স্বদেশে ঠাঁই হয়নি "পাকিস্তান" নামের স্রষ্টা চৌধুরী রহমৎ আলীর

History of India
chowdhury rahmat ali the creator of pakistan
মানুষটি স্বপ্ন দেখেছিলেন পাকিস্তানের। তবে সে পাকিস্তানে কিন্তু পূর্ববঙ্গ ছিল না। অথচ ১৯৪৭-এ অখণ্ড ভারত ভেঙে পূর্ববঙ্গ নিয়েই তৈরিও হলো "পাকিস্তান।" কিন্তু সেখানে ঠাঁই হলো না "পাকিস্তান" নামের স্রষ্টা চৌধুরী রহমৎ আলীর। পাক গভর্ণ‍র জেনারেল তথা "বাবা-এ-কওম" অর্থাৎ জাতির পিতা মহম্মদ আলী জিন্নাহ পাকিস্তানে যে সম্মান পেয়েছিলেন, তার ছিটেফোঁটাও জোটেনি চৌধুরী রহমৎ আলীর নসিবে। বরং তিনি ছিলেন পাকিস্তানের কাছে তখন এক "উপদ্রব।"
১৯৪৮-এর ১১ ই সেপ্টেম্বর জিন্নাহ মারা যান। এরপর জিন্নাহর পরবর্তী উত্তরাধিকারী পাক প্রধানমন্ত্রী লিয়াকৎ আলী শেষ পযর্ন্ত চৌধুরী রহমৎ আলীকে পাকিস্তান ছাড়ার নির্দেশ দেন।
ইতিমধ্যে দেশ ভাগের ফলে ভারতের পঞ্জাবে আলীর সব পৈতৃক সম্পত্তি হাতছাড়া হয়ে গেছে। লণ্ডন থেকে ১৯৪৮-এর এপ্রিলে নতুন পাকিস্তানে এসেছেন আলী। তখনও তাঁর কোনো স্থায়ী রোজগার নেই। এ অবস্থায় পাক প্রধানমন্ত্রী লিয়াকৎ আলীর নির্দেশে স্বপ্নভঙ্গের বেদনা নিয়ে স্বপ্নের পাকিস্তান ছেড়ে নি: সম্বল চৌধুরী রহমৎ আলীকে ফের চলে যেতে হলো তাঁর পড়াশুনোর জায়গা লণ্ডনে।
লণ্ডনে তখন মহামারী আকার নিয়েছে ইনফ্লুয়েঞ্জা। ইনফ্লুয়েঞ্জায় আক্রান্ত হলেন চৌধুরী রহমৎ আলী। তারপর সব শেষ। বেশ কয়েকদিন তাঁর মৃতদেহ পড়ে রইলো সেখানকার একটি বদ্ধ ঘরে। কেউ জানলো না, তাঁর মৃত্যু সংবাদ।
এরপর তাঁর সৎকারের জন্য লোকজন বা টাকা-পয়সা কিছুই নেই। এ অবস্থায় এগিয়ে এলেন আলীর প্রাক্তন কলেজ ইমানুয়েল কলেজের অধ‍্যাপক এডওয়ার্ড ওয়েলবোর্ণ। এর আগে তিনি চৌধুরী রহমৎ আলীর চিকিৎসার খরচ জোগাড় করে দেন। আর শেষে মৃতদেহ সমাধিস্থ করার ব‍্যবস্থাও।
১৯৫১-র ১২ ই ফেব্রুয়ারি কেম্ব্রিজে ৫৫ বছর বয়সে নি: সহায় নি: সম্বল অবস্থায় চৌধুরী রহমৎ আলী মারা যান। এর প্রায় দু'সপ্তাহ পর ১৯৫১-র ২০ শে ফেব্রুয়ারি কেম্ব্রিজের নিউ মার্কেট রোড সমাধিক্ষেত্রে তাঁকে সমাধিস্থ করা হয় অধ‍্যাপক ওয়েলবোর্ণের উদ্যোগে।
কিন্তু কে এই চৌধুরী রহম‍ৎ আলী?
