গল্পে গল্পে ইতিহাস শাহজাদপুর রবীন্দ্র-স্মৃতি জাদুঘর

Bangladesh
history of shahjadpur rabindra smriti museum

ড. মো. আনোয়ারুল ইসলাম

করতোয়া নদীর কূল ঘেঁষে ছবির মতো সাজানো গোছানো গ্রামীণ শহর শাহজাদপুর। ভালোবেসে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর লিখতেন সাজাদপুর। এখানকার মানুষগুলোর উচ্চারণে স কখনো কখনো হ হয়ে গিয়ে হয়ে যায় হাজাদপুর। শুধু তাঁতের শাড়ী কাপড়ের জন্যই নয়, শাহজাদপুরের মিষ্টি, দই, ঘি এর জন্য বিখ্যাত এই জনপদটি। শাহজাদপুরের দক্ষিণ দিকে বড়াল নদীর পাড়েই গড়ে উঠেছে বাঘাবাড়ী নদী বন্দর, মিল্ক ভিটা সহ অনেক সরকারী বেসরকারী শিল্প প্রতিষ্ঠান যা উত্তরবঙ্গের লাইফ লাইন হিসেবে পরিচিত।

স্বাধীনতাত্তোর বাংলাদেশের একমাত্র কাপড়ের হাট ছিল শাহজাদপুরেই। ফলে শুধু উত্তরবঙ্গ নয়, সমগ্র বাংলাদেশ থেকে বড় বড় ব্যবসায়ীরা অন্তত: সপ্তাহে দুইদিন এখানে অবস্থান করতেন। ফলে এ অঞ্চলের মানুষের বিনোদনের একটা বড় অংশ জুড়ে ছিল শাহজাদপুর। এলাকাবাসীর কাছে শাহজাদপুরের বাড়তি আকর্ষণ ইন্দো- ইউরোপীয় স্থাপত্যে নির্মিত বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের দোতলা কাছারি বাড়ি।

ঈদের ছুটির কারণে রবীন্দ্র কাছারি বাড়ির মুলফটকেই বিজ্ঞপ্তি টানানো। দর্শনার্থীদের যদিও ভীড় কিন্তু কিছুই করার নাই। ঈদের ছুটি এবং বিয়ের নিমন্ত্রণ রক্ষা করতে আমরাও দল বেঁধে টুরে বেরিয়েছি। আমার পরিবারের সঙ্গে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের উপপরিচালক ড. আতাউর রহমান এর পরিবার। শাহজাদপুর কুঠিবাড়ি দিয়েই আমাদের প্রত্মভ্রমণ শুরু। রবীন্দ্র কাছারীবাড়ীর গেটে যখন পৌছলাম তখন বেলা বারোটার মতো বাজে। হাটের দিন হলেও ঈদের পর ভীড় নেই বললেই চলে। যেটুকু ভীড় এই কাছারি বাড়ীর গেটে। আমাদের জন্য গেটে অপেক্ষমাণ ছিলেন কাস্টাডিয়ান হালিমা সাহেব। ফুলের তোড়া দিয়ে প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতরের উপ পরিচালকের সঙ্গে আমরাও লাল গোলাপের শুভেচ্ছা পেলাম।
জিসান খুব আগ্রহ নিয়ে কাছারিবাড়িটি দেখতে থাকে। ফুলের বাগান পেরিয়ে প্রকান্ড নিমগাছটির নিচে দাঁড়িয়ে আমিও এর সৌন্দয উপভোগ করার চেষ্টা করছি। জিসানকে বললাম এই বাড়িটিতে এক সময় নীলকর সাহেবেরা থাকতেন।
তাহলে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কিভাবে এই বাড়িতে এলেন বা মালিক হলেন ওর বিস্ময়ভরা প্রশ্ন। আমি বললাম বলোতো রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পিতার নাম এবং দাদার নাম কি? ও বললো কেন বাবা মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং দাদা হলেন প্রিন্স দ্বারকানাথ ঠাকুর। ভেরি গুড। খুব সুন্দর বলেছো। তাহলে আমাদের প্রিন্স দ্বারকানাথ ঠাকুর থেকেই শুরু করতে হবে। শোনো প্রিন্স দ্বারকনাথ ঠাকুর ছিলেন উনিশ শতকের একজন বিশিষ্ট ব্যবসায়ী, বিনিয়োগকারী ও উদ্যোক্তা। জাহাজ ব্যবসা, রপ্তানি বাণিজ্য, বীমা, ব্যাংকিং, কয়লা খনি, নীলচাষ, শহরের গৃহায়ণ প্রকল্প এবং জমিদারি তালুকে অর্থ বিনিয়োগ করেন। ১৮৪০ সালের মধ্যে তাঁর ব্যবসার ব্যাপক প্রসার ঘটে। তাঁর ব্যবসার তদারকি করার জন্য তিনি কয়েকজন ইউরোপীয় ম্যানেজার নিযুক্ত করেন। তাহলে বুঝতেই পারছো কতো ধনাঢ্য ব্যক্তি ছিলেন। তিনি কিন্তু একবার ইংল্যান্ডে গিয়ে রাণীর সঙ্গেও দেখা করেছিলেন। ১৮৪২ সালের ৮ জুলাই রানী তাকে নৈশভোজে আপ্যায়ন করেন। দ্বারকানাথ সম্পর্কে রানী তার ডায়রিতে লেখেন: “ব্রাক্ষণ ভদ্রলোক বেশ ভাল ইংরেজি বলেন এবং তিনি একজন বুদ্ধিমান ও চমৎকার মানুষ।”
হ্যাঁ বুঝলাম প্রিন্স দ্বারকানাথ ঠাকুরের সঙ্গে ইংরেজদের খুবই হ্নদ্যতাপূর্ণ সম্পর্ক ছিল। কিন্তু তিনি এই বাড়ির মালিক কিভাবে হলেন। জিসানের শোনার আগ্রহ বাড়তে থাকে।
সেটাই তো বলছি। তাহলে এখন একজন জমিদারের গল্প বলি। তাঁর নাম রাণী ভবানী। তিনি এই এলাকারও জমিদার ছিলেন। বাংলাদেশের প্রায় অর্ধাংশই জুড়ে ছিল এ জমিদারীর বিস্তৃতি। কোম্পানির রেভেন্যু কালেকটর জেমস গ্রাণ্ট বলেছেন- “Rajesahy, the most unwieldy and extensive zemindary of Bengal or perhaps in India” . তাঁর এই বিশাল জমিদারী থেকে রাজস্ব আয় হতো প্রায় দেড় কোটি টাকা। রাজস্বের অর্ধেক তিনি দিতেন নবাব সরকারে, আর বাকী অর্ধেক ব্যয় করতেন নানারকম জনহিতকর ও ধর্মীয় কাজে৷ কিন্তু শেষ পযন্ত তাঁর জমিদারী টিকে থাকেনি। এতো ধনী হওয়া সত্ত্বেও শেষ জীবনে তিনি নি: স্ব হয়ে পড়েছিলেন। সে গল্প আরো পরে করব। তার আগে চলো জেনে নেই তখন বাংলায় কারা শাসন করতো।
তোমার ইতিহাস বইয়ে পড়েছো ১৭৫৭ সালে পলাশী যুদ্ধের পর ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানী বাংলায় কোম্পানী শাসন শুরু করেন। তাদের মূল উদ্দেশ্য ছিল বাংলা থেকে রাজস্ব সংগ্রহ করা। ১৭৯৩ সালে তারা চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত করে রাজস্ব বৃদ্ধির লক্ষ্যে। ওই সময় বাংলায় অনেক বড় বড় জমিদার ছিল তাদেরকে সূযাস্ত আইনের আওতায় এনে বলা হলো রাজস্ব জমা দেওয়ার শেষ দিন সন্ধ্যার পূর্বে কোন মহালের টাকা জমা না পড়লে, সেই মহালকে নিলামে চড়ানো হত; অনাদায়, অনাবৃষ্টি, দুৰ্ভক্ষি প্রভৃতি কোন আছিলাই চলত না। ফলে অনেক জমিদারদের জমিদারী বিলুপ্তির পথে চলে যায়।
তোমরা জান কোম্পানী শাসকেরা বাংলায় নতুন রাজস্ব ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার চেষ্টা চালান। নানা রকমের কৌশল প্রয়োগ করেন জমি বন্দোবস্ত দেবার নানা রকমের ফন্দি ফিকির। শেষ পযন্ত তা স্থায়ী হয় চিরস্থায়ী বন্দোবস্তে। যেটাকে আমরা খুব গুরুত্বের সঙ্গে বলি ১৭৯৩ সালের লর্ড কর্ণওয়ালিসের চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি নির্ধারিত মূল্যের রাজস্ব ধায করে যা প্রত্যেক জমিদারকে পরিশোধ করতে হতো। শুধু তাই নয় সূর্যাস্ত আইনের আওতায় নির্দিষ্ট দিনের মধ্যে যেসব জমিদাররা নির্ধারিত মূল্যের রাজস্ব পরিশোধ করতে পারত না, সেসব রাজস্ব আদায় করার জন্য তাদের জমিদারি নিলাম করা হতো।
জিসান আমার দিকে তাকিয়ে বলে বলো কী? এতো কঠিন অবস্থা। তবে কোনো জমিদারী কি নিলামে চলে গিয়েছিল?
