ভেন্টিলেশন

Magazine
ventilation
রিমি মুৎসুদ্দি
মোবাইলের বিপ শব্দটা শুনে আবার বিরক্ত হয়েই নিকিতা ফোনটা সাইলেন্স মোডে করে দেয়। চকিত মোবাইল স্ক্রিণে চোখ বুলিয়ে দেখে নেয় সাড়ে দশটা বেজে গেছে। অর্থাৎ চারঘন্টারও বেশি সময় ধরে নিকিতা কম্পিউটার স্ক্রিণে কাজ করে যাচ্ছে। এই সেদিন পড়েছিল দশ মিনিটের বেশি একনাগাড়ে ল্যাপটপ বা কম্পিউটার স্ক্রীণে চোখ রাখা অত্যন্ত ক্ষতিকর। কদিন ধরে চোখটা জ্বালা জ্বালাও করছে। চোখ দিয়ে জল গড়াচ্ছে অনবরত।
-ম্যাডাম, এটা দেখুন। এইবার তাড়াতাড়ি এডমিশনের ব্যবস্থা করুন। রক্তে ভেসে যাচ্ছে পেশেন্টের শরীর।
একটা বাটিতে দুটো কাটা আঙ্গুল এনে ইমার্জেন্সি ওয়ার্ডের ওয়ার্ড ম্যানেজারের টেবিলে ঠকাস করে রেখে দিয়ে লোকটা প্রায় চিৎকার করে বলে উঠল,
-এই যে এখনও ভর্তি নিলেন না? আপনি কি এই হাসপাতালে নতুন নাকি? জানেন, আমি এ পাড়ার ইমতিয়াজ ভাই। আর যে ছেলেটা ওখানে ওয়ার্ডের বাইরে কাতরাচ্ছে সে আমার আপন খালার ছেলে। কিছু যদি উল্টোসিধা হয় তাহলে এই হাসপাতালের একদিন কি আপনারই একদিন।
নিকিতা মণিটরের স্ক্রীণে চোখ রেখে কথাগুলো শোনে। ওর নির্লিপ্ত ভঙ্গী দেখে লোকটা আবারও হিসিহিস করে বলে ওঠে,
-শিগগির ভর্তির ব্যবস্থা করুন। নইলে এই হাসপাতালের একজন কর্মচারীকেও আজ ঘরে ফিরতে হবে না।
সবে তিনমাস হল নিকিতা এই নার্সিংহোমে জয়েন করেছে। বেসরকারি এই হাসপাতালগুলোতে রুগী ভর্তি নেওয়ার আগে দেখে নেওয়া হয় বাড়ির লোক পয়সা দিতে পারবে কি না? কতৃপক্ষের কড়া নির্দেশ। এদিক থেকে ওদিক হলেই চাকরি চলে যাওয়ার আশঙ্কা। নিকিতা জানে। ওর কিছু করার নেই। টেবিলের ওপর রাখা বাটির কাটা আঙ্গুলটায় একটা মাছি এসে বসেছে। সেই দিকে চোখ যেতেই ওর গা গুলিয়ে বমি পেল। সামনে দাঁড়ানো উত্তেজিত এই লোকটা ও তার সাথে জনা পাঁচেক মুশকো মতন লোকের সামনে ও না পারছে নিজের শারীরিক অস্বস্তি প্রকাশ করতে, না পারছে হাসপাতাল কতৃপক্ষের নির্দেশের হাঁসফাসে নিজের জমে থাকা ক্ষোভ উগরে দিতে।
-আমরা চেষ্টা করছি স্যার। জায়গা নেই তো কি করব? আমি কথা বলছি ওয়ার্ডের ডাক্তারবাবুর সাথে। এখানে এইভাবে ভিড় করলে, চেঁচামেচি করলে আমরা কাজ করব কিভাবে? আর তাছাড়া, অ্যাক্সিডেন্ট কেসে পুলিশে রিপোর্ট লেখাতে হয়।
নিজের সবরকম অস্বস্তি চেপে গলার স্বরে যতটা সম্ভব আন্তরিকতা মাখিয়ে খুব মোলায়মভাবেই কথাগুলো বলল নিকিতা। সামনে দাঁড়ানো উত্তেজিত জনতাকে কিচ্ছুক্ষণের জন্য মারমুখী থেকে শান্ত করা গেল বোধহয়।
শৈবাল এইমাত্রই সিটে এসে বসেছে। শৈবাল এখানে চারবছর ধরে আছে। খুব পাকাপোক্ত ছেলে। শৈবালকে দেখে নিকিতা কিছুটা নিশ্চিন্ত বোধ করে। ও ঠিক ম্যানেজ করতে পারবে এই ধরণের পরিস্থিতি। সিরিয়াস কিছু না হলে ওপিডির ডাক্তার দিয়ে ড্রেসিং করিয়ে দেবে। না হলে পেশেন্ট পার্টির অর্থনৈতিক অবস্থা অথবা হুজ্জুতি করার ক্ষমতা দেখে ও সিদ্ধান্ত নেবে।