আসছি এবার সে প্রসঙ্গে। এবার থেকে তাঁকে সংক্ষেপে "আলী" বলে উল্লেখ করা হবে।
ভারতের পঞ্জাবের হোশিয়ারপুর জেলার বালাচৌর শহরে এক মুসলমান গুরজার বংশে আলীর জন্ম ১৮৯৫ খ্রিস্টাব্দের ১৬ ই নভেম্বর। স্থানটি বর্তমানে নাওয়ানশহর জেলায় অবস্থিত।
১৯১৮-তে লাহোরের ইসলামিয়া মাদ্রাসা থেকে স্নাতক হয়ে ওই শহরের আইচসন কলেজে শিক্ষকতার কাজে যোগ দেন। এরপর আইন পড়তে ভর্তি হোন পঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয়ে। তারপর এক বেলুচি জমিদারের আইন উপদেষ্টা নিযুক্ত হোন। এখান থেকে পয়সা জমিয়ে লণ্ডন পাড়ি দেন ১৯৩০-এ। ভর্তি হোন কেম্ব্রিজের ইমানুয়েল কলেজে। সেখান থেকে ১৯৩৩-এ বি.এ. এবং ১৯৪০-এ কেম্ব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এম.এ. পাশ করেন।
১৯৩৩-এর ২৮ শে জানুয়ারি ৩ নম্বর হামবারস্টোন রোডে তাঁর ঠিকানা থেকে লেখা একটি চিঠিতে "পাকিস্তান" ধারণার জন্ম দেন চৌধুরী রহমৎ আলী। তাতে তিনি নিজেকে পাক জাতীয় আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে দাবি করে জানান, ---
প্রিয় জনাব / জনাবা,
পঞ্জাব, উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত (আফগান) প্রদেশ, কাশ্মীর, সিন্ধু ও বেলুচিস্তান--- ভারতের এই পাঁচটি উত্তরাঞ্চলীয় প্রশাসনিক একক এলাকায় বসবাসকারী "পাকস্থান"-এর ৩০ মিলিয়ন মুসলমানের পক্ষে আমি এই আবেদন জানাচ্ছি। ওই এলাকায় বসবাসকারী মুসলমানদের একটি পৃথক জাতি হিসেবে মর্যাদা দেওয়ার দাবি করছি, কেননা, তাঁরা ভারতের অন্যান্য অধিবাসীদের থেকে আলাদা। পাশাপাশি ধর্মীয়, সামাজিক ও ঐতিহাসিক কারণে পাকস্থানের জন্য একটি পৃথক যুক্তরাষ্ট্রীয় সংবিধান অনুমোদনের দাবিও জানাচ্ছি।
হিন্দু-মুসলমান যে একটি বিরাট সমস্যা, তার সমাধানের লক্ষ্যেই এই প্রস্তাব।
মুসলমানদের জন্য পৃথক রাষ্ট্র গঠনের প্রস্তাবিত নাম তিনি দেন "পাকস্থান।" ইংরেজিতে "Pakstan" শব্দটি দিয়ে তিনি তাঁর উল্লিখিত পাঁচটি অঞ্চলকে বোঝান, যেমন---
১) পঞ্জাবের: P
২) আফগান প্রদেশের: A
৩) কাশ্মীরের: K
৪) সিন্ধুর: S এবং
৫) বেলুচিস্তানের: tan
সব মিলিয়ে "Pakstan."
