পীর গোরাচাঁদ, কানু-কিনু গোপ এবং ভার্গবপুর থেকে হাড়োয়া

History of India
pir gorachand and history of bhargavpur to haroa
চলুন, আজ পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ চব্বিশ পরগণার হাড়োয়া থেকে ঘুরে আসি।
এখানে রয়েছে পীর গোরাচাঁদের মাজার।
“মাজার” মানে মুসলমান পীরের কবরস্থান।
কিন্তু কে এই গোরাচাঁদ?
আসছি সে কথায়।
তার আগে কিছুটা পীর বৃত্তান্ত বলে নিই।
“পীর” কথার অর্থ হলো, প্রাচীন। পীররা সবাই ছিলেন সুফি, কিন্তু সব সুফি “পীর” ছিলেন না।
“পীর-মুরিদী” সম্পর্কের মধ্যে গুরু-শিষ্য পরম্পরার উদাহরণ পাওয়া যায়। আবার ধর্মান্তরিত মুসলমান সম্প্রদায়ের মানুষেরা পীরদের মধ্যে তান্ত্রিক গুরুর মিল খুঁজে পান এবং সেজন্য তাঁদের সমাধি ও দরগাহর মধ্যে বৌদ্ধযুগের চৈত‍্য আর স্তূপের মিল পাওয়া যায়। মুসলমান পীররা ইচ্ছে করেই হিন্দু অথবা বৌদ্ধধর্মের স্মৃতিবিজড়িত স্থানে দরগা ও খানকা তৈরি করতেন।
(–তথ্যসূত্র: জগদীশনারায়ণ সরকার, “হিন্দু-মুসলমান সম্পর্ক (মধ্যযুগ)”, বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষৎ, ১৩৮৮, পৃ: ৩৩)
পীরদের কাজকর্ম সম্পর্কে হরেকৃষ্ণ মুখোপাধ্যায় তাঁর “গৌড়-বঙ্গ সংস্কৃতি” গ্রন্থে জানাচ্ছেন, “…রাঢ়ের পল্লীতে ভ্রমণ করিলে দেখিতে পাইবেন, হিন্দু বীরের স্মৃতিবিজড়িত অসংখ্য ধ্বংসস্তূপ, মাঝে মাঝে মুসলমান শহীদ পীরের আস্তানা এবং শুনিবেন শ্বেত বসন্তের মত ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র রাজার মর্মন্তুদ পরিণামের করুণ কাহিনী। বাঙ্গালা, এমনকি পশ্চিমবঙ্গে রাঢ়দেশও একদিনে বিজিত হয় নাই। সমগ্র দেশ অধিকার করিতে মুসলমানের বহুদিন গত হইয়াছিল। রাজধানী অধিকারের পরও ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ঘাটোয়াল বা ঘাটরক্ষকগণ, সমৃদ্ধ পল্লীর ভূ-স্বামীগণ কিছুদিন এই বিদেশীদের বাধাদান করিয়াছিল। মুসলমানগণ ধর্মপ্রচারকের বেশে বা ভাগ‍্যান্বেষী সৈনিকরূপে এই সমস্ত ঘাটোয়াল বা ভূস্বামীর অধিকারে প্রবেশ করিয়া বিরোধ বাধাইয়াছে, পরে সেই বিরোধের ছল ধরিয়া গৌড়েশ্বরের বা নিকটবর্তী শাসনকর্তার নিকট নালিশ করিয়া সৈন্যের সাহায্য লইয়া সেই সেই স্থান অধিকার করিয়াছে। কোথাও বা নিজে হত হইয়া শহীদ গাজিরূপে সম্মানিত হইয়াছে। এই বিরোধের মধ্যে বিশ্বাসঘাতকতা এবং ষড়যন্ত্রের কাহিনীরও অসদ্ভাব নাই।”
