গল্পে গল্পে ইতিহাস: মোঘল সম্রাট বাবর -- ড. মো. আনোয়ারুল ইসলাম

Bangladesh
story by story history mughal emperor babur
ঈদের আনন্দের মাঝেও নুহান এবং সাফিরের উৎকন্ঠা বেড়ে গেছে ইতিহাস পড়া নিয়ে। স্কুল বন্ধ থাকলেও তাদের পড়া, হোমওয়ার্ক থেমে নাই। দুইভাই শহরের নামকরা একটি ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের ক্লাস ফাইভের ছাত্র। প্রতি সপ্তাহেই হোম ওয়ার্ক দিতে হয়। মোবাইলে মেসেজ আসে এরপর সেটা লিখে স্কুলে জমা দিয়ে আসতে হয়। করোনার কারণে বাসায় কোন প্রাইভেট টিউটর নাই। নুহান এবং সাফির একই ক্লাসের হওয়ায় ওর মায়ের বেশ সুবিধা। দুইজনকে নিয়েই তিনি পড়াতে বসেন। নুহানের মা রাজশাহী বি আই টি থেকে কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং এ স্নাতক ডিগ্রী পযন্ত পড়েছেন। ছেলে দুটিকে পড়াতে তার খুব সুবিধা হয়। কিন্তু নুহান বুঝতে পেরেছে তার নানু ভাই ইতিহাস ভালো জানেন। সুতরাং এই সপ্তাহের হোম ওয়ার্কের জন্য নানু ভাইকে বলবেন। মহামারীতে লকডাউন দেয়ায় নানুভাই তাদের বাসায় মাসখানেক ধরে আটকা পড়েছেন। সহসাই তার রাজশাহী যাওয়া হচ্ছে না।
নানুভাই ড্রইং রুমে বসে পত্রিকা পড়ছেন। নুহান এবং সাফির দুইজনই ছুটে এসে বললো নানু ভাই আমাদেরকে একটু ইতিহাস বুঝিয়ে দেন। নানু ভাই পড়ার কথা শুনে খুশী হয়ে বললো কিসের ইতিহাস।

সাফির তাদের পঞ্চম শ্রেণীর ইতিহাস বইটি নানুকে দিলেন। নানু বইটি হাতে নিয়ে দেখলেন বইয়ের নাম Bangladesh and Global Studies. চকচকে নতুন বই। ২০২০ সালের পুর্ণমূদ্রিত।

নানা রকমের বিষয়বস্তুতে ভরা। তবে এর মধ্যে ইতিহাসের পাঠ্য হিসেবে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ, ব্রিটিশ শাসন এবং ঐতিহাসিক স্থান ও নিদর্শনের বিষয় হিসেবে তিনটি অধ্যায় রয়েছে। বাঁকীগুলিতে অর্থনীতি, জনসংখ্যা, জলবায়ু ও দুর্যোগ, মানবাধিকার সহ সমাজ বিজ্ঞানের গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সংযোজিত হয়েছে। নানু ভাই এবার নুহান এবং সাফিরকে বললেন ঠিক আছে আমি তোমাদের ইতিহাসের কোন অধ্যায় পড়াব।
সাফিরের সাফ কথা নানু ভাই অধ্যায় আমরা পড়ে নেব। আমাদের ফরিদ স্যারের হোমওয়ার্কের প্রশ্নটি নিয়ে সমস্যা। ওটা বইয়ে খুঁজে পাচ্ছি না।
নানু ভাই বললেন দাও দেখি প্রশ্নটা।
নুহান বললো এই যে নাও প্রশ্নটা। দেখলেন ফরিদ স্যার মেসেজে লিখেছেন,
Let us do more; The Mughals Called the Bengal` The Paradise of Nations`. Find out more about the rulers of Bengal during the Mughal Empire.