হ্যা অনেক জমিদারীই নিলামে চলে গিয়েছিল। যেমন প্রথম নিলাম হয়েছিল বর্ধমানে। ১৭৯৭ সালে বর্ধমানের রাজার দখলে থাকা বেশ কিছু মহল কোম্পানি বিক্রি করে দিয়েছিল। ঠিক একইভাবে রাজস্ব বকেয়ার সূত্র ধরে রাণী ভবানীর জমিদারী বা মহলগুলোও কোম্পানীর শাসকেরা একে একে নিলাম করতে থাকে।
রাণী ভবানীর জমিদারীর অংশসমূহ কিনে নিয়ে অনেকেই নতুন জমিদারী প্রতিষ্ঠা করে বসল। এর মধ্যে কান্তবাবু প্রতিষ্ঠিত করলেন কাশিমবাজার জমিদারী, গঙ্গগোবিন্দ সিংহ হলেন পাইকপাড়ার জমিদার, দেবী সিংহ হলেন নসীপুরের জমিদার, দয়ারাম প্রতিষ্ঠা করলেন দিঘাপতিয়ার জমিদারী। শেষ পর্যন্ত রাণী ভবানী এমন নিঃস্ব হয়ে গেলেন যে তাঁকে নির্ভর করতে হল কোম্পানি প্রদত্ত মাসিক এক হাজার টাকা বৃত্তির ওপর।
তাহলে বুঝতেই পারছো জমিদারী কেন নিলাম হয়েছিল। ঠিক এভাবেই ১৮৪০ সালে তিন তৌজির অন্তর্গত ডিহি শাহ্জাদপুরের জমিদারি এক সময় নিলামে উঠলে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের দাদা প্রিন্স দ্বারকানাথ ঠাকুর ১৩ টাকা ১০ আনায় এই জমিদারি কিনে নেন। এর সাথে সাথে কাছারিবাড়িটিও ঠাকুর পরিবারের হাতে আসে। একসময় কাছারিবাড়িটিতে নীলকর সাহেবেরা থাকতেন। একারণে কুঠিবাড়ি হিসেবেও এলাকায় এটি পরিচিত।
প্রিন্স দ্বারকানাথ ঠাকুর যেহেতু জমিদারী কিনেছেন, সুতরাং জমিদারীতো দেখতেই হবে। পারিবারিকসূত্রে জমিদারীর কাজ তদারক করার জন্য রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শাহজাদপুরে তাঁর আগমন ও অবস্থান। ১৮৯০ সালে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর জমিদারি পরিদর্শনে প্রথম শাহজাদপুরে আসেন। এরপর ১৮৯৬ সাল পর্যন্ত কবিগুরু মাঝে মাঝেই জমিদারি দেখাশুনার কাজে শাহজাদপুরে এসেছেন এবং অবস্থান করেছেন। কিন্তু ঠাকুর পরিবারের ভাগাভাগির কারণে শাহজাদপুরের জমিদারী চলে যায় অন্য শরিকদের হাতে। কবিগুরুর ভাগে পড়ে পতিসরের জমিদারি। ফলে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর শাহজাদপুর আর আসেন নি। জমিদারী সূত্রে পূর্ব বাংলার শিলাইদহ, পতিসরে অবস্থান করলেও শাহজাদপুরের আকর্ষণ ছিল কবির কাছে খুবই বেশী।
জমিদারীও যে নিলাম হয় এটা শুনে জিসান মনে হয় একটু কষ্ট পেলো। ওর আগ্রহ দেখে বললাম ঠিক আছে জমিদারদের কথা না হয় অন্য দিন বলবো। আমরা যেদিন নাটোর রাণী ভবানীর রাজবাড়ী দেখতে যাব, সেদিন তাঁর আরো গল্প বলবো। আজ আমরা আপাতত: রবীন্দ্র কাছারী বাড়ীই দেখি এই বলে আমরা কাছারী বাড়ীর ভিতরে চলে গেলাম।
শাহ্জাদপুরের এ কাছারি বাড়িটি ইন্দো ইউরোপীয় স্থাপত্যশৈলীতে নির্মিত ৩১ দরজা বিশিষ্ট একটি দোতলা ভবন। প্রায় দশ বিঘা জমির উপরে ভবনটির দৈর্ঘ্য ২৬ দশমিক ৮৫ মিটার ও প্রস্থ ১০ দশমিক ২০ মিটার। উচ্চতায় ৮ দশমিক ৭৪ মিটার। ভবনটির প্রতি তলায় সিঁড়িঘর ব্যতীত বিভিন্ন আকারের সাতটি ঘর রয়েছে। ভবনটির উত্তর-দক্ষিণে একই মাপের বারান্দাও আছে।