চাকরিটা দিনদিন চাপ হয়ে যাচ্ছে নিকিতার কাছে। এই নিয়ে একবছরে তিনবার চাকরি বদলাল। সরকারি হাসপাতালে কন্ট্রাক্টে যে কাজটা পেয়েছিল সেটা ছাড়া প্রতিটা বেসরকারি সংস্থায় একইরকম চাপ। নিকিতা সিদ্ধান্ত নিতে পারে না। শেষপর্যন্ত হয়তবা ছেড়েই দেবে চাকরিটা। কিন্তু চাকরি ছেড়েই বা কী করবে? দিল্লি ফিরে যাবে? দিল্লিতেই বা কে আছে ওর? যদিও কলকাতা শহরের থেকে দিল্লি ওর হাতের তালুর মতো চেনা। দিল্লিতেই জন্ম, বড় হয়ে ওঠা। শুধুমাত্র একটা রাত ওর জীবন থেকে দিল্লি শহরটাকেই প্রায় মুছে দিয়েছে।
এককাপ কফি খাওয়ার ইচ্ছেটা মাথার পেছনে পিটুইটারি গ্ল্যাণ্ডে যেন ধাক্কা মারছে।
-শৈবাল এবার আমার দশ মিনিটের ব্রেক চাই। ভিড়টা একটু কম। তুই একটু সামলে নে কিচ্ছুক্ষণ।
বউকে ডাক্তার দেখিয়ে সবে নিজের সীটে এসে বসেছে শৈবাল। বম্বে থেকে এখনও ব্লাড টেস্টের রিপোর্টটা আসেনি। পজিটিভ হলে খরচের ধাক্কা কিভাবে সামলাবে ভেবে কুলকিনারা করতে পারছে না ও। কথাগুলো নিকিতাকে বলে কিছুটা হালকা বোধ করে বোধহয় শৈবাল। নিকিতা ব্রেক নিতে চাইলে আনমনে মাথাটা হেলিয়ে দেয় ও।
হাসপাতালের কফিশপে একটা এক্সপ্রেসো আর চিজকর্ণ স্যাণ্ডউইচ অর্ডার দিয়ে মোবাইলটা অন করে নিকিতা। মোবাইল ডেটা অন হতেই একগাদা নোটিফিকশেনের বিপ ক্রমাগত আসতেই থাকে। নিকিতা বিরক্ত বোধ করে। মোবাইল থেকে চোখ সরিয়ে সামনের লনে একটুকরো সবুজের দিকে চোখ রাখে। সবুজ আর কোথায় এই শহরটাতে? গোটা শহরটাকেই খুব সাফোকেটিং মনে হয় নিকিতার। এই শহরের প্রতিটা খারাপ লাগা ওকে দিল্লি মনে করায়। অথচ দিল্লি ছেড়ে চলে এসেছে তা আজ কত বছর হতে চলল!
চিজ কর্ণ স্যাণ্ডুইচে একটা কামড় দিতেই খুব চেনা একটা গলার শব্দে নিকিতা মুখ তুলে তাকায়।
-ডোন্ট বি সো আনরিয়ালিস্টিক! প্লিজ ট্রাই টু আণ্ডারস্ট্যাণ্ড।
ফোনের ওপ্রান্তের উত্তর নিকিতা শুনতে পায়নি। কিন্তু ফোনের এপারে নিকিতার চেনা উত্তরদাতার মুখভঙ্গী বলে দিচ্ছে কাউকে কিছু বোঝাতে চেষ্টা করেও ব্যর্থ হচ্ছে সে। আর উত্তরদাতার চোখে মুখে ফুটে উঠছে হতাশা।
এই হতাশাগুলো নিকিতা একসময় পড়ে ফেলতে পারত। আসলে ও বিশ্বাস করত, ওরা দুজনেই একে অপরের হতাশা পড়ে ফেলতে পারে। প্রথম যখন শাক্যর সঙ্গে প্রেসিডেন্সির ক্যান্টিনে দেখা হয়েছিল, শাক্য ইউনিয়ানের লিডার। ওকে ঘিরে প্রচুর ছেলেমেয়ে। ফার্স্ট ইয়ারের ছেলেমেয়েদের ছাত্র সংসদ, রাজনীতি এসব নিয়ে কিছু বলছিল শাক্য। নিকিতা একটু আড়ষ্ট ছিল। শাক্য ভেবেছিল পাঞ্জাবী মেয়ে বাংলাটা ঠিক বুঝতে পারছে না হয়ত। কিন্তু ভুল ভেবেছিল শাক্য। নিকিতার মা বাঙালি। বাংলা ওর মায়ের ভাষা। মা তো মাম্মি ডাকও পচ্ছন্দ করে না। মা-বাবা- ডাক তো মা-ই শিখিয়েছিল। ওদের পরিবারে কেউ আপত্তিও করেনি। যেমন আপত্তি করেনি মায়ের সাথে বাবার বিয়েতে। বাঙালি একটা মেয়েকে বাড়ির বউ হিসাবে পরিবারের সবাই খুব খুশী মনেই মেনে নিয়েছিল সেইসময়ে। মা’ র হাতের মাছের ঝোল তো দাদাজীর খুব প্রিয় ছিল। বিশেষ করে শেষের দিকে তেল-মশলা একদম খেতে পারতেন না। বলতেন,
-নিক্কি তেরা মা-র হাতের মাছের ঝোল আর মুরগা স্ট্যু না খেলে আমি তো জিন্দাই র্যাহেতাম না। তোর মা’ র কাছে আমার ঋণ রয়ে গেল।
এই কথাটা বলে খুব জোরে হাসতেন দাদাজী। হাসতে হাসতে হাঁপিয়ে পড়তেন। মা জলের গ্লাস এগিয়ে দিত।
-বাবা এটা আপনি কী বলছেন? সন্তান ঋণী হয় বাবামায়ের কাছে। বাবা-মা নয়। চিকেন স্ট্যু আর মাছের ঝোল যে আপনার এত ভাল লাগে সেইজন্য আমিই বরং ঋণী।
এইসব পুরোন কথা মনে পড়লে নিকিতার মন ভরে যায়, আবার চোখের কোণও ভিজে যায়। এই যেমন শাক্যকে এখন চোখের সামনে অত্যন্ত উত্তেজিতভাবে ফোনে কাউকে কিছু বোঝাতে দেখে আবার ওর মনটা ভারি হয়ে আসছে। মন হালকা রাখতেই তো নিকিতা আর ওর মা সিদ্ধান্ত নিয়েছে দিল্লি আর কক্ষনো ফিরে যাবে না।
নিকিতার একদম সামনের টেবিলে একটা কফির কাপ নিয়ে বসেছে শাক্য। ফোনে কথা বলতে বলতেই শাক্যর চোখ নিকিতার ওপর পড়েছে। নিকিতা চোখ সরিয়ে নিতে গিয়েও পারল না।
ফোন রেখে শাক্য এগিয়ে আসছে নিকিতার টেবিলে। নিকিতা মনে মনে বলছে,
-না, চলে যা তুই। আমার কোন অসুবিধা নেই। বরং তুই থাকলেই আমার অসুবিধা, অস্বস্তি। প্লিজ চলে যা। আমাকে দয়া করিস না।
যেমন বলেছিল বছর দুই আগে। সেদিন মুখে বললেও শাক্যর চলে যাওয়া নিকিতা দেখতে পারেনি। তবু শাক্যকে ওর চোখের জলও দেখাতে ইচ্ছে হয়নি। খুব দ্রুতপায়ে রাস্তা পার হয়ে উল্টোদিকের ফুটপাতে চলে গিয়েছিল। আজও ইচ্ছে করছে চেয়ার থেকে উঠে উল্টোদিকে হাঁটা দেয়। কিন্তু পা দুটো যেন অবশ হয়ে পড়েছে। শাক্য এগিয়ে আসছে নিকিতার টেবিলের দিকে। একরাশ কান্না আর মনখারাপ নিকিতার গলার ভেতর আটকে রয়েছে। নিকিতা অবাক হয়ে যায়। ভুলে যাওয়ার জন্য চারবছর কি যথেষ্ট নয়? সদ্য পড়া একটা কবিতার লাইন মনে পড়ে যাচ্ছে, ‘ভালবাসা তবু ফুরায় না।’
-তুই এখানে কতদিন চাকরি করছিস?
শাক্যর প্রশ্নের উত্তর দিতে নিকিতা একটু ভেবে নেয়। শাক্যকে ওর কোন যন্ত্রণা, অসুবিধা কিছুতেই বুঝতে দেবে না ও।
-এই তো মাসখানেক হল।
গলায় এতটাই স্বাভাবিকত্ব আর উচ্ছ্বাস এনে কথা বলছে নিকিতা, যে শাক্যর পক্ষে বোঝা সম্ভবই নয় যে একটু আগে কি পরিস্থিতি পেরিয়ে এসেছে ও। প্রায় প্রতিদিনই এই চাপ আর মানিয়ে নেওয়ার মধ্যে দিয়ে চলতে চলতে নিকিতার মাঝেমাঝে মনে হয় জীবন নামক গাড়িটা আর বুঝি ও ঠেলে উঠতে পারবে না। এতবার বদলে, এত চেষ্টা করেও এখনও পর্যন্ত একটা চাকরি পেলো না ও যেখানে মাইনেটা একটু ভদ্রস্থ আর চাকরির চাপটাও ওর পক্ষে মানিয়ে নেওয়ার মতো।
