পরকীয়ার ইতিহাস

History of India
parakia
খ্রিস্টিয় দ্বাদশ শতাব্দী থেকে বৈষ্ণবধর্মের একটা আবহাওয়া ধীরে ধীরে তৈরি হচ্ছিল বাংলার মাটিতে। এই বৈষ্ণবধর্মের প্রভাব ও প্রসারটা ছিল মূলত রাধাকৃষ্ণকেন্দ্রিক। গৌড়বঙ্গে এই রাধাকৃষ্ণের বড়ো রকমের প্রচার শুরু হয়েছিল সেনরাজ লক্ষ্মণসেনের (১১৭৯-১২০৫ খ্রি: ) সময়ে। লক্ষ্মণসেনের পিতা বল্লালসেন ও পিতামহ বিজয়সেন শৈব উপাসক হলেও তিনি ছিলেন ঘোরতর বৈষ্ণব।
ড: রমেশচন্দ্র মজুমদার তাঁর “বাংলাদেশের ইতিহাস (মধ্যযুগ), ” পৃ: ২৬৭, গ্রন্থে লিখছেন, “বৈষ্ণব সহজিয়ারা এই তান্ত্রিক দর্শনের ভিত্তিতেই পরকীয়া প্রেমের প্রতিষ্ঠা করে।” এই তান্ত্রিক দর্শনটি হলো, সহজিয়াবাদ ও পরকীয়াবাদ, যা ছিল ধর্মীয় আড়ালে অবৈধ যৌন সংসর্গ। কিন্তু দেখা যায়, বৌদ্ধ তান্ত্রিক সহজিয়াদের আগেও অর্থাৎ “কালচক্রযান”, “বজ্রযান” প্রভৃতি প্রথার আগেও এ দেশে সহজিয়াবাদী বা পরকীয়াবাদীদের অস্তিত্ব ছিল। সেক্ষেত্রে শুধুমাত্র প্রয়োগ পদ্ধতির রকমফের ঘটেছে, প্রথার নয়।
parakia
স্পষ্ট ভাষায় বলা যায়, সহজিয়া পরকীয়াবাদ হলো মূলত দেহকেন্দ্রিক, যা পরস্ত্রীর সঙ্গে প্রবৃত্তিগত সম্পর্ককেই বোঝায়। অবাক করা বিষয় হলেও একথা সত্যি, এই পরকীয়া প্রেম হলো স্বকীয়া প্রেম অর্থাৎ নিজের বিবাহিতা স্ত্রীর সঙ্গে প্রেম (সহবাস ) অপেক্ষা আধ‍্যাত্মিকতার দিক দিয়ে শ্রেষ্ঠ বলে সহজিয়ারা মনে করতেন। প্রেমের মাধ্যমেই ঈশ্বরকে লাভ করাই ছিল এই সহজিয়া সম্প্রদায়ের একমাত্র লক্ষ্য। আর সে প্রেম ছিল নরনারীর দেহজ প্রেম অর্থাৎ যৌন সংসর্গ।
কিন্তু সে নারীকে হতে হবে পরনারী বা পরস্ত্রী। এ বিষয়ে তাদের যুক্তি হলো, আপন স্ত্রীর চেয়ে অন্য নারীর প্রতি পুরুষের আকর্ষণ বা আসক্তির মাত্রা প্রবল থাকে বলেই এটাই হলো ধর্মাচরণের প্রথম ধাপ। এই স্থূল দেহজাত প্রেম-ই মানুষকে ভগবৎপ্রেমে অনুসন্ধিৎসু করে তোলে। কারণ, ছয় রিপুর মধ্যে কাম-ই মানুষকে চঞ্চল করে তোলে বেশি এবং তাতেই ঈশ্বরকে পাওয়া সহজসাধ্য হয়। বিল্বমঙ্গল পরনারী চিন্তামণির দৈহিক প্রেমের জন্য আকুল হয়েছিলেন।
parakia
সে আকুলতা এতটাই প্রবল ছিল যে, বিষধর সাপকে দড়ি ভেবে তাতে ঝুলেই প্রবেশ করেছিলেন চিন্তামণির ঘরে। তারপর চিন্তামণি বলেন, তার মতো নগণ্যা নারীর প্রতি এতটা আকর্ষণ না দিয়ে যদি তা ঈশ্বরের জন্য দেওয়া যায়, তবে বিল্বমঙ্গলের ঈশ্বরপ্রাপ্তি নিশ্চিত। চিন্তামণির একথা শিরোধার্য করে পরনারী আসক্ত বিল্বমঙ্গল হয়ে ওঠেন বিল্বমঙ্গল ঠাকুর। বীরভূমের অজয় নদের তীরে জয়দেব-কেঁন্দুলির কাছে রয়েছে ঠাকুর বিল্বমঙ্গলের পাট।
