অমানিশা

Magazine
sunday story amanisha
–তমাল বন্দ্যোপাধ্যায়
সত্যি কথা বলতে কী, আমার আর আমার মায়ের সম্পর্কটা যে ঠিক কী ধরণের তা আমি নিজেই বুঝি না। কী ভাবে বললে বোঝানো যাবে জানি না, আসলে আমার সঙ্গে আমার মায়ের তেমন ভাবে বলার মতো যেন কোনও মিলই নেই। একমাত্র এই গুমড়ে থাকা স্বভাবটা ছাড়া আমাদের আর কোথাওই কোনও মিল নেই, তবু হাজার হোক রক্তের সম্পর্ক বলে কথা, বললেই তো আর এতো বড় ব্যাপারটা রাতারাতি মিথ্যে হয়ে যেতে পারে না কিন্তু আমাদের দুজনেরই এতো ঘন ঘন কেন যে এতো রাগ হয় কে জানে ! আর যখন রাগ হয় মুখ দুটো দেখে মনে হয় চরাচর জুড়ে ফুঁসতে থাকা ঘনায়মান মেঘ। টসটস করছে, থসথস করছে। চারপাশটায় কেমন যেন গুমোট আবহাওয়া, বাইরেটা থমথমে কিন্তু ভেতরে কোথাও অনেকদিন ধরে জমে উঠছে অনেককালের দীর্ঘশ্বাস।
তাছাড়া আমাদের মধ্যে ফারাকটা এতোটাই প্রকট যে আমাদের দেখে যে কারুরই মনে হতে পারে আমরা দুজন যেন একেবারেই যাকে বলা যায় সুমেরু আর কুমেরু বা শুক্লপক্ষ আর কৃষ্ণপক্ষ। আমার মা অসামান্য সুন্দরী, নিখুঁত চোখ নাক মুখ, নির্মেদ সুষম দেহবল্লরী, দুধে হলুদে পেলব ত্বকে মাছি বসলেও পিছলে পড়ার সমূহ সম্ভাবনা। আমার মতো এক অষ্টাদশী কন্যার মা অথচ এখনও রূপ এতোটুকুও টাল খায়নি। ওরা নড়াইলের বদ্যি বংশ, এদেশের বাপের বাড়িতে দুর্গাপুজো হয়, সেজকাকা বিলেতে থাকে এই সব নানান সাত সতেরো ব্যাপার নিয়ে একধরণের নাছোড়বান্দা অহংবোধ তো আছেই, তার সাথে শ্বশুরালয় মানে আমাদের এই বাড়ির সব কিছু নিয়েই তার বিরক্তি আর অভিযোগমালা যেন একজন্মে শেষ হওয়ার নয়।
আর তার উলটো দিকে আমার কথা যতো কম বলা যায় ততোই ভালো। মার তুলনায় আমি মাথায় বেশ খাটো, ঢপঢপে স্বাস্থ্য, মুখটা গোলাকার, ভোঁতা নাক, পুরু ঠোঁট, চোখের কোনে তেমন কোন ধার নেই, মণিতে দ্যুতি। আমার গায়ের রঙ অনেকটাই ময়লাটে, চামড়া খসখসে তৈলাক্ত, গালে ব্রণর প্রকোপ অসহ্য, কোঁচকানো চুলগুলো স্প্রীং-এর মতো বেয়ারা আর মোটা। যতোই আঁচড়াই না কেন রুক্ষ চুল বাগে আনা যায় না, যতো দামী সাবান মাখিনা কেন ত্বক বদলায় না, যতোই পিম্পল ক্রিম লাগাইনা কেন ব্রণ কমার বদলে বেড়েই যায়। তখন সব রাগ গিয়ে পড়ে লাল মাথা আগ্নেয়গিরির মতো গাল ফুঁড়ে ওঠা ওই ব্রণগুলোর উপর। অপরিনামদর্শী আঙুলগুলো দিয়ে ওগুলোকে গায়ের জোরে টিপে দিই, নখের মাথা দিয়ে খুঁটে ফেলি আর ওগুলো দাগ ছেড়ে যায়, স্থায়ী গর্ত রেখে যায়।
এতো সব সত্বেও হ্যাক থুঃ হয়ত বলা যেত না কিন্তু ওই মহিলার পাশাপাশি একছাদের নিচে থাকার জন্য কিছু খেসরত তো দিতেই হবে। সামনে হয়ত কেউ কিছু বলে না কিন্তু আমি জানি পেছনে ওরা ফিসফিস করে। অমন লাবণ্যময়ী মায়ের এমন হতকুচ্ছিত মেয়ে কী করে সম্ভব ! এ আবার অ্যাডপ্ট করা বা কুড়িয়ে টুড়িয়ে পাওয়া বাচ্চা নয় তো ! কী কুক্ষণের ফলন কে জানে ! ওরা মুখ টিপে হাসে। হয়ত এমনিই হাসে, একেবারেই অন্য প্রসঙ্গে হাসে, নিজেদের মধ্যে হাসে কিন্তু আমার পা থেকে মাথা পর্যন্ত অস্থির অস্থির লাগে, ভেতরটা আনচান করে ওঠে, সন্দেহে কানখাড়া। আত্মীয় প্রতিবেশী পরিচিত অপরিচিতের বিয়ে পৈতে অন্নপ্রাশন বাড়ি বা নানান পাবলিক গ্যাদারিং-এ গেলে লোকজনকে চাপা স্বরে হাসতে বা কথা বলতে দেখলে অসহায় লাগে, মনে হয় নির্ঘাৎ আমাদের নিয়েই কথা বলছে। হাড়পিত্তি জ্বলে যায়, মনে হয় বলি সব সময় অতো দাঁত বার করার কী আছে? মনে হয় চিৎকার করে বলে উঠি অতো ফিসফাসের কী আছে? যা বলার জোরে জোরেই বলুন না, সামনে এসে সোজাসুজি বলুন।