প্রেসিডেন্সির তিনবছর আর ইউনিভার্সিটির দুবছর- এই পাঁচবছর অবশ্য নিকিতা অন্য আরেকটা স্বপ্নও দেখত। আর ভাবত, শাক্যও হয়ত একই স্বপ্ন দেখে। মা একবার বলেছিল, ইন্টারকাস্ট ম্যারেজ কোন সমস্যা নয়। আবার সমস্যাও হয়ত। আসলে কোথায়, কোন গভীরে যে সমস্যাগুলো ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে নিক্কি, আমরা টেরও পাই না। যতক্ষণ না সমস্যাগুলো আমাদের সামনে এসে দাঁড়াচ্ছে।
আবার সেই রাত মনে পড়ে গেল নিকিতার। চাঁদনি চকের পরাঠেওয়ালা গলিতে মা, নিকিতা, দীপালি বুয়া আর তার বর তনুজ আংকেল – সবাই একসাথে দিল্লির বেস্ট পরাঠা আর কাবাব খেতে, গালিবের হাভেলি দেখতে বেড়িয়েছিল। সবাই মিলে এক্সপ্লোর করছে পুরানা দিল্লি। গালিবের হাভেলিতে নিকিতা আগেও এসেছিল বাবার সাথে। বাল্লিমারান হয়ে দারিয়াগঞ্জের দিকে গাড়িটা যাচ্ছে।
-ডি ইউ-র নর্থক্যাম্পাসও তোকে আজ দেখাব নিক্কি। মনে তো হয় তোর টুয়েলভের রেজাল্ট যা হবে তুই লেডিশ্রীরাম বা মিরাণ্ডা হাউসেই চান্স পেয়ে যাবি। ইংলিশে এম এ করলে তোকে মনে হয় এই নর্থ ক্যাম্পাসেই আসতে হবে।
গাড়ি চালাতে চালাতে তনুজ আংকেল কথাগুলো বলছিল। তনুজ আংকেল নিজে আই আইটি চেন্নাই। কথাগুলো শুনে নিকিতা সদ্য শেষ হওয়া পরীক্ষাটার কথা ভাবছিল। পরীক্ষা যেরকম হয়েছে ৯০ শতাংশের ওপর নম্বর পাওয়া উচিত ওর। গাড়িতে সবাই গল্পের মেজাজেই রয়েছে।
গাড়িটা বাঁক নিচ্ছে। খুব সরু রাস্তা। শীতকাল বলে এসি চলছিল না গাড়িতে। একটা রিকশা হুড়মুড়িয়ে এসে পড়েছে গলির মুখে। তনুজ আংকেল মুখ বাড়িয়ে রিকশাওয়ালাটাকে কিছু বলছে। মা পিছনের সিট থেকে বাইরের রাস্তা দেখছিল। হঠাৎ গাড়ির দরজা খুলে মা গাড়ি থেকে নেমে পড়ে। তনুজ আংকেলও গাড়ি দাঁড় করিয়ে নেমে পড়েছে। নিকিতা আর দীপালি বুয়াও ওদের দেখাদেখি গাড়ি থেকে নামে। গাড়ি থেকে নেমে নিকিতা যে দৃশ্য সেদিন দেখেছিল তা ও হয়ত কোনদিন ভুলতে পারবে না।
রিকশার ভেতর বাবার প্রায় অচৈতন্য দেহ ঝুঁকে রয়েছে একটা অচেনা মহিলার কাঁধে। পরের ঘটনাগুলো খুব দ্রুত ঘটে যায়। নিকিতার শুধু বাবার বলা কয়েকটা কথা আজও মনে আছে। যেদিন ওরা কলকাতা চলে আসার টিকিট বুক করছিল, বাবা মা’ কে বলে,
-তুমি একটা সাধারণ ঘরের বাঙালি মেয়ে। কী সুখ তোমায় দিইনি? তুমি কোন গড়পড়তা বাঙালীকে বিয়ে করলে এত কিছু পেতে? কী দিয়েছ তুমি তার বদলে? তোমার ডমিনেটিং এটিটিউড আমার সাফোকেটিং লাগে। বাড়ির সকলের প্রিয় হতে গিয়ে ইউ লস্ট মি। এন্ড আই নিড আ ভেন্টিলেটর। তানিয়া ইস যাস্ট মাই ভেন্টিলেটর। নাথিং রঙ আই হ্যাভ ডান।
মা’ র চোখে বোধহয় তখন জল ছিল না। সদ্য দাদাজীও মারা গেছে। মা’ র হয়ে বলার মতো একজন সদস্যও পরিবারে নেই। সেদিন নিকিতার মনে হয়েছিল, মা কি তাহলে অবাঞ্ছিত এই পরিবারে? কারোর কোন সমস্যা হচ্ছে না, বাবা মা’ কে এইভাবে অপমান করে যাচ্ছে? না কি বাবা যাস্ট নিজের কথা বলে যাচ্ছে, আর পরিবারের বাকিরা বাবার কথাগুলো শুনছে?
-আমার পয়সা আমি যেভাবে খুশী ওড়াব, কার কী বলার আছে?
