কুলীন থেকেই কৌলিন্য। এই কৌলিন্যপ্রথার উৎপত্তির সঙ্গে সেনরাজ বল্লালসেনের নাম জড়িয়ে আছে। বলা হয়, সেনরাজ বল্লালসেন বাংলায় কৌলিন্যপ্রথা প্রবর্তন করেছিলেন। কিন্তু সেন আমলের কোনো তাম্রশাসন কিংবা সাহিত্যে কৌলিন্যপ্রথা সম্পর্কে কোনো উল্লেখ নেই। তাই রাজা বল্লালসেন এই কৌলিন্যপ্রথা চালু করেছিলেন, তা ঐতিহাসিকভাবে স্বীকৃত নয়। তবে বৈদ্যজাতির কুলপঞ্জিকা থেকে জানা যায়, বিদ্যা, অর্থ, সদাচার ইত্যাদি গুণের জন্য বৈদ্য সমাজের মানুষজন কৌলিন্য মর্যাদা পেতেন। আর এটি নির্ধারণ করতেন ওই সমাজের সমাজপতি, কুলজিগ্রন্থের লেখক ও ঘটকের দল।
১৬৫৩ খ্রিস্টাব্দের লেখা রামকান্তের "সদ্বৈদ্যকুলপঞ্জিকা" (কারো মতে, "কবিকণ্ঠহার") গ্রন্থে স্পষ্ট বলা হচ্ছে----
"আচারো বিনয়ো বিদ্যা প্রতিষ্ঠা, তীর্থদর্শনম।
নিষ্ঠা বৃত্তিস্তপো দানং নবধা কুললক্ষণম্। ।
প্রাচীনমতমেতদ্ধি বদন্ত্যাধুনিকা: পুন: ।
পুরা বৈদ্য-কুলোদ্ভূত-বল্লালেন মহৌজসা।
ব্যবস্থাপি চ কৌলিন্যং দুহিসেনাদি-বংশজে। ।"
অর্থাৎ, প্রাচীনদের মতে আচার, বিনয়, বিদ্যা, প্রতিষ্ঠা, তীর্থদর্শন, নিষ্ঠা, বৃত্তি, তপস্যা ও দান---এই নয়টি গুণ হচ্ছে কৌলিন্যের কারণ, কিন্তু আধুনিকদের মতে বৈদ্যবংশীয় রাজা বল্লালসেন বৈদ্যসমাজে কৌলিন্য প্রথার প্রবর্তন করেছিলেন। গ্রন্থটির রচনাকাল যেহেতু ১৬৫৩ খ্রিস্টাব্দ, সেহেতু বলা যায়, বল্লালসেনের বৈদ্যসমাজে কৌলিন্যপ্রথা প্রবর্তনের কাহিনীটি খ্রিস্টিয় সপ্তদশ শতাব্দীতেই চালু হয়েছিল। বল্লালসেনের জাতি নিয়েও মতভেদ আছে। বৈদ্যরা বল্লালসেনকে বৈদ্যজাতির লোক বলে দাবি করেন, অন্যদিকে কায়স্থরা তাঁকে কায়স্থ বলে দাবি করেন। কিন্তু তিনি আসলে ছিলেন কর্ণাট দেশীয় ক্ষত্রিয় বা ব্রহ্মক্ষত্রিয়।
বাংলার কৌলিন্য মূলত প্রভাবিত করেছিল রাঢ়ীয় ও বারেন্দ্র ব্রাহ্মণ সমাজকে। পরে তা আস্তে আস্তে বৈদ্য, কায়স্থসহ বিভিন্ন সমাজে চালু হয়েছিল। বাংলার মতো মিথিলাতেও কৌলিন্যপ্রথার কিংবদন্তি প্রচলিত ছিল। মিথিলার কিংবদন্তি অনুসারে, খ্রিস্টিয় চতুর্দশ শতাব্দীর প্রথমপাদে কর্ণাট বংশোদ্ভূত রাজা হরিসিংহ কিংবা হরসিংহ মিথিলায় কৌলিন্যপ্রথা প্রবর্তন করেছিলেন।
বাংলা ও মিথিলার সমাজ ব্যবস্থার মধ্যে অবশ্য যোগসূত্র ছিল। যেমন, মৈথিল ব্রাহ্মণদের বসতিস্থান ছিল "গঙ্গোলী" গাঞী।"গাঞী" থেকে এসেছে "গ্রাম।" আর "গঙ্গোলী" হয়েছে রাঢ়ীয় ব্রাহ্মণদের পদবি "গাঙ্গুলী" বা "গঙ্গোপাধ্যায়", যা এসেছে বসতবাটি গ্রামের নাম থেকে। পূর্ব ভারতের ব্রাহ্মণ সমাজে কৌলিন্যপ্রথা ও কুলজিগ্রন্থের উৎপত্তির কারণ জানা গিয়েছে পালরাজ তৃতীয় বিগ্রহপালের (আনুমানিক ১০৪৩-১০৭০ খ্রি: ) বনগাঁও তাম্রশাসন থেকে। স্থানটি একসময় মিথিলার অন্তর্ভুক্ত ছিল। বর্তমানে এটি উত্তর বিহারের সাহারসা জেলায় অবস্থিত।
পালরাজ তৃতীয় বিগ্রহপালের ১৭ শ বর্ষে বিষুবসংক্রান্তি উপলক্ষে গঙ্গাতীরবর্তী কাঞ্চনপুর থেকে জারি হয়েছিল। এই তাম্রশাসনের ক্রোড়পত্রে উল্লিখিত রয়েছে, ---
অর্থাৎ, বিগ্রহপালের মৈথিল ব্রাহ্মণ রাজকর্মচারি ছিলেন ঘণ্টীশ এবং তাঁর জমিদারভুক্ত ছিল গ্রাম বসুকাবর্ত। এই ঘণ্টীশ রাজকোষে উপযুক্ত অর্থ জমা দিয়ে ওই গ্রামের একটি অংশ কোলাঞ্চ ব্রাহ্মণ ঘাণ্টুকশর্মাকে নিষ্কর হিসেবে দানের ব্যবস্থা করেছিলেন। এখানে প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক, একজন কোলাঞ্চ ব্রাহ্মণের প্রতি একজন মৈথিল ব্রাহ্মণের এই ভূমিদানের কারণ কি?