এরপর আমরা প্রতিটা কক্ষে গিয়ে দেখলাম রবীন্দ্রনাথের পান্ডুলিপি, পান্ডুলিপির ওপর তাঁর চিত্রাঙ্কন অনুশীলন এবং অনেক চিত্রকর্মের ছবি সেই সঙ্গে তাঁর ব্যবহৃত খাট, সোফা, আলনা, আরাম কেদারা, ব্রোঞ্জ নির্মিত দ্রব্যসামগ্রী সুন্দর করে সাজিয়ে রাখা হয়েছে।
এসব যখন দেখছি তখন জিসানই প্রশ্নটা করে বসলো। আচ্ছা আমি একটা জিনিস ভেবে পাচ্ছি না। ১৮৯০ থেকে ১৮৯৬ এই ছয় বছর রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এখানে এসেছেন এবং থেকেছেন। সেই হিসেবে দর্শনীয় বস্তু এতো কম কেন। আমি বললাম ঠিক ধরেছো। দেখো দীর্ঘদিন এই কাচারী বাড়িটি অযত্ন এবং অবহেলায় পড়েছিল। পাকিস্তান শাসনামলেতো রবীন্দ্রনাথকে নিষিদ্ধ পযন্ত করা হয়েছিল। ১৯৪৭ সালে দেশবিভাগের পর বাড়িটি পাকিস্তান সরকার প্রথমে শত্রু সম্পত্তি হিসেবে এবং পরে খাস খতিয়ানে অন্তর্ভুক্ত করে। পরে বাড়িটি শাহজাদপুর ভূমি অফিসকে বরাদ্দ দেয়া হয়। ফলে ভবনের নিচ তলা শাহজাদপুর তহশিল অফিস হিসেবে ব্যবহৃত হতে থাকে। উপর তলায় কবিগুরু যেখানে থাকতেন সেটি নায়েব তহশিলদারদের থাকা-খাওয়া ও রান্নাঘর হিসেবে ব্যবহৃত হয়। চিন্তা করে দেখো কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ব্যবহার করা জিনিসপত্র ব্যবহার করেছে ভূমি অফিসের পিওন, দারোয়ান এরা।
জিসান অবাক হয়ে আমার মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে। আমি বললাম দীর্ঘদিন শাহজাদপুরের পোস্ট অফিসের কাযালয় ছিল নীচতলার ঘরটিতে। তাহলে বুঝতেই পারছো। একদিকে ভূমি অফিস, অন্যদিকে পোস্ট অফিস। এই দুইয়ে মিলে রবীন্দ্র স্মৃতি আর কতটুকুই বা থাকে। তারপরেও আজ আমরা যেটুকু দেখতে পাচ্ছি সেটা উদ্ধার করা সম্ভব হয় সাংবাদিকদের কারণে। বিশেষ করে সংবাদ পত্রিকায় রিপোর্ট প্রকাশের পর হাইকোর্টের নির্দেশে ঠাকুরবাড়িটি প্রত্নত্তত্ব বিভাগকে হস্তান্তর করা হয়। প্রত্নত্তত্ব বিভাগ পরে রবীন্দ্র কুঠিবাড়িকে ‘রবীন্দ্রস্মৃতি জাদুঘর’ হিসেবে ঘোষণা দিলেন।
জিসান এসব গল্প শুনতে শুনতে বেশ বিস্ময় বোধ করছিল। এবার ও বলল রবীন্দ্র স্মৃতি না হয় যেটুকু পেয়েছি সেটা না হয় হলো। কিন্তু রবীন্দ্রনাথের সাহিত্যে শাহজাদপুরের গুরুত্ব কতটুকু।
আমি ওর প্রশ্নের ধরণ দেখে বুঝলাম আজকালকার ছেলেমেয়েরা অনেক স্মার্ট। ওকে বললাম দেখো তুমিও অনেক গৌরববোধ করবে যখন জানবে তোমার পড়া অনেক গল্প, কবিতা, গান কবি এখানে বসেই রচনা করেছেন। যেমন কবি শাহজাদপুরে বসেই লিখেছেন সোনার তরী, চিত্রা, চৈতালি, কল্পনা কাব্যের মত অনেকগুলো কবিতা এবং পোস্টমাস্টার, ক্ষুধিত পাষাণ, ছুটি, সমাপ্তি সহ অনেক গল্প, ছিন্ন পত্রাবলী আরো অনেক গান রবীন্দ্রসংগীতগুলোর বিশেষ করে সবারই ভালোলাগা অনেক রবীন্দ্র সংগীত এখানে রচনা করেছেন।