কথাটা বলে বাবা ঘরে চলে যাচ্ছিল, মা ড্রয়িংরুমে সোফায় বসা। কোলের ওপর থেকে ল্যাপটপটা নামিয়ে সেন্টার টেবিলে রেখে খুব শান্ত গলায় বলে ওঠে,
-সূরয, রাইট ইউ আর। এবসোলিউটলি রাইট।
মা কী বলতে চাইছে বোধহয় বাবা বা পরিবারের আর কেউ অনুমান করতে পারেনি।
-তোমার নিজের মতো করে বাঁচার অধিকার অবশ্যই আছে। আমারও আছে। আমাদের সকলের আছে। যে সম্পর্ক তোমার সাফোকেটিং লাগে আমি তোমাকে সেই সম্পর্ক থেকে মুক্তি দিলাম। টিকিট বুকিং হয়ে গেছে। আজ রাতেই ফ্লাইট। রাত দুটো। এখন দশটা বাজে। আমি প্যাকিং করে নিচ্ছি। ওলা বুক করে চলে যেতে পারব। তুমি ডিভোর্সের কাগজ পাঠালে অবশ্যই সই করে দেব।
নিকিতার দিকে তাকিয়ে মা খুব স্বাভাবিক স্বরেই বলে,
-নিকি, প্যাক ইউর লাগেজ। মনে রেখো আমরা আর ফিরে আসব না। যেটুকু প্রয়োজন সেটুকু গুছিয়ে নাও।
ঘরে ঢোকার আগে বাবার দিকে তাকিয়ে বলেছিল, আমার কোন এল্যুমিনাই-এর প্রয়োজন নেই। নিকিতার জন্যও নয়। আমারও ওই একটাই ভেন্টিলেটর। এন্ড আই নো আই উইল লিভ। অল দ্য বেস্ট।
সেরাত্রের কথা মনে পড়লে মা’ র প্রতি এক চরম শ্রদ্ধা জন্মায় নিকিতার। কোন প্রশ্ন নয়, কান্না নয়। ভেতরের কষ্ট, অভিমান, যন্ত্রণা সব নিজের মধ্যে রেখে কী শান্তভাবে মা সেদিন নিকিতাকে নিয়ে বেরিয়ে এসেছিল। না আসলে অবশ্য কোন উপায়ও ছিল না। বাবা একবারও বাঁধা দেয় নি ওদের। শুধু যখন ওলা ক্যাবে জিনিষপত্রগুলো ওঠাচ্ছিল, একবার উপরের দিকে চোখ যাওয়াতে জানলার কাছে একটা ছায়া ও দেখেছিল। সেইমুহুর্তটার কথা মনে পড়লে আজও নিকিতার ওই ছায়াটা বাবার ছায়া বলেই মনে হয়।
গাড়ি এয়ারপোর্টের দিকে ছুটছে। নিকিতার চোখে জল। চোখের জল মোছাতে মোছাতে মা বলেছিল,
-যন্ত্রণা খুব দামী নিক্কি। তা একান্ত নিজের। নিজেকে ছাড়া আর কাউকে দেখাবে না তা। তবেই তো তুমি স্ট্রং, আয়রন লেডি হবে।
নিকিতা মা’ র বুকে মাথা রেখে বলেছিল, কিন্তু মা, তোমার কাছেও দেখাব না আমার যন্ত্রণা। একান্ত নিজের লোকের কাছেও যদি না বলতে পারি কষ্টটা, তাহলে তো দমবন্ধ হয়ে মরে যাব।
-আমাকে বলবে। শুধু আমাকে। তবে চেষ্টা করবে নিজের কাছে রাখার। আমি যখন থাকব না তখন কাকে বলবে? জানবে, এই পৃথিবীতে সবাই নিজের যন্ত্রণায় মশগুল। তোমার কথা তুমি নিজেকে ছাড়া কাউকে বোঝাতে পারবে না। তোমার সমস্যাও তুমি নিজে ছাড়া কেউ সমাধান করতে পারবে না। তাই নিজেই নিজের পরিপূরক হও। কারণ, জীবনে আসল লড়াইটা নিজের সাথেই।
মা’ কে সত্যিই সেদিন অচেনা মনে হয়েছিল। একটা বাঙালি মেয়ের এত মনের জোর? সাধারণত বাঙালি মেয়েরা খুব নরম মনের হয়। মা’ র বলা কথাগুলো সেদিন ওর খুব কাজে লেগেছিল। কলেজে তিনবছর, ইউনিভার্সিটিতে দুবছর আর চাকরি পাওয়ার পর আরো একবছর শাক্য ওর সঙ্গে চুটিয়ে প্রেম করেছে। সবকটা প্রেমের গল্পে যেমন হয়, তেমন ওদের গল্পেও সংসার করার পরিকল্পনা ছিল। সন্তান, সংসার- এইসব স্বপ্নগুলো নিকিতার কেন এত গভীরে চলে গিয়েছিল সেই সময়ে তা ও আজও বুঝতে পারে না। হয়ত বাবা-মা’ র ভেঙে যাওয়া সম্পর্কে ও কোথাও একটা নিরাপত্তাহীনতার বোধে ভুগত। শাক্যকে আঁকড়ে জীবনে নিরাপত্তার উত্তাপ খুঁজতে চেয়েছিল। এই খুঁজতে চাওয়াটা কেমন যেন আর্থলিং-এর মতো হয়ে গিয়েছিল।
বম্বে থেকে ফিরে একটা কফিশপে দুজনে বসেছিল। বম্বেতে প্রায় একমাসে মাত্র দুবার কথা বলেছে শাক্য। তাও নিকিতাই ফোন করেছিল। খুব ব্যস্ততায় শাক্যর কথা বলার সময় হয়নি।
-সারাদিনের এত পরিশ্রমের পর ফোনে কথা বললে খুব মাথা ব্যথা হয়।
নিকিতা আর কথা বাড়ায় নি। ফেসবুকে বা হোয়াটস্যাপে শাক্য প্রায় রাত দেড়টা দুটো অব্ধি অনলাইন থাকত। নিকিতা অপেক্ষা করত, এই বুঝি কোন মেসেজ আসবে। নিকিতা মেসেজ করলে অবশ্য উত্তর দিত। এইটুকুই।
কফিশপের একটা ভূমিকা আছে ওদের প্রেমজীবনে। কলেজের কাছে একটা কফিশপেই প্রথম শাক্য ওকে বলেছিল, মুগ্ধতা জমে জমে ভালবাসা হয় কিনা জানিস?