উত্তরে বলা যায়, ভূমিদাতা মৈথিল ব্রাহ্মণ ব্যক্তিটি দানগ্রহীতা কোলাঞ্চ ব্রাহ্মণটির সঙ্গে নিশ্চয়ই নিজ কন্যা কিংবা নিজের পরিবারের কারো বিয়ের ব্যবস্থা করেছিলেন এবং বিয়ের পর ভূমিদান করে নিজের কাছাকাছি জায়গায় তাঁর বসবাসের ব্যবস্থা করেছিলেন। কারণ, কোলাঞ্চ ব্রাহ্মণের রক্ত নিজের ধমনীতে প্রবাহিত বলে গর্ববোধ করেছেন ঘণ্টীশ ব্রাহ্মণ। জানা যাচ্ছে, ঘণ্টীশের পিতামহের পিতামহীর পিতামহ ছিলেন এই কোলাঞ্চ ব্রাহ্মণ ব্যক্তিটি।
কোলাঞ্চ থেকে তীরভূক্তি অর্থাৎ মিথিলায় আসেন কাচ্ছ। কাচ্ছর পুত্র হলেন গোহণক, গোহণকের কন্যা ইদ্ধহলা, আবার তাঁর গর্ভজাত সন্তান বিবদ, বিবদের পুত্র যোগেশ্বর, যোগেশ্বরের পুত্র তুঙ্গ, তুঙ্গের পুত্র এই ঘণ্টীশ। মৈথিল ব্রাহ্মণরা পশ্চিম দেশীয় এবং অনেক দূরের কোলাঞ্চ ব্রাহ্মণের সঙ্গে বৈবাহিক সম্পর্কের সূত্রে গড়ে ওঠা সম্পর্কের বিষয়ে কিরূপ মর্যাদা দিতেন, তা এই বিবরণ থেকে স্পষ্ট। সোজা কথায়, পশ্চিমী ব্রাহ্মণ পণ্ডিতদের সঙ্গে স্থানীয় ব্রাহ্মণদের সম্পর্ক তৈরির এই আগ্রহ থেকেই কৌলিন্য প্রথার উদ্ভব ঘটেছে। আবার এইসব অনেক দূরের সম্পর্কের বিষয়টি লিখে না রাখলে পরে তা প্রমাণ করা কঠিন ছিল বলে তৈরি হয় কুলজিগ্রন্থ বা কুলপঞ্জিকা। খ্রিস্টিয় দশম-একাদশ শতাব্দীর বিভিন্ন শিলালেখ থেকে জানা যায়, এই কোলাঞ্চ ব্রাহ্মণরা বহু সংখ্যায় বাংলায় উপনিবেশ তৈরি করে বসবাস করেছেন।
এর প্রমাণ উত্তর প্রদেশের স্থাননামে বাংলার বিভিন্ন স্থাননাম। যেমন, উত্তর প্রদেশের দুই স্থানের নাম ছিল শ্রাবস্তী ও তর্কারী। সেখানকার ব্রাহ্মণরা যখন উত্তর বাংলার হিলি-বালুরঘাট অঞ্চলে বসবাস করতে শুরু করলেন, তখন ওই অঞ্চলের প্রাচীন নাম ছিল "পাহুনিযোজন।" এই নামটি পাল্টে হয়ে গেল উত্তর প্রদেশের শ্রাবস্তীর নামে "শ্রাবস্তী" এবং তার কাছাকাছি আরেকটি জায়গার নাম হয়ে যায় "তর্কারী।"এ প্রসঙ্গে আরেকটি উদাহরণ দেওয়া যায়। যেমন, তামিলনাড়ুর দক্ষিণ আর্কট জেলার একটি স্থানের নাম হচ্ছে "পাটলিপুত্রম্।" আবার প্রাচীন মগধ রাষ্ট্রের রাজধানীর নাম ছিল "পাটলিপুত্র।" এটি এখন বিহারের পাটনায়। মগধের পাটলিপুত্রের ভট্ট ব্রাহ্মণরা দক্ষিণ ভারতের আর্কটের ওই জায়গায় বসতি স্থাপন করেছিলেন এবং সেজন্য অঞ্চলটির নাম তাঁরা রাখেন "পাটলিপুত্রম্।" বর্তমানে এই স্থানের নাম "কাড্ডালোর।"
তাই দেখা যাচ্ছে, পাল আমলে মিথিলায় কৌলিন্যপ্রথার উৎপত্তি ঘটেছিল। পরে তার প্রভাব পড়ে বাংলায় এবং বাংলায় ব্রাহ্মণ সমাজে, বিশেষ করে, রাঢ়ীয় ও বারেন্দ্র ব্রাহ্মণ সমাজে খ্রিস্টিয় ঊনবিংশ শতক পর্যন্ত এর প্রভাব অক্ষুন্ন ছিল। আর এর জেরেই খ্রিস্টিয় ঊনবিংশ শতাব্দীর প্রথম ভাগে বর্তমান বাংলাদেশের ঢাকা জেলার মুন্সীগঞ্জ মহকুমার বজ্রযোগিনী গ্রামের কুলীন ব্রাহ্মণ কৃষ্ণসুন্দর বন্দোপাধ্যায় ২৮৪ টি বিয়ে করেছিলেন বলে জানা যায়।
