তাজমহল সমাধি, মন্দির, নাকি প্রাসাদ, কয়েকটি প্রশ্ন
-সন্দীপন মন্ডল
“বিশ্বে দুরকম মানুষ দেখা যায়, একপ্রকার যারা তাজমহল দেখেনি, আরেক প্রকার যারা তাজমহল দেখেছে”
- কোনো এক বিদেশী কোটিপতি, কথার মাধ্যমে বিস্ময়টা ভালো লেগেছে বলে দিলাম।
তাজমহল অবশ্যই ভারতের প্রতিনিধিত্ব করে বিশ্বের ইতিহাসে জায়গা করে নেওয়া প্রধানতম সৌধদের একটি। কিন্তু তাজমহল মানে কি শুধুই শাহজাহান আর মমতাজের প্রেম? শুধুই লাভার বেঞ্চ? শুধুই সেই বিকেল চারটে বেজে গেলে শাহজাহানের বিষন্ন হয়ে যাওয়ার প্রতীকের সাথে তাজমহলের গায়ের রঙ পাল্টে যাওয়ার গল্প? কদিন আগেই আমি একটা আরটিআই করেছিলাম আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়াকে বেশ কিছু প্রশ্ন তুলে। আসুন, আমি সেসব প্রশ্নের কিছু তুলে দিলাম নীচে, নিজেরাই উত্তর খুঁজে নিন।
১. ক্লাস নাইন টেনের ইতিহাস বই দেখলে, আমরা সবাই জানি তাজমহল কে তৈরি করেছিল। কিন্তু কোন প্রমাণের ভিত্তিতে শাহজাহানই যে তাজমহল তৈরি করেছিল সেটার দাবী করা হয়, সেটা জানি কি?
= অন্যতম সবথেকে বড় প্রশ্ন। তাজমহল কে কেন বানিয়েছে সেটার স্পষ্ট ইতিহাস সুলতানী আমলে কোনো বইয়েই লেখা নেই। নানা ছন্নছাড়া আদেশ বা নির্দেশ নানা সমসাময়িক বইয়ে পাওয়া যায় কিন্তু অমুক সুলতান অমুক দিনে অমুক কারণে অমুককে তাজমহল বানানোর নির্দেশ দিয়েছেন, সেটা কোত্থাও লেখা নেই।
২. তাজমহলের মত বিশাল বড় একটা স্থাপত্য তৈরির সাথেই সেটার রক্ষণাবেক্ষণ এর ব্যাপারেও অনেক লোকজন ও কলাকৌশল দরকার। কিন্তু তাজমহলে সর্বপ্রথমবারের জন্যে কত সালে কে মেন্টেনেন্স এর নির্দেশ দেন?
= এই প্রশ্নটি জানার দরকার এই কারণে, যাতে আমরা তৎকালীন এত বড় একটা স্থাপত্য তৈরি ও সেটির শক্তভাবে টিকে থাকার নিদর্শনের উৎকৃষ্টতা বুঝতে পারি। প্রথম রিপেয়ারিং বা মেন্টেনেন্স তখনই দরকার হয় যখন বিল্ডিংয়ের বয়স খানিকটা হয়ে যায় ও সেটির মেরামতের কাজ করা দরকার হয়ে পড়ে।
৩. তাজমহল প্রাঙ্গণে থাকা বাউলি বুর্জ নামের কুয়োর জল কখনো কি ছেঁচে তুলে ফেলা হয়েছিল?
= বাউলি বুর্জ কুয়োর বৈশিষ্ট্য অনেকটা আমাদের রাজ্যের শতব্দী প্রাচীন বড় জমিদারদের কুয়োর মতোই। নীচের দিকে বেশ কিছু গোপন কুঠুরি আছে, যেগুলোর মধ্যে জমিদাররা অবশ্যই সম্পত্তি লুকিয়ে রাখার মতো কাজ করে থাকতেন। বাউলি বুর্জের জল ছেঁচে তুলে ফেলার বিষয়টা ইম্পরট্যান্ট এই কারণেই যে তাজমহল শুধুই ইসলামিক স্থাপত্য হলে এই জল তোলার কাজ হলেও তাতে বিশেষ কিছু পাওয়া যেত না। আর বাউলি বুর্জের ভেতরে জল তুলে ছেঁচে না ফেলে রেখে দেওয়ার মধ্যে ‘অপ্রিয় কিছু জলের নীচ থেকে বেরিয়ে পড়ার’ ভয় থেকেই যায় সবসময়।
৪. তাজমহলের ভেতরটা কেন অষ্টভুজাকার বা আটটি কোণা যুক্ত, যেখানে সমস্ত রকমের মুসলিম সৌধের ভেতর মূলতঃ গোলাকারই হয়ে থাকে?
