গল্পে গল্পে ইতিহাস: মোগলদের প্রশাসন -- ড. মো. আনোয়ারুল ইসলাম

Bangladesh
story by story history mughal administration dr md anwarul islam
ভারতের ইতিহাসে মোগলদের বড় বড় যুদ্ধ বিগ্রহের গল্প শুনে নুহান এবং সাফির দুই ভাইয়ের একই প্রশ্ন মাথায় ঘুরপাক খেতে থাকে এত বিশাল সৈন্যবাহিনী নিয়ে যুদ্ধ তাদের খরচ পত্তর কে দেয়। আর সারা বছর যদি যুদ্ধই করে তাহলে দেশ কিভাবে পরিচালিত হয়। প্রশ্নের উত্তরের জন্য দুই ভাই সকাল থেকেই নানু ভাইয়ের পিছু ছাড়ছে না। নানু ভাই বললেন তাহলে শোনো- শুধু যুদ্ধই নয় মোগলরা রাজ্য পরিচালনাতেও বেশ কৃতিত্বের পরিচয় দিয়েছিল। সম্রাট বাবুর থেকে আওরঙ্গজেব সকল মোগল সম্রাটই ছিলেন অত্যন্ত সুদক্ষ শাসক, বিচক্ষণ রাজনীতিবিদ এবং কূটনীতিবিদ।
মোগলদের পূর্বে সুলতানী আমলে তুর্কী ও আফগানদের শাসন ভারতে প্রচলিত ছিল। সময়কালটা ছিল ১২০৬ সাল থেকে ১৫২৬ সাল পযন্ত। সুলতানী আমলের এই তিনশত বছরের শাসনে প্রায় পাঁচটি রাজবংশ শাসন করে। কিন্তু আইন বা প্রশাসনের ক্ষেত্রে সুলতানি এবং মোগলদের মধ্যে বিস্তর ফারাক ছিল তার কারণ হলো সুলতানী আমলের বেশীরভাগ শাসকই বাগদাদের আব্বাসীয় খলিফাদের অনুকরণ করতেন। একই ধরণের কর্মপদ্ধতি অনুসরণ করে ভারতে ও বাংলায় রাষ্ট্র পরিচালনা করতেন। এ কারণেই তাঁরা সুলতান পদবী ব্যবহার করতেন। ভারতের শাসন পরিচালনায় তাঁরা আব্বাসীয় বা বাগদাদের খলিফার অনুমোদন নিতেন। কিন্তু সম্রাট বাবর এই রীতির পরিবর্তন ঘটান। তিনি বা তাঁর বংশের শাসকেরা নিজেদেরকে পাদশাহ বা বাদশাহ বলতেন। এবং কারো অনুমোদন নেয়ার প্রয়োজন মনে করতেন না। ফলে আইন কানুন এবং প্রশাসন ব্যবস্থায় তাঁরা ছিলেন সম্পূর্ণ স্বাধীন।
এ কারণেই মোগলদের প্রশাসনিক আদর্শ ছিল বিভিন্ন গোষ্ঠীকে সাম্রাজ্যের সঙ্গে যুক্ত করে একটি যথার্থই ভারতীয় সাম্রাজ্য গড়ে তোলা। যাকে মধ্য এশীয়, পারসিক এবং ভারতীয় রাজতন্ত্রের সংমিশ্রণ বলতে পারো। সম্রাট আকবরের সময় তিনি যে নীতি গ্রহণ করেছিলেন তা হলো সকলের প্রতি সহনশীলতা ও সকলের মধ্যে শান্তিপূর্ণ সহবস্থান। যেটাকে বলা হয় সুলহ- ই- কুল।
মোগলদের যে শাসন ব্যবস্থা ছিল খুব উন্নত। সামগ্রিকভাবে মোগল প্রশাসন কাঠামোকে অনেকেই পিতৃতান্ত্রিক আমলাতান্ত্রিক ( patrimonial bureaucratic) বলে অভিহিত করেছেন।
নানুভাই এই যে তুমি ( patrimonial bureaucratic) বলছো সেটা কি?
