নবাব সরফরাজ খান, বিদ্রোহী আলিবর্দী ও গিরিয়ার প্রান্তরে এক বেইমানির ইতিহাস
দিল্লিতে মোগল, বাংলায় নবাবী আমল। মোগল সম্রাট আওরঙ্গজেব বলেছিলেন, তাঁর মৃত্যুর পরেই আসবে প্লাবন। ১৭০৭ খ্রিস্টাব্দে মোগল সম্রাট আওরঙ্গজেবের মৃত্যুর পরেই তাঁর ভবিষ্যৎবাণী ফলে গেল, সত্যি সত্যিই প্লাবন এলো মোগল সাম্রাজ্যে। আওরঙ্গজেবের পুত্রদের মধ্যে সিংহাসনের উত্তরাধিকার নিয়ে শুরু হলো চরম অন্তর্দ্বন্দ্ব। বাংলা-বিহার-উড়িষ্যা মিলে তখন "সুবা বাংলা" এবং তার রাজধানী মুর্শিদাবাদ। পলাশির যুদ্ধে মিরজাফরের ভূমিকা দেখে আমরা তাঁকে বেইমান বলি, কিন্তু তাঁর অনেক আগে ১৭৪০ খ্রিস্টাব্দের ৯ ই এপ্রিল মুর্শিদাবাদের ভাগীরথীর তীরে গিরিয়ার প্রান্তরে রচিত হয়েছিল আরেক বেইমানির ইতিহাস। আজকের পর্বে সেই গিরিয়ার যুদ্ধে বেইমানির বৃত্তান্ত।
এই ইতিহাস বলার আগে আসুন, আমরা ঘটনায় জড়িত চরিত্রগুলির সঙ্গে পরিচিত হই।
১) আজম শাহ: মোগল সম্রাট আওরঙ্গজেবের তৃতীয় পুত্র।
২) শাহ কুলি খান ওরফে মির্জা মহম্মদ মাদানী: খোরাসানের আবসার উপজাতি বংশোদ্ভূত, অন্যমতে তুর্কি বংশোদ্ভূত। পেশায় আওরঙ্গজেবের পুত্র আজম শাহের গ্লাসে মদ পরিবেশকারী, বাংলার নবাব আলিবর্দীর পিতা এবং উড়িষ্যার প্রাদেশিক শাসনকর্তা সুজাউদ্দিন মহম্মদ খানের আত্মীয়।
৩) মির্জা মহম্মদ আলী: পরবর্তীকালে বাংলার নবাব আলিবর্দী হিসেবে পরিচিত।
৪) সুজাউদ্দিন মহম্মদ খান: উড়িষ্যার নায়েব নাজিম ( প্রাদেশিক শাসককর্তা), পরবর্তীকালে বাংলার নবাব।
৫) সরফরাজ খান: সুজাউদ্দিনের পুত্র এবং পরবর্তীকালে বাংলার নবাব।
৬) হাজি আহম্মদ: আলিবর্দীর দাদা
৭) মিরজাফর: আলিবর্দীর প্রধান সেনাপতি।
৮) নওয়াজেস মহম্মদ খান: আলিবর্দীর জামাতা।
৯) হাজি লুৎফর আলী: সরফরাজের সেনাপতি।
১০) মর্দান আলী খান: সরফরাজের সেনাপতি।
১১) জগৎ শেঠ: মুর্শিদাবাদের ধনকুবের, " জগৎ শেঠ" তাঁদের পারিবারিক উপাধি। মুর্শিদাবাদ রাজনীতিতে আলোচ্য জগৎ শেঠ ছিলেন "মহাতাপচাঁদ জগৎ শেঠ।"
১২) নৌসরী বেগম: নবাব মুর্শিদকুলির বেগম এবং সরফরাজ খানের মাতামহী।
শুরুর শুরু: ঘটনার মূল নায়ক আলীবর্দী খান। জন্ম: ১০/০৫/১৬৭১, মৃত্যু: ০৯/০৪/১৭৫৬ খ্রি: । আসল নাম: মির্জা মহম্মদ আলী।
ধর্ম: শিয়া ইসলাম।
আলিবর্দীর পিতা মির্জা মহম্মদ মোগল দরবার থেকে "খান" উপাধি পান। আলিবর্দীর জননী ছিলেন ইরানের খোরাসানের এক তুর্কি উপজাতির কন্যা। দিল্লিতে মোগল সম্রাট আওরঙ্গজেবের তৃতীয় পুত্র আজম শাহের গ্লাসে মদ পরিবেশকারীর চাকরি করতেন। পুত্র মির্জা মহম্মদ আলী ( পরবর্তীকালে আলীবর্দী খান) সাবালক হলে তিনিও আজম শাহের পিলখানার পরিচালকের চাকরি পান। এভাবেই পিতা-পুত্রের ভালোই চলছিল। কিন্তু সবকিছু গোলমাল হয়ে গেল আওরঙ্গজেবের মৃত্যুর পর।