= অষ্টভুজাকার সৌধ হিন্দু বাদে সমস্ত ধর্মেই খুবই কম দেখা যায়, যেখানে অষ্টভুজ কোণা বা ছাদ হিন্দু ধর্মের স্থাপত্যের অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্যর মধ্যেই একটি। প্রসঙ্গত, হিন্দুরা ভীষণভাবেই দশটি দিক মেনে চলেন যেখানে আটদিকে আটটি আলাদা নামকরণ থাকে এবং মাথার অপরকে উর্দ্ধ এবং পায়ের নীচকে অধঃ বলা হয়।
৫. তাজমহল সৌধে ঢোকার মুখেই যে উর্দু লেখা আছে তার সর্বোপরি ভাগে কোন ফুলের প্রতিলিপি খোদাই করা আছে?
= পদ্মফুলের প্রতিকৃতি খোদাই করা আছে, যার উপস্থিতি ও পজিশন ও প্রয়োজন ইসলামী রীতির স্থাপত্যে চোখে পড়া খুবই বিরল ব্যাপার।
৬. তাজমহলের মাথায় কী ধরনের ও কী ধাতুর তিনটি মুখ বিশিষ্ট দন্ড বা ‘পিনাকল ট্রাইডেন্ট’ পোঁতা রয়েছে? সেটির গোড়াতে কীসের প্রতিকৃতি রয়েছে?
= প্রথমে ধাতুর কথাতে আসি, এই ‘পিনাকল ট্রাইডেন্ট’ এর গায়ে আজ অব্দি জং বা মর্চে ধরেনি। ঠিক যেমনটি আমরা দেখতে পাই মেহরউলির লৌহস্তম্ভে। অর্থাৎ এই দণ্ডের ধাতব অংশ এমনি এক ধাতুর যার ব্যবহার ভারতীয় সভ্যতার ইতিহাসে শুরু হয়েছিল মেহরউলির সমসাময়িক সময়েই।
এরপরে, তাজমহলের প্রাচীনতম ছবিগুলো থেকে পাওয়া যায়, মাথার ওপরে যে প্রতিকৃতি খোদাই করা আছে সেটি হুবহু একটি নারকোল ও তার ওপরে রাখা পত্রের মতো দেখতে। মানে আমাদের বাড়ির শুভ অনুষ্ঠানে দরজার গোঁড়ায় যেরকম ঘট বসানো হয়। এছাড়া এই প্রতিকৃতির গোঁড়াতে যে ফুলের ছাপ রয়েছে সেটি একটি উল্টানো পদ্মের মতো ছাপ। কিন্তু ভারতের ইসলামী বাকী সমস্ত স্থাপত্যের মাথায় এরকম দেখতে কোনোই প্রতিকৃতি কোথাওই নেই। এরকম কিছু মিলওয়ালা ট্রাইডেন্টকে কেদারনাথের মতো মন্দিরের মাথায় দেখা যায়।
৭. এই পিনাকল ট্রাইডেন্টের যে প্রতিলিপি তাজের প্রাঙ্গণে রয়েছে, সেটির সাথে তাজের মাথার ট্রাইডেন্ট কি হুবহু এক দেখতে?
= একদমই না। মাথার ওপরে ট্রাইডেন্টকে খোদাই করে তাতে আরবি বা ফার্সিতে কিছু শব্দ লেখা আছে যেটা মাটিতে থাকা প্রতিলিপির সাথে একদম মেলে না কারণ মাটিতে থাকা এর প্রতিলিপিতে কোনো শব্দ খোদাই করা নেই।
৮. তাজ মহলের মিনারগুলি কোন কাজের জন্য বানানো হয়েছিল ও সেখানে কোন কাজ হতো বলে ইতিহাসে রেকর্ড করা আছে?
= আমরা জানি ইসলামিক উঁচু মিনারের ওপরে বসে মোয়াজ্জিনরা নামাজের আজান বা সালাহ পাঠ করে। কিন্তু তাজমহলের চারটি মিনারে যে এই কাজটিই হতো, সেটার কোনোই রেকর্ডেড প্রমাণ কোনো ইতিহাস বইয়ে নেই। চারটি ভীষণ সুন্দর কারুকার্য করা মিনার, কিন্তু তাতে কী কাজ হতো সেটা কেউ জানে না। প্রসঙ্গত, হিন্দু ধর্মের নানা পুজোতে যজ্ঞের চারদিকে চারটি লম্বা কাঠি বা মন্ডপের চারদিকে চারটি উঁচু কলাগাছ অব্দি খাড়া করে রাখা থাকে।
৯. যেহেতু সুলতানদের বিষয়, তাই যখন সবাই জানেই মৃতদেহের কবর নীচেই আছে, তখন দুটি নকল কবর বানানো হলো কেন ওপরে?
