মীর নিসার আলী(২৭/০১/১৭৮২-১৯/১১/১৮৩১ খ্রি: )। তাঁকে আমরা স্কুল পাঠ‍্য বইয়ের পাতায় ব্রিটিশ বিরোধী বিপ্লবী তিতুমীর নামেই জানি। অন্তত, সেভাবেই আমাদের জানানো হয়েছে। কিন্তু তার আড়ালে আজ আমরা আসল তিতুমীরকে খুঁজবো। বংশ পরিচয় দিয়েই শুরু হোক্। উত্তর চব্বিশ পরগণার বাদুড়িয়া থানার হায়দারপুর গ্রামে জন্ম মীর নিসার আলীর। পিতা— সৈয়দ মীর হাসান আলী, মা— আবিদা রোকেয়া খাতুন। গ্রামের পাঠশালায় শিক্ষার শুরু। পরে মাদ্রাসায়। ১৮ বছরেই কোরাণে হাফিজ। এরপর ১৮২২ খ্রিস্টাব্দে মক্কায় হজ করতে গিয়ে উত্তর প্রদেশের বেরিলির ওয়াহাবী নেতা সৈয়দ আহমেদের সঙ্গে আলাপ এবং এরপর দেশে ফিরে “দার-উল-হার্ব” -কে “দার-উল-ইসলাম” -এ পরিণত করতে ১৮২২ খ্রিস্টাব্দ থেকে জিহাদ শুরু। ব্রিটিশ শাসক এবং হিন্দু জমিদারদের বিরুদ্ধে আন্দোলনের নামে শুরু হয় তাঁর লোক ক্ষ‍্যাপানো। যশোর ও নদীয়ার ছড়িয়ে পড়ে তাঁর আন্দোলন। গরীব মানুষদের দলে টেনে মাদ্রাসা ও মসজিদে শুরু হলো বিপ্লবী ট্রেনিং। উদ্দেশ্য, জিহাদ ঘোষণা করে তাদের মুজাহিদ তৈরি করা।

তাঁর আক্রমণের লক্ষ্য হয়ে উঠলো একদিকে ব্রিটিশ এবং অন্যদিকে পুঁড়ার জমিদার কৃষ্ণদেব রায়, গোবরডাঙার জমিদার কালীপ্রসন্ন মুখোপাধ্যায়, তারাগোনিয়ার রাজনারায়ণ, নাগপুরের গৌরীপ্রসাদ চৌধুরী, গোবরা-গোবিন্দপুরের দেবনাথ রায়। তিতু প্রথম জীবনে লেঠেল হিসেবে জেলে যান। জেল থেকে ফিরে “তারিকায়ে মহম্মদী” -র নেতা সৈয়দ আহমেদ বারেলওয়ির কাছে জিহাদি দীক্ষা নিয়ে সৌদি আরবের ওহাবী আন্দোলনের মতো ভারতের মুসলমানদের ইসলামে ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নেন। এরজন্য তিতুমীর মুসলমানদের সম্পূর্ণ আরবি নাম রাখতে এবং কাছা দেওয়া ধুতি ছেড়ে “তাহবান্দ” পরার ফতোয়া দেন। সেই সঙ্গে বলা হয়, মুসলমানদের গোঁফের বদলে চার আঙুল দাড়ি রাখতে হবে। এছাড়াও তাদের মাথার মাঝখানটা কামানোর রীতি চালু হয়। যেসব মুসলমান তিতুমীরের ফতোয়া অগ্রাহ্য করলো, তাদের বিরুদ্ধেও আন্দোলন চললো। হজ ফেরত তিতুমীরের নেতৃত্বে শুরু হলো লাঠির ট্রেনিং। সেই সঙ্গে শুরু হলো ব্রাহ্মণ হত্যা, হিন্দুদের কাছ থেকে গোরু ছিনিয়ে এনে হিন্দু মন্দিরে তার রক্ত ছড়িয়ে দেওয়া, দোকান-হাট লুটপাট। এসব ছিল তিতুমীরের দলের প্রায় রোজকার ঘটনা। এছাড়াও হিন্দুদের সঙ্গে ছোঁয়া-খাওয়াও বন্ধ করে দেন তিতুমীর।

১৮৩১ খ্রিস্টাব্দের ১৯ শে নভেম্বর কর্ণেল হার্ডি-এর নেতৃত্বে ব্রিটিশ বাহিনী আক্রমণ করে বাঁশের কেল্লা।