যাই হোক, সহজিয়ারা মূলত তান্ত্রিক দর্শনের প্রভাবেই পরকীয়াবাদের প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। ভারতব‍র্ষের বহু প্রাচীন সাধন প্রণালী হলো এই তান্ত্রিক পদ্ধতি। সিন্ধু সভ‍্যতার সময় থেকেই এ প্রথার পুরাতাত্ত্বিক প্রমাণ রয়েছে। আবিষ্কৃত ধ‍্যানী যোগী মূর্তি ও মাতৃকা মূর্তি তার প্রমাণ। পণ্ডিত হরপ্রসাদ শাস্ত্রী জানাচ্ছেন, “বজ্রযান”, ” কালচক্রযান” প্রথা থেকেই সহজিয়া পরকীয়াবাদের উৎপত্তি। ( তথ‍্যসূত্র: বৌদ্ধগান ও দোঁহা )।
ঋকবেদে জার ও জারিনী অর্থাৎ বহুপুরুষগামিনী নারীর উল্লেখ আছে ( ৬/৫/৫, ১০/৩৪/৫)। এরপর বেদোত্তর যুগে রচিত বিভিন্ন সংহিতা ও উপনিষদেও পরকীয়াবাদের প্রচ্ছন্ন উল্লেখ আছে। মহাভারতের যুধিষ্ঠির, ভীম, অর্জুন, কর্ণ, নকুল, সহদেব, বিদুর, ধৃতরাষ্ট্র, পাণ্ডু— সকলেই ক্ষেত্রজ সন্তান‌। নৃবিজ্ঞানী মর্গ্যান জানাচ্ছেন, আমাদের মানব সমাজের অতীতটা ছিল সম্পূর্ণরূপে অনিয়ন্ত্রিত যৌন সম্পর্কের পর্যায়ভুক্ত।
parakia
প্রাগৈতিহাসিক যুগ বা প্রাক্ আর্যযুগে এবং পরবর্তী বৈদিকযুগের প্রথমদিকেও সমাজে নারী-পুরুষের অবাধ যৌন সম্পর্ক চালু ছিল। নারীর কৌমার্য বা সতীত্ব বলতে যা বোঝায়, তখন তার সুনির্দিষ্ট সংজ্ঞা ছিল না। ভারতবর্ষে বিবাহ প্রথা চালু করেন মহর্ষি উদ্দালকের পুত্র শ্বেতকেতু। তার আগে পর্যন্ত স্বামী-স্ত্রীর সংজ্ঞা বলতে বোঝাতো মূলত যৌনসঙ্গী। মহাভারত যুগে বিবাহ প্রথার মাধ্যমে নির্দিষ্ট যৌনসঙ্গী নির্বাচন ব‍্যবস্থা চালু থাকলেও সমাজে তখনও কিছু অবৈধ যৌন সংসর্গের ঘটনা ঘটতে থাকে। তাই মহাকাব্যের যুগে মহাভারতে কুমারী কন‍্যার গর্ভজাত সন্তানকে “জারজ” না বলে তাকে “কানীন” বলে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছিল।
parakia
তাহলে দেখা গেল, বৌদ্ধ সহজিয়াদের বহু আগে থেকেই আমাদের দেশে পরকীয়াবাদ চালু ছিল। বাংলায় পাল রাজত্ব ( ৭৫০-১০৯৫ খ্রি: ) পর্যন্ত বৌদ্ধদের বেশ দাপট ছিল। কিন্তু তারপর সেন রাজত্বের সময়ে, বিশেষ করে বল্লালসেনের আমলে (১১৫৮-১১৭৯ খ্রি: ) পুনরায় ব্রাহ্মণ‍্য ধর্মের প্রাধান্য প্রতিষ্ঠিত হলে বৌদ্ধদের সংকট ঘনিয়ে আসে এবং এ সময়ে অনেক বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী মানুষ সমাজের নিচু স্তরে “পতিত” হয়। পরবর্তীকালে এই “পতিত” বৌদ্ধরাই “পাষণ্ডী” নামে পরিচিত হয়। চৈতন্যদেবের সময়ে চাপাল-গোপাল ছিলেন এইরকম “পাষণ্ডী” অর্থাৎ পতিত বৌদ্ধ। বাংলায় সেন রাজত্বের সময়ে তান্ত্রিক বৌদ্ধদের প্রভাব কমে গেলে বৈষ্ণব সহজিয়াদের আবির্ভাব ঘটে। পরবর্তীকালে তারা রাধাকৃষ্ণের প্রেমে আকৃষ্ট হোন। স্বামী আয়ানকে ছেড়ে রাধার কৃষ্ণপ্রেমে মাতোয়ারা হবার মধ্যেই তন্ত্রধর্মের পরকীয়াবাদ স্পষ্ট।
