দোতলাতে পেটপুজোর জন্য বসে পড়া। ফুলকো লুচির সঙ্গী হয়ে এল সাদা আলু চচ্চড়ি, ডবল ডিমের অমলেট আর রসগোল্লা। আগে থেকে ঠিক ছিল মধ‍্যাহ্নভোজের আগে কোথায় যাব। তাই পথের সাথী হলেন হোমস্টের মালিক সম্রাট বন্দ‍্যোপাধ‍্যায়। জগদানন্দপুরের রাধাগোবিন্দ জিউর অসম্ভব সুন্দর পাথরের মন্দির (সিঙ্গি থেকে ১২ কিলোমিটার) আর শ্রীবাটি গ্রামের তিনটি অসাধারণ টেরাকোটার কারুকার্যসমৃদ্ধ মন্দির (সিঙ্গি থেকে ২ কিলোমিটার) দেখতে বেরিয়ে পড়লাম। মন্দিরের গায়ে অপূর্ব শৈলীতে ফুটে উঠেছে নানা ঘটনার ছবি। ফিরে আসা হোমস্টের ঘরে।
journey of singi village
ঘরের দরজা খুললেই ওপেন টেরেস, যেখানে হাতপা ছড়িয়ে গলা ছেড়ে গান গাওয়া যায়, প্রকৃতির সঙ্গে কথা বলা যায়, গল্প কবিতায় ভেসে থাকা যায়, নিজের সঙ্গে কথা বলা যায়। দুদিনের ছুটি নিয়ে শুধু সবুজ দেখার লোভে সিঙ্গিগ্রামের গন্ধ এবার মোহগ্রস্থ করে তুলছে। দুপুরের আহার শেষ করতে করতে মনে হল চুপির চর ডাকছে। দেরী করে লাভ নেই। তাই নিজেরদের আনা সারথীকে নিয়ে চলে গেলাম কৈচর-কালনা ও কালনা-কাটোয়া রোড ধরে চুপির চরের দিকে।
হোমস্টে থেকে ২৪ কিলোমিটার দূরে চুপিরচর পাখিরালয়। ঘণ্টা পিছু ১৫০ টাকায় নৌকা নিয়ে ভেসে পড়লাম জলে। চালক বিশ্বনাথ রাজবংশী তাঁর সংসারের গল্প বলতে বলতে হাল টানছিলেন। ঠাকুরদার ব‍্যবসা বাবার হাত ধরে এখন নিজে নিয়েছেন। করোনায় মার খেয়েছে ব‍্যবসা। তখন ক্ষেতের কাজ করেছেন। খুব কষ্টে দিন গেছে। শীতের সময় থেকে পর্যটক আসছে। ঘণ্টা বাড়লে শ'টাকা বৃদ্ধি। বিশ্বনাথ হাল টানতে টাধতে দেখিয়ে দূরে দেখিয়ে দিচ্ছিলেন বাইনোকুলার নিয়ে বসে আছেন পাখিপ্রেমীরা ঘণ্টার পর ঘণ্টা।

সারাবছরই এখানে শামুকখোল (Asian open billede stork), মানিকজোড় (Woolly naked stork), কাস্তেচড়া (Black headed ibis), বাঁশপাতি (Green bee eater) ছাড়াও তিন রকম মাছরাঙার দেখা পাওয়া যায়। ফিঙে, মৌটুসী, বুলবুলি, প্যাঁচা, খঞ্জন, ছাতারে, এরা তো আছেই। এত কিছুর মাঝে উপরি পাওনা সূর্যাস্ত। নৌকায় ভেসে একরাশ স্বচ্ছ জলের মধ্যে অস্তগামী সূর্যের প্রতিচ্ছবি বহুদিন থেকে যাবে স্মৃতিতে।

journey of singi village
পরের দিনের গন্তব্য নতুনগ্রাম যা দিনে দিনে রাজ‍্যের মানচিত্রে জায়গা করে নিচ্ছে। কাঠের প্যাঁচার জন‍্য শিল্পীদের গ্রাম, নতুনগ্রাম বিখ্যাত হয়ে উঠছে। ছেনি হাতুড়ি বাটালি আর নারীপুরুষের পরম মমতায় রূপ পাচ্ছে প‍্যাঁচার পরিবার, গণেশ, দূর্গার পরিবার, রাধাকৃষ্ণ ও ছোটো ছোটো আসবাব। কলকাতার নানা মেলায় আলো করে বসে থাকেন শিল্পীরা। যাচ্ছে ভারতের নানা প্রান্তে, এমনকি বিদেশেও। সিঙ্গি থেকে ১২ কিলোমিটার দূরত্বের গ্রামে যখন পৌঁছলাম তখন সকালের চায়ের পর্ব সেরে শিল্পীরা নেমেছেন কাজে। সংসারের ছেলেরা বনে কাঠ জোগাড়ে ব‍্যস্ত।
journey of singi village