১৭০৭ খ্রিস্টাব্দে আওরঙ্গজেব মারা গেলে তাঁর পুত্রদের মধ্যে গদি নিয়ে শুরু হলো খুনোখুনি। সেই অন্তর্দ্বন্দ্বে খুন হয়ে গেলেন আওরঙ্গজেবের তৃতীয় পুত্র আজম শাহ। এরপর হঠাৎ করেই বেকার হয়ে গেলেন পিতা মির্জা মহম্মদ মাদানী ও পুত্র মির্জা মহম্মদ আলী (পরবর্তীতে আলিবর্দী)। নিদারুণ অর্থকষ্ট সহ্য করতে না পেরে ১৭২০ খ্রিস্টাব্দে পিতা-পুত্র পাড়ি দিলেন সুবে বাংলার রাজধানী মুর্শিদাবাদ। মুর্শিদাবাদের নবাব তখন মুর্শিদকুলি খান। আর মুর্শিদকুলির জামাতা সুজাউদ্দিন উড়িষ্যার নায়েব নাজিম বা প্রাদেশিক শাসনকর্তা। সুজাউদ্দিনের আত্মীয় ছিলেন আলিবর্দীর পিতা মির্জা মহম্মদ মাদানী। সুজাউদ্দিন নবাব মুর্শিদকুলিকে কোনোরকম পাত্তা না দিয়ে স্বাধীনভাবে উড়িষ্যার শাসনকাজ চালিয়ে যাচ্ছিলেন। বিষয়টি মোটেও ভালো চোখে দেখতেন না মুর্শিদকুলি খান। তাই জামাতা হলেও সুজাউদ্দিনের সঙ্গে শ্বশুর নবাব মুর্শিদকুলির মনোমালিন্য ছিল। ইতিমধ্যে দিল্লি থেকে চাকরির আশায় মুর্শিদাবাদে নবাব মুর্শিদকুলির দরবারে হাজির হলেন পিতা-পুত্র।
কিন্তু জামাতা সুজাউদ্দিনের আত্মীয় বলে ভবিষ্যতে বিপদের আশঙ্কায় নবাব মুর্শিদকুলি পিতা-পুত্রকে চাকরি দেওয়া তো দূরের কথা, দু'জনকেই বিতাড়িত করলেন মুর্শিদাবাদ থেকে। অগত্যা পিতা ও দুই পুত্র আশ্রয় নিলেন উড়িষ্যায় তাঁদের আত্মীয় তথা উড়িষ্যা প্রদেশের নায়েব নাজিম সুজাউদ্দিনের কাছে। সুজাউদ্দিন মির্জা মহম্মদ আলীকে মাসিক একশো টাকা বেতনে রাজস্ব বিভাগে চাকরি দিলেন। এরপর সবন্তপুরের থানাদার ও ছশো অশ্বারোহী সৈন্যের মনসবদারি এবং সেই সঙ্গে পান উড়িষ্যার কিছু জমিদারি। ১৭২৭ খ্রিস্টাব্দে নবাব মুর্শিদকুলির মৃত্যু হলো। এরপর মির্জা মহম্মদ আলীর সহযোগিতায় উড়িষ্যার নায়েব নাজিম থেকে সুবা বাংলার নবাব হয়ে গেলেন সুজাউদ্দিন। সুজাউদ্দিন নবাব হলে ভাগ্য খুলে গেল মির্জা মহম্মদ আলীর। সুজাউদ্দিন তাঁকে রাজমহলের ফৌজদার পদে বহাল করলেন।
এরপর ১৭২৮ খ্রিস্টাব্দে সুজাউদ্দিন মির্জা মহম্মদকে দিলেন "আলিবর্দী খান" উপাধি। আরও পরবর্তীকালে অনেক টাকা খরচ করে তাঁর জন্য দিল্লির মোগল দরবার থেকে আনিয়ে দিলেন "মহব্বৎ খান" খেতাব। তারপর থেকেই নবাব সুজাউদ্দিনের প্রধান পরিমর্শদাতা হয়ে উঠলেন আলিবর্দী খান। দরকারে নবাবকে পরামর্শ দিতে বিহারের রাজমহল থেকে বছরে অন্তত একবারের জন্যেও বাংলার মুর্শিদাবাদে ছুটতে হতো আলিবর্দীকে। ওদিকে দিল্লির মোগল সম্রাট মহম্মদ শাহ বিহার প্রদেশকে নিয়ে এলেন বাংলার অধীনে। ১৭৩৩ খ্রিস্টাব্দে নবাব সুজাউদ্দিন আলিবর্দীকে বিহারের প্রাদেশিক শাসনকর্তা বা নায়েব নাজিম নিযুক্ত করলেন। সেই সঙ্গে তাঁকে দিলেন পাঁচ হাজার অশ্বারোহী সৈন্যের মনসবদারি। ইতিমধ্যে আলিবর্দীর ছোট মেয়ে আমিনার সঙ্গে বিয়ে হয়েছে তাঁর ছোট ভাইপো জৈনুদ্দিন আহমেদের। এরপর তাঁদের পুত্র সিরাজদ্দৌলার জন্ম হয়েছে। পরবর্তীকালে অপুত্রক আলীবর্দী তাঁর নাতি এই সিরাজকেই উত্তরাধিকারী মনোনীত করে যান। কিন্তু সে অন্য ইতিহাস।