হ্যা এটা হলো শাসন ব্যবস্থার সঙ্গে জড়িত একটা তত্ত্ব। এই ধারণা দিয়েছেন ম্যাক্স ওয়েবার। এই ধারণা অনুযায়ী পিতৃতান্ত্রিক রাষ্ট্রের শাসক শাসনকাজ পরিচালনা করেন পিতৃতান্ত্রিক পরিবারের দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে। ব্যাখ্যাটা আরো সহজ করা যায় এভাবে যেমন ধরো পিতৃতান্ত্রিক পরিবারের প্রধান পিতা। তিনি পরিবারের সকল সদস্যদের সুখ শান্তির জন্য আপ্রাণ চেষ্টা চালান। বিনিময়ে পরিবারের সকল সদস্যরাও তার প্রতি অনুগত থাকে। এটাই ম্যাক্স ওয়েবার বলতে চেয়েছেন। মোগল সাম্রাজ্যের শাসকের সঙ্গে প্রজার সম্পর্ক তৈরী করতে চেয়েছেন পিতা পুত্রের মতো। সমগ্র রাজ্যকে তাঁরা দেখতে চেয়েছেন পরিবারের মতো করে। মোগল প্রশাসনেও এটাই দেখতে পাওয়া যায়। মোগলদের প্রশাসন বিশেষ করে তাঁদের শাসন ব্যবস্থা, আইন কানুন এগুলো যদি আমরা আলোচনা করি তাহলে বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে উঠবে।
প্রজাদের সুখ শান্তি এবং রাজ্যে সমৃদ্ধি আনার জন্য শুধু শাসককে নয় তাঁর অনুগত বাহিনীকেও চৌকষ হতে হয়। মোগল প্রশাসনে সম্রাটের পরেই কিন্তু মন্ত্রীর অবস্থান। প্রধানমন্ত্রীকে সে সময় উজীর বলা হতো। প্রায় প্রত্যেক মোগল শাসকদের বিশ্বস্ত প্রধান মন্ত্রী ছিল। যেমন সম্রাট আকবরের সময়ে রাজা টোডরমল্ল, সম্রাট জাহাঙ্গীরের ইতমাদ উদ দৌলা, সম্রাট শাহজাহানের সময় আসফ খান, সম্রাট আওরঙ্গজেবের সময় আসদ খান এদের নাম বলা যেতে পারে। উজীরগণ মোগল সম্রাটদের আত্মীয়ও যেমন হতেন আবার ঠিক তেমনি বিশ্বস্ত, শিক্ষিত, প্রতিভাবান এবং কর্মদক্ষ ছিলেন। সরকারী কাজে উজীরের স্বাক্ষরের পর তাতে বাদশাহের সীল মোহর অঙ্কিত হলেই সেটা রাজকীয় আদেশে পরিণত হত। মোগল সম্রাটদের সঙ্গে উজীরদের প্রতিভা যুক্ত হবার ফলে মোগলদের খ্যাতি, রাজ্য বিস্তৃতি এবং সুদক্ষ শাসন ব্যবস্থা গড়ে উঠে।
উজীরের পরেই খ্যাতির শীর্ষে অবস্থান করতেন সেনাপতিগণ। মোগল সম্রাট আকবরের সময় সামরিক বাহিনীতে পদমযাদাকে একটি প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেন যা মনসবদারি নামে বহুলভাবে প্রচলিত। মনসবদারির মাধ্যমে বোঝা যেত ওই সেনাপতির মযাদা। যেমন আধুনিক কালে সামরিক বাহিনীর কাঠামোতে রেজিমেন্ট, ব্রিগেড বা ডিভিশন থাকে ঠিক ওই ব্যাপারিটিও ওই রকমের। যেমন এক হাজারী মনসবদার মানে তাঁর অধীনে আছে একহাজার সৈনিক, আবার দুই হাজারী মনসবদার মানে তাঁর অধীনে দুইহাজার সৈনিক, এভাবেই তিন হাজারী, বা পাঁচ হাজারী, বা দশ হাজারী মনসবদার নিয়োগ করা হতো।