নিকিতা মাথা নেড়ে বলেছিল, ও জানেনা।
-আমার মনে হয়, হয়ত হয়। আর নিকি আমি যদি বলি, আমি এই ভালবাসায় গলে যেতে চাই, সারাজীবন। তুই কি বিশ্বাস করবি?
নিকিতা বিশ্বাস করেছিল। যাকে ভাল লাগতে শুরু করেছে সে যখন এইকথা বলে বেশিরভাগ মেয়েই বোধহয় তখন সত্যি সত্যিই গলে যায়। শাক্য পড়াশুনায় ভাল। স্টুডেন্টস ইউনিয়নের লিডার। পলিটিক্স থেকে ফিলোজফি- কত থিওরো শাক্যর ঠোঁটের গড়ায়। শাক্যকে ভাললাগার প্রকৃত কারণ কি এগুলোই? না, শাক্যর মধ্যে ও একটা আশ্রয় খুঁজতে চেয়েছিল?
-আমার শ্বশুরমশাই ভর্তি এই হাসপাতালে। অঙ্কোলজিতে ছিল। এখন আই সি ইউ তে। ডাক্তার জবাব দিয়ে দিয়েছে।
লম্বা করে একটা শ্বাস নেয় শাক্য। লনের বেঁটে গাছগুলোর মাথায় হাসপাতালের কৃত্রিম আলো এসে পড়ায় আরো উজ্জ্বল লাগছে জায়গাটা। প্রতিদিন নিয়ম করে ছেঁটে ফেলা হয় মরা পাতা। কচি পাতাগুলো আলোর আদর মেখে আরো সবুজ হয়ে উঠছে।
-প্রেয়িং ফর দ্য বেস্ট। বেড নম্বর বল। আমার এখন মাসখানেক নাইট ডিউটি।
-তোকে ধন্যবাদ দেব না। গার্গী এতদিন একাই সব সামলাচ্ছিল। আমি তো যাস্ট দুদিনের জন্য এসেছি। পরশু ইন্দোনেশিয়া চলে যাব। অফিস ট্যুরে। তোর সাথে পরিচয় করিয়ে দেব। বড্ড অসহায় ওর অবস্থা। বাবা মায়ের একমাত্র মেয়ে। আর কেউই নেই ওদের পরিবারে। আমার অফিসের এত চাপ। সময় দিতে পারিনা ওদের।
ঠোঁটের গোড়ায় হাসির আভা এনে নিকিতা বলে, চিন্তা করিস না। সব ঠিক হয়ে যাবে নিশ্চয়ই।
-না রে কিচ্ছু ঠিক হবে না। আমার বিয়ের আগে থেকেই উনি ভুগছিলেন। আমার সঙ্গে গার্গীর আলাপই চেন্নাই এপোলো-তে। আমি এসেছিলাম বন্ধুর বাবাকে দেখতে।
কথার তোড়ে কথা বলতেই থাকে শাক্য।
-আজ আমাদের বিবাহবার্ষিকী। প্রথম বিবাহবার্ষিকী। গার্গীর বাবার যা অবস্থা আজ সকালেই কিছু একটা অঘটন ঘটে যাবে এরকমটাই মনে হচ্ছিল। এই কয়েকদিন ধরে রাত জেগে জেগে গার্গী খুব ক্লান্ত। তাই একরকম জোর করেই আজ বাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছি ওকে। আমি আছি আজ রাতে। ও বলেছিল এখানে হাসপাতালেই একসাথে থাকি। আমি রাজি হইনি।
একটা অদ্ভুত করুণ অথচ বিদ্রূপের হাসি খেলে গেল শাক্যর ঠোঁটে। নিকিতার দৃষ্টি এড়াল না।
-আমি খুব পাপী। তাই গার্গীর মতো মেয়েকে সুখ দিতে পারিনা। তোকেও সুখ দিতে পারিনি কখনো। কিন্তু বিশ্বাস কর, আমি চেয়েছিলাম। তোকে সুখী করব ভেবেছিলাম। বাড়ির লোকের এত চাপ নিতে পারিনি। তুই পাঞ্জাবী, তোর বাবা-মায়ের বিচ্ছেদ এগুলো কোন কারণ নয় নিকি। আমি মা’ কে রাজি করাতে পারিনি। মা হার্টের পেশেন্ট। তোকে কিছুতেই মেনে নিতে পারল না। তার কারণ আমি আজও বুঝিনা। গার্গীর সঙ্গেও যে মায়ের খুব বনিবনা হয়, তা নয়। গার্গী তো ওর বাবা-মায়ের সাথে থাকে আমি যখন ট্যুরে যাই।
-পাঞ্জাবী নই। আমার বাবা হরিয়ানভি আর মা বাঙালি। তুই এই ভুলটা কলেজের প্রথমদিন থেকেই করে আসছিস। উত্তরভারতে সিং সারনেম মানেই পাঞ্জাবী নয়। জাঠ, হরিয়ানভি, ইউপি-র লোকেদেরও সিং টাইটেল হয়।
শাক্য নিকিতার মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে।
-মনে আছে রে আমার। সব মনে আছে। সেই প্রথমদিন তোকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, বাংলা বোঝো তুমি? তুই ‘শেষের কবিতা’ -র কয়েকটা লাইন বলেছিলি। এখনও স্পষ্ট মনে আছে…
-থাক। এখন এই হাসপাতালে তোকে ‘শেষের কবিতা’ বলতে হবে না। আমিও পাগল। পাঞ্জাবী-হরিয়ানভি জেনেই বা তোর কী কাজ?