তন্ত্র ও তান্ত্রিক সম্পর্কে ড: দীনেশচন্দ্র সেন জানাচ্ছেন, “বামাচারী বৌদ্ধ তান্ত্রিকগণ যে সমস্ত অনুষ্ঠানে প্রবৃত্ত হইয়াছিল, তাহা নীতি ও ধর্মবিধ্বংসী। এই সমস্ত ভৈরবীচক্র প্রভৃতির দ্বারা পুরুষ ও রমণীগণ নৈতিক আদর্শ হইতে একান্তভাবে স্খলিত হইয়াছিল। অপরপক্ষে তান্ত্রিকগণের খাদ‍্যাখাদ‍্যের কিছুমাত্র বিচার ছিল না। তাহারা গলিত শবের মাংস, মলমূত্রাদি পর্যন্ত দ্বিধা না করিয়া ভক্ষণ করিত। “— বঙ্গভাষা ও সাহিত্য, ১ম ও ২য় খণ্ড, পৃ: ২১৬. চৈতন্যের জন্মের বহু আগে থেকেই পরকীয়াবাদী বৈষ্ণবধর্ম বাংলায় চালু ছিল। সহজিয়ারা অনেকগুলি শাখায় বিভক্ত ছিল, যেমন, আউল, বাউল, সাঁই, দরবেশ, নেড়ানেড়ি, কর্তাভজা, সখীভজা, কিশোরীভজা, রামবল্লভী, সাহেবধনী, পাগলনাথী, গৌড়বাদী, গোবরাই প্রভৃতি। এইসব বিভিন্ন শাখার মধ্যে মত ও পথের পার্থক্য থাকলেও স্ত্রী-পুরুষের মধ্যে অবাধ শরীরী মিলন এবং পরকীয়া প্রেমের বিষয়ে সকলেই ছিল একমত। সবাই ছিল তন্ত্রপথের পথিক।
parakia
তান্ত্রিক আচার বিষয়ে ড: রমেশচন্দ্র মজুমদার তাঁর “বাংলাদেশের ইতিহাস” গ্রন্থে ( পৃ: ২৬৬-৭) লিখছেন, ” কেহ এই সম্প্রদায়ে প্রবেশ করিতে ইচ্ছুক হইলে তাহকে ঐ সম্প্রদায়ভুক্ত একজনের নিকট দীক্ষা নিতে হয় এবং দিবাভাগে নানাবিধ অনুষ্ঠানের পর ঘোষণা করিতে হয় যে, সে পূর্বেকার ধর্মসংস্কার সমস্ত পরিত্যাগ করিল এবং ইহার প্রমাণস্বরূপ তাহার বৃদ্ধিশ্রাদ্ধ ক্রিয়া সম্পন্ন হয়। রাত্রিকালে গুরু ও শিষ্য আটজন বামাচারী তান্ত্রিক পুরুষ এবং আটটি স্ত্রীলোক (নর্তকী ও তাঁতির কন‍্যা, গণিকা, ধোপানী, নাপিতের স্ত্রী বা কন্যা, ব্রাহ্মণী একজন ভূস্বামীর কন‍্যা ও গোয়ালিনী) সহ একটি অন্ধকার কক্ষে প্রবেশ করে এবং প্রতিটি পুরুষের পাশে একজন স্ত্রীলোক বসে।

গুরু তখন শিষ্যকে নিম্নলিখিতরূপ উপদেশ দেন—

“আজি হইতে লজ্জা, ঘৃণা, শুচি-অশুচি জ্ঞান জাতিভেদ প্রভৃতি সমস্ত ত‍্যাগ করিবে। মদ‍্য, মাংস, স্ত্রীসম্ভোগ দ্বারা ইন্দ্রিয়বৃত্তি চরিতার্থ করিবে, কিন্তু সর্বদা দেবতা শিবকে স্মরণ করিবে এবং মদ‍্য, মাংস প্রভৃতি ব্রহ্মপদে লীন হইবার উপাদানস্বরূপ মনে করিবে।”

এখানে বলা দরকার, তন্ত্রধর্মের প্রবর্তক হলেন দেবাদিদেব শিব। তাই এখানে শিবকে স্মরণ করার কথা বলা হয়েছে।