রাঢ়-বাংলার যেসব জায়গায় ধর্মঠাকুরের থান (স্থান) আছে, তার কাছাকাছি বড়ো হিন্দু মন্দির দেখা যায়। এই মন্দির থেকেই এলাকায় ব্রাহ্মণ‍্যধর্মের প্রচার চলতো। আর উচ্চবর্ণের হিন্দুদের বিভিন্ন শারীরিক ( খড়ম পেটা ), মানসিক ( ছায়া মাড়ানোয় নিষেধাজ্ঞা ) ও সামাজিক অত‍্যাচারের ( ধোপা-নাপিত বন্ধ করে “একঘেয়ে” করে সামাজিক বয়কট) হাত থেকে বাঁচতে হিন্দুসমাজের ব্রাত‍্যজনগোষ্ঠীর লোকজন বৌদ্ধধর্ম গ্রহণ করে এলাকায় গড়ে তুলেছিল “ধর্মঠাকুরের থান।” আর এই ব্রাত্যজনগোষ্ঠীর মাঝে গড়ে ওঠা ধর্মঠাকুরের থানের কাছাকাছি জায়গায় মুসলমান পীর-ফকিরের দল গড়ে তুলেছিলেন তাদের আস্তানা। এইসব হিন্দু থেকে বৌদ্ধধর্মাবলম্বী মানুষদের তারা ইসলামধর্মে দীক্ষিত করতে শুরু করেন। ধর্মঠাকুরের থানের কাছাকাছি তাই গ্রামবাংলার বিভিন্ন স্থানের মুসলমান পাড়ায় আজও দেখা যায় হিন্দু স্থাপত‍্যের নিদর্শণ। বাংলার বিভিন্ন ব্রাত্যজনগোষ্ঠীর মাঝে রয়েছেন বেশকিছু লৌকিক দেবতা, যেমন–বাঘরাস, মহাদানা প্রভৃতি। লক্ষ‍্য করার বিষয় হলো, এইসব লৌকিক দেবতাদের নামগুলি বীরত্বব‍্যঞ্জক। ক্ষেত্রসমীক্ষায় দেখা গেছে, এইসব লৌকিক দেবতারা একসময় রক্ত-মাংসের মানুষ ছিলেন। যেমন, বীরভূমের দুবরাজপুর থানার গোহালীয়াড়া গ্রাম পঞ্চায়েতের অধীনস্থ ঝাঁপড়তলা গ্রামে একটি পুরোনো মহুয়া গাছের তলায় রয়েছে এই মহাদানা ও বাঘরাস দেবতার থান। স্থানীয় বাউরী সম্প্রদায়ের মানুষজন তাঁদের উপাসক। প্রতি বছর ১লা মাঘ এক্ষেণ পুজোর দিন পুজো হয়। পুজোর কোনো সংস্কৃত মন্ত্র বা ব্রাহ্মণ পুরোহিত নেই। নিজেরাই পূজারী। আসলে এইসব লৌকিক দেবতারা তাঁদেরই পূর্বপুরুষ। এলাকায় ইসলামধর্মের প্রচারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিলেন এবং নিজের সম্প্রদায়ের লোকজনদের বৌদ্ধধর্মের মধ্যেই আটকে রেখে দিয়েছিলেন। এর প্রমাণ “এক্ষেণ পুজো” -য় তাঁদের পুজো। বৌদ্ধধর্মের “ক্ষণবাদ” থেকেই এসেছে “ক্ষণ” এবং পরে অপভ্রংশে “ক্ষেণ” আর তা থেকে “এক্ষেণ।” কাজেই বাস্তবিকই বৌদ্ধধর্মের সঙ্গে এক্ষেণ পুজোর সম্পর্ক জড়িয়ে রয়েছে। এলাকার বীর যোদ্ধারা আজ তাঁদের অধ: স্তন উত্তরপুরুষদের হাতে বাঘরাস, মহাদানা নামে পূজিত হচ্ছেন। তাঁদের আসল নাম হারিয়ে গেলেও এইসব বীরত্বব‍্যঞ্জক নামে দেবতা হয়ে তাঁরা বেঁচে রয়েছেন উত্তরপুরুষদের হৃদয়ে। তাই সবাই ইসলামের পতাকাতলে আশ্রয় নেয়নি, বরং দলপতি গোষ্ঠীপতিরা অনেকক্ষেত্রেই বাধা দিয়েছেন।
অন্যদিকে, ধর্মান্তরকরণের একটি ইতিহাস এখানে তুলে ধরা দরকার।
হুগলি জেলার পাণ্ডুয়া রেলস্টেশনের কাছে যে পেঁড়োর মন্দির রয়েছে, সেখানে আগে ছিল পাণ্ডুভূমি বৌদ্ধবিহার। খ্রিস্টিয় ১৪শ শতকে মুসলমান আক্রমণে সেই বৌদ্ধবিহার ধ্বংস হয়। পাণ্ডুয়ায় গড়ে ওঠে শাহ শফির মসজিদ। বৌদ্ধাচার্যদের অনেকে ইসলামধর্ম গ্রহণ করেন। বর্তমানে তাদের বংশধররা শাহ শফির বংশোদ্ভূত বলে পরিচয় দিয়ে থাকেন। এবার যে বিষয় নিয়ে এ লেখা শুরু করেছিলাম, সেই পীর গোরাচাঁদের কথায় ফিরে