এইসব সেনাবাহিনীর অফিসার বা মনসবদার বা সেনাপতি যাই বলিনা কেন তাদের বেতন কাঠামো কেমন ছিল সেটা দেখা যাক:
দশহাজারী মনসবদারের মাসিক বেতন ছিল ষাট হাজার টাকা
আট হাজারী মনসবদারের মাসিক বেতন ছিল পঞ্চাশ হাজার টাকা
সাত হাজারী মনসবদারের মাসিক বেতন ছিল পয়তাল্লিশ হাজার টাকা।
পাঁচ হাজারী মনসবদারের মাসিক বেতন ছিল ত্রিশ হাজার টাকা।
চার হাজারী মনসবদারের মাসিক বেতন ছিল বাইশ হাজার টাকা।
তিন হাজারী মনসবদারের মাসিক বেতন ছিল সতের হাজার টাকা।
দুই হাজারী মনসবদারের মাসিক বেতন ছিল বারো হাজার টাকা।
এক হাজারী মনসবদারের মাসিক বেতন ছিল আট হাজার দুই শত টাকা।
বাব্বা ওই সময়ে এত টাকা বেতন? সর্বোচ্চ বেতন পাওয়া দশহাজারী মনসবদার কারা ছিলেন?
এটা শুধুমাত্র শাহজাদাদেরকেই দেয়া হতো। সম্রাট আকবরের সময় রাজা মানসিংহ সাত হাজারী মনসবদার, রাজা বিহারী মল, রাজা ভগবান দাস পাঁচ হাজারী মনসবদার ছিলেন। আকবরের সভাসদদের মধ্যে টোডরমল চার হাজারী মনসবদার এবং বীরবল দুইহাজারী মনসবদারে অন্তর্ভূক্ত ছিলেন। সাধারণ সৈনিকদের অবস্থা কিন্তু মনসবদার বা অফিসারদের মতো এতো ভালো ছিল না। বলা চলে করুণ অবস্থা। যাদের নিয়ে যুদ্ধ করে রাজ্য টিকে রাখা হতো, তাদের বেলায় ঠন ঠনা ঠন। মনসবদাররা যেখানে বেতন পেতেন হাজার টাকা সেখানে সৈনিকরা পেতেন খুবই নগণ্য। যেমন অশ্বারোহী সৈনিকের মাসিক বেতন ছিল ২০ টাকা (ভারতীয়); সিন্ধু নদের পশ্চিমের অশ্বারোহী হলে তাঁর বেতন ছিল মাসিক ২৫ টাকা। তিরন্দাজ পদাতিক সৈনিকের বেতন মাসিক আড়াই টাকা, বন্দুক ধারী পদাতিক সৈনিকের বেতন ছিল মাসিক ছয় টাকা। আচ্ছা নানু ভাই মোগলদের অধীনে সৈন্য সংখ্যার পরিমাণ কেমন ছিল। নুহানের প্রশ্ন।
সে তো বিশাল ব্যাপার। মোগল সৈন্যদের প্রকৃত সংখ্যা নিরূপণ করা কঠিন। তবে সম্রাট শাহজাহানের আমলে ১৬৪৮ সালে মোগলবাহিনীতে ৬ লাখ ২৫ হাজার সৈনিক ছিল। তন্মেধ্যে ৪, ৪০, ০০০ পদাতিক, তীরন্দাজ ও গোলন্দাজ এবং ১, ৮৫, ০০০ অশ্বারোহী সৈন্য ছিল বলে খুব নামকরা একজন ইতিহাসবিদ যদুনাথ সরকার বলেছেন।
সাফির বলতে থাকে এই যে বিশাল বাহিনী তাঁদের ব্যয় হতো সরকারি কোষাগার থেকে। তাহলে মোগলদের আয় হতে কোত্থেকো?