"পাকস্থান" অপেক্ষাকৃত কঠিন উচ্চারণ বলে ১৯৩৩-এ মাঝে একটি "আই" (I) যোগ করে তৈরি হয় "পাকিস্তান" (Pakistan) শব্দটি।
এ বিষয়ে চৌধুরী রহমৎ আলী ৩৬ বছর বয়সে "Now or Never: Are we to live or perish for ever? " শিরোনামে একটি পুস্তিকা লেখেন, যেখানে তাঁর উপরোক্ত চিঠিটিও ছিল।
আলী পরে আরও একটি লেখা লেখেন, যেখানে তিনি "পাকিস্তান" শব্দের ব‍্যাখ‍্যায় জানান, একই সঙ্গে ফার্সি ও উর্দু শব্দ "পাকিস্তান।" দক্ষিণ এশিয়ায় এটি আমাদের আবাসভূমির নাম। এর অর্থ--- আত্মিকভাবে পবিত্র ও বিশুদ্ধ যাঁরা, সেই পাকদের ভূমি।
এখানে একটি উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, পঞ্জাব, আফগানিস্তান, কাশ্মীর, সিন্ধু ও বেলুচিস্তান---এই পাঁচটি অঞ্চল নিয়ে তৈরি হয়েছিল চৌধুরী রহমৎ আলীর প্রস্তাবিত "পাকিস্তান" এবং সেখানে মুসলিম অধ‍্যুষিত পূর্ববঙ্গ ছিল না। তবে ১৯৪৭-এ দেশভাগের পর পূর্ববঙ্গ ঢুকে যায় পাকিস্তানে এবং পরে ১৯৭১-এ তা স্বাধীন বাংলাদেশ হয়।
চৌধুরী রহমৎ আলীর ব‍্যাখ‍্যা ছিল, রাশিয়া বাদে বাকি ইওরোপ এলাকা প্রায় ভারতের সমান আকারের। কিন্তু ইওরোপ বিভক্ত ২৬ টি পৃথক জাতিরাষ্ট্রে। তাহলে ভারতের সব জাতিকে কেন একটিমাত্র রাষ্ট্রের অধীনে থাকতে হবে?
আলীর আরও যুক্তি, প্রার্থনা, খাদ্য, সংস্কৃতিসহ বহু বিষয়েই হিন্দু-মুসলিমের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। তবে পাকিস্তানকে আলাদা রাষ্ট্র করে দিলেও সেখানে হিন্দু-মুসলিম সবাই আগের মতোই একসঙ্গে শান্তিপূর্ণভাবে বসবাস করতে পারবে। এ ক্ষেত্রে দুই ধর্মের শাসনযন্ত্রটা নিজেদের হাতেই থাকবে।
চৌধুরী রহমৎ আলী তাঁর প্রস্তাবের বিষয়ে কথা বলেন জিন্নাহর সঙ্গে। জিন্নাহ তাঁকে এ বিষয়ে ধীরে চলার পরামর্শ দেন।
জিন্নাহর কথায় আলী এতটুকু না দমে ১৯৩৫-এ নতুন উদ‍্যমে প্রকাশ করলেন তাঁর নতুন বই "Pakistan: The Fatherland of Pak Nation." এখানে তিনি পাকিস্তান ধারণাটির বিস্তারিত ব‍্যাখ‍্যা দেন। পাকিস্তানের একটি ভৌগোলিক সীমারেখা থেকে শুরু করে প্রাসঙ্গিক ইতিহাসসহ বিভিন্ন জাতির সাম্প্রদায়িক সাদৃশ্যগুলি চিহ্নিত করেন এবং পাকিস্তানের জাতীয় পতাকা ও জাতীয় ভাষার কথাও বলেন তিনি। পাকিস্তানে বসবাসকারী প্রতিটি সম্প্রদায়ের মানুষের জন্য নিজস্ব বৈধ আইন ও স্বায়ত্তশাসন থাকবে বলে জানান তিনি। মুসলিমদের জন্য যেমন থাকবে শরিয়া আইন, তেমনি হিন্দু-খ্রিস্টান-শিখসহ অন্যান্যদের জন‍্য থাকবে সেরকম আইন।
ভারতের মুসলিম অধ‍্যুষিত অন্যান্য অঞ্চলের জন্যও পৃথক রাষ্ট্র গঠনের কথা বলেছিলেন চৌধুরী রহমৎ আলী। যেমন, তিনি বলেছিলেন, বাংলার মুসলিম অধ‍্যুষিত অঞ্চলের জন্য নাম থাকবে "বঙ্গিস্থান", দক্ষিণ ভারতের নিজাম শাসিত অঞ্চলের নাম হবে "ওসমানিস্থান" ইত্যাদি। এ ছাড়াও মুসলিমদের স্বায়ত্তশাসিত বেশ কয়েকটি অঞ্চলের তিনি নাম প্রস্তাব করেন। যেমন, হায়দারিস্থান, সিদ্দিকিস্থান, ফারুকিস্থান, মুইনিস্থান, মাপলিস্থান। শ্রীলঙ্কার দুটি অঞ্চলের জন্য তিনি নাম প্রস্তাব করেন "সাফিস্থান" ও "নাসারিস্থান।"