অতিথি দেখে তৎপর হয়ে উঠলেন শিল্পীরা। চায়ের কাপ এগিয়ে দিলেন খুবই আন্তরিক ভাবে। নানা রঙের শিল্পকর্মের মধ্যে তখনই বসন্ত ঝাঁপিয়ে পড়ছে গেরস্থালীর উঠোনে। সকালের রোদ নানা রঙের মধ্যে পড়ে ঝলমলিয়ে উঠছিল। খানিক কেনাকাটার সঙ্গে দিনগুজরানের কথা শুনে উঠে বসলাম গাড়িতে। এরপরে আমাদের পথ গেল একবারে সতীপীঠের দিকে। ভায়া কালনা-কাটোয়া রোড ও রামজীবনপুর-কেতুগ্রাম কাটোয়া রোড ধরে ৪০কিলোমিটার দূরত্বে পৌঁছে গেলাম সতীপীঠ অট্টহাসে। কথিত এখানে সতীর ওষ্ঠ পড়েছিল।
journey of singi village
করোনার আবহ কাটিয়ে ভক্তের জমায়েত হচ্ছে ধীরে ধীরে। এখানে দেবী অধরেশ্বরী, অষ্টচামুণ্ডা, দন্তুরা। ওষ্ঠ থেকেই হাসি বের হয়। দেবীর ওষ্ঠ পতনের পরে দেবী চামুণ্ডার অসুরবধে তাচ্ছিল‍্য ভরা উচ্চ হাসি মিলেমিশে এক হয়ে গিয়ে অট্টহাসের রূপ নিয়েছে। এখানে মাতৃপূজার বিশেষত্ব হল বছরে একবার পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া ঈশানী নদীর জলে ঘট প্রতিস্থাপন করা। ঢাক ঢোল কাঁসর ঘণ্টা শঙ্খ উলুধ্বনি দিয়ে বরণ করা হয় সেই ঘটকে। এখানের আশ্রমিক পরিবেশ খুব স্নিগ্ধ। প্রাচীনতার প্রতীক মনসা মূর্তি, চতুর্মূখী চণ্ডীমণ্ডপ, পঞ্চমুণ্ডীর আসন আশ্রমকে অনন্য করে তুলেছে।
অট্টহাস থেকে সাড়ে আট কিলোমিটারের পথের শেষে বহুলা লক্ষ্মীতলা। শোনা যায় এই পীঠে সতীর
বাম বাহু ছিন্ন হয়ে পড়েছিল। মন্দিরঅঙ্গনে পৌঁছে দেখা গেল ততক্ষণে মন্দিরদ্বার বন্ধ হয়ে গিয়েছে। ক্লান্ত শরীরে চারচাকা ছুটছে মসৃন পথ ধরে। পরিষ্কার আকাশ আর দূষণমুক্ত পরিবেশ আর দুধারে গ্রামবাংলাকে সঙ্গে নিয়ে হোমস্টেতে ফিরে আসার পালা। শুধু সবুজ ছাড়া কিছু নেই। তাই ঠিক হল বিকেলে গ্রামের পথে ঘোরা, সব্জি বাগানে উঁকি মারা। বিকেলে একটি টোটো ভাড়া করে সরু পথ ধরে প্রথমে গেলাম বাংলায় মহাভারত রচয়িতা কাশীরাম দাসের জন্মভিটে দেখতে। বাড়ির ভগ্নদশা দেখে খুবই মন খারাপ হয়ে গেল। সামনের দিকের দরজা বন্ধ। পিছনের দিক দিয়ে কোনও ক্রমে ঢুকতে পেরে অবাক হতে হল। অঙ্গনওয়াড়ির বড় উনুন সেখানে শোভা পাচ্ছে। ভাঙা মন নিয়ে ক্ষেতের মধ্যে দাঁড়াতেই মন ভালো হয়ে গেল।
journey of singi village
নানা সব্জি কিনে থলি বোঝাই হল, সূর্যাস্ত দেখা হল। ফিরে তেলেভাজা আর মুড়ি, সহযোগী হিসেবে শশা, পেঁয়াজ, চা জমিয়ে দিল আড্ডা। রাতে দেখলাম সাদা তিল পিষে তেল বের হওয়ার ঘরোয়া পদ্ধতি। টাটকা তেল নিতে কেউই ভুললাম না। সম্রাটবাবু নিজেই এই কাজ করে দেখালেন। ত্বক ও চুলের জন্য খুব উপকারী এই তিলতেল। এ ছাড়াও পেঁয়াজ, সর্ষে, লিচু, নিমফুলের মধুর স্বাদ নিয়ে সকালের চা-পান করোনাআবহে নতুন মাত্রা জুগিয়েছিল।