নানু ভাই দেখলেন এটা একটা অতিরিক্ত কাজ দিয়েছে ইতিহাসের শিক্ষক। তবে এই বই পড়ে মোঘলদের সম্পর্কে খুব একটা ছাত্রদের জানার কথা নয়।
দুই ভাইকে সামনে রেখে নানু ভাই বললেন, ও আচ্ছা প্রশ্নটা খুঁজে না পাওয়ার কারণ হলো মোঘলদের ইতিহাস হলো ভারতের মধ্যযুগের ইতিহাসের অন্তর্ভূক্ত। তোমাদের বইয়ে পলাশির যুদ্ধ থেকে অর্থাৎ ব্রিটিশ শাসনের শুরু ও শেষ হওয়ার কথা আছে। এসব বিষয় হলো আধুনিক ভারতের ইতিহাস। আসলে আমরা তিনটি যুগ বিভাজন নিয়ে সমগ্র ইতিহাস পড়ি। প্রাচীন যুগ, মধ্য যুগ এবং আধুনিক যুগ।
১৮১৭ খ্রিস্টাব্দে জেমস মিল হিস্ট্রি অব ব্রিটিশ ইন্ডিয়া নামে একটি বই লিখেছিলেন। তিনিই প্রথম ভারতের ইতিহাসকে তিনটি যুগে বিভক্ত করলেন। নামও দিলেন হিন্দু যুগ, মুসলিম যুগ এবং ব্রিটিশ যুগ। দেখো কি আশ্চর্য এখানেও পক্ষপাতিত্ব! জেমস মিল প্রথম দুই যুগ চিহ্নিত করলেন শাসকদের ধর্মের নামে। আর শেষেরটা করলেন জাতির নামে। যেটাকে তিনি খ্রিস্টান যুগ না বলে ব্রিটিশ যুগ বললেন। আসলে ব্রিটিশ শাসকরা এভাবেই এখানকার ইতিহাস, সংস্কৃতি বিভিন্ন বিষয়ে অশ্রদ্ধা বা কটূ কথা বলেছেন। এগুলো তোমরা বড় হয়ে আরো জানতে পারবে। এবারে আমরা মোঘলদের ইতিহাসে আসি। ভারতের ইতিহাসে মধ্যযুগের দুটি পর্ব আছে একটি হলো সুলতানি পর্ব আরেকটি হলো মোঘল পর্ব। সুতরাং মোঘলদের জানতে গেলে সুলতানিদেরকেও জানা দরকার। সেটা না হয় আমরা অন্য আরেকদিন জানব।
এখন আমি তোমাদের মোঘলদের গল্প বলি। এরপর তোমরা এগুলো সাজিয়ে গুছিয়ে লিখে হোমওয়ার্ক তৈরী করবে।
নানু ভাই দুই নাতিকে নিয়ে ড্রইংরুমকে ইতিহাসের ক্লাসরুম বানিয়ে ফেললেন। মাঝে মাঝে অবশ্য তার মেয়েও এসে যোগ দিচ্ছে। মোঘল সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন সম্রাট জহিরুদ্দিন মোহাম্মদ বাবুর। তিনি কিন্তু ভারতীয় ছিলেন না। তিনি ছিলেন তুর্কিস্থানের ফারগানা প্রদেশের অধিবাসী। তাঁর পিতা উমর শেখ মির্জা ছিলেন ছোট্ট ফারগানা রাজ্যের অধিপতি। সেই সেখান থেকে বাবুর ভারতবর্ষে এসে মোঘল সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেন। ভারতের একজন নামকরা ইতিহাসবিদ হারবান মুখিয়া বাবর সম্পর্কে কি বলেছেন জানো? তিনি বলেছেন, “সংস্কৃতি, সাহসিকতা আর সেনা পরিচালনার ক্ষেত্রে বাবর নি: সন্দেহে এক উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিত্ব ছিলেন। যদি বাবর ভারতে না আসতেন, তাহলে এই দেশের সংস্কৃতি হয়তো এতটা বিচিত্র হওয়ার সুযোগ পেত না।” বাবর ভারতে না আসলে কোথায় থাকতেন- নুহান প্রশ্ন করে বসলো। হ্যাঁ নুহান তুমিই ঠিকই বলেছো। দেখ বাবর কিন্তু ভারতে আসার চিন্তা