আসি। পীর গোরাচাঁদ একজন ঐতিহাসিক ব‍্যক্তি। এ বিষয়ে ড: আব্দুল গফুর অষ্টম বঙ্গীয় সম্মেলনে একটি প্রবন্ধ পাঠে জানান, গোরাচাঁদের প্রকৃত নাম–সৈয়দ আব্বাস আলি। খ্রিস্টিয় ত্রয়োদশ শতাব্দীর শেষদিকে প্রসিদ্ধ ইসলামধর্ম প্রচারক শাহ জালালের দলভুক্ত হয়ে মক্কা থেকে ভারতে আসেন এবং ইসলামধর্ম প্রচারের জন্য নানা স্থান ভ্রমণ করার পর দক্ষিণ চব্বিশ পরগণা জেলার বালাণ্ডা অঞ্চলে আসেন। এখানে এসে তিনি বালাণ্ডার রাজা চন্দ্রকেতুকে ইসলামধর্মে দীক্ষিত করার চেষ্টা করেন। পরে হাতিয়াগড়ে প্রচার করতে গেলে সেখানকার রাজার সঙ্গে তাঁর যুদ্ধ হয় এবং পীর গোরাচাঁদের মৃত্যু হয়। এখানে ভার্গবপুরের জঙ্গলে বিদ‍্যাধরী নদীর ধারে তাঁর দেহ কবরস্থ করা হয়। পীরের হাড় আছে বলে তখন থেকে ভার্গবপুরের নাম হয়ে যায় আজকের “হাড়োয়া।” প্রতি বছর ফাল্গুন মাসে এই পীরের স্মরণে এখানে একটি মেলা হয়।
এবার সেই যুদ্ধের কথা কিছু বলি। রাজা চন্দ্রকেতু মুসলমান হতে রাজি না হলে পীর গোরাচাঁদ তাঁকে অভিশাপ দিয়ে চলে গেলেন পাশেই বালাণ্ডায় এবং সেখান থেকে কিছুটা দূরে হাতিয়াগড়ে। উদ্দেশ্য ইসলামধর্ম প্রচার।
হাতিয়াগড়ের রাজা আকানন্দ এবং তাঁর ভাই বাঁকানন্দ ছিলেন দুর্ধর্ষ বীর যোদ্ধা। পীর গোরাচাঁদ সেখানে পৌঁছতে স্থানীয় লোকজন তাদের রাজার পরিচয় দিয়ে বললো,
“রাক্ষস কূলেতে জন্ম, নাই তার ধর্মকর্ম,
আকানন্দ নাম যে বলায়।
বাকানন্দ তার ভাই, ওর ছানি অসুর নাই,
এক ঘড়ি স্থির নাহি রয়। ।
পাইয়া শিবের বর, তারা দুই বেরাদর,
রোজ করে মনুষ্য আহার।”
“মনুষ্য আহার” করে মানে নরবলি দেয়। সে সময় এলাকার বদমাইশ লোকেদের ধরে এনে ধর্মস্থানে বলি দেওয়া হতো। এ কারণে তুর্কিরা পর্যন্ত নরবলির জায়গাগুলোকে সভয়ে এড়িয়ে চলতো। দিনের বেলাতেও এইসব জঙ্গলগুলো ছিল তাদের কাছে রীতিমতো ভয়ের জায়গা।
যাই হোক, সব শুনে গোরাচাঁদ দেখা করলেন রাজা আকানন্দের সঙ্গে, নিজের আত্মপরিচয় দিলেন,
“পয়দা সৈয়দ কূলে, গোরাই নাম ধরি। ।”
উত্তরে রাজা আকানন্দ জানালেন,
“মেরা নাম আকানন্দ, জাতি নিশাচর।
মনুষ্য ধরিয়া খাই, মহাদেবের বর। ।”
গোরাচাঁদ বললেন,
“দোন হাতে তলওয়ার লইল ধরিয়া।
ধরিল ঘোড়ার বেগ দাঁতেতে করিয়া। ।”
(এখানে লক্ষ্যণীয়, পীরেরা ধর্মপ্রচারের জন্য ঘোড়ায় চেপে তরবারি হাতে যুদ্ধ করতেন। )
তারপর আকানন্দকে হুকুম করলেন,
“আজ হতে তওবা কর মনুষ্য আহার। ।”
কিন্তু শুনলেন না আকানন্দ। ভীষণ যুদ্ধ হলো। নিহত হলেন আকানন্দ। তখন যুদ্ধক্ষেত্রে এলেন তাঁর ভাই বাঁকানন্দ। তাঁর প্রতাপ দেখে পালিয়ে যেতে চাইলেন গোরাচাঁদ। কিন্তু তাঁর ঘোড়াটা এগোলো না। ফলে—
“গোরাই দেখিল যেদি ঘোড়া নাহি চলে।
চক্রবাণ বাকানন্দ ছাড়ে সেইকালে। ।”