পরের দিন কলকাতার ফিরতি পথে গেলাম আরও এক শাক্তপীঠ ক্ষীরগ্রামের দেবীযোগদ‍্যা মন্দিরে। কথিত সতীর বামপায়ের বুড়োআঙুল পড়ে ছিল এখানে। সিঙ্গি থেকে প্রায় ১৭ কিলোমিটার দূরত্বে এই মন্দিরের যোগদ‍্যাদেবী ক্ষীরদিঘিতে থাকেন সারা বছর। বৈশাখ সংক্রান্তিতে তুলে আনা হয় অভিষেকের জন‍্য। জৈষ্ঠ‍্যমাসে ৪ তারিখের রাতে আবার জলগমন হয়। দেবীর ভৈরব ক্ষীরকণ্ঠকের নিত্যপুজো হয়। গর্ভমন্দির সংলগ্ন একটি জগমোহন মন্দির রয়েছে। ক্ষীরদিঘির জলে বহু পোষ‍্য মাছ আছে যাদের বিস্কুট দিলেই হাত থেকে নিয়ে যায় তারা। ভোগের আয়োজন চলছিল তখন। কিন্তু হাতে সময় কম থাকায় রওনা দিলাম অজয় নদের তীরে কোগ্রামে এক সতীপীঠ উজানীর উদ্দেশ্য। এখানে সতীর দক্ষিণ কনুই পড়ে ছিল এমনই কথিত। কাটোয়া নতুনহাট রোড হয়ে সামান্য ভিতরে। এখানে ছোট্ট মেয়ে শান্তির চেষ্টায় আমরা দেবী দর্শন, ভোগ আহার ও সমগ্র চত্বর ঘুরে দেখার
সুযোগ পেলাম।
journey of singi village
আগে থেকে জানিয়ে দিলে ভোগ মিলবে। ভাত, শুক্তো, কড়াইয়ের ডাল, সব্জি, মাছের টক, পায়েস। তখন সূর্য মাথার ওপরে। ধূ ধূ চরে কেবল বালি আর বালি। অজয়ের জল শুকিয়ে গেছে। অথচ কে বলবে এই অজয়ের তীরে কবি কুমুদরঞ্জন মল্লিকের বাড়ি। তিনবার নদের জলে মিশে গেছে কবির বাড়ি। বর্তমান বাড়ির দেখভাল করার মানুষজন আছেন দেখা গেল। বাড়ির চারপাশ ঘুরে ঘুরে দেখতে দেখতে মনের মধ্যে ছোটবেলার দুলে দুলে মুখস্থ করা কবিতা উঠে এল 'বাড়ি আমার ভাঙন ধরা অজয় নদের ধারে/জল যেখানে সোহাগ করে স্থলকে ঘিরে রাখে '।
journey of singi village
হোমস্টে নিয়ে কিছু কথা বলতেই হয় সিঙ্গি গ্রামে সারা বছরই আসা যায়। এপ্রিল থেকে জুনের মাঝামাঝি গ্রীষ্ম, সেই সময় সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৪টে পর্যন্ত বেশ গরম পড়লেও বিকেলের পর থেকে অনেকটা কমে যায় তাপমাত্রা। বিশেষ করে যেদিন সন্ধ্যায় ঝড়বৃষ্টি হয়, সেদিন রাতে ভালো রকম শীত অনুভূত হয়। জুনের শেষ থেকে অগাস্টের শেষ ভরা বর্ষা। গ্রাম বাংলার সবুজ রূপ দেখার সেরা সময়। অক্টোবর মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে এখানে শীতের শুরু। চলে কমবেশি মার্চের মাঝামাঝি পর্যন্ত। ডিসেম্বর/জানুয়ারি মাসে রাতের দিকে তাপমাত্রা মাঝে মাঝেই ৬ ডিগ্রীর নীচে নেমে আসে।"শান্তিনিকেতন লজ" সিঙ্গি গ্রামে থাকার একমাত্র বাসস্থান, এখনও পর্যন্ত। এটি একটি ছোট্ট বাড়ি যা হোমস্টে কনসেপ্টের উপর গড়ে উঠেছে। গ্রামের কিছু পরিশ্রমী মানুষের সহযোগিতায় বাইরে থেকে গ্রামে বেড়াতে আসা মানুষদের থাকা, খাওয়ার ব্যবস্থা এবং গ্রামের পরিবেশ চেনানোর কাজ করে শান্তিনিকেতন পরিবার। বাড়িতে আছে বিভিন্ন ধরনের ফল, সব্জি এবং অন্যান্য গাছে ছাওয়া দুটি ছোট বাগান। আছে খুব ছোট্ট একটি বাঁধানো পুকুর, যা ছোট মাছ চাষের জন্য ব্যবহার করা হয়।
হোমস্টে কনসেপ্ট অনুযায়ী অতিথিদের থাকার জন্য মোট ছটি ঘর আছে। দ্বিতলে দুটি, ত্রিতলে তিনটি এবং একতলায় বাড়ির ভিতরের বাগান সংলগ্ন একটি ঘর আছে। একতলার ঘরটি চার শয্যার এবং পেট ফ্রেন্ডলি। প্রতিটি ঘরই বাথরুম (কমোড, বেসিন এবং গিজারসহ) সংলগ্ন। শুধুমাত্র তিনতলার তিনটি ঘরই বাতানুকূল। অতিথির গাড়ি রাখার বন্দোবস্ত আছে। সিসিটিভি ক্যামেরা অতিথির নিরাপত্তার স্বার্থে ২৪ ঘন্টা কাজ করে। শান্তিনিকেতন কোনও রেস্টুরেন্ট নয়। বাড়ির নিজস্ব রান্নাঘরে অতিথির জন্য খাবার তৈরি করা হয়। রান্নাঘরে টাটকা শাকসব্জি, ঘরে তৈরি তেল, ঘি, দই এবং বিভিন্ন মশলা ব্যবহার করা হয়। শান্তিনিকেতনে টেলিভিশন নেই। প্রতি ঘরে কিছু বই (বিভিন্ন ধরনের, মূলতঃ বাংলা ভাষায় লেখা) আছে। শান্তিনিকেতনে থাকার জন্য কমপক্ষে ২৪ ঘন্টা আগে বুক করতে হয়। স্পট বুকিং নেওয়া হয় না।