করেনি। বারো বছর বয়সে পিতার মৃত্যুর পর তিনি ফারগানার শাসক হন। ফারগানা ছোট একটি রাজ্য। সেই অল্প বয়সেই বাবর বিশাল সাম্রাজ্য সমরখন্দ দখলের স্বপ্ন দেখলেন। তিনি সফলও হলেন। সমরখন্দ জয় করে তিনি আরেক সমস্যায় পড়লেন। কী সমস্যা সাফিরের প্রশ্ন। সমরখন্দ জয় করে সেখানে থাকতে গিয়ে তিনি ফারগানা হারিয়ে ফেললেন। আবার ফারগানা উদ্ধার করতে গিয়ে সমরখন্দ হারিয়ে ফেললেন। এভাবে তিন বারের মাথায় তিনি দুটো রাজ্য হারিয়ে রাজ্য হারা হয়ে গেলেন। কি আর করা। টিকে থাকতে গেলে নতুনভাবে আবার রাজ্য দখল করতে হবে। কিন্তু এবার তিনি ফারগানা এবং সমরখন্দের পরিবর্তে কাবুল জয়ের দিকে মনোযোগ দেন। এবং সত্যি সত্যি কাবুল জয় করেন। আর করবেনই বা না কেন? কারণ বাবরের রক্তে ছিল চেঙ্গিস খা আর তৈমুর লঙের রক্ত। তাঁদের উত্তরাধিকারী বাবর।
কিন্তু আবারো একই সমস্যা। কাবুল জয় করেও তিনি কাবুল আয়ত্ত্বে রাখতে পারেনি। কাবুল ছিল পারস্যের রাজাদের প্রভাবাধীন। এ সময় পারস্যের রাজা ছিলেন শাহ ইসমাঈল সাফাভী। কাবুলের অধিকাংশ জনগণ ছিলেন শিয়া মতাবলম্বী। কিন্তু বাবুর ছিলেন সুন্নী মতাবলম্বী। ফলে তাঁর পুরনো শত্রুরা বাবুরের বিরুদ্ধে শিয়াদের উত্তেজিত করে তোলেন। এক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন উজবেক নেতা শায়বানী খাঁ। আবার লড়াই বেঁধে গেল। বাবুর লড়াইয়ে হেরে আবারো রাজ্যহারা হলেন।
কিন্তু বাবর দমবার পাত্র নয়। ওই যে ইতিহাসবিদরা বাবর সম্পর্কে ভালো ভালো কথা বলেছেন। ভিনসেন্ট স্মিথ, স্ট্যানলি লেনপুল, রাসব্রুক উইলিয়াম সকলেই ভারতের মোঘল সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে বাবরের অবদানকে স্বীকার করেছেন। রাজ্যহারা হয়েও বাবর অগ্রসর হলেন ভারতের দিকে। তখন অবশ্য ভারতকে হিন্দুস্থান নামেই লোকে বেশী চিনত। দিল্লী শাসন করছিলেন সুলতান ইব্রাহীম লোদী।
লোদী বংশের শাসক সুলতান ইব্রাহীম লোদীর সঙ্গে দিল্লীর আমীরগণের সম্পর্ক ভালো যাচ্ছিল না। বিরোধের কারণ ছিল ক্ষমতার দ্বন্ধ নিয়ে। এটাকে বলা হয় প্রাসাদ চক্রান্ত। ওই সময়ে আমীরগণ ছিলেন অত্যন্ত দাম্ভিক আর ইব্রাহীম লোদীও তাদের তোয়াজ করে চলতে হবে এটা পছন্দ করতেন না। ফলে আমীরগণ ইব্রাহীম লোদীকে হঠানোর সুযোগ খুঁজছিলেন। পাঞ্জাবের শাসনকর্তা দৌলত খাঁ ছিলেন এই আমীরদের প্রধান।
দৌলত খাঁ বাবরের কাবুল জয়ের খবর জানতেন। তিনি বুঝতে পারলেন একমাত্র বাবরই ইব্রাহীম লোদীকে পরাজিত করতে পারবেন। তিনি বাবরকে ইব্রাহীম লোদীর রাজ্য আক্রমণ করতে আহবান জানালেন। এই আহবান জানানোর সঙ্গে একটা সুন্দর গল্প জড়িয়ে আছে।