কবি শাহজাদপুরকে কিভাবে কিংবা কিচোখে দেখেছেন সেটাও তাঁর লেখনীতে ধরা পড়েছে। যেমন ১৮৯২ সালের ৫ই জুলাই তিনি ছিন্নপত্রাবলীতে লিখলেন এভাবে: ‘ ‘আজ সকালে একটা সানাইয়েতে ভৈরবী বাজাচ্ছিল, এমনি অতিরিক্ত মিষ্টি লাগছিল যে সে আর কী বলব- আমার চোখের সামনেকার শূন্য আকাশ এবং বাতাস পর্যমত্ম একটা অমত্মরনিরম্নদ্ধ ক্রন্দনের আবেগে যেন স্ফীত হয়ে উঠেছিল- বড়ো কাতর কিন্তু বড়ো সুন্দর- সেই সুরটাই গলায় কেন যে তেমন করে আসে না বুঝতে পারি নে।’ ’
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর যখন শাহজাদপুরে আসেন তখন এটি ছিল গ্রাম। গ্রামীণ জীবনের অভিজ্ঞতা প্রতিফলিত হয়েছে গল্পগুচ্ছের বিভিন্ন চরিত্রে। গ্রামীণ প্রেক্ষা পট, জনজীবন কখনও কখনও উপজীব্য হয়ে উঠেছে এসব গল্পের পটভূমিতে। ছিন্নপত্রাবলীতেও তিনি শাহজাদপুরের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেছেন। ১৮৯৫ সালের ৫ই জুলাই তারিখে কবি লিখলেন, ‘ ‘কাল অনেক রাত পর্যন্ত নহবতে কীর্তনের সুর বাজিয়েছিল; সে বড়ো চমৎকার লাগছিল, আর ঠিক এই পাড়াগাঁয়ের উপযুক্ত হয়েছিল- যেমন সাদাসিধে তেমনি সকরুণ।’ ’ শিলাইদহ থেকে কবি এখানে আসতেন নিজস্ব বোট অর্থাৎ বিশাল বজরা নৌকা নিয়ে। পদ্মার চর হয়ে যমুনা ঘুরে করতোয়া হয়ে আসতেন শাহজাদপুরে। চিত্রা নামে তার আরো একটি বোট ছিল। সেটিও তিনি মাঝেমধ্যে ব্যবহার করতেন। এখানে বিশ্ব কবির অনেক স্মৃতি রয়েছে। সনীতি সঞ্চারিনি নামক একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে তিনি নিয়মিত অর্থ সাহায্য করতেন এবং যোগদান করতেন এর নানা অনুষ্ঠানে। অনেক স্কুল পরিদর্শন করেছেন। পরিদর্শক বইতে মন্তব্য এবং স্বাক্ষর করেছেন। কাচারী বাড়ি সংলগ্ন এলাকাটি দ্বারিয়াপুর নামটি বহন করছে কবিগুরুর দাদা প্রিন্স দ্বারকানাথ ঠাকুরের নামেই।
শাহজাদপুরের রবীন্দ্র কাছারী বাড়ির প্রাণহীন দালানে কি আছে কি নেই সেই প্রশ্নটি তোলা থাকুক। এটি যে আমাদের বাঙালির জ্ঞানের সুতিকাগার সেটাতো অস্বীকার করার উপায় নাই। গভীর অধ্যাত্মবিশ্বাসী রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের চিন্তাভাবনা এবং কর্মকান্ডের ফসলই তো প্রতিটি বাঙালির মনে এবং মননে। শাহজাদপুরের চুন-সুরকির সীমিত আভিজাত্যে আজও দাঁড়িয়ে বাঙালির এই হৃদপদ্ম। এখানে এলেই যেন আমি শুনতে পাই আমার জাতীয় সংগীত ‘আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি’। যেখানে কোনও ভেদ নেই, সূর্যের মতো এই আলো সব্বার!
