বশিষ্ঠ, বাল্মীকি, ব‍্যাসদেব, দুর্বাশা, কশ‍্যপ, ভরদ্বাজ, জমদগ্নি, অত্রি, পুলস্ত‍্য ও বিশ্বামিত্র---এই দশ আর্য ঋষির সন্তান ভারতবর্ষের সব মানুষ। এর মধ্যে গায়ত্রী মন্ত্রের রচয়িতা ঋষি বিশ্বামিত্রের সন্তান ভারতের পিছিয়ে পড়া বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর মানুষ রয়েছেন। বিভিন্ন বিদেশি হানাদারদের বিরুদ্ধে এই বিশ্বামিত্রের সন্তানরাই অস্ত্র হাতে গর্জে উঠেছেন, গড়ে তুলেছেন প্রবল প্রতিরোধ। মহম্মদ বিন কাশিমের মূলতান অভিযান দিয়েই এই প্রতিরোধের শুরু। ৭১৩ খ্রিস্টাব্দে মূলতান দখল করেছিলেন কাশিম। কিন্তু ইসলামকে মেনে নেননি সেখানকার ভূমিপুত্র দুর্ধর্ষ কৃষক যোদ্ধা খোখাররা। কৃষিকাজে অভ‍্যস্ত শক্ত হাতে অস্ত্র ধরে প্রবল প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিলেন তাঁরা। দেখা যায়, গোটা ভারত জুড়েই মুসলমান শাসনকালে এদেশের নিম্ন বর্ণের হিন্দু ও শিখরা প্রতিরোধে সামিল হয়েছিলেন। এঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে জাঠ, খোখার, গণ্ড, ভীল, সৎনামী, রেড্ডি সম্প্রদায়ের মানুষজন।

মুসলমান ঐতিহাসিকদের লেখায় বার বার উঠে এসেছে ভারতে মুসলমান আক্রমণ ও আগ্রাসনের বিরুদ্ধে তথাকথিত নিম্ন বর্ণের হিন্দু সম্প্রদায়ের অস্ত্র ধারণের কথা। যেমন, ফেরিশতা লিখছেন, ইসলামের বার্তায় মুগ্ধ হতে পারে নি খোখার নামে পরিচিত কৃষকরা। বরং প্রচণ্ড বিদ্বেষে তারা অস্ত্র ধরেছে মহম্মদ ঘোরির বিরুদ্ধে। আরেক ঐতিহাসিক ইবনে আসির জানাচ্ছেন, খোখারদের নির্মূল করতে সুলতান মূলতানে ফিরে এসে রক্ত-গঙ্গা বইয়ে দিয়েছিলেন।

সেদিনের তারিখটি ছিল ১২০৬ খ্রিস্টাব্দের ১৫ ই মার্চ। ভারত লুঠ করে গজনী ফিরছেন মহম্মদ ঘোরি। পথে বিশ্রামের জন্য তাঁর কাফেলা থেমেছে শোহাওয়ারের কাছে দামিয়াকে। স্থানটি বর্তমান পাকিস্তানের পাঞ্জাবে। মাগরিবের নমাজ পড়ার জন্য তৈরি মহম্মদ ঘোরি। হঠাৎ জনা কুড়ি খোখার যোদ্ধা ঝড়ের গতিতে ঢুকে পড়লো সুলতানের শিবিরে। এই খোখাররা ইতিমধ্যেই ঘোরির আক্রমণে তাদের পরিবার-পরিজনদের হারিয়েছিলেন। সুতরাং, আক্রোশ তাদের ছিল প্রবল। শিবিরে ঢুকেই একের পর এক ছোরার আঘাত। আর সেই আঘাতেই মাটিতে লুটিয়ে পড়লেন মহম্মদ ঘোরি।

তাঁর আর দেশে ফেরা হলো না। অনেক পরে ইয়াহিয়া বিন আহমেদের লেখা "তারিখ-ই-মুবারকশাহী"-তে দেখা যায়, এই ঘটনার দুশো বছর পরেও মুসলমান শাসকদের সব চেয়ে বড়ো বিধর্মী দুশমন হিসেবে চিহ্নিত হয়ে রয়েছেন এক খোখার যোদ্ধা, নাম---যশরথ শাইকা খোখার। ভারতের স্বাধীনতা রক্ষায় এইসব বীরদের বৃত্তান্ত বিক্ষিপ্তভাবে ছড়িয়ে রয়েছে ইতিহাসের পাতায়। অনেকটাই আড়ালে। সব টুকরোগুলি জোড়া দিলে ভারতের ইতিহাস ফের নতুন করেই লিখতে হবে।

তথ্যসূত্র: