চাওয়া পাওয়া

Known Unknown
demand from the modi govt and what people of india gets

-সম্বরণ চট্টোপাধ্যায়

প্রথমেই দুটো কথা বলতে চাই।
এক- এটা রাজনৈতিক বিষয় নিয়ে লেখা একটা প্রবন্ধ। আমি রাজনীতির লোক না, কোনদিন ছিলাম না, ভবিষ্যতেও হবার কোন ইচ্ছে নেই। তবু এই অপচেষ্টার কারণ হল, বিশেষ একটা তাগিদ, যা মনের গভীর থেকে অনুভব করছি। সেটা হল, স্বাধীনতার এতবছর পরও আমার দেশ প্রথম বিশ্বের দেশ বলে পরিচিতি পেল না কেন? এত এত প্রাকৃতিক সম্পদ, এত বড় বড় মেধাবী মানুষ, এত প্রাচীন সভ্যতা ও সংস্কৃতি, সব থাকা সত্ত্বেও কেন পারলাম না আমরা প্রথম বিশ্বের দেশ হতে? কোথায় ভুল হচ্ছে আমাদের? সবাই অসৎ? সবাই ঘুষখোর? সবাই বিক্রি হয়ে গেছে? নাকি এতটা সহজ সরল নয় ব্যাপারটা? এতটা অতিসরলীকরণ কি ঠিক? এই কারণ অনুসন্ধান করাই এই রচনার অনুপ্রেরণা।
দুই-এটা সম্পুর্ন একটা disclaimer বা ক্ষমাপ্রার্থনা, অর্থাৎ আলোচনা করতে গিয়ে কোন রাজনৈতিক দলের পক্ষে বা বিপক্ষে কোন কথা বলছি মনে হলে তা নিতান্তই আলোচনার স্বার্থে। এই রচনা কোন রাজনৈতিক মতাদর্শ বা দলের পক্ষে বা বিপক্ষে লেখা নয়। তথ্যগত ভুল থাকলে নিজগুনে মার্জনাপূর্বক ধরিয়ে দিলে বাধিত থাকব। রচনার মূল উদ্দেশ্য আমাদের সকল রাজ্য তথা আমাদের দেশের পরিচালকদের চিন্তাভাবনার একটু খোরাক দেবার চেষ্টা। অপলাপ মনে হলে আমাকে মূর্খ ভেবে নিয়ে Ignore করবেন এটাই অনুরোধ।
আলোচনার শুরুতেই যে কথাটা বলতে চাই সেটা হয়তো অনেকেই ভাবছেন, যে আমি বিপুল জনসংখ্যার কথা বলবো। হ্যাঁ বিপুল জনসংখ্যা একটা সমস্যা তো বটেই তবে সেটাকেও কিভাবে কাজে লাগাতে হয় সেটা প্রতিবেশী একটা দেশ দেখিয়ে দিয়েছে।
তবে জনসংখ্যা আর জনসম্পদ এক নয়।
সমাজের অলস মেধাহীন জনগণ দেশের সম্পদ তো নয়ই, বরং বোঝা। আর জনসংখ্যা মানেই ভোট ব্যাঙ্ক, কাজেই কোন রাজনৈতিক দলেরই জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে সদিচ্ছা থাকবে না সেটাই স্বাভাবিক।
তাহলে উন্নত দেশগুলোতে জনসংখ্যা বৃদ্ধির এই সমস্যা নেই কেন? কারণ দুটো, জনগনের শিক্ষার মান আর জলবায়ু।
যাই হোক, এই জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ ব্যাপারটা সরকার ও জনগণ উভয়ের মিলিত সদিচ্ছা ও প্রচেষ্টা ছাড়া সফল হওয়া দুরূহ ব্যাপার। এই বিষয়টা বহু আলোচিত ও চর্চিত, তাই আমি আর বিশদে না গিয়ে অন্য একটা দৃষ্টিকোন থেকে দেশের অগ্রগতি ও তার পথের একটা বাধার বিষয়ে বলার চেষ্টা করব।
প্রথমেই আসি আধার নম্বর বা UID এর বিষয়ে। এটা ছিল কেন্দ্রসরকারের একটা উচ্চাকাঙ্খী প্রকল্প (An ambitious project), যার দ্বারা দেশের প্রতিটি নাগরিক একটি বিশেষ নম্বর অর্থাৎ সংখ্যা দ্বারা পরিচিত হবে। সেটাই হল Unique Identification Number বা আধার নম্বর। ওটাই হবে আমার আপনার ইউনিক আইডেন্টিটি বা UID. প্রকল্পটি কংগ্রেস সরকারের আমলে শুরু হয়। প্রকল্পটিকে উচ্চাকাঙ্খী বলার কারণ হল ওই আধার নম্বর প্রদত্ত হবে Biometric Identity এর মাধ্যমে। প্রতিটি নাগরিকের চোখের মনি ও দুহাতের দশটা আঙুলের ছাপ কম্পিউটার ডেটাবেস এ ধরা থাকবে, আর ওই নম্বরের সঙ্গে মানুষটির এই বায়োমেট্রিক আইডেন্টিটি গুলো ম্যাচ করলেই মানুষটিকে সনাক্ত করা যাবে নির্ভুলভাবে।
তাতে লাভ কী হবে? লাভ অনেক। ওই আধার নম্বরের সঙ্গে লিংক হবে মোবাইল নম্বর, প্যান নম্বর, ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট নম্বর, ভোটার আই ডি, রেশন কার্ড সবকিছু।
তাতে কী হবে? খুব সহজ, ধরুন আপনার BPL রেশন কার্ড আছে, অর্থাৎ আপনি খুব গরীব মানুষ। এখন আপনার প্যান কার্ড লিংক করতেই সরকার দেখল আপনি চলতি বছরে সরকারকে পঞ্চাশ হাজার টাকা ট্যাক্স দিয়েছেন। ব্যাস, আপনি ধরা পড়ে গেলেন যে আপনি মোটেও গরীব মানুষ নন। অতএব আপনার BPL রেশনকার্ড টা গেল বাতিল হয়ে।
যাঃ কলা! ট্যাক্স ও দিলেন আবার কেসটাও খেলেন? ভাবলেন ধূর, আর ট্যাক্সই দেব না। উঁহুঃ, সেটি হবে না, আপনি ট্যাক্স তো দিলেন না, কিন্তু ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট তো লিংক করা আছে! আপনি পালাবেন কোথায়? কী বললেন? ঘুষের টাকা ব্যাংকে রাখবেন না? তা বেশ, তা কী করবেন? ভাবলেন একটা গাড়ি কিনবেন ক্যাশ টাকায়। তা গাড়ি তো কিনলেন। স্যার আপনার আধার আর মোবাইল নম্বর টা? দিলেন মোবাইল নম্বর। ব্যাস, হয়ে গেল! সরকার জেনে গেল আপনি একটা আট লাখ টাকা দামের গাড়ি কিনেছেন ক্যাশে। দে ভাই এবার ট্যাক্স টা!
এ ব্যাটা সরকার না চীনে জোঁক! সঙ্গে সঙ্গে ঘুরবে? যা করব সব দেখবে? সব জানবে? ইয়ার্কি পায়া হ্যায়? দাঁড়াও, মজা দেখাচ্ছি!
মানুষকে বোকা ভাবা?