-না তুই ঠিক বলেছিস। এত জায়গায় অফিস ট্যুরে যাই, শুধু কাজ সেরে ঘরে ফেরবার তাড়া। ভাল করে দেখিই না সেই জায়গা, লোকজন, ভাষা। অথচ একদিন বিপ্লব-টিপ্লব কী সব স্বপ্ন দেখতাম। নিজের জীবনেই কোন বিপ্লব করতে পারলাম না। নিজের ইচ্ছে কারোর ওপর চাপিয়ে দিতেও পারলাম না। আর এখন তো শালা কর্পোরেটের দাস। রিসেশনের পর থেকে শুধু চাপ আর চাপ।
আবার একটু দম নেওয়ার জন্য থামে শাক্য। আসলে মা চায়নি আমার বিয়ে হোক। তুই আমার জীবন থেকে চলে যাওয়ার পর মা বেশ ভালই ছিল। গার্গীকে বিয়ে করার পর আবার অবসেসিভ কম্পালসিভ ডিসওর্ডারটা বেড়েছে।
-এগুলো এখন থাক। আমার আজ নাইট আছে। তুই বাড়ি চলে যা। প্রথম বিবাহবার্ষিকী একসাথে থাক। আমি তো রয়েছি। যদিও কাজের খুব চাপ। শৈবালদা রয়েছে, ঠিক সামলে নিতে পারব। তুই বাড়ি যা। এইটুকু ভরসা রাখ।
শাক্য হাতটা নিকিতার হাতের ওপর রেখে বলে, তোর কাছে ঋণী আর অপরাধী হয়ে রইলাম। আমি তখন…
-প্লিজ এসব বলিস না। কোন ঋণ, অপরাধ নেই। তুই বাড়ি যা। গার্গীর সাথে আজকের দিনটা থাক। এদিন বারবার আসেনা জীবনে। আজকের দিনটা চলে গেলে খুব আপশোষ হবে তোদের দুজনের।
শাক্য হাতটা সরিয়ে নিয়ে নিজের কপালে রাখে। বাড়ি গেলেই কি শান্তি? বাবার জন্য গার্গীর টেনশন থাকবেই। একবার মনে হচ্ছে বুড়োকে ভেন্টিলেশনে রেখে যাই। আজকের দিনটা কোনমতে না টিকলে যে আমাদের বিয়ের দিনটাই একটা শোকদিবস হয়ে থাকবে বাকিজীবন!
-আজ কয়েকবছর ধরে চিকিৎসার খরচ টানতে টানতে আমার নিজের আর গার্গীর রসদও প্রায় তলানিতে। ভেন্টিলেশনের অত খরচও সামলাতে পারব না। এই কারণে বাড়ি যেতেও সাহস পাচ্ছি না।
নিকিতার যেন জেদ চেপে গেছে, যেভাবেই হোক শাক্যকে বাড়ি পাঠাবে ও।
-তুই আমার ওপর একটু ভরসা রাখ। বাড়ি চলে যা। আমি বলছি কিচ্ছু হবে না। তোর আজকের দিনটা স্পয়েল হবে না। তুই প্লিজ আমার এই অনুরোধটা রাখ। বাড়ি চলে যা।
শাক্য শেষপর্যন্ত রাজি হয়। গার্গীর বাবার পেশন্ট ডেটাবেসে গার্গী আর শাক্যর নামের সাথে নিকিতার নাম আর ফোন নম্বরও এমার্জেন্সি কন্ট্যাক্ট ও ফ্যামেলি মেম্বার হিসাবে যোগ করে দেয় শাক্য। নিকিতার হাতে আরেকবার আলতো চাপ দিয়ে শাক্য চলে যায়। ওর চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে নিকিতা নিজের মনেই বলে ওঠে, তুই কোন অপরাধ করিস নি।
রাত দুটো। আইসিইউতে ডিউটি নার্স সুতপা রায়, নিকিতার বন্ধু। ফোনে কাকে যেন ডায়াল করছে।
-কোন বাড়ির লোককে ফোন করছিস?
-হ্যাঁ, বেড নম্বর ২০২, পেশেন্টের একটা এট্যাক হয়ে গেছে। বাড়ির লোককে খবর দিতে হবে।
-কোন পেশেন্ট? ২০২? না, ফোন করিস না তুই। একটু দাঁড়া।
-কী বলছিস পাগলের মতো? বাড়ির লোককে ফোন না করলে কী কাণ্ড হবে বুঝতে পারছিস? পেশেন্ট তোর কেউ হয়?