কী সেই গল্প? নুহান আগ্রহ সহকারে নানুভাইয়ের দিকে ঝুকে বলে।
গল্পটা হলো বাবর খুবই ধার্মিক ব্যক্তি ছিলেন। মহান আল্লাহর প্রতি তাঁর ছিল অগাধ আস্থা। রাজ্যহারা বাবর আল্লাহর কাছে মোনাজাত করে বলেছিলেন, “হে আল্লাহ্! আমার ভাগ্যলিপিতে যদি তুমি ভারত বিজয় লিখে থাকো, তাহলে তুমি আমার কাছে তার ইঙ্গিত স্বরূপ কিছু আম আর পান পাঠিয়ে দিও।”
নানু ভাই বাবর কি সত্যি সত্যি আম আর পান পেয়েছিলেন। সাফির উত্তেজিত হয়ে বলতে থাকলো।
হ্যাঁ পেয়েছিলেন। ওই যে দৌলত খাঁর কথা বললাম। যিনি বাবরকে দিল্লি আক্রমণের আহবান জানিয়েছিলেন। সেই দৌলত খাঁ তাঁর ছেলে দিলওয়ার খাঁর মাধ্যমে বাবরকে দিল্লি আক্রমণের আহবান জানানোর সময় কিছু উপঢৌকন পাঠিয়েছিলেন। উপঢৌকনের মধ্যে ছিল আম এবং পান।
বাহ্ বেশ মজার ঘটনা তো। আম এবং পান পেয়ে বাবর কি করলেন? নুহানের জানার আগ্রহ বেড়ে যাচ্ছে দেখে নানাও খুব খুশী হলেন। বুঝলেন গল্পে গল্পে ইতিহাস জমে যাচ্ছে।
বাবর দৌলত খাঁর উপঢৌকন এবং পছন্দের জিনিস পেয়ে খুব খুশী হলেন এবং আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করলেন। তিনি দিলওয়ার খাঁকে জানিয়ে দিলেন দৌলত খাঁর প্রস্তাব তিনি গ্রহণ করেছেন।
কিন্তু দৌলত খাঁ তার প্রতিশ্রুতি রাখেন নি। বাবর সময়মতো ভারতের দিকে রওয়ানা হলেন। পথিমধ্যে লাহোর, দীপালপুর অধিকার করে দিল্লীর দিকে অগ্রসর হচ্ছিলেন, ঠিক সেই মুহুর্তেই দৌলত খাঁ ইব্রাহীম লোদীর বিরুদ্ধে বাবরকে সাহায্য করতে অস্বীকৃতি জানালেন।
বাবর বুঝতে পারলেন দৌলত খাঁর সাহায্য ছাড়া ইব্রাহীম লোদীর বিরুদ্ধে জয়লাভ করা সম্ভব নয়। ফলে বাবর আর অগ্রসর হলেন না। কাবুলেই ফিরে গেলেন। কিন্তু সময় এবং সুযোগ বুঝে বাবর ঠিকই ভারত জয় করলেন। সময়টা হলো ১৫২৬ সাল। ভারতের পানিপথ নামক জায়গায় ইব্রাহীম লোদীর সঙ্গে বাবরের ভীষণ যুদ্ধ হলো। ইতিহাস সাক্ষী হয়ে রইলো পানিপথের প্রথম যুদ্ধের। বাবরের পক্ষে পঁচিশ হাজার সৈনিক ও কয়েকটা কামান অপরপক্ষে ইব্রাহীম লোদীর ছিল লক্ষাধিক সৈনিক এবং এক হাজারের মত বিশাল হস্তী বাহিনী। যুদ্ধে বাবরের রণকৌশলের কাছে ইব্রাহীম লোদী পরাজিত ও নিহত হলেন। বাবর তাঁকে অমর্যাদা করেন নি। বীরের সম্মানে সমাহিত করেন।
এরপর বাবর দিল্লীর সিংহাসনে বসলেন। পূর্বের দিল্লির শাসকদের সুলতান পদবির স্থলে তিনি নিজেকে বাদশাহ বলে অভিহিত করেন।
বাবর কেন বাদশাহ উপাধি গ্রহণ করলেন সাফিরের প্রশ্ন।
বাহ্ সাফির সুন্দর প্রশ্ন করেছো। বাবর বা পরবর্তীতে মোঘলরা নিজেদের বাদশাহ বলেছেন এজন্য যে তাদের শাসন করার ক্ষমতা অন্য কারোর অনুমোদনের উপর নির্ভরশীল নয়। তবে সুলতান পদবি মোঘল শাহজাদা বা যুবরাজরা ব্যবহার করতেন।
