বিদ্রোহভূমি বরেন্দ্রভূমির কৈবর্ত বিদ্রোহ
বাংলার উত্তর অংশ "বরেন্দ্র" নামে পরিচিত ছিল। একসময় এই ভূমি ছিল প্রাচুর্যের দিক দিয়ে শ্রেষ্ঠতম।"বরিন্দ" মানে ঊর্বর কৃষিজমি। মালদহ জেলার যে অংশ আমন ধানের পক্ষে উপযুক্ত, তার নাম "বরিন্দ্।" সুতরাং, "বরিন্দ্" মানে যে ঊর্বর কৃষিভূমি, তার প্রমাণ বাস্তবেও বর্তমান। একসময় এই অঞ্চলে মহাসমুদ্রে ছিল বেশ কয়েকটি বড়ো বড়ো দ্বীপ এবং পরবর্তীকালে এই দ্বীপগুলির আশেপাশের এলাকা ভরাট হতে হতে একে অপরের সঙ্গে মিলেমিশে তৈরি হয় আজকের মালদহ-দিনাজপুরের প্রাচীন বরিন্দ্ ভূমি।"বরিন্দ্" থেকে সংস্কৃতে "বরেন্দ্র।" বরেন্দ্রভূমি বা বরেন্দ্রভূম নামেও স্থানটি পরিচিত।
পঞ্চগৌড়ের তৃতীয় অংশ এই বরেন্দ্রভূমির উত্তরে হিমালয়, দক্ষিণে গঙ্গা / পদ্মা, পূর্বে যমুনা ও নতুন ব্রহ্মপুত্র এবং পশ্চিমে কোশী নদীর পুরোনো খাত। কোশী বর্তমানে মিথিলার ওপর দিয়ে বয়ে চলেছে। প্রাচীন বরেন্দ্রভূমি বিভক্ত ছিল দুটি ভুক্তিতে---উত্তরাংশে ছিল অসমের গোয়ালপাড়া জেলা, দার্জিলিং জেলার সমতলভূমি, কিষাণগঞ্জ, নেপালের ঝাঁপা জেলা, জলপাইগুড়ি, কোচবিহার, রংপুর, দিনাজপুর মিলে ছিল কামতাপুর ভুক্তি। অন্যদিকে, বগুড়া, পাবনা, রাজশাহী, মালদহ মিলে ছিল পৌণ্ড্রবর্ধন ভুক্তি।
কামতাপুর শাসন করতেন প্রাচীন মেচ বংশীয় রাজারা এবং পৌণ্ড্রক্ষত্রিয় রাজারা ছিলেন পৌণ্ড্রবর্ধন ভুক্তির শাসক। করতোয়া নদীর তীরে বর্তমান বাংলাদেশের বগুড়া জেলার মহাস্থানগড় ছিল পৌণ্ড্রবর্ধন ভুক্তির রাজধানী। একসময় বরেন্দ্রভূমি ছিল শৈবধর্মের কেন্দ্র। এর প্রমাণ হিসেবে রয়েছে জল্পেশ্বর, জটেশ্বর, বাণেশ্বর, বাণগড়, সোমেশ্বরপুর প্রভৃতি শৈবধর্মের স্থানগুলি। পরে এটি বৌদ্ধ প্রভাবিত এলাকা হিসেবে পরিচিত হয়ে যায়। বৌদ্ধ বাংলায় তখন গড়ে ওঠে বগুড়ার মহাস্থানগড় ও রাজশাহীর সোমেশ্বরপুর বৌদ্ধ বিহার। আরও পরে, বিশেষ করে বরেন্দ্রভূমির উত্তরাংশে প্রভাব পড়ে নাথধর্মের। এর প্রমাণ হিসেবে শিবের অবতার হিসেবে গণ্য নাথযোগী গুরু গম্ভীরনাথের উদ্দেশ্যে রচিত গম্ভীরা গান আজও প্রচলিত রয়েছে মালদহ জেলায়।
এরপর বরেন্দ্রভূমির মাটিতে বৌদ্ধোত্তরযুগে গড়ে ওঠে বারেন্দ্র বৈদ্য, বারেন্দ্র কায়স্থ ও বারেন্দ্র ব্রাহ্মণ মিলে এক সমাজ ব্যবস্থা। বারেন্দ্র বৈদ্য, বারেন্দ্র কায়স্থরা ব্যবহার করেন রায়, সিংহ, সরকার, চাকী, দেব, বর্মা, দাশ, কলিতা প্রভৃতি পদবি। অন্যদিকে, বারেন্দ্র ব্রাহ্মণদের মধ্যে প্রচলিত পদবি