ভারতের তক্ষশীলায় আলেকজাণ্ডারের সঙ্গে এদেশের বেশকিছু নাগা সন্ন্যাসীদের সাক্ষাৎ হয়েছিল। এই তক্ষশীলার কাছেই পুরুর সঙ্গে যুদ্ধ হয়েছিল আলেকজাণ্ডারের। যুদ্ধপর্ব শেষে ইতিহাসের পাতায় টুকরো টুকরোভাবে ছড়িয়ে আছে আলেকজাণ্ডারের সঙ্গে ভারতীয় নাগা সন্ন্যাসীদের সাক্ষাৎকারের বিবরণ। আলেকজাণ্ডারের সহযাত্রী ওনিক্রিটিসের লেখায় পাওয়া যায় সেই তথ্য। মূল লেখাটি হারিয়ে গেছে, তবে পরবর্তীকালে স্ট্র‍্যাবো, মেগাস্থিনিসের লেখায় এই বৃত্তান্ত রয়েছে। ভারতীয় নাগা সন্ন্যাসীদের কথা বুঝতে ওনিক্রিটিসের তিনজন অনুবাদকের দরকার হয়েছিল। তবে এই তিনজন অনুবাদকের মূল কথা কিন্তু এক। এই বৃত্তান্ত থেকে জানা যাচ্ছে, নাগা সন্ন্যাসীদের ছিল দুটি গোষ্ঠী, একটি ডানডামিস অর্থাৎ বলা যেতে পারে "দণ্ডধারী" এবং অপরটি কালানুস, যারা "কল‍্যাণমস্তু" বলে মানুষকে সম্বোধন করতো বলে জানা যায়।

প্রথমে আলেকজাণ্ডার এই সন্ন্যাসীদের তাঁর সঙ্গে ওনিক্রিটিসের মারফৎ দেখা করতে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। কিন্তু দলপ্রধান ডাণ্ডামিস সে আমন্ত্রণ প্রত‍্যাখ‍্যান করে জানিয়ে দেন, তাঁরা যাবেন না, দরকার হলে আলেকজাণ্ডার নিজে তাঁদের কাছে আসবেন! এ বিষয়ে গ্রীক লেখক স্ট্র‍্যাবো জানাচ্ছেন, "জিমনোসোফিস্ট" অর্থাৎ নাগা সন্ন্যাসীদের সহজ সরল জীবনযাত্রা আলেকজাণ্ডারকে কৌতুহলী করে তুলেছিল। ওনিক্রিটিস লিখছেন, স্বল্পাহারী এই সন্ন্যাসীরা থাকতেন শহর থেকে দূরে নির্জন ফাঁকা মাঠে। পনেরো জনের দল ছিল তাঁদের। কেউ নানান ভঙ্গিতে দাঁড়িয়েছিলেন, কেউ ছিলেন বসে, আবার কেউ কেউ শুয়ে। প্রখর রোদে সন্ধ্যে পর্যন্ত তাঁরা এভাবেই ছিলেন। আর রোগ-ব‍্যাধি হলে আত্মাহুতি দিতেন নিজেদের জীবন।

আলেকজাণ্ডারের সহযাত্রী ওনিক্রিটিস কালানুস দলটির কাছেও গিয়েছিলেন। সে দলের প্রধান সন্ন্যাসী আলেকজাণ্ডারের জাঁকজমকপূর্ণ পোশাক দেখে বলেন, গ্রীকরা প্রকৃতিকে প্রাধান্য দেয় না, দিলে তারা আমাদের মতো এইরকম সহজ সরল জীবন যাপন করতো। এরপর আলেকজাণ্ডার দণ্ডমিস দলের প্রধানকে তাঁর সহযাত্রী হতে অনুরোধ জানান। কিন্তু সন্ন্যাসী প্রধান জানিয়ে দেন, জাগতিক কোনো কিছু দিয়েই তাঁকে প্রলুব্ধ করতে পারবেন না আলেকজাণ্ডার! বনের ফলমূল আর জল খেয়ে সন্ন্যাসীরা থাকেন। রাত কাটে গাছতলায়। গ্রীক দার্শনিক অ্যারিস্টলের প্রিয় শিষ্য বলে পরিচিত আলেকজাণ্ডার ভারতের এই নাগা সন্ন্যাসীদের কাছে তর্কযুদ্ধে হেরেও যান। পরে আলেকজাণ্ডার দশজন সন্ন্যাসীকে ডেকে নয়টি প্রশ্ন করেন। প্রবীণ সন্ন্যাসীকেই উত্তর যাচাইয়ের ভার দেওয়া হয়।

১) প্রশ্ন: জীবিত, না মৃত---কার সংখ্যা বেশি?

এরপর আলেজাণ্ডার তাঁদের উপহার দিয়ে বিদায় জানান। এভাবেই ইতিহাসের পাতায় ভারতের নাগা সন্ন্যাসীদের কথা রয়েছে, যাদের আলেকজাণ্ডার বশে আনতে পারেন নি। সন্ন্যাসীরা মুক্তজীবনেই থেকেছেন আজীবন। রাজকীয় লোভ তাঁদের আকর্ষণ করতে পারে নি। আর এটাই ভারতীয় দর্শনের কথা, ভোগ নয়, ত‍্যাগ। আর ভারতের নাগা সন্ন্যাসীরা গ্রীক সম্রাট আলেকজাণ্ডারের কাছে তা প্রমাণ করে দিয়েছেন। এটাই সনাতন ভারতবর্ষ।