তাহলে শোনো, নানু ভাই বলতে থাকে প্রদেশকে বলা হতো সুবা। এর যিনি প্রধান থাকতেন তাঁকে বলা হতো সুবাদার বা নাজিম। কখনো তিনি সিপাইসলার নামেও অভিহিত হতেন। তিনিও মোগলদের প্রশাসনে অত্যন্ত ক্ষমতাধর ব্যক্তি হিসেবে চিহ্নিত হতেন। তাঁকে সাহায্য করার জন্য দেওয়ান, বকসি, ফৌজদার, কোতোয়াল, কাজি, আমিল প্রভৃতি সরকারি কর্মচারীরা ছিলেন। তবে দেওয়ান শুধুমাত্র রাজস্ব আদায়ের কাজে নিয়োজিত থাকতেন। সুবা আবার কয়েকটি সরকারে বিভক্ত থাকতো। যার প্রধান হতেন ফৌজদার। সরকার আবার পরগণায় বিভক্ত থাকতো। পরগণার শাসনকার্য পরিচালনা করতেন শিকদার। ফৌজদার ও শিকদারকে বিভিন্ন সরকারি কর্মচারী সাহায্য করতেন। এই যে বিশাল প্রশাসনিক সংগঠন, এর ব্যয়ভার সবই বহন করা হতো রাজস্ব হতো। ভূমি রাজস্বই ছিল তার মূল ভিত্তি। যদিও শেরশাহ এই ব্যবস্থা উপলদ্ধি করেন কিন্তু পরবর্তীকালে সম্রাট আকবর শেরশাহ কর্তৃক অনুসৃত নীতি অনুযায়ী রাজস্ব পদ্ধতিকে আরো বিজ্ঞানসম্মত করে আধুনিক রাজস্ব ব্যবস্থার সূচনা করেন। মোগলদের সময়ে ভূমি রাজস্ব কেমন আদায় হতো তার একটি হিসাব দেখলেই বোঝা যাবে-
১৫৯৪ সাল সম্রাট আকবরের সময় রাজস্ব আদায় ১৬৫৬৮৮০০০ টাকা বা রুপী।
১৬২৭ সাল সম্রাট জাহাঙ্গীরের সময় রাজস্ব আদায় ১৭৪৯৩৩০০০ টাকা বা রুপী।
১৬৫৫ সাল সম্রাট শাহজাহানের সময় রাজস্ব আদায় ২৬৭৩৭৭০০০ টাকা বা রুপী।
১৬৬০ সাল সম্রাট আওরঙ্গজেবের সময় রাজস্ব আদায় ২২৫৮৬৬০০০ টাকা বা রুপী।
ভূমির রাজস্ব ছাড়া আরো নানা রকমের কর যেমন টোল, ট্যাক্স এবং অতিরিক্ত কর আদায় করা হতো। ওই সময়ে বিশ্বের অন্যদেশে এতো কর আদায় হতো কিনা সন্দেহ। উইলিয়াম হকিন্স নামে একজন বিদেশীয় সম্রাট জাহাঙ্গীরের দরবারে যাতায়াত ছিল। তিনি জানান ১৬০৯ সালে সম্রাট জাহাঙ্গীরের বার্ষিক পঞ্চাশ কোটী রাজস্ব আয় নির্ধারিত ছিল। তাঁদের আয় যেমন ছিল ব্যয়ও প্রচুর করতেন। তবে ব্যয়ের তালিকায় প্রধান খাত ছিল মোগল সম্রাটদের রাজ্যাভিষেকের অনুষ্ঠান। রাজ্যাভিষেকের বার্ষিকীও পালন করা হতো জাঁক জমকের সাথে। একটা হিসেব পাওয়া যায় ইতিহাস বিদ কাফি খার রচনা থেকে। তিনি জানান সম্রাট শাহজাহানের রাজ্যাভিষেকের বার্ষিকী পালনের ব্যয় ছিল এক কোটি ষাট লক্ষ টাকার উপরে। এছাড়াও জন্মবার্ষিকী পালন করা হতো। কেমন হতো ওই সব অনুষ্ঠান। ঠিক আছে তাহলে সম্রাট শাহজাহানের জন্মদিন কিভাবে পালিত হতো সেটা আমরা তুলে ধরি। তার আগে জেনে নেই সম্রাট শাহজাহান ১৫৯২ সালের ৬ জানুয়ারি জন্মগ্রহণ করেন। এবং তাঁর রাজত্বকালে তিনি এভাবে জন্মদিন পালন করতেন: “উষা সমাগমে দুর্গপ্রাকার হইতে শত কামান যুগপৎ গজ্জর্ন করিয়া