সুতরাং, সেনরাজা বল্লালসেন ও তাঁর পুত্র লক্ষ্মণসেনের সঙ্গে বাংলার কৌলিন্যপ্রথার উৎপত্তি জড়িত বলে যে কাহিনী প্রচলিত আছে, তার কোনো ঐতিহাসিক ভিত্তি নেই। থাকলে সেনযুগের পণ্ডিত হলায়ূধ, অনিরূদ্ধ, ভবদেব ভট্টের মতো ব্রাহ্মণরা নিজেদের কুলীন বলেন নি বা কৌলিন্যপ্রথা সম্পর্কেও কিছু বলেন নি। আসলে সেনরাজা বল্লালসেন বা লক্ষ্মণসেন---দু'জনের কেউই বাংলায় কৌলিন্যপ্রথার প্রবর্তক ছিলেন না। এটিও একটি মিথ্ মাত্র, ঐতিহাসিক সত্য নয়।
তথ্যসূত্র:
1) The Origin of Kulinism in Mithila and Bengal by Prof. K.A. Nilkanta Sastri Feliciation Volume, Madras, 1971, PP-349.
2) "কৌলিন্য": ভারতকোষ, বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ, কলকাতা, দ্বিতীয় খণ্ড, পৃষ্ঠা-৪৭৫-৭৬.
Anim pariatur cliche reprehenderit, enim eiusmod high life accusamus terry richardson ad squid. 3
wolf moon officia aute, non cupidatat skateboard dolor brunch. Food truck quinoa nesciunt laborum
eiusmod. Brunch 3 wolf moon tempor, sunt aliqua put a bird on it squid single-origin coffee nulla
assumenda shoreditch et. Nihil anim keffiyeh helvetica, craft beer labore wes anderson cred
nesciunt sapiente ea proident. Ad vegan excepteur butcher vice lomo. Leggings occaecat craft beer
farm-to-table, raw denim aesthetic synth nesciunt you probably haven't heard of them accusamus
labore sustainable VHS.
Anim pariatur cliche reprehenderit, enim eiusmod high life accusamus terry richardson ad squid. 3
wolf moon officia aute, non cupidatat skateboard dolor brunch. Food truck quinoa nesciunt laborum
eiusmod. Brunch 3 wolf moon tempor, sunt aliqua put a bird on it squid single-origin coffee nulla
assumenda shoreditch et. Nihil anim keffiyeh helvetica, craft beer labore wes anderson cred
nesciunt sapiente ea proident. Ad vegan excepteur butcher vice lomo. Leggings occaecat craft beer
farm-to-table, raw denim aesthetic synth nesciunt you probably haven't heard of them accusamus
labore sustainable VHS.
Anim pariatur cliche reprehenderit, enim eiusmod high life accusamus terry richardson ad squid. 3
wolf moon officia aute, non cupidatat skateboard dolor brunch. Food truck quinoa nesciunt laborum
eiusmod. Brunch 3 wolf moon tempor, sunt aliqua put a bird on it squid single-origin coffee nulla
assumenda shoreditch et. Nihil anim keffiyeh helvetica, craft beer labore wes anderson cred
nesciunt sapiente ea proident. Ad vegan excepteur butcher vice lomo. Leggings occaecat craft beer
farm-to-table, raw denim aesthetic synth nesciunt you probably haven't heard of them accusamus
labore sustainable VHS.
I am a history aficionado, wandering along the path in search of history, archaeology and folk culture. This journey is aimed at constructing an undiscussed chapter of the forgotten Bangla with the information obtained from field survey.