আসলে আমাকে দেখতে একেবারে বাবা বসানো। আনুপাতিক হারে বলতে গেলে বলতে হয় আমার সবকিছুর শতকরা সাতাশি ভাগ জুড়ে রয়েছে আমার বাবা আর মা বাকি তেরো। তেরো আনলাকি নাম্বার, তাই এতো বিপত্তি। যাই হোক, বাবার কথা যখন এলই তখন বলি মাঝে মাঝে মনে হয় আমার বাবা মানুষটা পৃথিবীর সবচেয়ে করুণতম মানুষদের মধ্যে একজন। চাকরি করেন মোটামুটি ভালো পদেই। রাজ্য সরকারের এক আধারুগ্ন অথচ ব্যস্ত দপ্তরের তলার দিকের র‍্যাঙ্কের অফিসার। অফিসে লোকে ওকে স্যার স্যার বলে, চেয়ারে বসলে অনেকে ‘বস’, কিন্তু বাড়িতে ফিরলে ছবিটা পুরো উল্টো। তখন তাকে দেখলে মনে হয় যেন গৃহকর্ত্রীর বশংবদ ও অতি অনুগত এক ভৃত্য অথবা কোনও এক অপরাধী যে বিনা অনুমতিতে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ কোনও ব্যক্তির জন্য কঠোরভাবে সংরক্ষিত অঞ্চলে ভুল করে প্রবেশ করে ফেলেছে। কুতকুতে দৃষ্টি, সব ব্যাপারেই সংকুচিত, বিনয়াবনত, কৃতার্থ।
বাবাকে স্থূলকায়ই বলা যায়, একটু বেশিই নার্ভাস প্রকৃতির, তার উপর বড্ড ঘামে। অফিস থেকে ফিরে শীতকাল ছাড়া সারা বছরই খালি গায়েই থাকে, পরনে দড়ি বাঁধা চেক চেক ঢোলা পাজামা। লোমশ উর্ধ্বাংশ অনাবৃত, মুখে নিঃশর্ত প্রসন্নতা। ক্রমশ সামনের দিকে বেড়ে চলা পেটটার জন্য মা’ র কাছে নিত্যদিন খোঁটা শুনছে, উনপঞ্চাশ ছুঁতে না ছুঁতেই চেহারাখানা দিনকে দিন যে রকম বেঢপ হয়ে উঠছে সেই নিয়ে টেরা বাঁকা নানা মন্তব্য শুনছে তবু কোনও হেলদোল নেই। থাকবে কী করে, তাহলে তো মা’ র কথা মতো সকালে উঠে জগিং-এ বেরতে হয় বা ছাদে গিয়ে পাশের বাড়ির ভট্‌চাজ কাকুর মতো নিয়মিত ফিজিকাল এক্সারসাইজ। আর সব ব্যাপারে এতো কর্মঠ কিন্তু এই ব্যাপারে কেন যে লোকটার গায়ে এতো জ্বর আসে কে জানে? কাঁচুমাচু মুখ করে বলে “ছেড়ে দাও না, প্লিজ। ভুঁড়িটা বাড়ির ধাত বুঝতে পারছ না, বংশের ধাত। এ কিছুতেই কিছু হওয়ার না, কিছু করেই কিছু না …”। মা কটমট করে তাকায়, চোখের কোনে প্ল্যাটিনাম ব্লেডের ধার “ঠিক আছে তাহলে বেরবে না, আমার সঙ্গে রাস্তায় বেরবে না …”। বাবার তা-ই সই। লোকটা হাসে, অম্লান বদনে হাসে।
পর্দার আড়াল থেকে শুনে ফেলে আমার ভীষণ রাগ হয়। লোকটার জন্য ভয়ানক দুঃখ হয়। ওঁর প্রতি সমবেদনা বিষের মতো দৌড়ে যায় শিরায় শিরায়। এ কী ধরণের মহিলা? নিজের স্বামীকে এতো বড় কথাটা বলতে পারল? যে লোকটা এতো চরিত্রবান এতো ভদ্র এতো ভালো, স্ত্রীর প্রতি নিবেদিতপ্রাণ, স্ত্রীকে নয়নে হারায়, তাকে খুশি করার জন্য কী না করে তাকে এতো বড় কথা বলতে পারল ! কী জঘন্য অপমানজনক কথা ! ওঁর জায়গায় আমি থাকলে তো মুখের উপর যাতা বলে দিতাম, বাড়িতে দক্ষযজ্ঞ করে দিতাম। আর এই লোকটাই বা কী? কোন ধাতুতে তৈরি? এতো বড় কথা শুনেও দাঁত বার করে হাসছে ! এই লোকটার প্রশ্রয়েই এতো বেড়েছে, কিছু না বলে বলে মাথায় চড়ে বসেছে। সুন্দরী তো সুন্দরী, তাতে কি মাথা কিনে নিয়েছে নাকি? ধরাকে সরা জ্ঞান করছে?
