নিজের বিয়েতে ও অভিনবত্ব রাখলেন "রাস্তার মাস্টারমশাই"। জামুড়িয়া ১ চক্রের 'তিলকা মাঝি আদিবাসী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে'র শিক্ষক শ্রী দীপ নারায়ণ নায়ক বিয়ের অনুষ্ঠানেও নিজের ছাত্রদের খাওয়া-দাওয়া, একবছরের জন্য পড়াশোনার সমস্ত দায়ভার নেওয়া এবং ছাত্রছাত্রীদের মায়েদেরকে বস্ত্র ও বিদ্যাসাগরের বই উপহার দিলেন। নববধূ কে সঙ্গে নিয়ে এই সমস্ত কিছুই তিনি করলেন নিজের হাতে। দীর্ঘ লকডাউন এর সময় তিনি রাস্তায়, গাছের তলায় এলাকার আদিবাসী শিশুদের পড়াশোনা করিয়ে সংবাদের শিরোনামে এসেছিলেন।

এই অতিমারী দরিদ্র সাধারণ মানুষের স্বাস্থ্য, জীবন জীবিকা, অর্থনীতির পাশাপাশি তাদের সন্তানদের প্রথাগত শিক্ষার উপর একটা বিরাট প্রভাব ফেলেছে। যার ফলে সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে দরিদ্র, দুঃস্থ আদিবাসী ছাত্রছাত্রীরা। কারণ সেই সকল ছাত্রছাত্রীদের বাবা মা বেশিরভাগই অসংগঠিত শ্রমিক অথবা পরিযায়ী শ্রমিক শ্রেণীভুক্ত। অর্থাভাব যাদের চিরসঙ্গী, যাদের নুন আনতে পান্তা ফুরায়, যাদের ছেলেমেয়েদের যথাযথ শিক্ষা সামগ্রী দূরের কথা সামান্য স্লেট পেনসিল কেনার সামর্থ্য নেই, তাদের কাছে আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে ঘরে বসে শিক্ষা গ্রহণ একটা অলীক কল্পনা ছিল।

এই অবস্থায় তাদের সমস্যার সমাধানের জন্য এগিয়ে এসেছিলেন রাস্তার মাস্টারমশাই নারায়ন নায়ক। বোগড়ার অন্তর্গত শিমুলিয়া পাড়া, কাঁঠাল পাড়া, মালতী পাড়া, বাউরি পাড়া, নীচু জবা পাড়া, উপর জবা পাড়া প্রভৃতি এলাকায় গিয়ে ছাত্রছাত্রীদের লকডাউন স্পেশাল ক্লাস নেওয়ার ব্যবস্থা করেন, এর পাশাপাশি তাদের হাতে তুলে দিয়েছেলেন প্রয়োজনীয় শিক্ষা সামগ্রী, পেন, পেনসিল, ও লকডাউন স্পেশাল প্রশ্নপত্র ইত্যাদি। এছাড়াও তাদের স্বাস্থ্যের কথা মাথায় রেখে করোনার বর্তমান আবহে রোগের সাথে লড়বার জন্য তাদের মুখে তুলে দিচ্ছেন পুষ্টিকর খাদ্য। একই সঙ্গে এলাকার দরিদ্র, দুঃস্থ আদিবাসী মানুষের জন্য, বেশ কিছু শিক্ষানুরাগী ব্যক্তিবর্গ ও শিক্ষকশিক্ষিকাদের সহযোগিতায় কমিউনিটি কিচেন গড়ে তুলে রান্না করা পুষ্টিকর খাদ্য তাদের হাতে তুলে দিয়েছিলেন।

করোনা রোগের সম্পর্কে জনসচেতনতা গড়ে তুলবার প্রয়াসে এলাকার বাড়ি বাড়ি গিয়ে সকলকে সচেতন করেছেন। সকলকে পাশে নিয়ে, সকলের কথা ভেবে সংঘবদ্ধভাবে যেমন কাজ করেছেন, তেমনই একক প্রয়াসেও শিক্ষক শ্রী দীপ নারায়ণ নায়ক মহাশয় তাঁর সন্তান তুল্য ছাত্রছাত্রীদের রবীন্দ্রনাথের আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে মুক্ত প্রাঙ্গণে স্বাস্থ্য বিধি মেনে শিক্ষা দানের ব্যবস্থা করেছিলেন।

শিক্ষক শ্রী দীপ নারায়ণ নায়ক বলেন, তিনি আত্মীয়-স্বজনদের জন্য পুষ্টিকর খাদ্যের ব্যবস্থা করেছেন। কিন্তু সেই পুষ্টিকর খাদ্য যে সমস্ত আদিবাসী ছাত্র-ছাত্রী অপুষ্টিতে ভুগছে তাদেরকে না খাওয়ালে তিনি বিবাহ করার আনন্দ পেতেন না। যেহেতু তিনি পেশায় শিক্ষক তাই তার কাছে ছাত্র ছাত্রী ও তাদের অভিভাবকরা তার কাছে বেশি গুরুত্বপূর্ণ।