পাদশাহের জন্মদিনের ঘোষণা করিত। তাহার পর হইতেই সমারোহের আরম্ভ। গৃহে গৃহে আনন্দকোলাহল, সুনির্ম্মিত প্রশস্ত রাজপথে নাগরিকগণের সুদৃশ্য বসনভূষণের শোভা, নগরের সর্ব্বত্র প্রমোদতরঙ্গ। কমনীয়কান্তি নর্ত্তকীর লাস্যলীলা ও বিচিত্র কৌতুরঙ্গে শীত ঋতুর স্বল্পায়ু দিবার অবসান হইত। অপরাহ্নে পাদশাহ রাজকুমার ও আমীর ওমরাহগণে পরিবৃত হইয়া মাতৃদর্শনে গমন করিতেন। তথা হইতে রাজপ্রাসাদে প্রত্যাবৃত্ত হইয়া শাহজাহান সমস্ত সভাসদকে মহাসমারোহে ভোজসভায় সম্মিলিত করিতেন। তাহার পর তিনি শোভা ও সম্পদের আধার একটী সুসজ্জিত কক্ষে গমন করিয়া রৌপ্য, মণি মুক্তা সংবলিত স্বর্ণ, মহার্হ ওষধি, দুষ্প্রাপ্য মশলা, স্বর্ণ রৌপ্য খচিত বসন ও সুস্বাদু মিষ্টান্ন দ্বারা ক্রমাম্বয়ে চারিবার ‘তৌল’ হইতেন। ‘তৌল’ ক্রিয়া সম্পন্ন হইলে পাদশাহ সমবেত দরিদ্রগণকে সেই দ্রব্যরাশি দান করিতেন।” ট্যাভারনিয়ার মন্তব্য করেছেন সম্রাট শাহজাহানের সুশাসনের ফলে রাজস্ব প্রচুর বেড়েছিল। রাজকোষে ও প্রচুর অর্থ জমা হয়েছিল। যার ফলে তিনি প্রিয়তমা পত্নী আর্জুমান্দ বানু যিনি মমতাজ মহল নামে পরিচিত ছিলেন তাঁর স্মৃতিতে কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে তাজমহল নির্মাণ করতে সক্ষম হয়েছিলেন।
শাসন ব্যবস্থার আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো বিচার ব্যবস্থা। চলো আমরা দেখে নেই মোগলদের বিচার ব্যবস্থা কেমন ছিল। ইতিহাসের বিক্ষিপ্ত ঘটনাগুলো এক জায়গা দাড় করলে দেখা যায় দোষী ব্যক্তিদের শাস্তি দেওয়া এবং নিরীহ প্রজাদের জান মালের নিরাপত্তা বিধান করতে মোগল সম্রাটগণ নিরপেক্ষ বিচারে সচেষ্ট ছিলেন। মোগল সম্রাটগণ অভিযুক্তদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতেন। মোগলদের বিচার কাঠামোতে গ্রাম পঞ্চায়েতকে অনেক ক্ষমতা দেয়া হয়েছিল। গ্রামের প্রধান ব্যক্তি ফৌজধারী বিচার ব্যবস্থার প্রধান ছিলেন। সকল রকমের বিরোধের মীমাংসা গ্রামেই হতো। একমাত্র সরকার, পরগণা, এবং সুবার বিচার ব্যবস্থা ছাড়া গ্রামের বিচার ব্যবস্থায় সম্রাটগণ হস্তক্ষেপ করেন নি। গ্রামের বিচারে কেউ অসন্ত্তষ্ট হলে কিংবা সকল প্রকার সাধারণ বিচারের ভার থাকত কাজীর উপরে। এভাবে গ্রাম বা পরগণার বিচার করতেন কাজী ই পরগণা, জেলার বিচার করতেন কাজী ই সরকার সুবার বিচার করতেন কাজী ই কুজাত এবং কেন্দ্রীয় বিচার করতেন সদর ই সুদূর বা প্রধান কাজী। মোগল বিচার ব্যবস্থায় কাজীরা অত্যন্ত নিরপেক্ষভাবে বিচার কাজ পরিচালনা করতেন। তাঁরা সাধারণত জুমা মসজিদের সামনে অথবা জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত কোন