সালটা ইংরেজি ১৮৫৭। দেশজুড়ে তখন সিপাহী বিদ্রোহের আগুন জ্বলছে। আর এই সময়েই লণ্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী শহর কলকাতায় প্রতিষ্ঠিত হলো কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়। পরের সালটা ইংরেজি ১৮৫৮। এই সালটা বাঙালির ইতিহাসে উল্লেখযোগ্য। কারণ, এই বছরই কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে সর্বপ্রথম চালু হয় ব‍্যাচেলর অব্ আর্টস বা সংক্ষেপে বি.এ. পরীক্ষা। পরীক্ষার্থীর মোট সংখ্যা ছিল ১৩ জন। কিন্তু অসুস্থতার কারণে অনুপস্থিত থাকেন ৩ জন। পরীক্ষা দেন ১০ জন। পাশ করেন দু'জন। এর মধ্যে প্রথম হোন বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় এবং দ্বিতীয় হয়েছিলেন যদুনাথ বসু। দু'জনেই ছিলেন প্রেসিডেন্সির ছাত্র। বঙ্কিমচন্দ্র ছিলেন আইন বিভাগের এবং যদুনাথ ছিলেন সাধারণ শাখার। বঙ্কিমচন্দ্র মানে পরবর্তীকালের সাহিত্য সম্রাট বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়। কপালকুণ্ডলা, দেবী চৌধুরাণী, কৃষ্ণকান্তের উইল, রাজসিংহ, আনন্দমঠ উপন্যাসের স্রষ্টা বঙ্কিমচন্দ্রের আলাদা পরিচয় দেওয়া অনাবশ্যক। তাই এখানে দ্বিতীয়জন যদুনাথ বসুর কথা আলোচনা করবো।

১৮৩৬ খ্রিস্টাব্দের ২৩ শে অক্টোবর চব্বিশ পরগণার এক অখ্যাত গ্রাম শুকদেবপুরে মামার বাড়িতে যদুনাথ বসুর জন্ম। পিতা নন্দলাল বসু, মায়ের নাম স্বরূপমণি দেবী। পিতার দিক দিয়ে রাজনারায়ণ বসু ও ঋষি অরবিন্দ ছিলেন যদুনাথের আত্মীয়। তাঁদের আদি নিবাস কলকাতার কাছেই বোড়াল। ছোটবেলায় যদুনাথের পিতা মারা গেলে ছেলের শিক্ষার দায়িত্ব এসে পড়ে মা স্বরূপমণি দেবীর ওপর।

কলকাতার গুরুপ্রসাদ চৌধুরী লেনে যদুনাথের একটি পৈতৃক বাড়ি ছিল। পিতৃহারা যদুনাথ এই বাড়িতে এসে ওঠেন এবং এখান থেকেই ভর্তি হোন হিন্দু কলেজ ব্রাঞ্চ স্কুলে। প্রতি বছর বৃত্তি পেয়ে জুনিয়র ও সিনিয়র পরীক্ষা পাশ করেন মেধাবী যদুনাথ। এরপর সিপাহী বিদ্রোহের বছরই অর্থাৎ ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দে যদুনাথ প্রথম এন্ট্রান্স পাশ করেন প্রথম বিভাগে। তার পরের বছরই পাশ করেন বি.এ.।

এরপর ১৯০২-এর ২ রা মে তাঁর জীবনাবসান হয়। ব্রিটিশ ভারতে সাহিত্য সম্রাট বঙ্কিমচন্দ্রের পাশাপাশি এক উল্লেখযোগ্য কৃতি বাঙালি হিসেবে পরিচিত এই যদুনাথ বসুর সঙ্গে পরিচয় হোক্ আজকের প্রজন্মের।