মূলত বুদ্ধের তিরোধানের পর বৌদ্ধরা ক্রমশঃ ধর্মের মূল স্রোত থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছিল। তারা ঝুঁকছিল উৎকট তান্ত্রিক ক্রিয়াকাণ্ডের দিকে, আর বৌদ্ধদের এই তান্ত্রিকতার বিরুদ্ধেই ছিল চৈতন্যের জেহাদ। বৌদ্ধ তান্ত্রিক “পাষণ্ডী” জগাই-মাধাই ও চাপাল-গোপালকে প্রেমধর্মে দীক্ষা দিয়ে সমাজকে এক নতুন বার্তা দিয়েছিলেন শ্রীচৈতন্য।
Anim pariatur cliche reprehenderit, enim eiusmod high life accusamus terry richardson ad squid. 3 wolf moon officia aute, non cupidatat skateboard dolor brunch. Food truck quinoa nesciunt laborum eiusmod. Brunch 3 wolf moon tempor, sunt aliqua put a bird on it squid single-origin coffee nulla assumenda shoreditch et. Nihil anim keffiyeh helvetica, craft beer labore wes anderson cred nesciunt sapiente ea proident. Ad vegan excepteur butcher vice lomo. Leggings occaecat craft beer farm-to-table, raw denim aesthetic synth nesciunt you probably haven't heard of them accusamus labore sustainable VHS.
Anim pariatur cliche reprehenderit, enim eiusmod high life accusamus terry richardson ad squid. 3 wolf moon officia aute, non cupidatat skateboard dolor brunch. Food truck quinoa nesciunt laborum eiusmod. Brunch 3 wolf moon tempor, sunt aliqua put a bird on it squid single-origin coffee nulla assumenda shoreditch et. Nihil anim keffiyeh helvetica, craft beer labore wes anderson cred nesciunt sapiente ea proident. Ad vegan excepteur butcher vice lomo. Leggings occaecat craft beer farm-to-table, raw denim aesthetic synth nesciunt you probably haven't heard of them accusamus labore sustainable VHS.
Anim pariatur cliche reprehenderit, enim eiusmod high life accusamus terry richardson ad squid. 3 wolf moon officia aute, non cupidatat skateboard dolor brunch. Food truck quinoa nesciunt laborum eiusmod. Brunch 3 wolf moon tempor, sunt aliqua put a bird on it squid single-origin coffee nulla assumenda shoreditch et. Nihil anim keffiyeh helvetica, craft beer labore wes anderson cred nesciunt sapiente ea proident. Ad vegan excepteur butcher vice lomo. Leggings occaecat craft beer farm-to-table, raw denim aesthetic synth nesciunt you probably haven't heard of them accusamus labore sustainable VHS.