স্থানে আদালত বসাতেন। কাজীরা আইন শাস্ত্র সম্পর্কে যথেষ্ট পারদর্শী ছিলেন এবং স্থানীয় মুফতিগণ তাঁদের সাহায্য করতেন। কাজীদের অনেক সময় প্রাদেশিক শাসনকর্তারাও সমীহ করে চলতেন। তবে কাজীর অনুপস্থিতিতে স্থানীয় শিকদার, ফৌজদার এবং কোতোয়ালরাও বিচার করতে পারতেন। অনেক সময় বিচারপ্রার্থীগণ বিচারে অসন্তুষ্ট হলে কাজী ই কুজাত কিংবা সদর ই সুদূর বা কখনো মোগল সম্রাটের নিকট আপীল করতে পারতো। নানুভাই তখনো কি পুলিশ ছিল। সাফিরের প্রশ্ন শুনে নুহান হাসতে থাকে।
হাসির ব্যাপার না নানুভাই। যেখানে বিচার আছে সেখানে আইন থাকবে। যেখানে আইন আছে তা যাতে বে আইনী না হয় বা শৃংখলা যাতে থাকে তার জন্য লোকজন থাকবে। সুতরাং আইন শৃঙ্খলা দেখার জন্য তখনো পুলিশ ছিল। তাহলে শোনো পুলিশের কাজ কী ছিল। আইন শৃঙ্খলা রক্ষার ব্যাপারে পুলিশ ভূমিকা গ্রহণ করতো। পুলিশ অফিসারকে বলা হতো কোতোয়াল। শহরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় একজন ঘোড় সওয়ার এবং বিশ থেকে পচিশ জন বরকন্দাজের সমম্বয়ে কোতোয়ালের বাহিনী থাকত। কোতোয়ালরাও আদালত পরিচালনা করতো। তাদের আদালতকে বলা হতো ‘ছাবুত্রা’। এখানকার দিনের মতো তখনো পুলিশ বাহিনী রাতে সারা শহরে টহল দিত। প্রধান প্রধান সড়কগুলিতেও পাহাড়ার ব্যবস্থা ছিল। পুলিশ বাহিনী অপরাধ দমনের জন্য তদন্ত করে রিপোর্ট প্রদান করতেন। বিশেষ করে জনগণ যাতে নির্বিঘ্নে সরকারী রাস্তা দিয়ে চলাচল করতে পারে তার দায়িত্ব ছিল পুলিশ বাহিনীর উপর। ওই সময়ে রাস্তা ঘাট ছিল। অনেকটা বিস্ময়ের সঙ্গে প্রশ্ন করে নুহান।
হ্যা নানু ভাই রাস্তা ঘাট তো ছিলই আবার বড় বড় ব্রীজ বা পুলও তাঁরা নির্মাণ করেছিলেন। একটা রাস্তার কথা তো আমরা প্রায় সময়ই বলি সেটা হলো সড়ক ই আজম বা বাদশাহী সড়ক। এটাকে তোমরা গ্রান্ড ট্যাংক রোডের নামে চিনে থাকবে। এটি শেরশাহ নির্মাণ করেছিলেন। কিন্তু মোগল আমলে সড়ক ই আজম মোগল সম্রাটরা গুরুত্ব দিয়ে রক্ষণাবেক্ষণ করতেন। এই রাস্তার দৈর্ঘ্য কত ছিল জানো। আড়াই হাজার কিলোমিটার। যা আজকের বাংলাদেশের সোনারগাঁও থেকে ভারতের আগ্রা, দিল্লি ও পাকিস্তানের লাহোর হয়ে মুলতান পযন্ত বিস্তৃত ছিল। এই সড়ক ই আজমে যাতে চুরি ডাকাতি না হয় তার জন্য মোগল পুলিশরা তৎপর থাকতো। সম্রাট আওরঙ্গজেবের সময় পাঁচশ ডাকাতকে গলা কেটে হত্যা করার আদেশ দিয়েছিলেন, যাতে কেউ আর ডাকাতি করার সাহস না পায়।