= যাতে নীচের কবরের মূল অংশে কৌতূহলী লোকজন বেশি যেতে না পারেন এবং নীচের সমাধির রহস্য রহস্যই থেকে যায়।
১০. তাজমহলের কোনো অংশে কি সঙ্গীত বাজানোর মতো কোনো হল বা সভাঘর ছিল? যদি থাকে তাহলে কেন ইসলাম ধর্মমতে শেষ শয়নের শান্তির জায়গায় এরকম অদ্ভুত রীতি?
= তাজমহলে একটি গানবাজনার ঘর বা নহবত খানা ছিল। কিন্তু যেখানে কয়েক হাজার বছরের পুরনো পিরামিডের ভেতরে অব্দি শান্তিকে সবথেকে বেশি প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে আত্মার জন্যে, সেখানে তার কয়েক হাজার বছর পরেও ইসলামী সুলতানী একটি সমাধিক্ষেত্রে গানবাজনার সভাঘরের উপস্থিতি অস্বাভাবিক না? উল্টোদিকে আমরা ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে এরকম মন্দির দেখতে পাই যেখানে গানবাজনার অর্থাৎ দেবদেবীকে তুষ্ট করার জন্যে সঙ্গীতের ব্যবস্থা ছিল।
১১. তাজমহল বানিয়ে সম্পূর্ণ করার জন্যে সর্বমোট কত খরচের কথা ইতিহাসে রেকর্ডের রয়েছে?
= নানা বইয়ে নানারকম খরচের কথা বলা রয়েছে। প্রায় সমকালীন তিনটি বই এর খরচের কথা পাবলিকলি জানা যায়, সেগুলোর মধ্যে এতই অসামঞ্জস্যপূর্ণ যে যেকোনো একটিকে আসল খরচ ধরলে অন্যদুটি খরচ দিয়ে হয় আরো কয়েকটি তাজমহল অথবা তাজমহলের একটি মিনার অব্দি বানানো সম্ভব নয়। কেন এত অসামঞ্জস্য?
১২. যে কিছুজন স্থপতি ও কয়েক হাজার মজুর তাজমহল বানালেন, তাঁদের মধ্যে কোনো একজনেরও উত্তরপুরুষের খোঁজ কি এএসআই এর কাছে আছে?
= যে কয়েক হাজারজন শ্রমিক তাজমহল বানিয়েছিলেন, তাঁদের কোনো ইতিহাস রেকর্ড করা নেই কোথাও। তাঁরা কোথা থেকে এসেছিলেন, আর কোথায়ই বা চলে গেলেন? ভেলকি নাকি ব্যাপারটা?
১৩. ঠিক কোন বইয়ের রেফারেন্স থেকে পাওয়া যায় যে শাহজাহান মজুরদের হাত কেটে দিয়েছিলেন?
= নানা বইয়ের নানা মত। কেউ বলেন শাহজাহান মজুরদের হাত কেটে দিয়েছিলেন, কেউ বলেন প্রধান দুই স্থপতির হাত কেটেছিলেন, কেউ বলেন ঔরঙ্গজেব তাদের হত্যা করেছিলেন তাজমহলের কাজ শেষ হওয়ার পরে। সত্যি কোথাও একক হিসেবে লেখা নেই।
১৪. বাদশাহনামা, ভলিউম 1, পৃষ্ঠা ৪০০-৪০৫ এর অনুবাদে কী বলা আছে?
= পৃষ্ঠা ৪০৩ এ বলা আছে শাহজাহান আগ্রার এক নদীর তীরে একটি বিশাল বড় প্যালেস বা মহল দখল করলেন যে আগে রাজপুত রাজা জয়সিংহের কাছে ছিল। সেই প্যালেসে সাতটি তল আছে, সাথে একশোর কাছাকাছি ঘর আছে ও একটি গম্বুজ আছে।
কী অদ্ভুত রকমের মিল, তাই না?
১৫. ঔরঙ্গজেব কি এমন কোনো চিঠি তার বাবাকে পাঠিয়েছিল যাতে তার বাবাকে তাজমহলের রিপেয়ারিং করতে মানা করা আছে?