বাবর দিল্লির সিংহাসনে বসেই ক্ষান্ত হলেন না। এটাকে স্থায়ী করার জন্য তাঁকে আরো কয়েকটি যুদ্ধে জয়ী হতে হয়। পানিপথের যুদ্ধে বাবর আফগানদেরকে হারালেও ভারতের তখন আরেক শক্তিশালী গোষ্ঠী ছিল রাজপুতরা। খানুয়ার যুদ্ধ ছিল এই রাজপুতদের বিরুদ্ধেই।
রাজপুতদের নেতা ছিলেন রাণা সংগ্রাম সিংহ। তিনি ভেবেছিলেন বাবর হয়ত নিজ দেশে ফিরে যাবেন। কিন্তু তিনি তা করেন নি। আসলেও তাই। বাবরের ভারতবর্ষ ভালো লেগেছিল। তিনি তাঁর আত্মজীবনী বাবরনামাতেও তাই লিখেছেন “আমি কাবুল থেকে হিন্দুস্তান অভিমুখে রওয়ানা হলাম। বাদাম চশমা ও জাগদালিকের পথ ধরে ছ’ দিনের দিন আদিনাপুর পৌঁছলাম। এর পূর্বে কোনো উষ্ণ দেশ কিংবা হিন্দুস্তান দেখার সৌভাগ্য আমার হয়নি। আদিনাপুর এসে যখন পৌঁছলাম, তখন এক সম্পূর্ণ অভিনব জগতের দৃশ্য আমার চোখের সামনে ভেসে উঠলো। আমি দেখলাম, এ দেশের ঘাস পৃথক, এর বৃক্ষরাজি পৃথক, এখানকার পশুপাখী আলাদা, এর নদ-নদী আলাদা, আমি বিস্ময়ে বিমুগ্ধ হয়ে গেলাম। আমি এ দেশকে ভালোবেসে ফেললাম।”
রাণা সংগ্রাম সিংহ সকল রাজপুত রাজাদের এক জোট করলেন। তাঁরা সম্মিলিতভাবে বাবরের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করলেন। রাণা সংগ্রাম সিংহ বাবরকে ভারত থেকে বিতাড়িত করতে আটলক্ষ সৈন্য ও পাঁচশত হস্তি বাহিনীসহ বাবরের বিরুদ্ধে অবতীর্ণ হলেন।
১৫২৭ সালের মার্চ মাসে আগ্রার নিকটে খানুয়াতে যুদ্ধ শুরু হয়। শত্রুদের বিশাল সম্মিলিত বাহিনীর সামনে বাবরের সৈনিকরা ভয়ে ও হতাশায় উদ্যমহীন হয়ে পড়ে। কিন্তু বিপদে নির্ভীকচিত্ত বাবর তাঁর সৈনিকদের মনোবল অটুট রাখতে এক তেজস্বী ভাষণ দেন। এতে তিনি বলেন, “মানুষ জীবনে একবারই মাত্র মৃত্যুবরণ করে। আর জন্মিলে একদিন মরতে হবেই। কেবল আল্লাহই চিরদিন বেঁচে থাকবেন। সুতরাং মৃত্যুকে ভয় করলে চলবে না। কাপুরুষের মৃত্যুর চেয়ে বীরের মৃত্যু শতগুণে শ্রেয়। আর মুসলমান কখনো লড়াইয়ের ময়দান থেকে পালিয়ে যায় না। আসুন, আমরা সকলে একযোগে আল্লাহর পবিত্র নাম নিয়ে প্রতিজ্ঞা করি, আমাদের মধ্যে একজনও এ যুদ্ধ থেকে মুখ ফিরাবো না।”
বাবরের এই উদাত্ত আহবান বিফল হয়নি। বাবরের বাহিনী জয়লাভ করে। ইতিহাসবিদরা এই যুদ্ধে বাবরের সাফল্যের মূল্যায়নে বলেছেন “পানিপথে ভারতে মুঘল বিজয়ের যে সূচনা হয়েছিল, খানুয়ায় তা সম্পূর্ণ হয়। … এই যুদ্ধের পর বাবুরের দিল্লির সিংহাসন চ্যুতির আর কোন সংশয় রইল না। পরবর্তীকালে বাবুর যেসব যুদ্ধ করেছিলেন, সেগুলো ছিল সাম্রাজ্য বিস্তারের যুদ্ধ।”