sunday story amanisha
অথচ সেই মহিলাকে তুষ্ট করার জন্য বাবার চেষ্টার অন্ত নেই। এই তো কিছুদিন আগেই মায়ের জন্মদিনে সারপ্রাইজ দিতে টাউনে সদ্য চালু হওয়া দেশ বিখ্যাত জুয়েলারি কোম্পানির ব্রাঞ্চ শোরুম থেকে হিরের দুল কিনে এনে হাজির। লাখ টাকার কাছাকাছি দাম। তার কিছু মাস আগে যখন সরকারী মিটিং অ্যাটেন্ড করতে ফ্লাইটে গুয়াহাটি গিয়েছিল ওখান থেকে অতি দামী আস্‌লি অসমিয়া সিল্ক। অথচ সেই লোকটাকে অফিস থেকে ফিরে বেশিরভাগ দিনই চা-টা পর্যন্ত নিজে করে খেতে হয়। কাজের মাসির রেখে যাওয়া খাবার নিজেই মাইক্রোওভেনে গরম করে নিতে হয়। নিজের শখ সৌখিনতা বলে কিছু নেই, শুধু মানুষটা একটু খেতে ভালোবাসে তাই ছুটির দিনে ভেটকির পাতুরি, চেতল মাছের কালিয়া ইত্যাদি তেমন বিশেষ কিছু খেতে ইচ্ছে হলে নিজেই কাঁধে গামছা চাপিয়ে রান্নাঘরে ঢুকে পড়ে। ভাব দেখে মনে হয় বলতে চায় নিজের ব্যক্তিগত চাহিদা পূরণ করতে খামোকা আর বউকে কষ্ট দেওয়া কেন বাপু? রান্নাঘরে বড্ড গরম, তেল কালি ধোঁয়া, বউ-এর রঙ পুড়ে যাবে বা গরমতেল ছিটকে যদি মুখে চোখে এসে লাগে, তাহলে কী হবে !
দেখে মাঝে মাঝে মনে হয় সুন্দরী বউ এর মুখে একটু হাসি দেখার জন্য লোকটা সব কিছু করতে পারে, সে ভাবে বললে তিনতলার ছাদ থেকে ঝাঁপ মেরে মরে পর্যন্ত পারে। কিন্তু বউ-এর মুখে তো হাসির দেখা মেলে না। কেন হাসি নেই? কীসের অভাব যে মহিলা হাসে না? মাকে কি জোর করে বিয়ে দেওয়া হয়েছিল, পাত্র হিসেবে ওর কি বাবাকে কোনওদিনই পছন্দ হয়নি, বাবা কি ওকে কাঙ্খিত যৌণসুখ দিতে পারেনি, বিয়ের আগে সুদর্শন কোনও প্রেমিক ছিল? নাকি ওর ঘণিষ্ঠ বান্ধবী সুমি মাসি যেটা বলেছিল সেটা সত্যি? আমার জন্মের বেশ কিছু বছর পরে মা নাকি চেয়েছিল ওর একটা পুত্র সন্তান হোক কিন্তু সেক্ষেত্রে আমার প্রতিপালনে অবহেলা হবে সেই আশঙ্কায় নাকি বাবা রাজি হয়নি? সেই নিয়েই কি ওর আমাদের ওপর রাগ? আমার ভাই হলে সে মা-র মতো ফুটফুটে সুন্দর হতেও পারত, তার দিয়ে তাকিয়ে গর্বে মায়ের বুক ফুলে উঠত আর তার মুখের হাসি জেগে থাকত সব সময়ের জন্য।
যাগ্‌গে যা হয়নি, হয়ত ভালোর জন্যেই হয়নি। কিন্তু যতো বড় হচ্ছি আমার ভেতর এমন সব অনুভূতি তৈরি হচ্ছে কেন? যতো দিন যাচ্ছে আমি যেন মহিলাকে একেবারে সহ্য করতে পারছিনা ! দিনদিন যেন একে অপরের চক্ষুশূল হয়ে উঠছি? মহিলা ছোট থেকেই আমার প্রতি বড্ড বেশি নির্দয় আর ক্ষমাহীন। সেই সময় থেকে ওর ভয়ে সব সময়ে তটস্থ হয়ে থাকতাম। বাবার ইচ্ছের বিরুদ্ধে আমায় ইংরেজি মাধ্যমে ভর্তি করেছিল, ওসব স্কুলে না পড়লে নাকি আমিও এই ফ্যামিলির ধারায় বয়ে গাঁইয়া আনসফিস্টিকেটেড ভূত তৈরি হব। সেই নার্সারি ক্লাস থেকে ওর তত্ত্বাবধানে সেই যে শুরু হয়েছিল আমার প্রাণান্তকর কড়া রুটিন, ঘুম ভাঙার পর থেকে রাতে চোখ বোঁজার আগে পর্যন্ত আজও তাতে ছেদ পড়েনি। অবশ্য মাধ্যমিক স্তর পেরিয়ে সায়েন্স নেওয়ার পর এই শেষ দেড় বছর আমার পড়াশুনোর উপর ওর নিয়ন্ত্রণ অনেকটাই কমে গেছে কিন্তু খবরদারি বিন্দুমাত্র কমেনি। জয়েন্ট এনট্রান্স লিস্টের প্রথম দিকে আমার নাম জ্বলজ্বল করতে না দেখার আগে পর্যন্ত তার নাকি শান্তি নেই ! সে নির্ঘাৎ নিজের ইগো স্যাটিসফাই করার জন্য, আমাকে ভালোবেসে নিশ্চয়ই না।