আমরা এখানে আলিবর্দীর কথাই বলবো। এদিকে ১৭৩৯ খ্রিস্টাব্দের ১৩ ই মার্চ মারা গেলেন নবাব সুজাউদ্দিন।
নবাব হলেন তাঁর পুত্র সরফরাজ খান। সরফরাজ ছিলেন দুর্বল চরিত্রের মানুষ এবং আলিবর্দী তা বিচক্ষণ জানতেন। এছাড়া সরফরাজ আলিবর্দীকে বাদ দিয়ে তাঁর নতুন পরামর্শদাতা নিয়োগ করেছিলেন। এর ফলে মাস চারেক পরেই সরফরাজের সঙ্গে আলিবর্দীর সম্পর্ক তিক্ত হয়ে ওঠে। তবে দুর্বল নবাব সরফরাজের আমলে বৃদ্ধ বয়সেও আলিবর্দীর মনে তখন জেগে উঠেছে নবাব হবার তীব্র বাসনা। ১৭৪০ খ্রিস্টাব্দের জানুয়ারিতে আলিবর্দী ও মুর্শিদাবাদের ধনকুবের জগৎ শেঠের মধ্যে এক গোপন বৈঠক হলো। উপস্থিত ছিলেন জগৎ শেঠ, আলিবর্দীর দাদা হাজি আহমেদ ও মিরজাফর। এই গোপন আলোচনায় ঠিক হয়, আলিবর্দী নবাব হলে জগৎ শেঠকে একচেটিয়া ব্যবসার সুযোগ দেবেন, হাজি আহমদের ছেলেদের এবং তাঁর তিন জামাতাকে তিন প্রদেশের নায়েব নাজিম করবেন আর মিরজাফরকে করবেন প্রধান সেনাপতি। সুযোগমতো মনোমালিন্য থেকে শুরু হলো যুদ্ধ। বিহারের প্রাদেশিক শাসনকর্তা আলিবর্দী বিদ্রোহ ঘোষণা করলেন নবাব সরফরাজ খানের বিরুদ্ধে। মুর্শিদাবাদের কাছে ভাগীরথীর তীরে গিরিয়ার প্রান্তরে দু'পক্ষের মধ্যে যুদ্ধ হলো ১৭৪০ খ্রিস্টাব্দের ৯ ই এপ্রিল। এই যুদ্ধ "গিরিয়ার যুদ্ধ" নামে ইতিহাসে পরিচিত। একদিকে নবাব সরফরাজ খান ও তাঁর দুই সেনাপতি---হাজি লুৎফর আলী ও মর্দান আলী খান এবং অন্যদিকে বিহারের প্রাদেশিক শাসনকর্তা আলিবর্দী খান, তাঁর জামাতা নওয়াজেস মহম্মদ খান ও সেনাপতি মিরজাফর।
মুর্শিদাবাদের কাছে ভাগীরথীর তীরে গিরিয়ার প্রান্তরে ১৭৪০ খ্রিস্টাব্দের ৯ ই এপ্রিল দু'পক্ষের মধ্যে তখন সাজো সাজো রব। যুদ্ধ শুরুর ঠিক আগের ঘটনা। হাতির পিঠে চেপে যুদ্ধক্ষেত্রে প্রবেশ করছেন নবাব সরফরাজ খান। ঠিক সেই মুহূর্তে যুদ্ধ শুরুর আগেই আলিবর্দীর নির্দেশে মিরজাফর গুলি চালালেন সরফরাজের মাথা লক্ষ্য করে। যুদ্ধ শুরুর আগেই খুন হয়ে গেলেন নবাব সরফরাজ খান। এরপর সরফরাজের দুই সেনাপতিসহ কিছু রাজপুত সৈন্য যুদ্ধক্ষেত্রে প্রাণ বিসর্জন দিলেন। তারপর নবাব সরফরাজের মৃতদেহ হাতির পিঠে চাপিয়ে পাঠিয়ে দেওয়া হলো মুর্শিদাবাদের চেহেল সুতুন প্রাসাদে। সেখানে তাঁর পাঁচ পুত্র ও পাঁচ কন্যা মিলে মুর্শিদাবাদের নাগিনবাগে সমাধিস্থ করলেন নবাব সরফরাজ খানের মৃতদেহ।