= ফারসি ভাষায় লেখা একটি চিঠি, যেটার অনুবাদ “ঔরঙ্গজেব তার বাবাকে তাজমহল রিপেয়ারিং করতে মানা করছেন” বলে পড়া হয়। যদি শাহজাহান বাইরে থেকে বিশাল বিখ্যাত স্থপতি এনে তাজমহল তৈরি করতে ১৬৩০ খ্রিস্টাব্দ থেকে দুই দশকের বেশি সময়ই নিয়ে নেন তাহলে সেটাকে তারই মাঝে আবার রিপেয়ারিং করা হচ্ছে কীভাবে? তৎকালীন ইতিহাসের তিনটি ভিন্ন ভিন্ন বইতে পাওয়া যায় এরকম একটি চিঠির বয়ানে লেখা আছে ১৬৫১ খ্রিস্টাব্দে ঔরঙ্গজেব তাজের বাগানে ঘুরতে গিয়ে দেখছেন তাজমহল বা তার ‘বাবার স্ত্রী এর সমাধি’ র ওপরের নানা জায়গায় চিড় ধরে জল চুঁইয়ে পড়ছে, যে সৌধ পুরো তৈরিই হলো না সেটাতে চিড় কীকরে ধরতে পারে?
১৬. শাহজাহান এবং তার নিজের মেয়ের কি কখনো কোনো অবৈধ সম্পর্ক ছিল?
= উত্তরটা পরের প্রশ্নেই আছে।
১৭. মমতাজের মৃত্যুর পরে শাহজাহান কি আবার বিয়ে করেছিলেন?
= কথিত আছে, মমতাজের মৃত্যুর বেশ কিছু বছর পরে শাহজাহান তার মেয়ের প্রতি সম্পূর্ণভাবে দুর্বল হয়ে যান। এই বিষয়ে তৎকালীন মুঘল দরবারের ফরাসি পর্যটক-চিকিৎসক ফ্রান্সিস বার্নিয়ের তার বইয়ে ব্যঙ্গ করে লিখেছেন “শাহজাহানের ব্যাপারে সহজেই বলা যায় তিনি নিজের লাগানো বৃক্ষের ফল নিজেই ভোগ করছেন”
১৮. মমতাজের সাথে শাহাজাহানের যে বিখ্যাত প্রেম সেটার সম্বন্ধে আমরা কোথায় জানতে পারি?
= ‘মমতাজের স্মৃতিতে শাহজাহান ভালোবেসে তাজমহল বানিয়েছিলেন’ এটা সব্বাই জানি। কিন্তু যে ভালোবাসার দৌলতে তখনকার দিনেই কয়েকশো কোটি টাকা খরচ করে তাজমহল বানানো হলো, সেই বিখ্যাত ভালোবাসার ব্যাপারে মুঘল ইতিহাসে কোনো উল্লেখ নেই। যদ্দিন না মমতাজ মারা যাচ্ছেন তদ্দিন শাহজাহান যে মমতাজকে কতটা ভালোবাসতেন সেটার ব্যাপারে ইতিহাস চুপ একদম। একই সাথে মমতাজের জীবদ্দশায় শাহাজাহান কতগুলো প্রাসাদ তাকে ভালোবেসে উপহার দিয়েছে সেটার ব্যাপারেও ইতিহাসে কোনো উত্তর নেই।
১৯. পিটার মুন্ডি ও জন এলবার্ট মেন্ডেলো কবে আগ্রাতে আসেন?
= এই দুই পর্যটকই যখন ভারতে আসেন তখন তাজমহল বানানোর তথাকথিত ‘কাজ’ শুরু হওয়ার মাত্র কিছু মাস থেকে সামান্য কয়েক বছর অব্দি সময় পেরিয়েছে। তবুও এঁরা ভারতে এসে আগ্রাতে এঁদের উচ্চারণে ‘তোজে বা ‘তেজো মোহোল বাজার’ দেখতে পান। নিজেদের বইয়েই সেটার উল্লেখ অব্দি করেছেন এরা। অর্থাৎ তাজমহল তৈরি শুরু হওয়ার কিছুদিনের মধ্যেই এলাকাতে তাজের নামে (পড়ুন, মমতাজের নামের অংশ নিয়ে) একটা সাধারণ লোকজনের জন্যে বাজার অব্দি বসে যায় কোনো সমস্যা ছাড়াই।
২০. বাবরের আসার আগে এবং ঔরঙ্গজেবের রাজ্য শেষ হওয়ার পরের মধ্যে ভারতের মোট জনসংখ্যা কত ছিল ও কত হয়? কোথাও কি এটা লিপিবদ্ধ বা রেকর্ড করা হয়েছিল সেই সময়ে?
