রাণী রাসমণির দুর্গাপুজো

Festival
durga puja of rani rashmoni
ঠিকানা: শহর কলকাতার জানবাজার। এখানেই দক্ষিণেশ্বরের প্রতিষ্ঠাত্রী জমিদার রাণী রাসমণির সাত মহলা বসতবাড়ি। প্রায় শ’ তিনেক ঘর নিয়ে তৈরি এই বাড়িতেই দুর্গাদালান। আর সেখানেই খ্রিস্টিয় ঊনবিংশ শতাব্দীতে বাংলার নবজাগরণের সময় ভক্তি-নিষ্ঠায় অনুষ্ঠিত হয়েছে অকাল বোধনের দুর্গাপুজো। কলকাতার ধনীদের ঠাকুর দালানে যখন চলছে দুর্গোৎসবের নামে ব্রিটিশ সাহেব ভজনা, তখন সম্পূর্ণ উল্টোছবি রাণী রাসমণির জানবাজারের বাড়িতে। সেখানে তখন আচার মেনে চলছে সত্যিকারের মাতৃ আরাধনা। আর সেই পুজো দেখতে আসছেন শ্রীরামকৃষ্ণ, স্বামী বিবেকানন্দ, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ‍্যাসাগর, নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসু, রাজা রামমোহন রায়ের মতো বিশিষ্টজনেরা। নাটোরের জমিদারের দেওয়ান প্রীতরাম দাস ১৮০০ খ্রিস্টাব্দে সেই জমিদারির কিছু অংশ নিলামে কিনে নেন। এভাবেই জানবাজার জমিদার বাড়ির পত্তন হয়।
১৮০৫ খ্রিস্টাব্দে প্রীতরাম দাস এই জানবাজার বাড়িটির নির্মাণ কাজ শুরু করেন। নির্মাণ কাজ শেষ হয় ১৮২০ খ্রিস্টাব্দে। খরচ হয়েছিল তখনকার দিনে ২৫ লক্ষ টাকা। সাত মহলা বাড়ির মধ্যেই একটি পুকুর, ৬ টি উঠোন, শ’ তিনেক ঘর এবং তার সঙ্গে ঠাকুর ঘর, নাটমন্দির, দেওয়ানখানা, কাছারি ঘর, আস্তাবল, গোশালা, ফুলের বাগান। “জান্ “(Jaun) নামে এক ব্রিটিশ সাহেবের নাম থেকেই এলাকার নাম হয় “জানবাজার।”
প্রীতরাম ছিলেন রাণী রাসমণির শ্বশুরমশাই। তাঁর ছোট ছেলে রাজচন্দ্র দাসের সঙ্গে ১৮০৪ খ্রিস্টাব্দের ২১ শে এপ্রিল, বৃহস্পতিবার (৮ই বৈশাখ, ১২১১ বঙ্গাব্দ) বিয়ে হয়েছিল হালিশহরের হরেকৃষ্ণ দাস ও রামপ্রিয়া দেবীর মেয়ে রাসমণির। পালরাজ কুমারপালের নাম অনুসারে তখন হালিশহরের নাম ছিল “কুমারহট্ট” এবং এটি হুগলি জেলার অন্তর্গত ছিল। ১৮৩৬ খ্রিস্টাব্দে মারা যান স্বামী রাজচন্দ্র। সেরিব্রাল স্ট্রোকে স্বামীর অকাল প্রয়াণের পর জমিদারীর হাল ধরেন রাণী রাসমণি। তাঁর জমিদারীর কাজের শিলমোহরে লেখা থাকতো “শ্রীরাষমণী দাশী।”
বিয়ের দু’ বছর পর মা হোন রাণী রাসমণি। রাণী ও রাজচন্দ্রের কোনো পুত্র সন্তান ছিল না। তাঁদের চার মেয়ে— পদ্মমণি, কুমারী, করুণাময়ী ও জগদম্বা। পদ্মমণির জন্ম ১৮০৬ খ্রিস্টাব্দের ৪ ঠা অক্টোবর, মেজ মেয়ে কুমারীর জন্ম ১৮১১ খ্রিস্টাব্দে, সেজ করুণাময়ীর জন্ম ১৮১৭ খ্রিস্টাব্দে, ছোট মেয়ে জগদম্বার জন্ম ১৮২৩ খ্রিস্টাব্দে।
বড়ো মেয়ে পদ্মমণির সঙ্গে বিয়ে হয় উত্তর চব্বিশ পরগণার সিঁথি গ্রামের সম্ভ্রান্ত পরিবারের ছেলে রামচন্দ্র দাসের, মেজ কুমারীর সঙ্গে কলকাতা চৌরঙ্গীর প‍্যারীমোহন চৌধুরীর, সেজ করুণাময়ীর সঙ্গে মথুরামোহন বিশ্বাসের। মথুরামোহনের পৈতৃক বাড়ি ছিল উত্তর চব্বিশ পরগণা জেলার বসিরহাট মহকুমার স্বরূপনগর থানার বিথারী গ্রাম। আবার তাঁর পূর্বপুরুষের আদি বাড়ি ছিল বর্ধমান। মথুরামোহন ছিলেন কলকাতা জোড়াসাঁকো ঠাকুর বাড়ির মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের সহপাঠী। অন্দরমহলে তিনি পরিচিত ছিলেন “সেজবাবু” নামে। বিয়ের দু’ বছর পর করুণাময়ী মারা যান। এরপর ছোট মেয়ে জগদম্বার সঙ্গে মথুরামোহন বিশ্বাসের বিয়ে হয়। মথুরামোহন ছিলেন রাণী রাসমণির প্রিয় জামাতা এবং জমিদারীর গুরুত্বপূর্ণ কাজকর্ম সামলাতেন এই মথুরামোহন।