শুধু তাই না, আগে কিছু কিছু ব্যাপার অতো মাথায় খেলত না কিন্তু আজকাল কিছু কিছু ব্যাপার আমার সহ্যের সীমা ছাড়িয়ে যাচ্ছে। পাশের বাড়ির দীপঙ্কর ভট্‌চাজ কাকুর আচরণ আমার অনেকদিন থেকেই সন্দেহজনক লাগে। সাত সকালে উঠে দোতলার ছাদে শর্টস আর স্যান্ডো গেঞ্জি পরে তার যে অতো শরীরচর্চার বহর সে কি মাকে দেখানোর জন্য? বিকেলবেলায় অফিস থেকে ফিরে গান নিয়ে বসলে তার কি বেছে বেছে শুধু গদগদ সব প্রেমের গানগুলোই মনে পড়ে “আমি চিরতরে দূরে চলে যাব তবু আমারে দেব না ভুলিতে / আমি বাতাস হইয়া জড়াইব কেশ বেণী যাবে যবে খুলিতে …”। আমরা কিছু বুঝিনা ভেবেছে, বাবা না হয় সরল সোজা মানুষ কিন্তু এসব শয়তানি আমি ধরতে পারব না, কী ভেবেছেটা কী? সেদিন গাইছিল “আমি তোমার সঙ্গে বেঁধেছি আমার প্রাণ সুরের বাঁধনে”, গাওয়ার পর ব্যালকনিতে এসে মা-কে বলছিল “কী বৌদি শুনলেন, কেমন লাগল? ” মা-ও কম যায় না, স্মিত হেসে বলল “বেশ ভালো।” কোনও মানে হয় ! আর সেদিন তো লোকটা ছাদের রেলিং ধরে ঝুঁকে পড়ে মা-কে চন্দ্রমল্লিকা ফুল দিচ্ছিল “বৌদি, সবাই বলে নাকি আমার হাতে লাগানো গাছে ফুল হয় না। কিন্তু এইবার তো দেখছি বেশ হয়েছে, সবচেয়ে বড় ফুলটা আপনাকে দিলাম।” মা-ও কী যে নির্লজ্জ, ফুলটা হাত বাড়িয়ে নিয়ে নিল ! বাড়িতে আঠেরো বছরের একটা মেয়ে আছে, ভুলে গেছে নাকি? রাতে বাবাকে বললাম, সে লোক তো হেসেই উড়িয়ে দিল। তার কী কনফিডেন্স ! “না না ও কিছু না, ও কিছু না। দীপঙ্কর তোর মায়ের ফ্যান, অনেককাল থেকেই দারুণ ফ্যান।” ব্যাপারটা যে অতো সহজ না, কী করে যে এই লোকটাকে বোঝাই? ওই লোকটার চোখের চাহুনি স্বাভাবিক না, কী করে যে প্রমাণ করি?
মা অবশ্য ইদানীং বাড়ি থেকে খুব একটা বেরয় না। বেরলে আমি সঙ্গে থাকি আর অবধারিত ভাবে দেখি রাস্তার দুধারে পুরুষগুলো সব আড়চোখে আমাদের দিকে তাকাচ্ছে। বুড়োধুরো থেকে শুরু করে মাঝবয়সী কমবয়সী সব আমাদের দিকে তাকাচ্ছে। আমার দিকে না, সব চোখ মায়ের দিকে। এমনকি আমার বয়সী ছেলেগুলো পর্যন্ত ওর দিকে তাকাচ্ছে। সেদিন তো সুপার মার্কেটের মোড়ের মাথায় আমাদের ব্যাচের সবচেয়ে হ্যান্ডসাম আর এলিজিবল ছেলে কুন্তলটা পর্যন্ত ড্যাবড্যাব করে ওর দিকে … ! আমার সঙ্গে চোখাচোখি হয়ে যেতেই এক ঝাটকায় চোখ সরিয়ে নিল। ওর চোখে পাপ ছিল, না হলে ওরকম চোরের মতো চোখ সরিয়ে নেবে কেন? সব পুরুষের চোখেই পাপ থাকে। ওফ, ভাবতে পারা যায় না ! রাগে পা থেকে মাথা অবধি জ্বলে, মনে হয় গিয়ে চোখগুলো গেলে দিয়ে আসি। পুরুষ জাতটাই এইরকম, সব সমান। আমার বাবার মতো দু একটা ব্যতিক্রম ছাড়া সব সমান।
এই সব নানা কারণে মাথাটা অনেকদিন থেকেই ঠিক নেই। কিচ্ছু ভালোলাগে না। খুব একা, বঞ্চিত, অসহায় লাগে। শুধু মনে হয় কী করে ওই মহিলাকে শায়েস্তা করব, পদে পদে হেনস্তা করে ওর জীবন হেল করে তুলব যেমন করে ও আমার আর বাবার জীবনটা হেল করে তুলেছে। বাবাকে দিয়ে হবেনা, সে মোহগ্রস্থ। না হলে সেদিন দোতলার সিঁড়ি থেকে ওইভাবে পড়ে গেলাম। সে অভিনয় করে বা যা করেই হোক ওই রকম জোর শব্দে অতোগুলো সিঁড়ি গড়িয়ে নিচে এসে পড়লাম, অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার ভান করে অতোক্ষণ পড়ে থাকলাম অথচ ওদের দুজনার চোখে যে পরিমান আতঙ্ক দেখতে পাব আশা করেছিলাম তার দশভাগের একভাগও দেখতে পেলাম না। মা যদিও ঝাঁপিয়ে পড়ে আমার মাথায় জলটল দিয়ে টেনে তুলে যারপরনাই নাটুকে আন্তরিকতা দেখাতে চাইল কিন্তু তাতে আমার চিড়ে ভেজার না। বাবাকে বারবার বললাম মা-র হাতের গ্লাস থেকে সিঁড়ির ধাপে ছলকে পড়া জল থেকে এই বিপত্তি কিন্তু সে লোক বলল ওটা নাকি জাস্ট একটা অ্যাক্সিডেন্ট, তার পেছনে কিছুতেই মায়ের দায়টা দেখতে চাইল না, মহিলাকে তেড়ে ধমকে চরম কিছু বলে বসল না।