= এই প্রশ্নটি জানার দরকার একটিই কারণে, মুঘল আমলে অমুসলিমদের গণহত্যা করা হয়েছিল কিনা সেটা জানতে। কারণ, শোনা যায় বাবর আসার আগে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার যা ছিল, তাতে ঔরঙ্গজেবের যাওয়া অব্দি যত জনসংখ্যা হতে পারতো তার থেকে কয়েক লক্ষ জনসংখ্যা কম ছিল ভারতে সেই সময়ে।
২১. মুঘল লোদি সৈয়দ মামলুক তুঘলক ও খিলজি শাসনের সময়ে মোট কতগুলো হিন্দু মন্দির সম্রাটদের পৃষ্ঠপোষকতাতে তৈরি করা হয়?
= বলে দেওয়ার দরকার নেই, অহেতুক ঝামেলা বাড়াতে চাইনা, এখনো অনেকদিন বাঁচতে হবে অনেক কাজ বাকী আছে।
২২. ভারতের পুরোনো ছবির আর্কাইভে কাতাস রাজ বা প্রমবানন মন্দিরের কোনো ছবি আছে কি?
= যারা ভাবে তাজমহল আগাগোড়া একটি ইসলামিক স্থাপত্য, তাদের উদ্দেশ্যে, কাতাস রাজ হলো পাকিস্তানের একটি হিন্দু মন্দির এবং প্রমবানন হলো ইন্দোনেশিয়ায় অবস্থিত একটি হিন্দু মন্দির। এই দুটি মন্দিরের সাথেই, বিশেষ করে কাতাস রাজ মন্দিরের সাথে তাজমহলের গঠনের ভীষণ ভীষণ রকম মিল আছে।
২৩. তাজমহলের প্রাঙ্গণে কোনো রকম ধর্মীয় উপাসনা কী হয়? হলে কোন ধর্মের হয়?
= তাজমহলের প্রাঙ্গণের মধ্যে একটি মসজিদে ধর্মীয় উপাসনা হয়
২৪. তাজমহলের প্রাঙ্গণ ঠিক কোনদিকে মুখ করে অবস্থিত রয়েছে?
= তাজমহল প্রাঙ্গণ যেদিকে মুখ করে আছে, সেদিকের হিসেবে ৯০ ডিগ্রি কোণে পশ্চিমমুখের উদ্দেশ্যে প্রার্থনা করলে একজন মুসলিম যেদিকে তাকাবেন সেদিকে মক্কার কাবাগৃহ নেই, সেদিকে রয়েছে ইরানের বন্দর আব্বাস, মক্কার কাবাগৃহ থেকে কয়েক হাজার কিমি ওপর দিকে বা উত্তর দিকে। কিন্তু সঠিক ইসলামিক স্থপতি দিয়ে তাজমহল বানানো হলে এরকম ভুল হওয়ারই কথা নয় কারণ একজন রানীর মৃতদেহ যে সৌধে রয়েছে সেই সৌধে দাঁড়িয়ে কেউ পশ্চিমমুখী হয়ে প্রার্থনা করলে সৌধটি এমন ভাবেই বানানো উচিত হতো যাতে প্রার্থনার সময়ে তার মুখ সরাসরি মক্কার দিকে নির্দেশ করে থাকে।
২৫. যদি তাজমহলে নামাজ পড়ার জন্য একটিই মসজিদ রয়ে থাকে, তাহলে সেটাকেই কপি করে আরেকটা বিল্ডিং বানানো হলো কেন তাও উল্টোদিকে মুখ করিয়ে?
= অন্যদিকে মুখ করে ধর্মীয় আচার পালন করা ইসলামী রীতিতে রীতিমতো একটা বাজে কাজ বা হারাম। সেখানে একইসাথে দুটি মসজিদের তো দরকার নেই আর। যদি মসজিদের মত বিল্ডিং নাইই লাগে তাহলে সেখানে যে বিল্ডিংটা আছে সেটা কীসের কাজে লাগতো?
২৬. কখন এবং কেন তাজমহলের অন্তঃস্থলের সর্বপরিভাগে লর্ড কার্জনের গিফ্ট করা ল্যাম্পের পাশে একটি সূর্যের মতো আলোকরশ্মির চিন্হ বানানো হয়?