durga puja of rani rashmoni
১৭৯৪ খ্রিস্টাব্দে রাণী রাসমণির শ্বশুরমশাই প্রীতরাম দাস তাঁর জানবাজার জমিদার বাড়িতে দুর্গাপুজো শুরু করেন। পরে উত্তরাধিকার সূত্রে রাণী রাসমণির সময় তা উৎসবের আকার নেয়। লোকশিক্ষার জন্য রাণী রাসমণি তাঁর পারিবারিক দুর্গাপুজোয় যাত্রাপালা অভিনয়ের সূচনা করেন।

দুর্গাপুজোকে কেন্দ্র করে একবার ব্রিটিশ পুলিশের সঙ্গে রাণীর ঝামেলা বেঁধেছিল। সেবার বাবু রোড ( বাবু রাজচন্দ্র দাস রোড) দিয়ে ঢাক-ঢোল বাজিয়ে নবপত্রিকা স্নানের শোভাযাত্রা যাচ্ছিল গঙ্গার ঘাটে। বাধা দেন এক গোরা সাহেব। খবর পেয়ে সশস্ত্র নিরাপত্তারক্ষীসহ আরও বেশি লোকজন পাঠিয়ে আগের থেকে বড়ো আকারের শোভাযাত্রা করে নবপত্রিকা স্নান করানো হয়। ব্রিটিশ পুলিশ এরজন্য পঞ্চাশ টাকা জরিমানা করে। রাণী রাসমণি যথারীতি তা দিয়ে দেন এবং সঙ্গে সঙ্গে গরাণ কাঠ দিয়ে পুরো একশো ফুট চওড়া বাবু রোড ঘিরে দিতে বলেন জামাতা মথুরামোহনকে। অতি দ্রুত মথুরামোহন গোটা রাস্তাটি গরাণ কাঠের খুঁটি পুঁতে তাতে কাঁটা তার লাগিয়ে দিলেন। জানবাজার থেকে বাবুঘাট পর্যন্ত এই রাস্তাটি রাণীর স্বামী রাজচন্দ্র দাস নিজের জায়গায় নিজের টাকায় তৈরি করেছিলেন। সেজন্য এটি রাণী রাসমণির পারিবারিক সম্পত্তি ছিল।
এর ফলে রাস্তায় যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। আটকে যায় ব্রিটিশের গাড়িও। হৈ-চৈ পড়ে যায় গোটা শহর জুড়ে। রাণীর নামে মামলা হয়। আদালতে রাণী জানান, রাস্তাটি তাঁর ব‍্যক্তিগত সম্পত্তি এবং তাই এটিতে বেড়া দেবার অধিকার তাঁর রয়েছে এবং কোম্পানির রাস্তার দরকার হলে উপযুক্ত দাম দিয়ে কিনে নিতে পারে। সে মামলায় ব্রিটিশ কোম্পানি হেরে গিয়ে আপোষ করে এবং জরিমানার টাকা ফেরৎ দেয়।
রাণীর এই জয়ে লোকমুখে তৈরি হয়ে যায় তাঁর নামে ছড়া:
অষ্টঘোড়ার গাড়ী দৌড়ায় রাণী রাসমণি।
রাস্তা বন্ধ কর্ত্তে পাল্লে না কোম্পানী। ।
রাণী রাসমণির কাছে মামলায় হেরে সরকার আইন তৈরি করতে বাধ্য হয়, যাতে ভবিষ্যতে কোনো নাগরিককে এভাবে বেকায়দায় পড়তে না হয়। সরকার তরফে জারি হয় আইন, এরপর কলকাতার রাস্তায় কোনো মিটিং মিছিল করতে হলে পুলিশের আগাম অনুমতি নিতে হবে এবং সে আইন এখনো চালু রয়েছে।
রাণী রাসমণির জানবাজারের বাড়িটি বর্তমানে তিন ভাগে বিভক্ত এবং সেখানে তাঁর মেয়েদের বংশধররা বসবাস করছেন।
এক ভাগে বসবাস করেন বড়ো মেয়ে পদ্মমণির বংশধররা, আরেক ভাগে মেজ মেয়ে কুমারীর বংশধররা এবং অন্য ভাগে থাকেন ছোট মেয়ে জগদম্বা ও মথুরামোহন বিশ্বাসের বংশধররা। জগদম্বা ও মথুরামোহনের পৌত্র ব্রজগোপালের মেয়ে লাবণ্যলতার বিয়ে হয় বিনয়কৃষ্ণ হাজরার সঙ্গে। এই হাজরা পরিবারের অংশেই রয়েছে রাণী রাসমণির দুর্গামণ্ডপ। এটি “হাজরা বাড়ির পুজো” বলে পরিচিত।
বড়ো মেয়ে পদ্মমণির অংশে এখন দুর্গাপুজো নেই। তবে মেজ মেয়ে কুমারীর অংশে দুর্গাপুজো হয় এবং লোকমুখে সে পুজো “চৌধুরী বাড়ির পুজো” বলে পরিচিত। এই পরিবারের ঠাকুর দালানে হয় দুর্গাপুজো এবং সেখানে সারা বছর ধরে থাকে রাণী রাসমণির একটি বিশাল মাপের ছবি।