মোগল সম্রাটগণ তাঁদের দৈনন্দিন কাজ শুরু করতেন বিচার কাজ করার মাধ্যমে। ঝরোকা দর্শন, বিচার ঘন্টা বাজানো এগুলি ছিল বিচার ব্যবস্থায় সম্রাটের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য। দিওয়ান ই আম এবং দিওয়ান ই খাসে বসে যেগুলোর নিষ্পত্তি করতেন সম্রাট স্বয়ং। সম্রাট আকবরের থেকে একটা দৃষ্টান্ত দিলেই বিষয়টা পরিস্কার হবে। আইন ই আকবরীতে উল্লেখ পাওয়া যায় “… তিনি প্রায়ই দৌলতখানার পাশে এসে কারও মধ্যস্থতা ছাড়াই অভিযোগকারীর অভিযোগনামা গ্রহণ করতেন এবং বিচার কাজ সম্পন্ন করতেন। চব্বিশ ঘন্টার মধ্যে তিনি দুবার সকলের সামনে দেখা দিতেন। প্রাত: কালীন ইবাদতের পর তিনি ঝরোকা থেকে সর্বস্তরের মানুষের সামনে উপস্থিত হতেন। সাধারণত এ সময় তাঁর কাছে আবেদন পত্র পেশ করা হত। … তিনি ন্যায় বিচারের পক্ষপাতী ছিলেন এবং নিজের সুখের মত প্রজাগণের সুখ স্বাচ্ছন্দ্যের প্রতিও বিশেষ যত্নবান ছিলেন। কোন ঘটনা শ্রবণ করার সময় তিনি বিরক্ত হতেন না। এই উন্মুক্ত দরবারে আইন বিভাগের অফিসারগণও তাঁদের রিপোর্ট পেশ করতেন।”
মোগলদের দন্ডবিধি অনেক কঠোর ছিল। শাস্তির মধ্যে ছিল শূলে চড়ানো, হাতির পায়ে পিষ্ট করে মারা, গলা টিপে মারা, বিষ প্রয়োগে মারা এ রকম আরো প্রথা ছিল। মোট কথা অপরাধীদের যে শাস্তি দেয়া হতো তা ছিল কঠোর ও দৃষ্টান্তমূলক। নারী ধর্ষণ ও ব্যভিচারের শাস্তি ছিল ফাঁসি দিয়ে মৃত্যুদন্ড ঘটানো। সম্রাট জাহাঙ্গীরের রাজত্বকালের বিচার প্রত্যক্ষ করে উইলিয়াম ফিন্চ ১৬১১ সালে লেখেন “আগ্রা দুর্গের চারটি গেট ছিল। পশ্চিমে বাজারের দিকের গেটটিকে বলা হত কাছারী গেট। এই গেটের মধ্যে প্রধান বিচারকের আসন ছিল। আসনের অপরদিকে কাছারী। এখানে সম্রাটের উজীর প্রতিদিন সকালে তিনি ঘন্টা ধরে বসতেন। … সম্রাট বিচার করতেন এবং প্রাণদন্ড প্রত্যক্ষ করতেন।” আপিল বিচারগুলো সম্রাটরা কিভাবে করতেন তার বিবরণ পাওয়া যায় বারনিয়ারের বিবরণে। সম্রাট আওরঙ্গজেবের আপীল শুনানীর বিবরণ তুলে ধরে তিনি লিখেছেন, “সাধারণ হল ঘর থেকে সমস্ত দরখাস্ত এক সাথে সম্রাটের নিকট এনে তাঁকে একে একে পড়ে শোনানো হত। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে সম্রাটের সম্মুখে হাযির করা হত এবং সম্রাট নিজে তাকে জেরা করতেন এবং তৎক্ষণাৎ তার অভিযোগের বিচার করা হত। সপ্তাহের আর একদিন দু’ ঘন্টা যাবত সম্রাট নিম্ন কর্তৃপক্ষ কর্তৃক আদেশ দেয়া মামলার মধ্য থেকে দশটি মামলা সম্পর্কে মতামত জানাতেন।” এই যে মোগলদের শাসন ব্যবস্থার রীতি নীতি গুলো আমরা জানলাম তা থেকে বোঝা গেল মোগল সাম্রাজ্যের বিস্তৃতি যেমন হয়েছিল তেমনই ভারতবর্ষে শান্তি স্থাপিত হয়েছিল। দেশের উৎপাদন ক্ষমতা বৃদ্ধি পেয়েছিল, স্বচ্ছলতা বিরাজ করছিল। সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে মোগল সাম্রাজ্যের শেষদিকে সাম্রাজ্যের জনসংখ্যা ছিল ১৫০ মিলিয়নের বেশি যা তৎকালীন পৃথিবীর জনসংখ্যার প্রায় এক চতুর্থাংশ এবং জিডিপি ছিল ৯০ বিলিয়ন ডলারের বেশি।