= জনশ্রুতি অনুযায়ী দেখলে, তাজমহলের ঠিক মধ্যভাগের ভেতরে থাকা শিবলিঙ্গের মাথায় জলের ফোঁটা পড়ার জন্যেই নাকি ছাদের মধ্যভাগে যেখানে বর্তমানে বড়লাটের দেওয়া বাতি ঝুলছে সেখানে ছোট্ট ছিদ্র করে রাখা ছিল। অনেক পরে সেই ছিদ্র বোজানোর জন্যেই সূর্যের মতো নকশার ব্যবস্থা করা হয়।
২৭. অমুসলিম অন্য কোনো ধর্মীয় নিদর্শন কি তাজমহলের কোথাও খোদাই করা আছে? করা থাকলে সেগুলি কী কী ও কীভাবে দেখা যাবে?
= বেশ কিছু ফুলের নকশা ও পাথরের ওপরে চিত্র খোদাই করা আছে তাজমহলে, যেটির সাথে হিন্দু ধর্মের ওঁ চিহ্নের বেশ মিল পাওয়া যায়। এছাড়া প্রায় কয়েকশো বৈদিক চিহ্নের প্রতিলিপি তাজের গায়ে পাওয়া যায়।
২৮. মমতাজের মৃতদেহ যে বুরহানপুর থেকে আগ্রা নিয়ে আসা হলো এবং আগ্রাতে এনে তাজমহলের ভেতরে তা সমাধিস্থ করা হলো, সেটার দিনক্ষণের প্রমাণ কোথায় লেখা আছে?
= ভীষণ ভাইটাল পয়েন্ট এটা। যার জন্য এত আয়োজন, এত হৈচৈ, তাঁর মৃতদেহ একটা দূরের শহর থেকে আগ্রা নিয়ে আসা হলো, ইতিহাসে তৎকালীন একটি বইয়ে কেবল এই নিয়ে আসার ডেটটাই রয়েছে, কিন্তু ধর্মীয় রীতি মেনেই আবার নতুন করে সাজানো হলো সেই মৃতদেহ সমাধি দেওয়া হলো, এতগুলো ঘটনা ঘটে যাওয়ার ডেটের বা তারিখের কোনো সুষ্ঠু প্রমাণ কোথায় পাওয়া যায়? বিশ্বের অন্যতম সেলিব্রিটেড সুলতানী শাসকদের জীবনের এত উল্লেখযোগ্য একটি অধ্যায়ের সঠিক কোনো টাইমলাইন কেনই বা পাওয়া যায় না?
২৯. তাজমহলের কোনো বন্ধ প্রকোষ্ঠে কি মেটাল ডিটেক্টর দিয়ে স্ক্যান করা হয়েছে? করে থাকলে সেটির ফলাফল কী?
= একবার তাজমহলের বেসমেন্টে থাকা বন্ধ প্রকোষ্ঠের একটিতে মেটাল ডিটেক্টর দিয়ে স্ক্যান করা হলে ডিটেক্টর জানান দেয় বন্ধ দরজার ওপারে অনেক ‘ধাতব বস্তু’ র উপস্থিতি রয়েছে। হতে পারে সেটি কোনো মহামূল্যবান রত্নসম্ভার যার কিছু অংশ হয়তো বাউলি বুর্জে রক্ষিত ছিল কখনো।
৩০. তাজমহলের বিভিন্ন পার্টের মধ্যে কোনো কাঠ জাতীয় জৈব অংশের কোনো বস্তুর কি কখনো কার্বন ডেটিং হয়েছে?
= তাজমহলের বাইরের দিকের একটি দরজার একটি ভাঙা অংশের কার্বন ডেটিং করা হয়েছিল কোনোভাবে এই দেশের বাইরে নিয়ে গিয়ে। সেটার জন্যে ভীষণ হৈচৈ হয় ও গার্ড আরো কড়াকড়ি করা হয়। সেই কার্বন ডেটিংয়ে প্রাপ্ত রেজাল্টের ভিত্তিতে দেখতে গেলে, সেই দরজার কাঠের বয়স আরো কয়েকশো বছরের পুরোনো। কিছু দশক পুরোনো হলেও সম্ভব হয় কিন্তু কিছু শতক পুরোনো কাঠ দিয়ে দরজা বানানো হলো নতুন করে খরচ করে বানানো ভালোবাসার সৌধ বানাতে? পরে তড়িঘড়ি সেই দরজা সিল করে দেওয়া হয়।
৩১. ‘বটেশ্বর লিপি’ তে ঠিক কী কী লেখা আছে?