সব শেষে এলেন আলিবর্দী। মুর্শিদাবাদের নবাব প্রাসাদে এসে আলিবর্দী মুখোমুখি হলেন প্রয়াত নবাব মুর্শিদকুলি খানের বেগম তথা সদ্য নিহত নবাব সরফরাজ খানের মাতামহী নৌসরী বেগমের। তাঁর পায়ে হাত দিয়ে দোষ স্বীকার করে ক্ষমা ভিক্ষা চাইলেন আলিবর্দী। সেই সঙ্গে ঘোষণা করলেন, নৌসরী বেগম আমৃত্যু তাঁর নিজের প্রাসাদেই থাকবেন। শেষ পযর্ন্ত তাই ছিলেন তিনি। তবে নবাব সরফরাজ খানের পাঁচ পুত্র ও পাঁচ কন্যা পিতার দেহ সমাধিস্থ করার পর কোথায় হারিয়ে গেলেন, তার কোনো খোঁজ ইতিহাস দিতে পারে না। এছাড়াও নবাব সুজাউদ্দিনের আরেক ভাই মির্জা মহম্মদ তাকি খানেরও আর কোনো হদিশ মেলে না। এতগুলো জলজ্যান্ত মানুষ, কোথায় হারিয়ে গেলেন তাঁরা? না, মুর্শিদাবাদের ইতিহাসের পাতায় এর কোনো উত্তর নেই। শুধু রয়ে গেছে গিরিয়ার প্রান্তরে সুবা বাংলার নবাব সরফরাজ খানের সঙ্গে ক্ষমতালোভী আলিবর্দীর বেইমানির ইতিহাস।
Anim pariatur cliche reprehenderit, enim eiusmod high life accusamus terry richardson ad squid. 3
wolf moon officia aute, non cupidatat skateboard dolor brunch. Food truck quinoa nesciunt laborum
eiusmod. Brunch 3 wolf moon tempor, sunt aliqua put a bird on it squid single-origin coffee nulla
assumenda shoreditch et. Nihil anim keffiyeh helvetica, craft beer labore wes anderson cred
nesciunt sapiente ea proident. Ad vegan excepteur butcher vice lomo. Leggings occaecat craft beer
farm-to-table, raw denim aesthetic synth nesciunt you probably haven't heard of them accusamus
labore sustainable VHS.
Anim pariatur cliche reprehenderit, enim eiusmod high life accusamus terry richardson ad squid. 3
wolf moon officia aute, non cupidatat skateboard dolor brunch. Food truck quinoa nesciunt laborum
eiusmod. Brunch 3 wolf moon tempor, sunt aliqua put a bird on it squid single-origin coffee nulla
assumenda shoreditch et. Nihil anim keffiyeh helvetica, craft beer labore wes anderson cred
nesciunt sapiente ea proident. Ad vegan excepteur butcher vice lomo. Leggings occaecat craft beer
farm-to-table, raw denim aesthetic synth nesciunt you probably haven't heard of them accusamus
labore sustainable VHS.
Anim pariatur cliche reprehenderit, enim eiusmod high life accusamus terry richardson ad squid. 3
wolf moon officia aute, non cupidatat skateboard dolor brunch. Food truck quinoa nesciunt laborum
eiusmod. Brunch 3 wolf moon tempor, sunt aliqua put a bird on it squid single-origin coffee nulla
assumenda shoreditch et. Nihil anim keffiyeh helvetica, craft beer labore wes anderson cred
nesciunt sapiente ea proident. Ad vegan excepteur butcher vice lomo. Leggings occaecat craft beer
farm-to-table, raw denim aesthetic synth nesciunt you probably haven't heard of them accusamus
labore sustainable VHS.