আনমনে যখন এসব চিন্তা করছি। হঠাৎই খেয়াল করলাম দলের সবাই চিৎকার চেঁচামচি আর হৈ হুল্লোড়ে ছবি তুলছে। আমিও সঙ্গী হলাম। পরক্ষণেই আমরা বেড়িয়ে পড়লাম শাহজাদপুর থেকে। মেরীও গুনগুন করে গাইতে থাকলো ‘ভালোবেসে সখী নিভৃত যতনে, আমার নামটি লিখ, তোমার মনেরও মন্দিরে’। যে গানটি কবিগুরু শাহজাদপুরেই লিখেছিলেন।

লেখক: বাংলাদেশের পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপ-উপাচার্য।

Anim pariatur cliche reprehenderit, enim eiusmod high life accusamus terry richardson ad squid. 3 wolf moon officia aute, non cupidatat skateboard dolor brunch. Food truck quinoa nesciunt laborum eiusmod. Brunch 3 wolf moon tempor, sunt aliqua put a bird on it squid single-origin coffee nulla assumenda shoreditch et. Nihil anim keffiyeh helvetica, craft beer labore wes anderson cred nesciunt sapiente ea proident. Ad vegan excepteur butcher vice lomo. Leggings occaecat craft beer farm-to-table, raw denim aesthetic synth nesciunt you probably haven't heard of them accusamus labore sustainable VHS.
Anim pariatur cliche reprehenderit, enim eiusmod high life accusamus terry richardson ad squid. 3 wolf moon officia aute, non cupidatat skateboard dolor brunch. Food truck quinoa nesciunt laborum eiusmod. Brunch 3 wolf moon tempor, sunt aliqua put a bird on it squid single-origin coffee nulla assumenda shoreditch et. Nihil anim keffiyeh helvetica, craft beer labore wes anderson cred nesciunt sapiente ea proident. Ad vegan excepteur butcher vice lomo. Leggings occaecat craft beer farm-to-table, raw denim aesthetic synth nesciunt you probably haven't heard of them accusamus labore sustainable VHS.
Anim pariatur cliche reprehenderit, enim eiusmod high life accusamus terry richardson ad squid. 3 wolf moon officia aute, non cupidatat skateboard dolor brunch. Food truck quinoa nesciunt laborum eiusmod. Brunch 3 wolf moon tempor, sunt aliqua put a bird on it squid single-origin coffee nulla assumenda shoreditch et. Nihil anim keffiyeh helvetica, craft beer labore wes anderson cred nesciunt sapiente ea proident. Ad vegan excepteur butcher vice lomo. Leggings occaecat craft beer farm-to-table, raw denim aesthetic synth nesciunt you probably haven't heard of them accusamus labore sustainable VHS.