= তাজমহলের ব্যাপারে খুব ইন্টারেস্টিং টপিক এটি। উত্তরপ্রদেশের আগ্রার খুব কাছেই বটেশ্বর নামের জায়গাতে এই লিপিটি উদ্ধার করা হয়, যেখানে স্পষ্টভাবে কিছু রহস্যময় কথা লেখা ছিল যেমন “সাদা পাথরের তৈরি সেই বিশাল মহল”। এবং আরো আশ্চর্যের ব্যাপার এই লিপিটির বয়স তাজমহলের থেকে অনেক পুরোনো। কিন্তু এই লিপিটিকে আগ্রা লিপি নাম দেওয়ার বদলে নাম দিয়ে দেওয়া হয় বটেশ্বর লিপি যাতে তাজমহল ও এই লিপির মধ্যে দূরদূরান্ত দিয়ে কোনো সম্পর্ক খুঁজে না পায় কেউ। কিন্তু বর্তমানে এই লিপির নাম যাইই হোক না কেন, কোন বিশাল বড় সাদা ভবনের কথা বলেছে এই লিপি?
৩২. তাজ মহলের সাথে মহারাজ মান সিংহ এবং মহারাজ জয় সিংহের কি কোনোরকম কোনো সম্পর্ক লিপিবদ্ধ আছে?
= অন্যতম ইম্পরট্যান্ট প্রশ্ন, কারণ তাজমহলের ব্যাপারে যা যা কথিত আছে, তাতে সেটা যদি মন্দির না হয়েও শুধুমাত্র রাজপ্রাসাদই হয়, তবুও কথন সত্যি হলে সেটা মুঘলদের কারোর বানানো ছিল না, সেটা জয় সিংহের দ্বারা তৈরি স্থাপত্য ছিল, যা পরে মান সিংহের সময়ে শাহজাহান কিনে নেয়। পাবলিকলি বেশি বলা যায় না, তবে অনেকে মনে করেন, এখনো রাজস্থানের এই দুই রাজার পরিবারে বেশ কিছু পুরোনো দলিল এমন ভাবে রক্ষিত আছে যেগুলো প্রকাশিত হলে তাজমহলের ইতিহাসের রহস্য নিয়ে আরো অনেক জোরালো দাবী উঠবে।
৩৩. এছাড়া, তাজমহলের ভেতরে প্রচুর প্রকোষ্ঠ বা ঘরের অস্তিত্ব জানা যায়, যেগুলোকে
i. মুঘল আমলেই মুখ সিল করে দেওয়া হয়েছিল
ii. মুঘল আমলের পরে মুখ সিল করার দেওয়া হয়েছে
iii. স্বাধীন ভারতেও বন্ধ করা হয়েছে
iv. সাধারণের ঢোকার অনুমতি নেই
এই ঘরগুলোর ব্যাপারেও জানতে চেয়েছিলাম ঠিক কী কী কারণের জন্যে এই ঘরগুলো খোলা ও দেখার ব্যবস্থা করা হয় না
আপনি এতক্ষণ ধরে যে প্রশ্নগুলো পড়লেন, এগুলো আমার আরটিআই এর উত্তর না, আমি কিছু সম্ভবনা ও প্রশ্ন তুলেছি উত্তরের সাথে সাথেই।
এবার আরটিআই এর ব্যাপারে আসি, আমি এই প্রশ্নগুলোর সাথে আরো কয়েকটা প্রশ্ন দিয়ে মোট পঞ্চাশটা প্রশ্ন করেছিলাম আপিলে, এবং এই আপিলের সাথে বলে দিয়েছিলাম কোনো প্রশ্ন তাদের দপ্তরের অধীনে না হয়ে অন্য দপ্তরের অধীনে হলে তারা যেন আরটিআই Act ২০০৫ এর সেকশন 6 এর সাবসেকশন 3 অনুযায়ী আমার আপিলের সেই সেই প্রশ্ন সেইসব দপ্তরে ট্রান্সফার করে দেয়। আরটিআই Serial No - ২০/০০৩৫৭
কিন্তু যে যে উত্তরগুলো আমি পেয়েছি সেগুলো রীতিমতো আশ্চর্য করে দেওয়ার মতো।
ভারতে আরটিআই Act ২০০৫ এর নিয়ম অনুযায়ী, তারা আমাকে যে যে রিপ্লাইগুলো দিতে পারতো, সেগুলো হলো
১. এত প্রশ্নের উত্তর একটা আরটিআই এর মধ্যে জানিয়ে দেওয়া সম্ভব না,
২. এত প্রশ্নের মধ্যে অমুক অমুক নম্বর প্রশ্নের জবাব আমাদের হাতে নেই,
৩. নির্দিষ্ট সিকিউরিটি বা ধর্মীয় সহিষ্ণুতা বজায় রাখার কারণে আমরা এই প্রশ্নগুলো বা এর মধ্যে অমুক অমুক নম্বর প্রশ্নগুলোর উত্তর দিতে পারব না,
৪. নির্দিষ্ট এই এই অফিসে প্রশ্নগুলোর উত্তর পাওয়া যেতে পারে, সেক্ষেত্রে আপনাকে অনুরোধ করা হচ্ছে সেই সেই অফিসে যোগাযোগ করতে,
৫. অমুক অমুক নম্বরের প্রশ্নের উত্তর আমাদের হাতে নেই বলে সেগুলো অমুক অমুক নম্বর চিঠির মাধ্যমে অন্য A B C X Y Z নামক অফিস বা দপ্তরে ট্রান্সফার করে দিচ্ছে।
কিন্তু তারা যে উত্তর আমাকে দেয়, সেগুলো হলো,