এই কদিন আগে যে সারাদিন না খেয়ে থাকলাম, মা যতোবার খাবার দিয়ে গেছে ততোবার যে ওগুলো কমোডে ফ্ল্যাশ করে দিয়ে উপোস করে থাকলাম, রাতে যখন খিদেয় মরে যাচ্ছি চিৎকার চেঁচামেচি করে বাড়ি মাথায় করছি মনে হল যেন কারও সে নিয়ে কোনও মাথাব্যথা নেই। মা-র নয় নেই কিন্তু বাবার …? সে তো চিৎকার করে এতো বড় অন্যায়ের একটা কৈফয়ত চাইতে পারত। টেবিল চাপড়ে বলতে পারত “মেয়ে খেয়েছে কি খায়নি সেটা দেখার দায়িত্ব কার? জবাব দাও। সারাদিন আমার মেয়ে না খেয়ে থাকল আর তুমি টেরটি পেলে না ! কেমন মা তুমি ! বাড়িতে কীসের জন্য আছ, একটা মাত্র মেয়ে তার যত্নআত্তিটুকুও ঠিক মতো হচ্ছে না। দুনিয়া রসাতলে যাক আগে আমার মেয়ে। নিজের দায়িত্ব পালন না করতে পারলে চলে যাও, বাড়ি ছেড়ে চলে যাও, জাস্ট গেট আউট।”
sunday story amanisha
আর সেদিন তো সব সীমা ছাড়িয়ে গিয়েছিল। সন্ধে সন্ধে হয়ে আসছে, বাবা তখন অফিস থেকে ফিরে সিঁড়ির নীচে স্কুটারটা রাখছে, হঠাৎ ওর চোখে পড়ে পেছনের বাগান থেকে বাড়ির একতলায় একটা সাপ ঢুকছে। বাবা বলল পাক্কা গোখরো, জাত সাপ, কামড় বসালেই সুনিশ্চিত মৃত্যু। বাবার চিৎকার শুনে মা টর্চ নিয়ে নেমে আসছে দেখে বাবা তো একেবারে বিচলিত হয়ে উঠল। সাপটা কোথায় ঢুকল সেটা না দেখে আগে ব্যস্ত হয়ে উঠল মাকে তেতলায় পাঠাতে। বলতে লাগল “তোমায় দেখতে হবে না, তুমি ওপরে যাও। যা দেখার আমি দেখছি, আমি আর মেয়ে দেখে নিচ্ছি। আমি গ্রামের ছেলে, এসব সাপ-খোপ আমার কাছে নতুন কিছু না, তুমি আগে ওপরে যাও, আমরা সামলে নিচ্ছি।”
তারপর সেই সাপের তো হদিশ পাওয়া গেল না ! সে যে কোথা দিয়ে ঢুকে কোথা দিয়ে বেরিয়ে গেল বোঝা গেল না। সে তো হতেই পারে, পেছনে বাগান থাকলে হতেই পারে কিন্তু আমার যেটা খটকা লাগল সেটা বাবার আচরণ। কী বলে সে মা-কে নিরাপদ রাখতে তিনতলায় পাঠিয়ে দিল আর আমাকে রেখে দিল নিজের সঙ্গে। আমার জীবনের কি কোনও দাম নেই, সুন্দরী বউই তার কাছে বেশি মূল্যবান হল? আমি কেঁদে ফেলেছিলাম, বাবাকে এর কারণ জিজ্ঞেস করায় সে হেসে উঠে বলেছিল “ওরে পাগলী, তোকে কী করে বোঝাই ! তুই যে আমার মেয়ে, আমার রক্ত, আমি আর তুই তো একই কিন্তু ওকে যে আমি অন্য বাড়ি থেকে বিয়ে করে এনেছি তাই ওকে আগে নিরাপত্তা দেওয়াটা আমার দায়িত্ব, আমার কর্তব্য।” কী কথা ! আর আমি যেন কেউ না, আমি যেন ফেলনা। আমি ওর রক্ত বলে সাপটা সামনে পেলে আমায় যেন ছেড়ে দিত ! উফঃ ! সাপটা আমায় কামড়াল না কেন? কাটলে আমার জ্বালা জুড়তো, বেঁচে যেতাম, এ জন্মের মতো বেঁচে যেতাম।