এছাড়া বঙ্গোপসাগরের জন্য নতুন নাম প্রস্তাব করেন "বঙ্গিয়ান সাগর", পাক উপকূলে আরব সাগরের নাম "পাকিয়ান সাগর" এবং লাক্ষাদ্বীপ সাগরের নাম প্রস্তাব করেন "সাফিয়ান সাগর।"
এখানেই থেমে থাকেন নি তিনি। বিভিন্ন ধর্মাবলম্বী জনগোষ্ঠী নিয়ে গড়ে ওঠা দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের জন্য তিনি নাম প্রস্তাব করেছিলেন "পাকাশিয়া" (Pakasia) বা "দিনিয়া" (Dinia)।"ইণ্ডিয়া" (India) অক্ষরগুলিকে নিয়ে আরব‍্য "দ্বীন" শব্দের ভাবনায় তৈরি করেন "দিনিয়া" শব্দটি।
এদিকে ১৯৪০-এর ৬ ই ফেব্রুয়ারি ভারতের ভাইসরয় লর্ড লিনলিথগোকে জিন্নাহ জানান, মুসলিম লীগ যুক্তরাষ্ট্রের বদলে পৃথক রাষ্ট্রের পক্ষপাতি।
এরপর ১৯৪০-এর ২৩ শে মার্চ মুসলিম লীগের লাহোর অধিবেশনে "লাহোর প্রস্তাব" উত্থাপন করেন আবুল কাশেম ফজলুল হক।
এদিকে জিন্নাহ পাত্তা দেননি "পাকিস্তান" নামের স্রষ্টা চৌধুরী রহমৎ আলীকে। কিন্তু ১৯৪৩ থেকেই আলীর "পাকিস্তান" শব্দটি নিয়ে সরব হতে থাকেন পৃথক পাকিস্তান রাষ্ট্রের দাবিতে।
অবশেষে সাতচল্লিশে দেশভাগের পর যখন সত্যিই "পাকিস্তান" তৈরি হলো, চৌধুরী রহমৎ আলী তখন লণ্ডনে। লণ্ডন থেকে নতুন পাকিস্তানে আলী এলেন ১৯৪৮-এর এপ্রিলে। এসে দেখলেন, তাঁর স্বপ্নের পাকিস্তান থেকে বাস্তবের পাকিস্তানের বিস্তর ফারাক। অসন্তুষ্ট আলী এরপর থেকে কঠোর সমালোচনায় মুখর হলেন। আর এর ফলে তিনি পাকিস্তানের মূর্তিমান উপদ্রব হিসেবে চিহ্নিত হয়ে গেলেন।
১৯৪৮-এর ১১ ই সেপ্টেম্বর মারা গেলেন জিন্নাহ। পরবর্তী পাক প্রধানমন্ত্রী হলেন লিয়াকৎ আলী। আর তখনই দুর্যোগ ঘনিয়ে এলো চৌধুরী রহমৎ আলীর জীবনে। লিয়াকৎ আলীর নির্দেশে পাকিস্তান ছাড়া হলেন তিনি। নি: সম্বল নি: সহায় হয়ে ফিরে গেলেন লণ্ডনে। সেখানেই ইনফ্লুয়েঞ্জা মহামারীতে নি: শব্দে মৃত্যু হলো তাঁর।
"পাকিস্তান" শব্দস্রষ্টার ঠাঁই হলো না পাকিস্তানে।
সত্যিই এটি বড়ো ট্র‍্যাজিডি! মৃত্যুর ১৮ বছর আগে পাকিস্তানের ধারণা দেওয়া স্রষ্টাকে চলে যেতে হয় নির্বাসনে।
পাকিস্তানের পতাকায় হিন্দুদের স্থান আছে। সে প্রসঙ্গে আলোচনার আগে ইসলামের পতাকা সম্পর্কে ধারণা দেওয়া দরকার। কেউ কেউ বলেন, মুসলমানদের চাঁদ-তারা হিন্দুদের শিবের মাথা থেকে নেওয়া।
কিন্তু এই চাঁদ-তারা ইসলামের সঙ্গে সম্পৃক্ত নয়। অটোমান সাম্রাজ্য যখন সম্প্রসারিত হয়, তখন সেই মানচিত্রটা চাঁদের মত দেখতে হয়। এরপর মক্কাকে মর্যাদা দিয়ে মাঝখানের অংশটা তারার মতো রাখা হয়। মানচিত্র শুরু হয় মক্কা থেকে মস্কো পযর্ন্ত এবং নিচের রেখা যায় আফ্রিকা হয়ে। আর সেটা দেখতে চাঁদের মতো হয়ে যায়।