-হ্যাঁ, আমার রিলেটিভ। আমার নাম দেখ এমার্জেন্সি কন্ট্যাক্টে আছে। তুই একটু অপেক্ষা কর। আমি দেখে আসি। প্লিজ।
নিকিতা ভেতরে যায়। আইসিইউ-এর নার্স ডাক্তাররা সবাই নিকিতাকে হাসপাতালের কর্মী হিসাবে চেনে না। পেশেন্টের বাড়ির লোকই মনে করে। একজন নার্স এগিয়ে এসে বলে, কোন আশা নেই। উনি যেকোন মুহুর্তে…
চোখের তারা স্থির হয়ে আসা বৃদ্ধর মাথার পাশে নিকিতা এসে দাঁড়ায়। জীবন শুধু বঞ্চনাই দিয়েছে নিকিতাকে। প্রথমে বাবা, তারপর শাক্য- একে একে সবাই ছেড়ে গেছে। এরা প্রত্যেকে বেঁচে আছে কিন্তু সবাই একটা না ফেরার দেশে চলে গেছে। এই অচেনা বৃদ্ধ মানুষটিও তার পরিবার ও কাছের মানুষদের ছেড়ে অচিনপুরে চলে যাচ্ছেন। আমরা সবাই আসলে সেই অচিনপুরেরই যাত্রী। না ফেরার দেশের দিকে পা বাড়িয়েই আছি।
কেমন হয়, যদি এক্ষুণি ফোন করে শাক্যকে খবরটা দেয়। শাক্যর বিবাহিত জীবনের প্রথম একবছর পূর্ণ হলো। নিকিতার জীবনে মাথা রাখার মতো কোন চওড়া কাঁধ নেই। শাক্যর জীবনে আশ্রয়ের অভাব বোধহয় নেই। কেমন হয় সেখানে যদি জীবনভর একটু দীর্ঘশ্বাস, একটু বিষাদ, একটু তেতোভাব লেগে থাকে? ডিউটি নার্সের টেবিলের দিকে নিকিতা চলে যায়।
-একদিনের জন্য ভেন্টিলেশনে রাখতে কত খরচ?
-কী বলছিস? বাড়ির লোকের পারমিশান ছাড়া হয় নাকি? আর তোর নিজের কেউ?
-হ্যাঁ, আমার নিজের আংকেল। আমি দায়িত্ব নিচ্ছি। কত টাকা লাগবে বল, আমি জমা দিচ্ছি। তুই আজকের রাতটার জন্য ওনাকে ভেন্টিলেশনে দেওয়ার ব্যবস্থা কর প্লিজ।
আগে টাকা জমা দিতে হবে কিন্তু নিকি। তা নাহলে কোন ব্যবস্থাই করা যাবে না।
নিকিতা ক্রেডিট কার্ডটা পার্স থেকে বার করতে করতে নিজের মনে বলে,
-শাক্য, আজকের রাতটা আমি তোর বিয়েতে যৌতুক দিলাম
Anim pariatur cliche reprehenderit, enim eiusmod high life accusamus terry richardson ad squid. 3 wolf moon officia aute, non cupidatat skateboard dolor brunch. Food truck quinoa nesciunt laborum eiusmod. Brunch 3 wolf moon tempor, sunt aliqua put a bird on it squid single-origin coffee nulla assumenda shoreditch et. Nihil anim keffiyeh helvetica, craft beer labore wes anderson cred nesciunt sapiente ea proident. Ad vegan excepteur butcher vice lomo. Leggings occaecat craft beer farm-to-table, raw denim aesthetic synth nesciunt you probably haven't heard of them accusamus labore sustainable VHS.
Anim pariatur cliche reprehenderit, enim eiusmod high life accusamus terry richardson ad squid. 3 wolf moon officia aute, non cupidatat skateboard dolor brunch. Food truck quinoa nesciunt laborum eiusmod. Brunch 3 wolf moon tempor, sunt aliqua put a bird on it squid single-origin coffee nulla assumenda shoreditch et. Nihil anim keffiyeh helvetica, craft beer labore wes anderson cred nesciunt sapiente ea proident. Ad vegan excepteur butcher vice lomo. Leggings occaecat craft beer farm-to-table, raw denim aesthetic synth nesciunt you probably haven't heard of them accusamus labore sustainable VHS.
Anim pariatur cliche reprehenderit, enim eiusmod high life accusamus terry richardson ad squid. 3 wolf moon officia aute, non cupidatat skateboard dolor brunch. Food truck quinoa nesciunt laborum eiusmod. Brunch 3 wolf moon tempor, sunt aliqua put a bird on it squid single-origin coffee nulla assumenda shoreditch et. Nihil anim keffiyeh helvetica, craft beer labore wes anderson cred nesciunt sapiente ea proident. Ad vegan excepteur butcher vice lomo. Leggings occaecat craft beer farm-to-table, raw denim aesthetic synth nesciunt you probably haven't heard of them accusamus labore sustainable VHS.