জানি জানি এ ব্যাপারে বাবা আমার কোনও উপকারে আসবে না। তার ভাবগতিক দেখে মনে হয় মা-র মতো একজন মহিলাকে পেয়ে তার জীবন ধণ্য হয়ে গেছে কিন্তু আমার তো ঠিক তার উল্টো ! ওই মহিলার জন্য আমার এই জীবন তো হেল হয়ে গেছে, পুরো নরক। তাই যা করার আমাকেই করতে হবে। মহিলাকে আমাকেই জব্দ করতে হবে, আমাকেই শাস্তি দিতে হবে। হবে মানে ফিউচার টেনস না, প্রেসেন্ট টেনস, প্রেসেন্ট পারফেক্ট। আমি শুরু করে দিয়েছি, ওকে উৎপীড়নের প্রক্রিয়া শুরু করে দিয়েছি। শারীরীক নিপীড়নের চেয়ে মানসিক নিপীড়ন অনেক শক্তিশালী তাই সেই পথেই এগোন শুরু করে দিয়েছি। ছাড়ব না, ও যেমন আমার জীবনের সবচেয়ে বড় অভিশাপ আমিও ওর জীবনের সবচেয়ে বড় অভিশাপ হয়ে দেখা দেব। আমার গর্ভধারিনী হলে কী হবে, ওই মহিলা তো আমায় চেনে না, আমি যে কতোটা ভয়ঙ্কর হতে পারি তা আমিই জানি।
আমার মিশন অলরেডি সাফল্যের মুখ দেখতে শুরু করে দিয়েছে। মায়ের নাকি রাতের ঘুম উড়ে গেছে। আমার পড়াশুনো নিয়ে দুশ্চিন্তায় নাকি ওর শেষ ছমাস ধরে ঘুমই আসছে না। কিছুতেই মেনে নিতে পারছেনা যে মেয়ে নাইনটি সিক্স পার্সেন্ট পেয়ে স্কুল বোর্ডের ফাইনাল পাস করল, ডিস্ট্রিক্টে র‍্যাঙ্ক করল তার ক্লাস ইলেভেনের পর থেকে ক্রমাগত এতো অধঃপতন কী করে হচ্ছে? দিন দিন স্কুলের পরীক্ষাগুলোয় পারফর্মেন্স এতো খারাপ কী করে হচ্ছে, আচার আচরণ স্বভাব চরিত্র দিন দিন কী করে এতো নিচের দিকে নামছে? পড়াশুনোয় এতোটা অমনোযোগ, এতোখানি ঢিলেমি, বলা নেই কওয়া নেই প্রাইভেট টিউশন কামাই, পদে পদে ওকে অপদস্ত করা, লোকের সামনে ওকে অপমান, ছোটখাট ব্যাপার নিয়ে খিটিমিটি, বাড়িতে নিত্য অশান্তি, সারাদিন মোবাইল হাতে নিয়ে সোসাল নেটওয়ার্ক সাইট খুলে বসে থাকা – আমি জানি এগুলো মা কিছুতেই সহ্য করতে পারবে না। যতো সহ্য করতে পারবে না ততো অসহায় হবে, ততো বিপন্ন, ততো কোণঠাসা। আর তাতে ওর রাতের ঘুম কমবে, একদিন একেবারেই ঘুম চলে যাবে। যাবেই তো, যাওয়াই তো উচিৎ। আমার জীবনটাকে এইভাবে বরবাদ করে দেওয়ার প্রধাণ কারণ হয়ে সে কী করে ঘুমোতে পারে, নির্বিঘ্নে কী করে ঘুমোতে পারে?
প্রত্যেকটা দিন, প্রত্যেকটা মুহুর্ত মানসিক অশান্তিতে ভুগতে ভুগতে, অনিদ্রায় টেনশনে অবসাদে ওর চোখে মুখে তার ছাপ পড়বে। চোখের তলায় কালি পড়বে, গায়ের রঙ চেপে যাবে, চুঁইয়ে পড়া গ্ল্যামার নষ্ট হবে, মুখে চোখের কোনে দেখা দেবে অজস্র বলিরেখা, পাক ধরবে চুলে আর আমার খুব আনন্দ হবে। তখন আসবে আমার শোধ নেওয়ার পালা। নিত্যদিন আমি ওকে মনে করিয়ে দেব দিন দিন তোমায় দেখতে কী বিশ্রীই না হয়ে যাচ্ছে? এককালে সোনার প্রতিমার মতো কী তোমার রূপ ছিল আর আজ কী হয়েছে ! কী জঘন্য, কী কুৎসিত ! আয়নায় দেখ নিজেই লজ্জা পাবে ! তুমি আমার সঙ্গে রাস্তায় বেরবে না, বাবার সঙ্গেও না। তুমি বাড়িতেই থাকবে, নিজের ঘরের মধ্যেই আটকা পড়বে, বন্দী। আমি অবশ্য তখন বাইরে আহা রে আহা রে করব, কিন্তু ভেতরে ভেতরে হাততালি দেব, লাফাব ঝাঁপাব। আমায় বলেছিলে না মনোচিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাওয়া দরকার, তখন দেখা যাবে কে মনোচিকিৎসকের কাছে যায়? আমার মতো মাও যেদিন সায়কায়াট্রিস্টের কাছে যাবে, মানে আমি যেতে বাধ্য করব সেদিন উচ্চস্বরে বলব মাই মিশন ইজ সাকসেসফুল, পারফেক্টলি সাকসেসফুল।