হচ্ছে---ভাদুড়ি, সান্ন্যাল, লাহিড়ী, বাগচী, মৈত্র, ঢোল, কাহালী, সরখেল, করঞ্জাই প্রভৃতি। বরেন্দ্রভূমিতে অবস্থিত বারেন্দ্র ব্রাহ্মণদের গাঞিগুলি হচ্ছে---ভাদুড়িদের জন্য দিনাজপুরের ভাদুড়িয়া বা ভুতুড়িয়া, সান্ন্যালদের জন্য পাবনার সঞ্জামিনী, বাগচীদের জন্য বগুড়ার বাগছী, লাহিড়ীদের জন্য রাজশাহীর লাহেড়িয়া ইত্যাদি। সংস্কৃত "গ্রামী" শব্দ থেকে এসেছে স্থানবাচক শব্দ "গাঞি।"
বাংলায় প্রথম গণবিদ্রোহের ভূমিও এই বরেন্দ্রভূমি। এই মাটিতেই হয়েছিল কৈবর্ত নায়ক ভীমের নেতৃত্বে মধ্যযুগে পাল আমলে কৈবর্ত বিদ্রোহ এবং মোগল যুগের শেষ দিকে সন্ন্যাসী বিদ্রোহ। ভীম ও তাঁর ভাইপো দিব্যোক স্মরণীয় হয়ে আছেন এই বরেন্দ্রভূমির মাটিতে। দিব্যোকের সময়ে তৈরি হয় দুটি বিশাল দীঘি---দীবর দীঘি ও তপন দীঘি। এই তপন দীঘির নামেই হয়েছে দিনাজপুরের "তপন" শহরের নামকরণ। আবার এই দিব্যোক বাংলার রাজা হয়ে নাম নিয়েছিলেন "দনুজমর্দন দেব", যে নামে নাম হয়েছে "দিনাজপুর।"
বরেন্দ্রভূমির এই কৈবর্তরাই ছিলেন এলাকার জাত-বাঙালি। দেবরাজ ইন্দ্রের বরে আর্যরা এই ভূমি পেয়েছিল বলে এর নাম হয় "বরেন্দ্রভূমি" বা "বরেন্দ্রভূম।" বর্তমান বাংলাদেশের বগুড়ার শেরপুর থেকে শুরু হয়ে গাইবান্ধা জেলার একেবারে শেষ সীমা পর্যন্ত বিস্তৃত প্রায় চল্লিশ মাইল লম্বা একটি মাটির প্রাচীরের চিহ্ন। চিনের মতো না হলেও প্রায় হাজার বছরের পুরোনো এই প্রাচীর যে একসময় সামরিক দিক দিয়ে গুরুত্বপূর্ণ ছিল, তা বোঝাই যায়। স্থানীয় ভাষায় এর নাম "ভীমের জাঙ্গাল।"
কিন্তু আশ্চর্যজনকভাবে মহাস্থানগড়ের কাছে দৌলতপুর থেকে হাজরা দীঘি পর্যন্ত প্রায় তিন মাইল এলাকায় কোনো প্রাচীর বা বাঁধ নেই। যেহেতু মহাস্থানগড় ছিল পুণ্ড্রবর্ধনের রাজধানী, সেহেতু সৈন্যসামন্ত সব সময় থাকতো বলে এখানে আলাদা করে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার প্রয়োজন ছিল না। তাই এই তিন মাইল এলাকা ফাঁকা। গবেষক উইলিয়াম হাণ্টার এই প্রাচীরকে ইতালির রিং ফোর্টের সঙ্গে তুলনা করে বলেছেন, এই ধরণের দুর্গে বিপদের সময় আশ্রয় নিতো এলাকার মানুষ। আর রয়েছে "ভীমের পান্টি" অর্থাৎ পাচন। একটি নিচু জলাভূমিতে দাঁড়িয়ে রয়েছে প্রায় ১২ ফুট লম্বা ধূসর পাথরের একটি স্তম্ভ, যার নাম "ভীমের পান্টি।" একসময় এর পাশ দিয়ে ছিল নদীপথ, যে নদী হাজার বছর পর সরে গিয়ে এখন বহু দূরে। কোনো জলাশয়ের পাড়েই তৈরি করা হয়েছিল এই "ভীমের পান্টি।"