ব্যাস, শুরু হয়ে গেল খেল! একজনের দুটো তিনটে আধার, তিন চারটে ফোন নম্বর, দুটো প্যান কার্ড, দু তিনটে ভোটার কার্ড। যেটার সঙ্গে যেটা খুশি লিংক করুন। পুরো ঘেঁটে ঘ হয়ে গেল ব্যাপারটা। তারসঙ্গে আধার কার্ডে স্বামীর নামের জায়গায় বাবার নাম, নামের বানান ভুল, বাড়িওয়ালার জায়গায় ভাড়াটের নাম, ভুল ঠিকানা কিম্বা ঠিকানা অন্যের, নাম আর পদবীর খিচুড়ি, বাবার চোখের মনি আর ছেলের হাতের আঙুলের ছাপ, এসব তো আছেই।
তাহলে শেষমেশ কী দাঁড়াল? A big zero. A big superflop. সনাক্তকরণের গুষ্টির ষষ্ঠী পুজো হয়ে গেল। আধার বা UID কে আবশ্যকীয় বা Mandatory Identity করার স্বপ্ন অধরাই রয়ে গেল। রেশন, ভোটার, প্যান ইত্যাদি কার্ডের মত আধার কার্ডও আরো একটা কার্ড হয়েই রয়ে গেল। UID আর হল না।
এই ব্যর্থতার দায় কার বা কাদের, সেই আলোচনায় পরে আসব। তার আগে দেখে নিই, কেন্দ্র সরকারের পরবর্তী ইউনিক পদক্ষেপটিকে।
সরকার বাহাদুর দেখলেন, অর্থই অনর্থের মূল। অর্থাৎ ক্যাশ টাকা বা নোট ই হল যত নষ্টের গোড়া। ক্যাশ টাকা দিয়েই মানুষ যত রকমের দুনম্বরী করছে। সুতরাং কোপটা ওইখানেই মারতে হবে। করো নোটবন্দী। না রহেগা বাঁশ না বাজেগি বাঁশরি।
ভরসন্ধেবেলা বিনা মেঘে বাজ পড়ল। রাতারাতি বাতিল হয়ে গেল পাঁচশো আর হাজার টাকার হাই ডিনোমিনেশনের নোট গুলো।
দৌড়োদৌড়ি পড়ে গেল চারিদিকে। অপুর্ব মিশ্র প্রতিক্রিয়া! যাদের টাকা ছিল না তারা আনন্দে ধেই ধেই করে নাচতে লাগলো, বড়লোকদের ক্ষতি হয়েছে এই আনন্দে। মধ্যবিত্ত সৎ চাকুরীজীবি যারা কালো টাকা রাখে না বা রাখার সুযোগ পায় না, তারাও ব্যাপারটা উপভোগ করছিল। ভাবছিল আমার তো চিন্তা নেই এবার ব্যাটা কালোটাকার কারবারি গুলো বুঝবে কত ধানে কত চাল!
আমার আপনার মত কোটি কোটি সাধারণ মানুষ প্রতিদিন গর্বের সঙ্গে ঘন্টার পর ঘন্টা ব্যাঙ্কের লাইনে দাঁড়াচ্ছিল। নিজেদের স্বাধীনতা সংগ্রামী বলে মনে হচ্ছিল। মনে মনে হয়ত গেয়ে উঠছিল “দিল দিয়া হ্যায় জান ভী দেঙ্গে, আয় ওয়তন তেরে লিয়ে”।
ওদিকে পালের আসল গোদারা, অর্থাৎ যাদের ধরার জন্য এত আয়োজন, তারা কিন্তু চুপচাপ বসে ছিল না। হা হুতাশ ও করছিলো না। তারা প্ল্যান করছিল। হ্যাঁ, প্ল্যান বা পরিকল্পনা। কিভাবে এই ফাঁদ থেকে বেরনো যায়! কিভাবে উপার্জিত ( সৎ বা অসৎ উপায়ে) অর্থরাশিকে বাঁচানো যায়।