তাহলে বুঝতেই পারছো মোগলরা কত বড়ো মাপের শাসক ছিলেন। এই বলে নানু ভাই বললেন তোমরা আরো বড় হলে ইতিহাসের এ রকম আরো ঘটনা জানতে পারবে।
লেখক: বাংলাদেশের পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপ-উপাচার্য।
Anim pariatur cliche reprehenderit, enim eiusmod high life accusamus terry richardson ad squid. 3 wolf moon officia aute, non cupidatat skateboard dolor brunch. Food truck quinoa nesciunt laborum eiusmod. Brunch 3 wolf moon tempor, sunt aliqua put a bird on it squid single-origin coffee nulla assumenda shoreditch et. Nihil anim keffiyeh helvetica, craft beer labore wes anderson cred nesciunt sapiente ea proident. Ad vegan excepteur butcher vice lomo. Leggings occaecat craft beer farm-to-table, raw denim aesthetic synth nesciunt you probably haven't heard of them accusamus labore sustainable VHS.
Anim pariatur cliche reprehenderit, enim eiusmod high life accusamus terry richardson ad squid. 3 wolf moon officia aute, non cupidatat skateboard dolor brunch. Food truck quinoa nesciunt laborum eiusmod. Brunch 3 wolf moon tempor, sunt aliqua put a bird on it squid single-origin coffee nulla assumenda shoreditch et. Nihil anim keffiyeh helvetica, craft beer labore wes anderson cred nesciunt sapiente ea proident. Ad vegan excepteur butcher vice lomo. Leggings occaecat craft beer farm-to-table, raw denim aesthetic synth nesciunt you probably haven't heard of them accusamus labore sustainable VHS.
Anim pariatur cliche reprehenderit, enim eiusmod high life accusamus terry richardson ad squid. 3 wolf moon officia aute, non cupidatat skateboard dolor brunch. Food truck quinoa nesciunt laborum eiusmod. Brunch 3 wolf moon tempor, sunt aliqua put a bird on it squid single-origin coffee nulla assumenda shoreditch et. Nihil anim keffiyeh helvetica, craft beer labore wes anderson cred nesciunt sapiente ea proident. Ad vegan excepteur butcher vice lomo. Leggings occaecat craft beer farm-to-table, raw denim aesthetic synth nesciunt you probably haven't heard of them accusamus labore sustainable VHS.