আগেই বলেছি, রাণী রাসমণির আদি দুর্গাপুজোর দুর্গামণ্ডপ “হাজরা বাড়ির পুজো” নামে পরিচিত। রথযাত্রার দিন এই পুজোর কাঠামো পুজো শুরু হয়। বংশপরম্পরায় বীরভূম জেলার আমোদপুরের কাছে কুসুমযাত্রা গ্রাম থেকে চিত্রকররা এসে প্রতিমা তৈরি করেন। লক্ষ্যণীয়, এরা কিন্তু চিত্রকর, মৃৎশিল্পী নন। তাই এই প্রতিমা তৈরিতে কোনো ছাঁচ ব‍্যবহার করা হয় না। প্রতিমা তৈরি হয় সম্পূর্ণ হাত দিয়ে। প্রতিমার রঙ তপ্ত কাঞ্চন বর্ণা, যা শিউলি ফুলের বোঁটার রঙ। এক চালার সাবেকি দুর্গা। তাতে থাকে বর্ধমানের শোলাশিল্পীদের শোলার কাজ।
দেবী দুর্গার বোধন হয় প্রতিপদে। এরপর সপ্তমী, অষ্টমী ও নবমী— এই তিন দিন লুচি-মিষ্টির ভোগ হয়। ভোগ রান্না হয় গঙ্গাজলে। প্রতিপদ থেকে নবমী পর্যন্ত থাকে সম্পূর্ণ নিরামিষ ব‍্যবস্থা। বলি হয় চালকুমড়ো ও আখ।
এরপর দশমীর দিন বাঙালি-অবাঙালি মিলে সবাই মেতে ওঠেন সিঁদুর খেলায়।
শহর কলকাতার ধনী বাবুদের দুর্গাপুজোয় যখন সাহেব ভজনা চলছে, বাঈজি নাচছে, রঙিন পানীয়ের ফোয়ারা ছুটছে, তখন ব‍্যতিক্রমীভাবে রাণী রাসমণির দুর্গাদালানে অনুষ্ঠিত হচ্ছে শাস্ত্র মেনে দুর্গাপুজো।
ব‍্যতিক্রমী ঘটনা বৈকি!
Anim pariatur cliche reprehenderit, enim eiusmod high life accusamus terry richardson ad squid. 3 wolf moon officia aute, non cupidatat skateboard dolor brunch. Food truck quinoa nesciunt laborum eiusmod. Brunch 3 wolf moon tempor, sunt aliqua put a bird on it squid single-origin coffee nulla assumenda shoreditch et. Nihil anim keffiyeh helvetica, craft beer labore wes anderson cred nesciunt sapiente ea proident. Ad vegan excepteur butcher vice lomo. Leggings occaecat craft beer farm-to-table, raw denim aesthetic synth nesciunt you probably haven't heard of them accusamus labore sustainable VHS.
Anim pariatur cliche reprehenderit, enim eiusmod high life accusamus terry richardson ad squid. 3 wolf moon officia aute, non cupidatat skateboard dolor brunch. Food truck quinoa nesciunt laborum eiusmod. Brunch 3 wolf moon tempor, sunt aliqua put a bird on it squid single-origin coffee nulla assumenda shoreditch et. Nihil anim keffiyeh helvetica, craft beer labore wes anderson cred nesciunt sapiente ea proident. Ad vegan excepteur butcher vice lomo. Leggings occaecat craft beer farm-to-table, raw denim aesthetic synth nesciunt you probably haven't heard of them accusamus labore sustainable VHS.
Anim pariatur cliche reprehenderit, enim eiusmod high life accusamus terry richardson ad squid. 3 wolf moon officia aute, non cupidatat skateboard dolor brunch. Food truck quinoa nesciunt laborum eiusmod. Brunch 3 wolf moon tempor, sunt aliqua put a bird on it squid single-origin coffee nulla assumenda shoreditch et. Nihil anim keffiyeh helvetica, craft beer labore wes anderson cred nesciunt sapiente ea proident. Ad vegan excepteur butcher vice lomo. Leggings occaecat craft beer farm-to-table, raw denim aesthetic synth nesciunt you probably haven't heard of them accusamus labore sustainable VHS.