পরিকল্পনা করতে সময় লাগেনি। একমাসের মধ্যে অধিকাংশ পুরনো নোট বদলে নতুন চালু নোট তাদের হেফাজতে এসে গেল। উঁহু, কোন বড় ব্যাঙ্ক কর্তাকে ধরতে হয়নি। কোন সিস্টেম কে ফাঁকি দিতে হয়নি। সম্পুর্ন ভাবে সিস্টেম কে ব্যবহার করেই সিস্টেম্যাটিক ভাবেই তারা এই নোট বদলের কাজটা করে নিয়েছিল। কাজে লাগিয়েছিল ওই হাততালি দেওয়া গরীব মানুষ গুলোকেই। সামান্য পারিশ্রমিকের বিনিময়ে হাজার হাজার গরীব মানুষ ওই বড়লোকদের হয়ে ওদের কাজটাই করে দিয়েছিল। নোট বদলে দিয়েছিল।
বেশ কিছু নোটের বস্তা জলে ফেলে দেওয়া বা আগুনে পোড়ানোর ভিডিও আমরা দেখেছিলাম ঠিকই তবে নোটবন্দী যে সামগ্রিক অর্থে সফল হয়নি সেটা বোঝার জন্য কোন রাজনৈতিক বা অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞ হবার দরকার পড়ে না।
নোটবন্দীর পর পরই বাজারে এল ডিজিটাল মানির ধারণা। ই-ওয়ালেট বা মোবাইল মানিব্যাগ আর অনলাইন লেনদেনের ব্যাপক প্রচার। কিন্তু দেখা গেল, প্রথম প্রথম বেশ সাড়া পাওয়া গেলেও কিছুদিনের মধ্যে বাজারে নতুন বেগুনি আর সবুজ নোট যথেষ্ট পরিমানে এসে যাবার পর আবার যা কে তাই অবস্থা। দোকানে দোকানে পে টি এম বা মোবিকুইক এর কাগজগুলো সাঁটানোই থাকল। লোকে আগের মতই আবার ক্যাশে কেনাকাটা করতে লাগল। ডিজিটাল ইন্ডিয়ার রচনা বাচ্চারা মুখস্থ করল, পরীক্ষায় লিখে ভাল ভাল নম্বর পেল। চ্যাপ্টার ক্লোজড।
UID আর নোটবন্দীর এরকম করুণ পরিনতির পর যখন GST এল, অনেকেই ভেবেছিল এটাও একইরকম ভাবে ব্যর্থ হবে। 28% GST? পাগল নাকি? সব ব্যবসা লাটে উঠবে। দেশের অর্থনীতি শুয়ে পড়বে। কিন্তু আশ্চর্য ভাবে দেখা গেল তা হল না। একটা ফুচকাওয়ালাও তার GST নম্বর বার করে নিল। কোন ব্যবসায়ীই তার ব্যবসা বন্ধ করে দিল না। তাহলে কি এটা সফল হল? ঘন্টা হয়েছে। হোটেলে যান, বলবে বিল কিভাবে নেবেন? GST সহ, নাকি GST ছাড়া? ছাড়া হলে বিল কম হবে অবশ্যই। ক’ জন বলবে GST সহই নেব? আর তাছাড়া আপনার থেকে নেওয়া GST কি আদৌ সরকারের ঘরে যাচ্ছে? কজন জানে কিভাবে ভেরিফাই করতে হয়? সুতরাং উড়ো খই গোবিন্দায় নমঃ।
এইরকম একটা অবস্থায় সেই একই রাজনৈতিক দল বিপুল জনসমর্থন নিয়ে আবার ফিরে এল ক্ষমতায়। কি করে ফিরে এল? ধর্মীয় মেরুকরণ? আংশিক সত্য। শুধুমাত্র ধর্মীয় মেরুকরণ দিয়ে এভাবে ফিরে আসা সম্ভব নয়।
তবে কি এতগুলো ব্যর্থতার জন্য ফিরে এসেছে? না, তা কি করে হয়?
তাহলে কি সার্জিক্যাল স্ট্রাইক? বা 370 এর অবলুপ্তির প্রতিশ্রুতি? উঁহু তাও মনে হয় না।
আমার মতে ফিরে এসেছে সাধারণ মানুষকে স্বপ্ন দেখাতে সফল হয়েছে বলে। কীসের স্বপ্ন? পরিবর্তনের স্বপ্ন। মানুষ চিরকাল যা কিছু দেখে আসছিল, যা কিছু অনিবার্য বা অপরিবর্তনীয় হিসাবে ধরে নিয়েছিল, যা কিছু চিরকাল মেনে নিয়ে চলতে হবে বলে ভেবে নিয়েছিল এতবছর ধরে, তা যে পরিবর্তন হতে পারে, তা যে অপরিবর্তনীয় অল্যঙ্ঘ্য কোন বাধা নয়, পরিবর্তন করার যে চেষ্টা করা যায়, সাফল্য আসুক বা ব্যর্থতা, এগিয়ে যে যাওয়া যায়, চেষ্টাটা যে করা যায়, সেটা এই সরকার দেখিয়ে দিয়েছে। এই সরকারের কাজ করার সদিচ্ছা সন্দেহাতীত।