যোগাযোগ: Shantiniketon Homestay: 91 7044791436
journey of singi village
পাপিয়া মিত্র আনন্দবাজারের প্রাক্তন সাংবাদিক। ছোটবেলা থেকে কবিতা, গল্প, প্রবন্ধ লেখার অভ‍্যাস। ভালো থাকার জন্য টুকটাক বেরিয়ে পড়তে ভালোবাসেন। কবিতা পাঠ, আবৃত্তি ও সঙ্গীত পরিবেশন করেন পাপিয়া।
Anim pariatur cliche reprehenderit, enim eiusmod high life accusamus terry richardson ad squid. 3 wolf moon officia aute, non cupidatat skateboard dolor brunch. Food truck quinoa nesciunt laborum eiusmod. Brunch 3 wolf moon tempor, sunt aliqua put a bird on it squid single-origin coffee nulla assumenda shoreditch et. Nihil anim keffiyeh helvetica, craft beer labore wes anderson cred nesciunt sapiente ea proident. Ad vegan excepteur butcher vice lomo. Leggings occaecat craft beer farm-to-table, raw denim aesthetic synth nesciunt you probably haven't heard of them accusamus labore sustainable VHS.
Anim pariatur cliche reprehenderit, enim eiusmod high life accusamus terry richardson ad squid. 3 wolf moon officia aute, non cupidatat skateboard dolor brunch. Food truck quinoa nesciunt laborum eiusmod. Brunch 3 wolf moon tempor, sunt aliqua put a bird on it squid single-origin coffee nulla assumenda shoreditch et. Nihil anim keffiyeh helvetica, craft beer labore wes anderson cred nesciunt sapiente ea proident. Ad vegan excepteur butcher vice lomo. Leggings occaecat craft beer farm-to-table, raw denim aesthetic synth nesciunt you probably haven't heard of them accusamus labore sustainable VHS.
Anim pariatur cliche reprehenderit, enim eiusmod high life accusamus terry richardson ad squid. 3 wolf moon officia aute, non cupidatat skateboard dolor brunch. Food truck quinoa nesciunt laborum eiusmod. Brunch 3 wolf moon tempor, sunt aliqua put a bird on it squid single-origin coffee nulla assumenda shoreditch et. Nihil anim keffiyeh helvetica, craft beer labore wes anderson cred nesciunt sapiente ea proident. Ad vegan excepteur butcher vice lomo. Leggings occaecat craft beer farm-to-table, raw denim aesthetic synth nesciunt you probably haven't heard of them accusamus labore sustainable VHS.