শুধু যুদ্ধক্ষেত্রেই জয় নয়, বাবর সংস্কৃতিপরায়ণ, সজ্জন ও বিদ্বান ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত ছিলেন। তাঁর আত্মজীবনী তুজুক ই বাবুরী তিনি নিজেই লিখেছেন। এতে নিজের পাপ পূণ্যের দুইটাই অকপটে লিখেছেন। যা সাধারণত কেউ লিখে না। বাবরের কৃতিত্ব নিয়ে পরবর্তীকালে অনেক গল্প কবিতা নাটক লেখা হয়েছে। এই রকম একটি কবিতা কালিদাস রায়ের ‘বাবুরের মহত্ত্ব’। বলেই নানা ভাই কবিতার চরণ থেকে বললেন,
বড়ই কঠিন জীবন দেওয়া যে জীবন নেওয়ার চেয়ে;
জান না কি ভাই? ধন্য হলাম আজিকে তোমারে পেয়ে
আজি হতে মোর শরীর রক্ষী হও;
প্রাণ-রক্ষকই হইলে আমার, প্রাণের ঘাতক নও।
নুহান বললেন এর অর্থ কি নানুভাই।
এর অর্থ হলো- কালিদাস রায় রচিত ‘বাবুরের মহত্ত্ব’ কবিতায় মোগল সম্রাট বাবুর রাজ্য বিজয়ের পর প্রজাসাধারণের হৃদয় জয়ে মনোযোগী হলেন। তাই পর্যটকের ছদ্মবেশে তিনি দিল্লির পথে-প্রান্তরে ঘুরে প্রজাদের দুঃখ-কষ্ট জানার চেষ্টা করতেন। একদিন তিনি যখন দিল্লির পথে-প্রান্তরে ঘুরছিলেন, সে সময় হঠাৎ একটি মত্ত হাতি রাজপথে ছুটে আসে। সে সময় বাবুর নিজের জীবনের মায়া ত্যাগ করে মত্ত হাতির কবল থেকে রাজপথে পড়ে থাকা একটি মেথর শিশুকে উদ্ধার করেন। এই দৃশ্য দেখে এক রাজপুত যুবক যে সম্রাট বাবরকে হত্যার জন্য খুঁজছিল সে সম্রাট বাবরের কাছে নতজানু হয়ে বললো আপনি একজন অসম সাহসী। আমি আপনাকে হত্যা করতে এসেছিলাম। কিন্তু আমি আজ এক নতুন শিক্ষা পেলাম। আপনি দেখিয়ে দিলেন, প্রাণ হরণ নয়, প্রাণ দানের মধ্যেই রয়েছে প্রকৃত আনন্দ।
এরপর কী হলো নানুভাই। সাফির উৎকন্ঠা নিয়ে জিজ্ঞেস করে।
সম্রাট বাবর তার সৎসাহস দেখে শত্রু জেনেও নিজের দেহরক্ষী হিসেবে নিয়োগ দেন। নানু ভাইয়ের উত্তর। এ রকম আরো গল্প কবিতা আছে। তাঁর পূত্র সন্তান হুমায়ুনকে নিয়েও বাবরের প্রার্থনা রচিত হয়েছে। কবি বলেছেন, ‘মরিয়া বাবর অমর হইয়াছে, নাহি তার কোনও ক্ষয়, পিতৃস্নেহের কাছে হইয়াছে মরণের পরাজয়।’
এটাও তোমাদের বলি শোনো। সম্রাট বাবর পূত্র হুমায়ুন একবার খুব অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। সম্রাট বাবরের কাছে যখন খবরটা পৌঁছালো তখন তিনি খুবই চিন্তিত। কীভাবে শাহজাদা হুমায়ুনকে সুস্থ করা যায়। এই সময় তখনকার বিখ্যাত দরবেশ মীর আবু বাকা বাবরের কাছে উপদেশ পাঠালেন হুমায়ুনের খুব প্রিয় জিনিস আল্লাহর নিকট উৎসর্গ করলে সে সুস্থ হয়ে উঠবে। তখন সম্রাট বাবর বলেছিল হুমায়ুনের জন্য সর্বাপেক্ষা মূল্যবান জিনিস তো আমি নিজেই। তখন বাবর আল্লাহর কাছে নিজের জীবনের বিনিময়ে হুমায়ুনের প্রাণ ভিক্ষা চান। এটা এক অলৌকিক ঘটনা। এটুকু ইতিহাস না হলেও এরপরে দেখা যায় হুমায়ুন সুস্থ হয়ে উঠেন এবং সম্রাট বাবর অসুস্থ হন ও অবশেষে মারা যান। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল মাত্র আটচল্লিশ বছর এবং কাবুলের বাগ ই বাবর বাগানে তাঁকে সমাহিত করা হয়। গল্পের এখানটায় শেষ করে নানু ভাই বললেন আসলে সম্রাট বাবরের অন্তরটা ছিল স্নেহার্ত এবং মায়ায় ভরা। লেখক বাংলাদেশের পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপ-উপাচার্য।
Anim pariatur cliche reprehenderit, enim eiusmod high life accusamus terry richardson ad squid. 3 wolf moon officia aute, non cupidatat skateboard dolor brunch. Food truck quinoa nesciunt laborum eiusmod. Brunch 3 wolf moon tempor, sunt aliqua put a bird on it squid single-origin coffee nulla assumenda shoreditch et. Nihil anim keffiyeh helvetica, craft beer labore wes anderson cred nesciunt sapiente ea proident. Ad vegan excepteur butcher vice lomo. Leggings occaecat craft beer farm-to-table, raw denim aesthetic synth nesciunt you probably haven't heard of them accusamus labore sustainable VHS.
Anim pariatur cliche reprehenderit, enim eiusmod high life accusamus terry richardson ad squid. 3 wolf moon officia aute, non cupidatat skateboard dolor brunch. Food truck quinoa nesciunt laborum eiusmod. Brunch 3 wolf moon tempor, sunt aliqua put a bird on it squid single-origin coffee nulla assumenda shoreditch et. Nihil anim keffiyeh helvetica, craft beer labore wes anderson cred nesciunt sapiente ea proident. Ad vegan excepteur butcher vice lomo. Leggings occaecat craft beer farm-to-table, raw denim aesthetic synth nesciunt you probably haven't heard of them accusamus labore sustainable VHS.
Anim pariatur cliche reprehenderit, enim eiusmod high life accusamus terry richardson ad squid. 3 wolf moon officia aute, non cupidatat skateboard dolor brunch. Food truck quinoa nesciunt laborum eiusmod. Brunch 3 wolf moon tempor, sunt aliqua put a bird on it squid single-origin coffee nulla assumenda shoreditch et. Nihil anim keffiyeh helvetica, craft beer labore wes anderson cred nesciunt sapiente ea proident. Ad vegan excepteur butcher vice lomo. Leggings occaecat craft beer farm-to-table, raw denim aesthetic synth nesciunt you probably haven't heard of them accusamus labore sustainable VHS.