যথেষ্ট ঝুঁকিপুর্ণ ছিল এইসব সিদ্ধান্ত গুলো। ব্যর্থতার ফল যে বিরোধীদের হাতকে শক্ত করবে সেটা বোঝা কঠিন ছিল না। তবুও কাজ করার চেষ্টা করে গেছে সরকার। এ অবশ্যই প্রশংসার দাবী রাখে।
এতগুলো বড় বড় সিদ্ধান্ত, আর সেগুলোর ব্যর্থতার জন্য সরকার রাজনৈতিক ভাবে কি ব্যাখ্যা দিল সেটা রাজনৈতিক ব্যাপার। ওটা তো করতেই হবে। ব্যর্থতার মধ্যেও সাফল্য টুকু তুলে ধরা, বা ব্যর্থতার দায় যে দলের বা সরকারের নয় সেটা বোঝানোর চেষ্টা, এগুলো যে কোন রাজনৈতিক দল বা সরকারই করে থাকে। তাতে দোষের কিছু নেই। আমার কৌতুহল হল যে সরকার কি সত্যিই ভাবছে? সত্যিই কি ব্যর্থতার কারণ অনুসন্ধান করছে? এই কাজটা না করলে অর্থাৎ কারণ গুলো বিশ্লেষণ না করলে কিন্তু পরবর্তী বড় কোন পদক্ষেপ, যা সরকার আগামী দিনে নিতে চলেছে, সেগুলোও ব্যর্থ হবে। রাজনৈতিক ভাবে সরকার তখন যাই ব্যাখ্যা দিক না কেন সাধারণ মানুষের কাছে সরকারের গ্রহণযোগ্যতা ভয়ঙ্কর ভাবে আহত হবে।
হ্যাঁ, NRCর কথাই বলছি। আগে CAB হবে তারপর NRC হবে। সবাই জেনে গেছে। ভাল কথা। উদ্দেশ্যও পরিস্কার করে দিয়েছে সরকার। অনুপ্রবেশ কারী বিতাড়ন আর শরনার্থীদের শরন দেওয়া। “ইঁয়াহা নেহি আয়েগা তো কাঁহা যায়গা? ” ঠিক আছে। ভাল কাজ। ভাল উদ্দেশ্য। কিন্তু সফল হবে তো?
আসামে কী হচ্ছে? ওটা কী সফল না ব্যর্থ? তের লক্ষ না ঊনিশ লক্ষ জানি না। মোট কথা লক্ষ লক্ষ মানুষ। ধরে নিলাম ওরা সবাই অনুপ্রবেশকারী। চুড়ান্ত তালিকাটি চূড়ান্তভাবে ঠিক। তারপর? ওই লক্ষ লক্ষ মানুষগুলোর কী হবে? খাঁচায় পুষবেন? কার টাকায়? ওরা যখন ভারতীয় নয়, বিদেশী, তাহলে আমরা ভারতীয়রা ওদের পুষবো কেন? আরে হ্যাঁ, আমি ভারতীয় কিনা তাই তো জানি না। ছেচল্লিশ বছর আগে এদেশের মাটিতেই জন্মেছি। তাও আপনার খাতায় নাম থাকলে বা নাম উঠলে তবে আমি ভারতীয়। তাহলে? আমার জাতীয়তাবোধ জাগবে কি করে? তাহলে? তালিকা বহির্ভূতদের ভবিষ্যৎ কী হবে? আমরণ জেল মানে ওদের জীবন শেষ আর দেশের টাকা ধ্বংস। তাহলে কি মেরে দেবেন? একুশ শতকে? সম্ভব? মানুষ ভাববে না? আশ্বাস দিলেই চিঁড়ে ভিজবে? বাঙালী অবাঙালী হিন্দু মুসলিম এখানে ইস্যু না। ইস্যু হল মানুষ। মানুষের জীবন।
সরকার বাহাদুর, আপনি নিজে জানেন তো! ওদের নিয়ে কী করবেন? যদি জানেন তো মানুষকে বলে দিন। ওদের তো রাষ্ট্রহীন তকমা জুটবে। তবে অন্য দেশ নেবে কেন? তাহলে যাবে কোথায়? সমুদ্রে?