সেজন্য তুরস্কের পতাকা থেকে অন‍্যান‍্য কিছু দেশের পতাকা ওইভাবেই তৈরী হয়। কিন্তু খোদ ইসলামের কেন্দ্রভূমি সৌদি পতাকায় চাঁদ-তারা নেই।
পাকিস্তানের পতাকায় চাঁদ-তারা আছে মুসলমানদের সংহতির চিহ্ন হিসাবে। কিন্তু পাশে একটি সাদা অংশও রাখা আছে এবং সেটি পাকিস্তানের বসবাসকারী হিন্দুদের জন‍্য।
তাই এর মধ্যে শিব নেই। কিন্তু পাক পতাকায় হিন্দুদের স্থান নির্দিষ্ট থাকলেও "পাকিস্তান" শব্দের স্রষ্টার মতোই সেখানেও হিন্দুদের অবস্থা নিয়ে বারে বারেই প্রশ্ন ওঠে।
সব মিলে বলা যায়, "পাকিস্তান" শব্দের স্রষ্টার মতোই সেদেশে রয়েছে সবক্ষেত্রেই স্বপ্নভঙ্গের বেদনা।
Anim pariatur cliche reprehenderit, enim eiusmod high life accusamus terry richardson ad squid. 3 wolf moon officia aute, non cupidatat skateboard dolor brunch. Food truck quinoa nesciunt laborum eiusmod. Brunch 3 wolf moon tempor, sunt aliqua put a bird on it squid single-origin coffee nulla assumenda shoreditch et. Nihil anim keffiyeh helvetica, craft beer labore wes anderson cred nesciunt sapiente ea proident. Ad vegan excepteur butcher vice lomo. Leggings occaecat craft beer farm-to-table, raw denim aesthetic synth nesciunt you probably haven't heard of them accusamus labore sustainable VHS.
Anim pariatur cliche reprehenderit, enim eiusmod high life accusamus terry richardson ad squid. 3 wolf moon officia aute, non cupidatat skateboard dolor brunch. Food truck quinoa nesciunt laborum eiusmod. Brunch 3 wolf moon tempor, sunt aliqua put a bird on it squid single-origin coffee nulla assumenda shoreditch et. Nihil anim keffiyeh helvetica, craft beer labore wes anderson cred nesciunt sapiente ea proident. Ad vegan excepteur butcher vice lomo. Leggings occaecat craft beer farm-to-table, raw denim aesthetic synth nesciunt you probably haven't heard of them accusamus labore sustainable VHS.
Anim pariatur cliche reprehenderit, enim eiusmod high life accusamus terry richardson ad squid. 3 wolf moon officia aute, non cupidatat skateboard dolor brunch. Food truck quinoa nesciunt laborum eiusmod. Brunch 3 wolf moon tempor, sunt aliqua put a bird on it squid single-origin coffee nulla assumenda shoreditch et. Nihil anim keffiyeh helvetica, craft beer labore wes anderson cred nesciunt sapiente ea proident. Ad vegan excepteur butcher vice lomo. Leggings occaecat craft beer farm-to-table, raw denim aesthetic synth nesciunt you probably haven't heard of them accusamus labore sustainable VHS.