"পান্টি" বা "পাচন", যা এককথায় ছোট লাঠি। কৃষিজীবী মানুষের কাছে তখন চাষ হতো বলদ গোরু দিয়ে এবং এর জন্য দরকার ছিল "পাচন।" সুতরাং, এই পাচন এলাকার কৈবর্তদের কৃষিজীবী হিসেবেই সাক্ষ্য দেয়। এই বরেন্দ্রভূমেই আছে কৈবর্তরাজ দিব্যোকের বিজয়স্তম্ভ। বর্তমান বাংলাদেশের ধামইরহাট উপজেলার মঙ্গলবাড়িহাট। আর এর দক্ষিণে জাহানপুর মৌজা, যেখানে রয়েছে পালরাজা নারায়ণপালের মন্ত্রী গুরব মিশ্রের তৈরি গরুড়স্তম্ভ। তাতে লেখা নারায়ণপালের প্রশস্তি। আর এই গুরব মিশ্রের গরুড়স্তম্ভ থেকে দুশো মাইল দূরে রয়েছে কৈবর্তরাজ দিব্যোকের বিজয়স্তম্ভ। পাল আমলে কৈবর্ত বিদ্রোহের সময়ে বরেন্দ্রভূমের শহরবাসী ও গ্রামবাসীদের মধ্যে তফাৎ ছিল, তফাৎ ছিল ধনী-গরীবের মধ্যেও।
বাংলায় সে সময় মানুষ যেখানেই বসবাস করতো, সেখানেই করতো কৃষিকাজ। আর বরেন্দ্রভূমের নাগরিকরা ছিল দ্বৈত শাসনের অধীনে। প্রথমত, পালরাজাদের অধীনে এবং দ্বিতীয়ত, স্থানীয় বৌদ্ধ বিহারের অধীনে। কারণ, পালরাজারা বরেন্দ্রভূমকে স্থানীয় একটি বৌদ্ধ বিহারকে দান করে দিয়েছিলেন। তাই রাজকর ছাড়াও বরেন্দ্রভূমের নাগরিকদের দিতে হতো স্থানীয় বৌদ্ধ বিহারের আরোপিত বিভিন্ন "কর", যেমন, জঙ্গলে শিকার করতে গেলে "শিকার কর", আবার নদীতে মাছ ধরার জন্য ছিল "জলকর", উৎসবের জন্য ছিল বিভিন্ন ধরণের "কর।" এসব কিছুই দিতে হতো বরেন্দ্রভূমের কৈবর্তদের। বরেন্দ্রভূমে কৈবর্তরাজ দিব্যোকের বিজয়স্তম্ভ থেকে কিছুটা দূরেই ছিল জগদ্দল বৌদ্ধ বিহার। বর্তমান বাংলাদেশের জয়পুরহাট থেকে ১৬ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত প্রাচীন এই জগদ্দল এখন "জগদল" গ্রাম। আবার এখান থেকে ২২ কিলোমিটার দূরে ছিল পাহাড়পুর ( তখনকার সোমপুর ) বৌদ্ধ বিহার।
এইসব প্রতিষ্ঠানের খরচ বহন করতে হতো বরেন্দ্রভূমের ভূমিপুত্র কৈবর্তদের, যদিও ওইসব প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে তাঁদের কোনো সম্পর্ক ছিল না। তবুও পরবর্তীকালে বৌদ্ধরা অতিমাত্রায় সক্রিয় হয়ে ওঠেন এবং জীবহত্যা মহাপাপ বলে কৈবর্তদের মাছ ধরার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। জীবিকার ওপর আঘাত এবং সেই সঙ্গে অপমান মেনে নিতে পারছিলেন না বরেন্দ্রভূমের ভূমিপুত্র কৈবর্তরা। তাঁরা ছিলেন নেতার অপেক্ষায়। নেতা হিসেবে এলেন দিব্যোক এবং তাঁর নেতৃত্বেই বরেন্দ্রভূমে তথা পৃথিবীর মাটিতে গড়ে উঠলো প্রথম এক স্বাধীন কৃষক রাষ্ট্র।