অনুপ্রবেশ বন্ধ করার জন্য কী করেছেন? ওটা বন্ধ না করে NRC করে কী লাভ হবে? প্রশ্নগুলো উঠবে না?
এত বড় বড় সিদ্ধান্ত, বড় বড় প্রকল্প, এভাবে ব্যর্থ বা অসম্পুর্ণ হয়ে পড়ে থাকল কেন? আপনি ভাবছেন? মানুষ আপনাদের দেখানো স্বপ্নে আর কতদিন বিশ্বাস করবে? কেন বিশ্বাস করবে? আত্মবিশ্লেষন করেছেন? ভেবেছেন? যদি ভেবে থাকেন, বিশ্লেষণ করে থাকেন, শিক্ষা নিয়ে থাকেন, তাহলে পরবর্তী পদক্ষেপ ফেলার আগে সেই শিক্ষা, সেই বিশ্লেষন কাজে লাগান।
আমার ক্ষুদ্রবুদ্ধি দিয়ে সেই কাজে আমি কিঞ্চিৎ সাহায্য করার দুঃসাহস করছি।
অর্বাচীন কে ক্ষমা করবেন।
প্রথম কারণ -মানুষ কী চায় সেটা বোঝার ব্যর্থতা। মানুষ কী চায় বলুন তো? অন্ন বস্ত্র বাসস্থান? ওটা তো বটেই! ওটা তো অত্যাবশ্যক। কিন্তু শুধু ওটার নিরিখে মানুষকে বিচার করা গেলে বামপন্থার এই অবস্থা হত না। কাজেই ওগুলোর পরেই কি চায় মানুষ, সেটাই প্রশ্ন।
আমার মতে মানুষ নিরাপত্তা চায়। নিজের ও নিজের পরিবারের নিরাপত্তা।
সন্ত্রাসবাদ সেই নিরাপত্তা কে বিঘ্নিত করছিল বলেই মেরুকরণ টি সম্ভব হয়েছে। গরু বা রামমন্দির নয়। NRC ইস্যুতে সেই নিরাপত্তাই প্রশ্নচিহ্নের মুখে দাঁড়িয়েছে বলেই বুমেরাং হবার সমুহ সম্ভাবনা।
দ্বিতীয় কারণ – পরিকল্পনার অভাব। একটা স্কুলের সাইন্স প্রজেক্ট করতে গেলেও প্রচুর পরিকল্পনা আর হোমওয়ার্ক লাগে। কালো টাকার কারবারি রা কিভাবে নোট বদলে সাদা করে ফেলতে পারে সেটা আগে ভেবেছিলেন? ভাবেন নি। ভাবলে সেই সময় রোজ রোজ নিয়ম পরিবর্তন করে সেটা আটকানোর প্রানপন চেষ্টা করতে হত না।
তৃতীয় কারণ – প্রথম বিশ্বের অনুকরণ করা। স্বচ্ছ ভারত অভিযান হোক বা ডিজিটাল ইন্ডিয়া, UID হোক বা NRC, এগুলো সবই প্রথম বিশ্বের দেশে সফল ভাবে চলছে। কিন্তু রাতারাতি আমাদের দেশে অনুকরণ করতে গেলে হোঁচট খেয়ে পড়তেই হবে। অনুকরণ না করে অনুসরণ করা উচিৎ আমাদের। ধীরে ধীরে এগনো উচিৎ। প্রথমেই দরকার ছিল সার্বিক শিক্ষা। উঁহু! স্বাক্ষরতা নয়, ন্যুনতম প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা। সকলের জন্য অবৈতনিক ও বাধ্যতামূলক শিক্ষা। আমি যেদিন সপরিবারে আধার কার্ড এর আবেদন করতে গেছিলাম, দেখলাম কম্পিউটারে যে বসে আছে সে এইট ফেল। আমার নামটা টাইপ করতে গিয়ে তিন বার ভুল করল। পাশে বসে ছিলেন তৃণমূল এর একজন নেতা। তিনি ব্যাপারটা বুঝতে পেরে আমাকে বললেন আপনি তো চেনা লোক, নিজেই নিজেদের ফর্মগুলো ফিল আপ করে নিন। আমি হাঁফ ছেড়ে বাঁচলাম। পাঁচ মিনিটে পরিবারের সবার ফর্ম ফিল আপ করে বায়োমেট্রিক আপলোড করে দিলাম।
বেরিয়ে আসার সময় দেখলাম শয়ে শয়ে নিরক্ষর মানুষ লাইনে দাঁড়িয়ে আছে। ওদের আধার কার্ড কতটা নির্ভুল হয়েছে বলে মনে করেন স্যার?