১. এই প্রশ্নগুলোর উত্তর অফিসের রেকর্ড দপ্তরের হাতে নেই, এর জন্যে রিসার্চ প্রয়োজন।
২. আগ্রার এএসআই আর্কাইভ ও লাইব্রেরিতে কিছু উত্তর পাওয়া যেতে পারে খুঁজলে, তাই সেটার জন্যে আমাকে অনুরোধ করা হচ্ছে,
৩. ‘বাজারে এভেলেবল বাইরের বেশ কিছু প্রকাশনা’ র বইয়ের রেফারেন্স আমি চাইলে দেখতে পারি যেখানে এগুলোর উত্তর পেতে পারি।
প্রসঙ্গত, আরটিআই এর কোনো দপ্তর এভাবে সরকারের বাইরের কোনো সোর্স দেখার রেফারেন্স দেখা রেকমেন্ড করে না কখনো, তথ্য না থাকলে শুধুই বলে দেয় তথ্য নেই তাদের হাতে। এরই সাথে আমি এই এপিলের উত্তরকে কাউন্টার করে আরেকটি আপিল করে রেখেছি, দেখা যাক সেটির উত্তর কী হয়।
এছাড়া আরো নেটে জানতে পারি, তাজমহলের ইতিহাস নিয়ে আগের বছরেই উত্তরপ্রদেশের একটি কোর্টে মামলা দায়ের হয়। কী রায় দিয়ে সেই মামলাটি খারিজ হয় জানেন?
- “তাজমহলের ইতিহাস বদলে গেলে পর্যটকরা সেটি দেখার আগ্রহ হারিয়ে ফেলতে পারে এর ফলে বিশ্বে ভারতের পর্যটন শিল্পের ক্ষতি হতে পারে”
(সমস্ত তথ্য অন্তর্জালে উপস্থিত ও সেখান হতেই সংগৃহিত)
Anim pariatur cliche reprehenderit, enim eiusmod high life accusamus terry richardson ad squid. 3
wolf moon officia aute, non cupidatat skateboard dolor brunch. Food truck quinoa nesciunt laborum
eiusmod. Brunch 3 wolf moon tempor, sunt aliqua put a bird on it squid single-origin coffee nulla
assumenda shoreditch et. Nihil anim keffiyeh helvetica, craft beer labore wes anderson cred
nesciunt sapiente ea proident. Ad vegan excepteur butcher vice lomo. Leggings occaecat craft beer
farm-to-table, raw denim aesthetic synth nesciunt you probably haven't heard of them accusamus
labore sustainable VHS.
Anim pariatur cliche reprehenderit, enim eiusmod high life accusamus terry richardson ad squid. 3
wolf moon officia aute, non cupidatat skateboard dolor brunch. Food truck quinoa nesciunt laborum
eiusmod. Brunch 3 wolf moon tempor, sunt aliqua put a bird on it squid single-origin coffee nulla
assumenda shoreditch et. Nihil anim keffiyeh helvetica, craft beer labore wes anderson cred
nesciunt sapiente ea proident. Ad vegan excepteur butcher vice lomo. Leggings occaecat craft beer
farm-to-table, raw denim aesthetic synth nesciunt you probably haven't heard of them accusamus
labore sustainable VHS.
Anim pariatur cliche reprehenderit, enim eiusmod high life accusamus terry richardson ad squid. 3
wolf moon officia aute, non cupidatat skateboard dolor brunch. Food truck quinoa nesciunt laborum
eiusmod. Brunch 3 wolf moon tempor, sunt aliqua put a bird on it squid single-origin coffee nulla
assumenda shoreditch et. Nihil anim keffiyeh helvetica, craft beer labore wes anderson cred
nesciunt sapiente ea proident. Ad vegan excepteur butcher vice lomo. Leggings occaecat craft beer
farm-to-table, raw denim aesthetic synth nesciunt you probably haven't heard of them accusamus
labore sustainable VHS.