এরপর সাংঘাতিক জখম হলেন গোরাচাঁদ। কোনোরকমে আশ্রয় নিলেন কাছেই ভার্গবপুরের জঙ্গলে। এ সময় কানু ও কিনু তাঁর সেবা করলেন। কিন্তু শেষপর্যন্ত মারা গেলেন গোরাচাঁদ। সেখানেই তাঁকে কবরস্থ করা হলো। এরপর পীরের হাড় আছে বলে কালক্রমে ভার্গবপুরের নাম পাল্টে হয়ে গেল “হাড়োয়া।”
এখনো কানু-কিনুর বংশধররা পীর গোরাচাঁদের স্মরণ দিনে দুধ দিয়ে তাঁর দরগাহ ধুয়ে দেন এবং এরজন্য কোনো মূল্য নেন না।
Anim pariatur cliche reprehenderit, enim eiusmod high life accusamus terry richardson ad squid. 3 wolf moon officia aute, non cupidatat skateboard dolor brunch. Food truck quinoa nesciunt laborum eiusmod. Brunch 3 wolf moon tempor, sunt aliqua put a bird on it squid single-origin coffee nulla assumenda shoreditch et. Nihil anim keffiyeh helvetica, craft beer labore wes anderson cred nesciunt sapiente ea proident. Ad vegan excepteur butcher vice lomo. Leggings occaecat craft beer farm-to-table, raw denim aesthetic synth nesciunt you probably haven't heard of them accusamus labore sustainable VHS.
Anim pariatur cliche reprehenderit, enim eiusmod high life accusamus terry richardson ad squid. 3 wolf moon officia aute, non cupidatat skateboard dolor brunch. Food truck quinoa nesciunt laborum eiusmod. Brunch 3 wolf moon tempor, sunt aliqua put a bird on it squid single-origin coffee nulla assumenda shoreditch et. Nihil anim keffiyeh helvetica, craft beer labore wes anderson cred nesciunt sapiente ea proident. Ad vegan excepteur butcher vice lomo. Leggings occaecat craft beer farm-to-table, raw denim aesthetic synth nesciunt you probably haven't heard of them accusamus labore sustainable VHS.
Anim pariatur cliche reprehenderit, enim eiusmod high life accusamus terry richardson ad squid. 3 wolf moon officia aute, non cupidatat skateboard dolor brunch. Food truck quinoa nesciunt laborum eiusmod. Brunch 3 wolf moon tempor, sunt aliqua put a bird on it squid single-origin coffee nulla assumenda shoreditch et. Nihil anim keffiyeh helvetica, craft beer labore wes anderson cred nesciunt sapiente ea proident. Ad vegan excepteur butcher vice lomo. Leggings occaecat craft beer farm-to-table, raw denim aesthetic synth nesciunt you probably haven't heard of them accusamus labore sustainable VHS.