চতুর্থ কারণ -শিকড় অনেক গভীরে। এটা শুধু সরকার কে নয় আমাদেরকেও বুঝতে হবে। আমরা কি ভাবি? শুধু শিল্পপতি বা কর্পোরেট আর রাজ কর্মচারীরাই দুর্নীতিগ্রস্থ? আপনার আমার মত মধ্যবিত্ত বা গরীব মানুষরা সবাই সৎ? একদম ভুল ধারণা। তাই যদি হত তাহলে কালো টাকা গুলো আমরা সাদা করে দিতাম না। তাই যদি হত আমরা চাকরি পাবার জন্য ঘুষ দিতাম না। তাই যদি হত তাহলে সারদার মত চিটফান্ড কেলেঙ্কারি হত না। আমরা লোভ করেছি বলেই হয়েছে। আমরা কেন তলিয়ে দেখিনি যে কোথা থেকে এত সুদ দেবে কোন সংস্থা? সুতরাং সরকারের এই ব্যর্থতার দায় সমানভাবে আমাদেরও।
পরিশেষে বলতে চাই, এই কেন্দ্র সরকারের ওপর মানুষের এখনো ভরসা আছে। ভরসা আছে বলেই এই লেখার অনুপ্রেরণা পেলাম। একটু ভেবে দেখবেন। গঠনমূলক সমালোচনা স্বাগত। ভারতীয় হিসাবেই বাঙালির মনন বাঙালির পরিচয় থাক সারা বিশ্বে। ভারত আবার জগত সভায় শ্রেষ্ঠ আসন লাভ করুক এই সরকারের হাত ধরে এই কামনা করি। জয় হিন্দ। বন্দে মাতরম।
Anim pariatur cliche reprehenderit, enim eiusmod high life accusamus terry richardson ad squid. 3 wolf moon officia aute, non cupidatat skateboard dolor brunch. Food truck quinoa nesciunt laborum eiusmod. Brunch 3 wolf moon tempor, sunt aliqua put a bird on it squid single-origin coffee nulla assumenda shoreditch et. Nihil anim keffiyeh helvetica, craft beer labore wes anderson cred nesciunt sapiente ea proident. Ad vegan excepteur butcher vice lomo. Leggings occaecat craft beer farm-to-table, raw denim aesthetic synth nesciunt you probably haven't heard of them accusamus labore sustainable VHS.
Anim pariatur cliche reprehenderit, enim eiusmod high life accusamus terry richardson ad squid. 3 wolf moon officia aute, non cupidatat skateboard dolor brunch. Food truck quinoa nesciunt laborum eiusmod. Brunch 3 wolf moon tempor, sunt aliqua put a bird on it squid single-origin coffee nulla assumenda shoreditch et. Nihil anim keffiyeh helvetica, craft beer labore wes anderson cred nesciunt sapiente ea proident. Ad vegan excepteur butcher vice lomo. Leggings occaecat craft beer farm-to-table, raw denim aesthetic synth nesciunt you probably haven't heard of them accusamus labore sustainable VHS.
Anim pariatur cliche reprehenderit, enim eiusmod high life accusamus terry richardson ad squid. 3 wolf moon officia aute, non cupidatat skateboard dolor brunch. Food truck quinoa nesciunt laborum eiusmod. Brunch 3 wolf moon tempor, sunt aliqua put a bird on it squid single-origin coffee nulla assumenda shoreditch et. Nihil anim keffiyeh helvetica, craft beer labore wes anderson cred nesciunt sapiente ea proident. Ad vegan excepteur butcher vice lomo. Leggings occaecat craft beer farm-to-table, raw denim aesthetic synth nesciunt you probably haven't heard of them accusamus labore sustainable VHS.