পালরাজা দ্বিতীয় মহীপালের (আনুমানিক ১০৭০-৭১ খ্রি: ) উৎপীড়নমূলক নীতির বিরুদ্ধে কৈবর্ত জাতির এই স্বত: স্ফূর্ত সশস্ত্র বিদ্রোহ। দিব্যোকের পর বরেন্দ্রীর সিংহাসনে বসেন তাঁর ভাই রুদোক। রুদোকের মৃত্যুর পর রাজা হোন তাঁর সুযোগ্য পুত্র ভীম।"রামচরিত"-এর লেখক সন্ধ্যাকর নন্দী ভীমের বীরত্ব ও সুশাসনের প্রশংসা করেছেন।
এই তিন কৈবর্ত রাজা ২৫ থেকে ৩০ বছরকাল বরেন্দ্র শাসন করেছেন।
Anim pariatur cliche reprehenderit, enim eiusmod high life accusamus terry richardson ad squid. 3
wolf moon officia aute, non cupidatat skateboard dolor brunch. Food truck quinoa nesciunt laborum
eiusmod. Brunch 3 wolf moon tempor, sunt aliqua put a bird on it squid single-origin coffee nulla
assumenda shoreditch et. Nihil anim keffiyeh helvetica, craft beer labore wes anderson cred
nesciunt sapiente ea proident. Ad vegan excepteur butcher vice lomo. Leggings occaecat craft beer
farm-to-table, raw denim aesthetic synth nesciunt you probably haven't heard of them accusamus
labore sustainable VHS.
Anim pariatur cliche reprehenderit, enim eiusmod high life accusamus terry richardson ad squid. 3
wolf moon officia aute, non cupidatat skateboard dolor brunch. Food truck quinoa nesciunt laborum
eiusmod. Brunch 3 wolf moon tempor, sunt aliqua put a bird on it squid single-origin coffee nulla
assumenda shoreditch et. Nihil anim keffiyeh helvetica, craft beer labore wes anderson cred
nesciunt sapiente ea proident. Ad vegan excepteur butcher vice lomo. Leggings occaecat craft beer
farm-to-table, raw denim aesthetic synth nesciunt you probably haven't heard of them accusamus
labore sustainable VHS.
Anim pariatur cliche reprehenderit, enim eiusmod high life accusamus terry richardson ad squid. 3
wolf moon officia aute, non cupidatat skateboard dolor brunch. Food truck quinoa nesciunt laborum
eiusmod. Brunch 3 wolf moon tempor, sunt aliqua put a bird on it squid single-origin coffee nulla
assumenda shoreditch et. Nihil anim keffiyeh helvetica, craft beer labore wes anderson cred
nesciunt sapiente ea proident. Ad vegan excepteur butcher vice lomo. Leggings occaecat craft beer
farm-to-table, raw denim aesthetic synth nesciunt you probably haven't heard of them accusamus
labore sustainable VHS.