আমি নিজেই জানিনা আমি এ কোন দিকে এগোচ্ছি। মায়ের উপর নির্মম নিঃশব্দ অত্যাচার চালাতে গিয়ে এ কোন দিকে চলে আসছি। পড়াশুনোয় অনেক পিছিয়ে পড়েছি তো বটেই, যে সব বন্ধু বান্ধবীরা আমার চেয়ে অনেক পিছিয়ে ছিল তারা ক্রমান্বয়ে উপরে উঠে আসছে। যে ফিজিক্স কেমিস্ট্রি ম্যাথস আমার এতো প্রিয় ছিল সেই সব বইখাতা দেখলে আজকাল আমার কেমন যেন ভয় করছে। আমি পালাতে চাইছি আর দিন দিন আশ্রয় পাচ্ছি ইন্টারনেটের ভারচুয়াল দুনিয়ায়। সোসাল নেটওয়ার্কিং সাইটের আমার দুটো অ্যাকাউন্টে পাঁচ হাজার পাঁচ হাজার আমার দশ হাজার ফ্রেন্ডস। তাদের বেশির ভাগই নানা বয়সের নানান রকম পুরুষ। ওদের সঙ্গে আমি দিন রাত চ্যাট করি, চুটিয়ে ফ্লার্ট করি। দামী ক্যামেরায় দারুন দারুণ পোজে ছবি তুলে, মনের মতো এডিট করে বিউটি এফেক্ট দিয়ে প্রোফাইল পিকচারে আপলোড করি। এমনিতে আমাকে দেখতে যেমনই হোক সে সব ছবিতে আমায় স্বপ্ন সুন্দরীর মতো লাগে। এক একটা ছবিতে হাজারের কাছাকাছি লাইক পড়ে, পাঁচশ সাতশ কমেন্ট। পুরুষদের প্রশংসার চেয়ে সুখকর যেন নারীর জীবনে আর কিছু থাকতেই পারেনা। যে সব মেয়েরা বলে পুরুষদের অ্যাটেনশন তাদের ভালোলাগেনা তারা হয় অসুস্থ না হয় মিথ্যে কথা বলছে। আমার কাছে এখন পুরুষের অ্যাটেনশন পাওয়াটা নেশার মতো, এর চেয়ে বড় নেশা পৃথিবীতে আর কী আছে আমার জানা নেই।
অ্যাটেনশন আরও অ্যাটেনশন চায়। রোজ রোজ খিদে বাড়িয়ে দিয়ে আরও বেশি আরও বেশির দিকে হাত বাড়ায়। কোনওদিন অ্যাটেনশন কম পড়লে তাই অস্থির অস্থির লাগে, পাগল পাগল। তাই মরিয়া হয়ে উঠি, কী করলে সবচেয়ে বেশি অ্যাটেনশন পাওয়া যায় সেই চেষ্টায় মেতে থাকি। ইদানীং আমি ভয়ানক সাহসী হয়ে উঠছি, চ্যাটে সাহসী কথাবার্তা তো বটেই আজকাল আমি ভীষণ বোল্ড সব ছবি পোস্ট করছি। মেকাপ করছি, দক্ষ হাতে চোখ কাজলচর্চিত করছি, সংক্ষিপ্ত সব জামা কাপড় পরছি, শরীরের নানান বিপদজনক সব ভাঁজ, বিভাজিকা প্রদর্শন করে করে ছবি তুলে পোস্ট করছি। ভয়ানক আকর্ষণীয়া আবেদনময়ী হয়ে ওঠার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। বিভিন্ন ধরনের পুরুষরা আছে ওপাড়ে। ওরা ইনবক্সে নানা রকম কমেন্ট করে, প্রস্তাব পাঠায়, কেউ কেউ বিচিত্র সব আহবান করে বসে। সে সব কিছুতে আমি প্রতিক্রিয়া জানাই না কিন্তু মনে মনে ব্যাপারগুলোকে এনজয় করতে বাধা কোথায়। আমি তো সত্যি সত্যি ওদের আহ্বানে সাড়া দিতে যাচ্ছি না। হয়ত দিতেও পারতাম যদি বাস্তবেই আমি আমার ছবিগুলোর মতোই সুন্দরী হতাম। বাস্তবে দেখলে আমার সেই সব অনুরাগীদের নির্ঘাৎ মোহভঙ্গ হবে তাই আমি এই ভার্চুয়াল জগতের বাইরে পা দিতে চাই না ভুলেও।
sunday story amanisha
কিন্তু তাতেও কি আমি সুখে আছি? বিশ্বাস করুন সবাই, বিশ্বাস করুন আমার মনোচিকিৎসক শ্রীমতী শর্মিষ্ঠা দত্ত আমি মোটেও খুব একটা ভালো নেই। দিন দিন যেন কেমন একটা হয়ে যাচ্ছি ! মনের মধ্যেই কেমন একটা অচেনা অঞ্চলের দিকে চলে যাচ্ছি, কেমন যেন একটা অদ্ভুত ধোঁয়াশার আবর্তের মধ্যে এসে পড়েছি। কুয়াশার মধ্যে দিয়ে হাঁটছি যেন, পায়ের তলায় এখনও মাটি পাচ্ছি কিন্তু আর বেশিদিন মনে হচ্ছে পাব না। আজকাল পা বাড়াতে কেবলই খুব ভয় লাগছে, কী জানি যদি আর দু এক পা পর থেকে পায়ের তলায় মাটি না পাই। এগোতে এগোতে পৌঁছে যাই কিণারায়, তার পরেই তো খাদ, অতল গভীর খাদ। সেখানে পা পড়লে তো তলিয়ে যাওয়া ছাড়া আর কোনও উপায় থাকবে না। তখন তো হাজার চিৎকার করলেও কেউ আসবে না। বাবা, মা, বন্ধু বান্ধবী কেউ না ! তখন কী হবে, তখন আমার কী হবে ম্যাডাম?
না না আমায় ভুল বুঝবেন না, আমি কিন্তু দ্বন্দ্বে ভুগছি না, বিবেকের তাড়নায় কষ্ট পাচ্ছিনা, মোটেও ভয় পাচ্ছিনা। আমি নিশ্চিত, আমি মহিলাকে পছন্দ করিনা, যদিও ওই মহিলা আমার জন্য অনেক কিছু করেছে তবুও আমি নিশ্চিত আমি ওকে কোনওদিনই আর ভালো চোখে দেখতে পারব না। হ্যাঁ আপনি বলতেই পারেন আমি একচেটিয়া মহিলাকে দোষারোপ করে যাচ্ছি, ওর দিক থেকে সমস্যাটা দেখতে চাইছি না। হয়ত সেটা পুরোপুরি ভুল না কিন্তু আমি আর কীই বা করতে পারতাম। এই মহিলার ছায়া আমায় আজীবন যে কী ভাবে তাড়া করে নিয়ে বেরিয়েছে, হয়ত বা মরা না পর্যন্ত তাড়া করে নিয়ে বেড়াবে, সেটা জানলে আপনি আমার সমস্যাটা ঠিক মতো বুঝতেও পারতেন। আমার যন্ত্রণার জায়গাটা ধরতে পারতেন।
যাগ্‌গে ম্যাডাম, শরীরের যন্ত্রণা একরকম কিন্তু মনের যন্ত্রণা জিনিসটা এমনই পাতার পর পাতা লিখে গেলেও মনে হয় যেন কিছুই বলা হল না। আপনি আমার মা সম্পর্কে আমার কী কী মনে হয় লিখে রাখতে বলেছিলেন তাই লিখতে লিখতে এতোসব কথা লিখে ফেললাম। মনে যা যা আসবে তাই তাই আপনার দেওয়া এই খাতায় লিখে আপনাকে দেখাতে বলেছিলেন বলে একটানা বসে লিখে গেলাম। আপনি আমার মনোচিকিৎসক, চিকিৎসকের কাছে কিছু লুকোতে নেই তাই অকপটে লিখে গেলাম। আপনি আমায় খারাপ ভাবতে পারেন কি ভালো সেই সব ভয় সংশয়মুক্ত হয়ে লিখে গেলাম। আশা করি আপনি আমায় ভুল বুঝবেন না, ভুলেও আমার মায়ের কানে এসব কথা তুলবেন না। পড়েই খাতার স্পাইরাল বাইন্ডিং থেকে পাতাটা খুলে নিয়ে, ছিঁড়ে কুচিকুচি করে ডাস্টবিনে ফেলে দেবেন।
আর হ্যাঁ আর একটা কথা, আপনি এই খাতাটা আমার হাতে তুলে দেওয়ার আগে তার উপরে লিখে দিয়েছিলেন “অনীশার খাতা”। সেটা কেটে আমি মার্কার দিয়ে লিখে দিয়েছি “অমানিশার খাতা”। এমনিতে আমার নাম অনীশা হলেও, সোসাল নেটওয়ার্কিং সাইটে আমার নাম অমানিশা যার অর্থ আপনি বিলক্ষণ জানেন অমাবস্যার অন্ধকার। মনে হয় আমি ঠিকই করেছি, অনীশার ভেতরে যে অমানিশা বাস করে এই কথাগুলো ওই লিখেছে তাই এই খাতার নাম অমানিশার খাতা হওয়াই হয়ত ঠিক হবে। আশা করি আপনার চিকিৎসায় থাকতে থাকতে একদিন অমানিশা চিরকালের মতো ফুরিয়ে যাবে বা তার পোড়া ছাই এর মধ্যে থেকে ফিনিক্স পাখির জেগে উঠে আসবে অনীশা। তখন নিশ্চয়ই এই খাতাটার আর প্রয়োজন থাকবে না। আপনার চিকিৎসার সাফল্য কামনা করি। আপনি আমার প্রণাম জানবেন। শুভেচ্ছান্তে বিনত – অমানিশা। ।
Anim pariatur cliche reprehenderit, enim eiusmod high life accusamus terry richardson ad squid. 3 wolf moon officia aute, non cupidatat skateboard dolor brunch. Food truck quinoa nesciunt laborum eiusmod. Brunch 3 wolf moon tempor, sunt aliqua put a bird on it squid single-origin coffee nulla assumenda shoreditch et. Nihil anim keffiyeh helvetica, craft beer labore wes anderson cred nesciunt sapiente ea proident. Ad vegan excepteur butcher vice lomo. Leggings occaecat craft beer farm-to-table, raw denim aesthetic synth nesciunt you probably haven't heard of them accusamus labore sustainable VHS.
Anim pariatur cliche reprehenderit, enim eiusmod high life accusamus terry richardson ad squid. 3 wolf moon officia aute, non cupidatat skateboard dolor brunch. Food truck quinoa nesciunt laborum eiusmod. Brunch 3 wolf moon tempor, sunt aliqua put a bird on it squid single-origin coffee nulla assumenda shoreditch et. Nihil anim keffiyeh helvetica, craft beer labore wes anderson cred nesciunt sapiente ea proident. Ad vegan excepteur butcher vice lomo. Leggings occaecat craft beer farm-to-table, raw denim aesthetic synth nesciunt you probably haven't heard of them accusamus labore sustainable VHS.
Anim pariatur cliche reprehenderit, enim eiusmod high life accusamus terry richardson ad squid. 3 wolf moon officia aute, non cupidatat skateboard dolor brunch. Food truck quinoa nesciunt laborum eiusmod. Brunch 3 wolf moon tempor, sunt aliqua put a bird on it squid single-origin coffee nulla assumenda shoreditch et. Nihil anim keffiyeh helvetica, craft beer labore wes anderson cred nesciunt sapiente ea proident. Ad vegan excepteur butcher vice lomo. Leggings occaecat craft beer farm-to-table, raw denim aesthetic synth nesciunt you probably haven't heard of them accusamus labore sustainable VHS.